হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম
তেইশ বছরের দীর্ঘ কণ্টকাকীর্ণ পথপরিক্রমার পর মহান আল্লাহ হেযবুত তওহীদকে এমন একটি অবস্থানে এনে দাঁড় করিয়েছেন যখন দেশের অধিকাংশ মানুষের কাছে এটি সুস্পষ্ট হয়েছে যে হেযবুত তওহীদ মানবতার কল্যাণে নিবেদিত একটি আন্দোলন। এ আন্দোলন প্রচলিত বিকৃতির বেড়াজাল থেকে আল্লাহর প্রকৃত সত্যদীনকে মুক্ত করে তা মানবজাতির সামনে তুলে ধরতে বদ্ধপরিকর। আমরা জঙ্গিবাদ, ধর্মব্যবসা, অপরাজনীতি, সাম্প্রদায়িকতা, ধর্মের নামে অপরাজনীতি, দুর্নীতি, মাদকব্যবসার ইত্যাদির বিরুদ্ধে আদর্শিক লড়াই চালিয়ে যাচ্ছি। কারণ কোনো অন্যায়ই কেবল শক্তি দিয়ে দূর করা যায় না, শক্তির পাশাপাশি একটি আদর্শ লাগে যা মানুষকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার করে। স্বভাবতই ধর্মীয় সংস্কারমূলক যে কোনো উদ্যোগ কায়েমি শাক্তির দ্বারা বাধাগ্রস্ত হয়। সেই বাধা আমরা প্রতিনিয়তই মোকাবেলা করে যাচ্ছি আমাদের সর্বস্ব বলিদানের মাধ্যমে। তবু আমরা সর্বাবস্থায় রাষ্ট্রীয় আইন মান্য করার নীতি থেকে ভ্রষ্ট হই নি। বিগত তেইশ বছরে হেযবুত তওহীদ একটিও অপরাধ করে নি, একটিও আইনভঙ্গ করে নি। এমন দাবি কোনো রাজনৈতিক দল তো দূরের কথা, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও করতে পারবে না। এই অটল অদম্য নৈতিক শক্তি নিয়ে সততার সঙ্গে সত্যের সংগ্রাম, মানবতার মুক্তির সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার দরুণ আজ লক্ষ লক্ষ মানুষের সমর্থন ও আস্থা অর্জন করেছে হেযবুত তওহীদ।
সবচেয়ে বড় যে বাধাটি আমাদেরকে মোকাবেলা করতে হচ্ছে সেটা হলো বহুমুখী অপপ্রচার। হেযবুত তওহীদ স¤পর্কে বহু নেতিবাচক ধারণা আমাদের সমাজে প্রচারিত হয়েছে গত ২৩ বছর ধরে। আন্দোলনটি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকেই এর শুরু হয়েছে। কেউ বলছে হেযবুত তওহীদ খ্রিষ্টান, কেউ বলছে জঙ্গি, কেউ বলছে এরা নবী দাবি করেছে, কেউ বলছে সরকারের থেকে টাকা পায়, কেউ বলছে ভারতের দালাল ইত্যাদি। যারা হেযবুত তওহীদ সম্পর্কে সঠিকভাবে জানতে পারছেন তারা পূর্বের এই সব অপপ্রচার থেকে মুক্ত হয়েছেন। অনেকেই আমাদেরকে প্রশ্ন করে থাকেন, আপনাদের বিরুদ্ধে এত অপপ্রচার কেন? কারা এইসব বিকৃত ধারণা প্রচার করছে, কেনই বা করছে? যাদের মনে হেযবুত তওহীদ স¤পর্কে এখনও ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে তারা আমার এই লেখাটি পড়লে তাদের প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাবেন আশা করি।
এই অপপ্রচার করেছে প্রধানত দুটো শ্রেণি। প্রথমত ধর্মব্যবসায়ী একটি শ্রেণি যারা ইসলামের নামে, ধর্মের নামে স্বার্থ উদ্ধার করে। দ্বিতীয়ত ইসলামবিদ্বেষী আরেকটি শ্রেণি যারা মনে মগজে পাশ্চাত্য সভ্যতার দাসত্বকে বরণ করে নিয়েছে।
ধর্মব্যবসায়ীরা কেন অপপ্রচার করে?
হেযবুত তওহীদ আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা মাননীয় এমামুয্যামান কোর’আন হাদিস থেকে অকাট্যভাবে প্রমাণ দিয়েছেন যে, ধর্ম এসেছে মানবতার কল্যাণে। একে ব্যবহার করে ব্যক্তিগত, গোষ্ঠীগত, অর্থনৈতিক, বৈষয়িক বা রাজনৈতিক ইত্যাদি যে কোনোরকমের পার্থিব স্বার্থ হাসিল করা সম্পূর্ণ হারাম। এর কারণ হলো, ধর্মের নামে যদি কোনো স্বার্থ উদ্ধার করা হয় তাহলে ধর্ম বিকৃত হয়ে যায়। একেকজন একেকভাবে তখন ধর্মের শিক্ষাকে উপস্থাপন করে। এই মুসলিম দাবিদার জনগোষ্ঠীর মধ্যে যে শ্রেণিটি এতদিন ধর্মের কথা বলে মানুষের রক্ত জোঁকের মতো শোষণ করে এসেছে, মানুষ যাদের কথায় গাড়িতে আগুন দিয়ে নিরীহ যাত্রীদেরকে হত্যা করেছে, জাতিবিনাশী কর্মকা- করেছে, যাদেরকে পরকালের অসিলা ভেবে জমিজমা বিক্রি করে অর্থ দিয়েছে। মানুষ আল্লাহকে পাওয়ার জন্য, রসুলকে পাওয়ার জন্য তাদের পেছনে গিয়েছে। এই ধর্মব্যবসায়ী শ্রেণিটি এখন আমাদের বিরুদ্ধে লেগেছে। তারা দেখল যে সর্বনাশ! এই আদর্শ, এই দলিল যদি জনগণ জানতে পারে তাহলে তো আর ধর্মের কাজ করে টাকা কামাই করা চলবে না, স্বার্থ উদ্ধার করা চলবে না, ইসলামের নাম ব্যবহার করে রাজনীতি করা চলবে না। তাহলে কী করা যায়? তারা একজোট হলো হেযবুত তওহীদের বিরুদ্ধে। অপপ্রচার শুরু করল যে হেযবুত তওহীদ খ্রিস্টান, হেযবুত তওহীদ ইহুদিদের থেকে টাকা পায় ইত্যাদি। এসব মিথ্যা কথা এতদিন বলত, এখন পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আরো কতগুলো নতুন নতুন অপপ্রচার শুরু হয়েছে।
গত তেইশটি বছর ধরে এসব অপপ্রচারের দরুন আমরা সীমাহীন সামাজিক ও প্রশাসনিক হয়রানির শিকার হয়েছি। আমাদের আন্দোলনের নীতি হচ্ছে আমাদের প্রতিটি কার্যক্রম ও বক্তব্য সম্পর্কে প্রশাসনকে অবগত করা। সে মতে আমরা সরকারকে ও প্রশাসনকে আমাদের বিষয়ে সুস্পষ্ট ধারণা প্রদান করেছি। তাদেরকে বলেছি, যেসব দল জঙ্গিবাদী কর্মকা- করেছে, যারা মানুষকে ধর্মের নামে ধোঁকা দিয়ে জাতিবিনাশী কর্মকা- করেছে আমাদেরকে ওদের সঙ্গে এক পাল্লায় মাপবেন না, ওদের মতো একই খোপে ফেলবেন না, এক দৃষ্টিতে দেখবেন না। আমাদের নীতিমালা, কর্মসূচি, কার্যক্রম ভালো করে পর্যবেক্ষণ করুন, গৎবাঁধা ধারণার ভিত্তিতে নয়, দয়া করে একটু মনোযোগ দিয়ে বিচার করুন তাহলেই বুঝবেন আমরা আপনাদেরকে এক মহাসংকট থেকে রক্ষা করতে এসেছি। একটি বনের সব গাছ এক নয়, কিছু থাকে বিষবৃক্ষ, কিছু থাকে ওষধি বৃক্ষ। আগে জানুন, তাহলেই পার্থক্য করতে পারবেন। আমাদের ক্রমাগত প্রচেষ্টার ফলে একটা সময়ে এসে তারা এটুকু বুঝতে সক্ষম হয়েছেন যে হেযবুত তওহীদ জাতির কল্যাণের জন্য অকপটভাবে কাজ করছে। জাতির জন্য এই আন্দোলন ক্ষতিকর কিছু নয়। এটি বোঝার পর তারা আমাদেরকে জনসভা, সেমিনার ইত্যাদি করার অনুমতি প্রদান করছেন। আর জনপ্রতিনিধি ও সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদেরকে আরো সুস্পষ্টভাবে আমাদের বক্তব্য জানানোর জন্য আমরা তাদেরকে আমাদের অনুষ্ঠানে অতিথি হওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানাই। আমাদের বক্তব্য শুনে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অনেক কর্মকর্তা বলেছেন, “ঠিক আছে আমরা মঞ্চে উপস্থিত থাকব। আপনাদেরকে পর্যবেক্ষণ করব আপনাদের কথা শুনব। যদি খারাপ কিছু দেখি তাহলে আইন আছে।” আমরা বলছি, “ঠিক আছে।”
এভাবে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর অনেক কর্মকর্তা আমাদের অতিথি হন। তাদেরকে দেখে ধর্মব্যবসায়ী ও তাদের দোসররা বলা শুরু করল যে, হেযবুত তওহীদ হলো সরকারের দালাল। গ্রামে গঞ্জে একটা গুজব তারা রটিয়ে দিয়েছে যে, বর্তমান সরকার অন্যান্য ইসলামি দলগুলোকে কোনঠাসা করতে হেযবুত তওহীদকে মাঠে নামিয়েছে। কতরকম অপপ্রচার যে তারা করে তার ইয়ত্তা নেই। হেযবুত তওহীদের মেয়েরা পত্রিকা বিক্রি থেকে শুরু করে শালীনতার সঙ্গে পুরুষের পাশাপাশি আন্দোলনের অধিকাংশ কাজে অংশ নিয়ে থাকে। ধর্মব্যবসায়ীরা নারী ও পুরুষের একই কর্মপরিবেশে কাজ করার বিরুদ্ধে ফতোয়াবাজি করে মেয়েদের উপর নানা অপবাদ আরোপ করে। এ নিয়ে তাদের আলোচনা সমালোচনার কোনো অন্ত নেই। তাদের কথা হলো, মেয়েরা থাকবে ঘরে। তাদের চেহারা যেন কোনো পরপুরুষ দেখতেও না পায় সেভাবে চলতে হবে। তারা অপপ্রচার করে যে, হেযবুত তওহীদ নাকি নামাজ পড়ে না। কেউ বলে কেবল রবিবারে নামাজ পড়ে, কেউ বলে দুই ওয়াক্ত নামাজ পড়ে, কেউ বলে পূর্ব দিকে ফিরে নামাজ পড়ে, হেঁটে হেঁটে নামাজ পড়ে, মোনাজাত উল্টো করে ধরে ইত্যাদি। তারা বলে হেযবুত তওহীদের সদস্যরা মারা গেলে নাকি জানাজা পড়ানো হয় না, কালো কাপড় দিয়ে দাফন করা হয়, বসিয়ে কবর দেয়, উরুতে সিল দিয়ে হেযবুত তওহীদে যোদ দিতে হয়।
এমনই অদ্ভুত অদ্ভুত সব অপপ্রচার তার আমাদের বিরুদ্ধে করে। ইদানিং যুক্ত হয়েছে যে হেযবুত তওহীদ হলো সরকারের দালাল। এর কারণ হলো, জনপ্রতিনিধিদেরকে আমরা আমাদের বক্তব্য জানাতে চাই বলে তাদেরকে আমরা অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানাই। তাদের অনেকে অনুষ্ঠানে আসেন। বাস্তবতা হচ্ছে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা অধিকাংশই হন সরকারদলীয়। তারা আসলে সেখানে পুলিশ-প্রশাসন তাদের নিরাপত্তাবিধান করে থাকে। যে কোনো অনুমোদিত সমাবেশে পুলিশ পাহারা দেবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু আমাদের অনুষ্ঠানে যখন পুলিশ পাহারা দেয় তখন অপপ্রচারকারীরা চোখ উল্টে বলে, তোমাদের পাহারা দেয় আর আমাদেরকে পুলিশ ধাওয়া করে। এতেই বোঝা যায় তোমরা সরকারের দালাল। তাদের এসব অপপ্রচার যে সর্বাংশে মিথ্যা তা এখন অনেকেই জানতে পারছেন এবং হেযবুত তওহীদের বক্তব্য এখন অপপ্রচারের বর্ম ভেদ করে তাদের হৃদয়ে প্রবেশ করছে। তারা দলে দলে হেযবুত তওহীদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করছেন।
ধর্মবিদ্বেষীরা কেন অপপ্রচার করে?
হেযবুত তওহীদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার করে থাকে অপর যে শ্রেণিটি তারা হলো ধর্মবিদ্বেষী শ্রেণি। তারা আসলে ধর্মকেই প্রত্যাখ্যান করেছেন। তারা আল্লাহ-রসুলে বিশ্বাসী নয়। তারা দিনরাত সজাগ ও সচেতন থাকে যেন ধর্ম কোনোভাবেই জাতীয় জীবনের উপর প্রভাব সৃষ্টি করতে না পারে। ব্যক্তিগতভাবে ‘মূর্খ মানবেরা’ যতদিন ধর্ম থাকে ততদিন ধর্মচর্চা করুক ক্ষতি নেই কিন্তু যে রাষ্ট্রকাঠামো, যে দর্শন, যে জীবনব্যবস্থা পশ্চিমাদের অনুকরণে তারা সমাজে প্রতিষ্ঠা করেছে সেখানে যেন ধর্ম কোনোভাবেই ঠাঁই না পায়। ইসলামের নাম শুনলেই তাদের মাথা থেকে পা পর্যন্ত জ্বলে যায়। তারাও যোগ দিয়েছে হেযবুত তওহীদ বিরোধী প্রপাগান্ডায়। তাদের মিথ্যাচার একটু ভিন্ন মাত্রার। তারা এটা খুব ভালো করে বুঝতে পেরেছে যে, কোনো দলকে জঙ্গি হিসাবে পরিচিত করতে পারলে সেই দলের পক্ষে কার্যক্রম চালানো প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। এই কৌশলটিই তারা নিল। তারা বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা ও গণমাধ্যমে হেযবুত তওহীদকে জঙ্গি দল হিসাবে সাব্যস্ত করতে থাকল। হাজার হাজার বার তারা হেযবুত তওহীদকে নিষিদ্ধ সংগঠন হিসাবে তাদের পত্রিকায় ও টিভি মিডিয়ায় প্রচার করেছে। আমরা প্রতিবাদ জানিয়েছি, হেযবুত তওহীদের বৈধতা দলিল তাদের সামনে মেলে ধরেছি। তারা তখন বলেছে, সব জঙ্গি। হিজবুত তাহরীর, হেযবুত তওহীদ সব এক। তারা আমাদের প্রতিবাদগুলো প্রকাশ করারও প্রয়োজন বোধ করে নি।
এ যুগটিকে গণমাধ্যমের যুগও বলা হয়। মানুষ গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যগুলো বিশ্বাস করে। এক শ্রেণির গণমাধ্যমের নিরবচ্ছিন্ন অপপ্রচারের ফলেও হেযবুত তওহীদ সম্পর্কে একটি ভীতিকর নেতিবাচক ধারণা জনমনে গেড়ে বসেছে। হেযবুত তওহীদের কর্মীরা দেশজুড়ে প্রচারকার্য চালিয়েছেন। বহু জায়গায় এই শ্রেণির লোকেরা গোপনে পুলিশে খবর দিয়েছে, বলেছে যে এখানে জঙ্গিরা গোপন মিটিং করছে, প্রচার করছে। পুলিশ এসে তাদেরকে গ্রেফতার করেছে, হাজতে আটকে রেখেছে। ফলে আমাদের কর্মীরা জীবিকাহীন হয়ে পড়েছেন, তাদের সম্মানহানী হয়েছে, তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদের নামে ভয়াবহ নির্যাতনও করা হয়েছে। শেষে আবারও এটাই প্রমাণিত হয়েছে যে হেযবুত তওহীদ কোনো অপরাধ করে না, আইনভঙ্গ করে না, তারা জঙ্গি নয় বরং জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধেই তাদের আদর্শিক অবস্থান। দেশকে জঙ্গিবাদের কবল থেকে মুক্ত করতেই তারা সংগ্রাম করছে। আমরা সারাদেশে লক্ষ লক্ষ জনসভা সেমিনার, পথসভা, র্যালিসহ নানা প্রকার জনসচেতনামূলক অনুষ্ঠান করেছি। এই গণমাধ্যমগুলো আমাদের সেই বিপুল কর্মযজ্ঞের কণামাত্রও তাদের পত্রিকা বা টিভিতে প্রচার করে নি। কারণ তারা চায় না হেযবুত তওহীদের কোনো ইতিবাচক ভাবমূর্তি গড়ে উঠুক আর তাদের এতদিনকার মিথ্যাচার ভেস্তে যাক। তাদের চোখে ইসলাম মানেই সন্ত্রাসের ধর্ম। এটা তারা তাদের পাশ্চাত্য প্রভুদের কাছ থেকে শিখেছে। তাদের বিশ্বাস, হেযবুত তওহীদ আজকে বোমা মারে নি তাতে কী, কালকে তো বোমা মারবেই। যখন কোনো জনপ্রতিনিধি আমাদের সভা-সেমিনারে আসতে চান তখন তাদেরকে এই শ্রেণিটি ভয় দেখানোর জন্য চেষ্টা করে। তারা বলে, ওদের মিটিং-এ যাবেন না। আপনার একটা ভবিষ্যৎ আছে। হেযবুত তওহীদের কোনো ঠিক নেই, কাল তারা কী করবে কে জানে? তখন ওদের মিটিং-এ যাওয়ার জন্য আপনাকে পস্তাতে হবে।
আমাদের কথা
এই যে আমাদেরকে হাজারো প্রকার অপবাদে জর্জরিত করা হচ্ছে যার প্রত্যেকটি ভিত্তিহীন, যুক্তিবুদ্ধিহীন, অজ্ঞতাপ্রসূত। আসলে এরা আমাদেরকে কোনো নির্দিষ্ট শ্রেণিতে ফেলতে পারছে না তাই তাদের মুখে যেটা আসছে, যেটা বললে তাদের মনের ঝাল মিটবে সেটাই তারা বলছে। কোনটা বললে জনগণ আমাদের বিরুদ্ধে যাবে সেটা যত বড় মিথ্যাই হোক সেই অপবাদ তারা আমাদের উপর লেপন করতে চাচ্ছে। কিছুদিন আগে একজন ফেসবুকে আমাকে হুমকি দিয়ে বলল, ব্রাহ্মণবাড়িয়া আসেন। চেহারা পাল্টায় দেব। এমন আরো হাজারো হুমকি ধামকি প্রতিদিন আমাদের পেতে হচ্ছে। তাদেরকে বলব, আমার চেহারাই পাল্টাতে পারবেন, কিন্তু যারা একটার পর একটা মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ ধ্বংস করে দিচ্ছে, লাখ লাখ মুসলমানকে হত্যা করছে, নারীদেরকে ধর্ষণ করছে তাদের কিছুই আপনারা করতে পারবেন না। এই মুসলিম জনগোষ্ঠী নিজেরা আজ শত শতভাগে বিভক্ত। আজ পর্যন্ত সুন্নীরা শিয়াদের চেহারা পাল্টে দিয়েছে, শিয়ারা সুন্নীদের চেহারা পাল্টে দিয়েছে। উত্তরবঙ্গের পীর দক্ষিণবঙ্গের পীরের মুরিদদের চেহারা পাল্টিয়ে দিয়েছে। আল্লাহর অভিশাপের এই হলো নিদারুণ চিত্র। শত্রুর হাতে নয়, নিজেরাই নিজেদের ধ্বংস করে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। সেটাও আবার ইসলামের নামে। এমন আত্মঘাতী দ্বন্দ্ব, এমন দুর্গতি, এমন বুদ্ধিনাশ যদি আল্লাহর লা’নত না হয় তাহলে লা’নত আর কাকে বলে? এই দুর্ভাগা জাতিকে অভিশাপমুক্ত করতে হলে প্রথমে তাদেরকে তওহীদের ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে, একটা কথার উপর সবাইকে আসতে হবে যে, লা- ইলাহা ইল্লাল্লাহ, মোহাম্মাদুর রাসুলাল্লাহ (আল্লাহ ছাড়া আমরা আর কারো হুকুম মানবো না এবং মোহাম্মদ সা. আল্লাহর রসুল)। এই ঐক্যের ডাকটাই দিয়েছে হেযবুত তওহীদ। আর এই হতভাগা জাতি তাদের মুক্তির সারথীকে অবজ্ঞা আর আপনমানে লাঞ্ছনায় জর্জরিত করে চলেছে। তারা একবার ভাবছেনা যে, এই হেযবুত তওহীদকে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সত্য ইসলামকে তুলে ধরছে যে জঙ্গিবাদ জাতিবিনাশী মতবাদ। তারা দেখল না যে, এরা মাদকের বিরুদ্ধে কথা বলছে, দেশের টাকা বিদেশে পাচারের বিরুদ্ধে কথা বলছে, তারা ইসলামবিদ্বেষের বিরুদ্ধে কথা বলছে। তারা তো নাস্তিক হয়ে যায় নি, তারা তো অন্তত ইসলাম নিয়ে দাঁড়িয়েছে। এই দৃষ্টিকোণ থেকে আমরা তাদের একটু সমর্থন দেই, তাদের জন্য দোয়া করি, সহযোগিতা করি। দেশের প্রতি, ধর্মের প্রতি যদি তাদের বিন্দুমাত্রও শুভকামনা থেকে থাকে তাহলে তাদের কি এটাই করা উচিত ছিল না? কিন্তু না। তারা হেযবুত তওহীদকে কাজ করতে দেবে না। অন্যরা নয় বরং যারা ধর্মের ধ্বজাধারী এবং যারা মুখে দেশপ্রেমের তুবড়ি ছোটায় তারাই আমাদের বিরুদ্ধে জঘন্য মিথ্যাচার ও সর্বপ্রকার বিরুদ্ধতা করছে এবং করবে। কারণ এদের ভ-ামির মুখোশ আমরা খুলে দিয়েছি। মুসলিম জাতির মূল সংকটের জায়গা এটাই যে, এই জাতি ধর্মের নামে হাজার হাজার দলে বিভক্ত। এরা আবার একে অপরের শত্রু। কেউ এদেরকে ঐক্যবদ্ধ করতে গেলে তারা সবাই সমস্বরে তার টুটি টিপে ধরে। কেননা যে বিকৃত ইসলাম তারা ধারণ করে আছে ঐ ইসলামই তাদেরকে এক হতে দেবে না, বিভক্ত করে রাখবে। আমরা আমরা উচ্চকণ্ঠে এই কথাটিই বলছি, তোমাদের এই ইসলাম আল্লাহ রসুলের ইসলামই নয়। এটা সহ¯্র বছরের লাখো বিকৃত ফতোয়া আর মাসলা-মাসায়েলের যোগফলমাত্র। এটা তোমাদের নিকৃষ্ট জাতিতে পরিণত করেছে। বাঁচতে হলে আল্লাহ-রসুলের প্রকৃত ইসলামে ফিরে এসো। সেই পথটিই আমরা তুলে ধরছি।
[লেখক: এমাম, হেযবুত তওহীদ, ফেসবুক: emamht ফোন: ০১৭৮২১৮৮২৩৭, ০১৬৭০১৭৪৬৪৩, ০১৭১১০০৫০২৫, ০১৯৩৩৭৬৭৭২৫]