বর্তমানে পুরো বিশ্বের দিকে যদি আমরা দৃষ্টিপাত করি তবে স্পষ্ট দেখতে পাব যে আজ বিশ্ব ধ্বংসের দ্বারগোড়ায় এসে দাঁড়িয়েছে। জাতিসংঘের বর্তমান মহাসচিব স্বীকার করেছেন যে, তিনি তার দায়িত্ব সম্পন্ন করতে ব্যর্থ হয়েছেন, রোহিঙ্গা মুসলিমদের উপর হওয়া মায়ানমারের আগ্রাসনকে তিনি রোধ করতে পারেন নি। এর আগের মহাসচিবরাও তাদের দায়িত্ব পরিপূর্ণভাবে সম্পাদন করতে সক্ষম হন নি এবং তারা একথা অকপটে স্বীকার করেছেন। দুই কোরিয়ার যুদ্ধ তারা থামাতে পারেন নি, সিরিয়ার গণহত্যাও তারা বন্ধ করতে পারেন নি। বর্তমানের পরিস্থিতি বিচার করে কিছু আন্তর্জাতিক সংস্থা তো বলছেই যে সাম্রাজ্যবাদীদের তা-বলীলা থেকে যদি জলদিই রক্ষার কোন উপায় না পাওয়া যায় তবে মানবজাতি নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে, ধরণী বিরাণ হয়ে যাবে। মানবজাতিকে হয় এর থেকে পরিত্রাণের উপায় খুঁজতে হবে নয়তো মঙ্গল গ্রহকে বসবাস উপযোগী হিসেবে তৈরি করতে হবে। এটা আমার কথা নয়, বিখ্যাত পদার্থ বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং বলেছেন, “১০০ বছরের মধ্যে পৃথিবী বসবাস অযোগ্য হবে। প্রাণে বাঁচতে হলে একশ বছরের মধ্যেই পৃথিবী ছেড়ে অন্য গ্রহে আবাস খুঁজে নিতে হবে।”
বিগত কয়েক শতাব্দীতে মুসলমান জাতির বিরুদ্ধে যথেষ্ট পরিমাণে প্রোপাগান্ডা চালানো হয়েছে। বলা হয়ে থাকে আমরা মুসলমানরা জঙ্গি, আমরাই শুধু সন্ত্রাসী কর্মকা- করি, আমরা কূপমণ্ডক, আমরা অসভ্য (Uncivilized)। তাদের এই প্রোপাগান্ডার বিরুদ্ধে আমাদের যথাযথ জবাব দিতে হবে। সে জন্য মাথা গরম করলে চলবে না, মাথা ঠাণ্ডা রেখে এর থেকে পরিত্রাণের উপায় ভাবতে হবে। ’৭১ সালে আমরা স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে একজোট হয়ে লড়াই করেছিলাম কিন্তু স্বাধীনতার পর আমাদের ঈমানকে হাইজ্যাক করে বহু জাতিবিনাশী কর্মকা- ঘটানো হয়েছে। আমাদের মধ্যেই একদল রয়েছে যারা ধর্মকে নিয়ে ব্যবসা করছে। সাধারণ মানুষ নিজেদের সহায় সম্পত্তি বিক্রি করে তাদের উদরপূর্তি করেছে। কিন্তু তারা সেখানে আল্লাহকে পায় নি, সেখানে দিয়ে ইসলামের কোনো উপকার হয় নি। উপকার হয়েছে শুধু সেই ধর্মব্যবসায়ী গোষ্ঠীর। আরেকটিদল ধর্মকে নিয়ে অপরাজনীতি করেছে। নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থকে উদ্ধারের জন্য তারা জনগণের ঈমানকে ব্যবহার করেছে। আরেকদল জঙ্গিবাদী কর্মকা-ের দিকে মানুষকে আহ্বান করেছে। তারা জঙ্গিবাদী আদর্শকে ব্যবহার করে তাদের ঈমানকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করেছে ও এর মাধ্যমে জাতি বিনাশী বহু কর্মকা- ঘটিয়েছে। দেখা যাচ্ছে আমরা প্রতিটি দিক থেকেই প্রতারিত হয়েছি। কিন্তু আমাদের রসুল এমন ছিলেন না, আমাদের ইসলামও এমন ছিল না।
আমাদের সমাজের অবস্থাও আজ করুণ। আমাদের সমাজের মানুষদের নৈতিক অবক্ষয় আজ চরম পর্যায়ে। তারা অপসংস্কৃতি ও দাজ্জালের চাকচিক্যের দ্বারা আজ পূর্ণভাবে প্রতারিত। মাদকের কালো থাবায় আক্রান্ত হয়ে তাদের মহামূল্যবান যৌবন ধ্বংস হচ্ছে। এখন যদি আমরা এই পৃথিবী, এই দেশ, এই সমাজকে রক্ষার জন্য ভূমিকা না রাখি তবে আমরাও ধ্বংস হয়ে যাব। আমরা আল্লাহকে পাওয়ার জন্য, ভগবান, ঈশ্বরকে পাওয়ার জন্য মসজিদ, মন্দির, গির্জায় যাচ্ছি; নামাজ পড়ছি, রোজা রাখছি, অন্যান্য ধর্মকর্ম করছি। কিন্তু যদি এই ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞ থেকে মানবজতিকে রক্ষার জন্য অবদান না রাখি তবে আমাদের এ সকল ইবাদতই বিনষ্ট হবে। আমরা যে জান্নাতে যাওয়ার জন্য এত সব কাজ করছি কিন্তু আমরা কখনোই সেখানে যেতে পারব না। আমরা যারা ঘরের দুয়ার দিয়ে নিজ স্বার্থে ইবাদতে রত আছি আমরা কখনোই জান্নাতে যাব না। জান্নাত তারাই যাবে যারা মানবতার কল্যাণে নিজেদের জীবন সম্পদ উৎসর্গ করবে।
যারা দুর্বলচিত্তের অধিকারী তারা বলেন এত বড় সংকট থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব নয় আমাদের অন্য কিছু নিয়ে ভাবা উচিত। কিন্তু আমরা হেযবুত তওহীদ সে কথা বলতে পারি না। আমাদের এমামুয্যামান আমাদের শিক্ষা দিয়েছেন, “বাঁচলে বাঘের মত একদিন বাঁচ, শিয়াল-বকরীর মত হাজার বছর বাঁচার দরকার নেই।” আমরা হেযবুত তওহীদ প্রয়োজনে জীবন দিব তবুও এ বাংলার মাটিকে ইরাক সিরিয়া হতে দিব না, ইনশাল্লাহ। আজ আমরা ঘর-বাড়ি, পরিবার-পরিজন ছেড়ে বেড়িয়ে পড়েছি এ বাংলার মাটিকে রক্ষা করার জন্য। আমরা সমস্ত জনগণকে এক তওহীদের উপর ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান করছি। তাহলে আমাদের দেশ বাঁচবে, আমাদের জাতি বাঁচবে, আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম সুরক্ষিত হবে।
ভুললে চলবে না, এ দেশকে, এ দেশের মানুষকে রক্ষা করা একদিকে যেমন আমাদের ঈমানী দায়িত্ব অন্যাদিকে এই দেশের একজন নাগরিক হিসেবে অবশ্য কর্তব্য। আমরা যদি তওহীদের ভিত্তিতে এক হতে পারি, আমাদের যে ঈমানী চেতনাকে ভুল খাতে প্রবাহিত করা হয়েছে, সে চেতনাকে সঠিক খাতে প্রবাহিত করতে পারি তবে আমরা অসম্ভবকেও সম্ভব করতে পারব। মনে রাখতে হবে, অস্ত্রের শক্তি, বোমার শক্তি বড় নয়, ঈমানের শক্তিই সবচেয়ে বড়।