সুলতানা রাজিয়া:
পৃথিবীকে সুন্দর ও পূর্ণরূপে গড়ে তোলার ব্যাপারে মুসলিম নারী ও পুরুষ সম অংশীদার। এটি রসুলাল্লাহর (দ.) উক্তি। তাই সংযম ও অধ্যবসায়ের সাথে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ অত্যাবশ্যকীয়। যেহেতু জীবনের বহিরাঙ্গনের ক্ষেত্রসমুহ পুরুষের উপস্থিতি রয়েছে তাই নারীকে পুরুষদের সঙ্গেই অবস্থান করতে হবে, সহ-অবস্থানকে নিরুৎসাহিত করা কোনোভাবেই প্রাকৃতিক নয়। তবে এই সহাবস্থানের ক্ষেত্রে যেন পারস্পরিক সম্মান ও মর্যাদা বজায় থাকে তাই কিছু শৃঙ্খলা মেনে চলতে হয়। যে কোনো সামষ্টিক ক্ষেত্রেই শৃঙ্খলা থাকা স্রষ্টার কাম্য, তাঁর সৃষ্টিজগতে কোথাও বিশৃঙ্খলা পরিদৃষ্ট হয় না।
নারীর এই স্বাধীন কর্মতৎপরতা পরিবার ও সন্তানের প্রতি তার যে প্রাথমিক দায়িত্ব-কর্তব্য আছে তা সম্পাদনে বাধা সৃষ্টি করে না বরং তার ব্যক্তিত্বের পরিপক্বতা অর্জনে সাহায্য করে। এভাবে তাকে যেকোনো দায়িত্ব কর্তব্য পূর্ণাঙ্গরূপে পালন করতে সক্ষম করে তোলে এবং পরিবার ও সমাজের প্রয়োজনে আরও যেসব দায়িত্ব কর্তব্য নারীর কাঁধে চাপিয়ে দেয়ার সম্ভবনা রয়েছে তা পালন করার জন্য তাকে যথাযথভাবে প্রস্তুত করে। আমরা রসুলাল্লাহর আদর্শ যদি লক্ষ করি তাহলে দেখব উম্মতে মোহাম্মদীর নারী ও পুরুষগণ সকল ক্ষেত্রে একত্রেই অংশগ্রহণ করতেন।
তাদের সহাবস্থানের সাধারণ ক্ষেত্রসমুহ:
মসজিদ: মসজিদে পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ, জানাজার এবং কসুফ বা সূর্য গ্রহণের সালাতে নারী-পুরুষ একত্রে অংশ নিতেন।
দীন সংক্রান্ত আলোচনার সময়: মসজিদ হোক বা ঈদের মাঠ বা কারও বাড়িতে হোক নারী পুরুষ একত্রে অংশ নিতেন। কোনো পৃথক বসার ব্যবস্থা ছিল না।
কাবা ঘর: যে ঘরকে আল্লাহ হজ্জ ও উমরাহর বিধান সমুহ পালনের জন্য এবং জাতির জন্য সম্মিলন কেন্দ্র বানিয়েছেন সেখানে রসুলের সময় থেকে আজ পর্যন্ত নারী-পুরুষ একত্রেই সমবেত হন।
ঈদের অনুষ্ঠান পালনের ক্ষেত্রে: ঈদের দিন সকালে মাঠে সালাহ কায়েমের সময় নারী-পুরুষ একত্রে সমবেত হতেন। আবার বিকেলে মসজিদের সামনে বিভিন্ন বীরত্বব্যঞ্জক খেলার আয়োজন করা হতো, সেখানেও নারী-পুরুষ একত্রে সমবেত হতেন।
বিচারক্ষেত্রে: রসুলাল্লাহ কোনো অপরাধীকে দণ্ড প্রদানের সময় নারী-পুরুষ উভয়ই উপস্থিত থাকতেন।
জানাজা সম্পর্কিত কর্মকাণ্ড: মৃতের জন্য শোক প্রকাশ, সমবেদনা জানানো, জানাজা আদায় এবং মৃতকে অনুসরণ করে তার কবরস্থান পর্যন্ত না গিয়ে তার আত্মীয় স্বজন দের সাথে যাওয়া।
জিহাদের ময়দানে: জিহাদের ময়দানে নারীরা পুরুষের পেছনে কাফেলা বা সেনা ছাউনিতে অবস্থান করত এবং খাবার প্রস্তুত করতেন। তাছাড়া পিপাসার্তদের পানি পান করানো, আহতদের চিকিৎসা ও সেবা করা, যুদ্ধ শেষে মৃত ও আহতদের স্থানান্তরিত করা ইত্যাদি কাজ করতেন। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে তারাও তলোয়ার নিয়ে সম্মুখ সমরে অংশ নিয়েছেন।
মুবাহেলার সময়: যে সময় রাসুল নাজরানের প্রতিনিধি দলের সাথে মুবাহেলা করার সংকল্প করেছিলেন তখনও জাতির নারী-পুরুষ একত্রে সেখানে সমবেত হয়েছিলেন।
এছাড়াও অনেক হাদিসে, ইতিহাসে আমরা পাই যে পুরুষরাও বিভিন্ন প্রয়োজনে নারীর সাথে সাক্ষাৎ করেছেন। বাড়িতে গিয়ে, মেহমানদারির সময়, সহানুভূতি ও সহযোগিতা অথবা সুপারিশ কামনা, উপহার প্রদান, রোগীর সেবা অথবা শোক প্রকাশ ও সমবেদনা জ্ঞাপনের প্রেক্ষিতে সাক্ষাতের ঘটনা পাওয়া যায়। আল্লাহর বিধি মোতাবেক সম্মানজনক দূরত্ব ও স¤পর্ক বজায় রেখে একত্রে কার্যক্রমের বৈধতা ইসলামে সুস্পষ্ট। এতে নারীর জীবন অর্থপূর্ণ ও কর্মময় হয়ে উঠে একইভাবে তা সমাজের জন্য কল্যাণও বয়ে আনে।