রাকীব আল হাসান:
আরবিতে একটি কথা আছে ‘আল হাক্কু মররুন’ অর্থাৎ সত্য কথা তেতো। সত্য কথা অনেক সময় শ্রোতার কাছে তিক্ত শোনায়। এর জন্য সত্য বলার যন্ত্রণাও কম নয়। তবু সত্যকে প্রকাশ করতে হবে কারণ মুক্তির একমাত্র উপায় হচ্ছে সত্য। সত্য বলার যন্ত্রণা কীরূপ তা ব্যক্ত করা দরকার। আমরা হেযবুত তওহীদ যতই মানুষকে বুঝানোর চেষ্টা করি যে, ইসলাম এসেছে মানবজাতির কল্যাণের জন্য। কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর স্বার্থ হাসিলের জন্য ইসলামের আগমন ঘটে নি। এই কথাটি অনেকেই বুঝতে চান না। আর ধর্মব্যবসায়ীরাও চটে যান, কারণ সত্য বললে তাদের ব্যবসায়ের পুঁজি থাকে না। তারা সাধারণত জনতাকে আমাদের বিরুদ্ধে উস্কে দেন, আমাদের বিষয়ে অপপ্রচার চালান। তারা আমাদের মুরতাদ, ধর্মদ্রোহী, খ্রিষ্টান ইত্যাদি বলে অপবাদ দেন, আমাদের নির্মূল করার হুমকি দেন, এমন কি বিষধর ফণা তুলে ছোবলও মারেন। ধর্মব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে প্রাপ্ত জ্বালা তো আছেই, এছাড়াও আরো জ্বালা রয়েছে। আমরা যখন বলি, আকাশের মত উদার, সমুদ্রের মত বিশাল, প্রচণ্ড গতিশীল এ দীনটি এসেছে মানবজাতিকে মুক্তি দিতে, সকল অন্যায়-অত্যাচার, যুদ্ধ-বিগ্রহ, হিংসা বিদ্বেষ এক কথায় সর্ব রকম অশান্তি দূর করতে, মানুষের মাঝে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে। এই দীন মসজিদে, হুজরায়, খানকায়, আস্তানায় বসে চোখ বন্ধ করে রিপু জয়ী সাধু সন্ন্যাসী হওয়ার জন্য প্রেরিত হয় নি। ব্যাস, আমাদের উপর ক্ষীপ্ত হয় খানকা, মাজার, আস্তানা আর দরবার শরিফের পীর সাহেবরা। তারা তাদের অনুসারী ও অনুগতদের ফতোয়া দেন যে আমরা ইসলামের শত্রু। আমরা কাফের, আমাদের যেখানে পাওয়া যাবে সেখানে ঠেঙ্গানী দিতে হবে। তাদের এই আদেশ তাদের অনুসারীরা অন্ধের মতো পালন করে। তারা আমাদের বাগে পেলেই বুঝিয়ে দেয় সত্য বলার যন্ত্রণা কতটুকু। কিন্তু আমরা আর কীইবা করতে পারি, সত্য তো আমাদের বলতেই হবে।
আমরা আবার যখন বলি রাজনীতির নামে এই যে প্রতারণা, ব্যবসা চলছে তা উচিত নয়। রাজনীতি হবে মানবতার কল্যাণে। মানবতার কল্যাণে যারা নেতৃত্ব দিবেন তাদের নেতৃত্বর প্রতি কোন লোভ থাকার কথা না। মানুষই ডেকে এনে তাদের হাতে ক্ষমতা তুলে দিবে, তারা ঐ ক্ষমতায় বসতে বাধ্য হবে। দায়িত্ব গ্রহণের পর তারা ঘুমাতে পারবে না। তাদের সমস্ত সময় যাবে মানুষ ও সমাজের চিন্তায়, তাদের নিরাপত্তা ও সুখের কথা ভেবে। তারা ন্যায়ের মধ্যে থেকে রাষ্ট্র পরিচালনা করবেন, তারা মানুষের সম্পদকে কুক্ষিগত করবেন না। পাঁচ বছর স্বার্থসেবা করে নির্বাচন এলেই যারা ভোট ভিক্ষা শুরু করেন তারা আসলে জনগণকে বোকা বানিয়ে নিজেদের স্বার্থই রক্ষা করেন। গণতন্ত্র তাদের কাছে একটি চটকদার পণ্যমাত্র যা জনগণ খুব খায়। এই অকাট্য সত্যগুলো যখন আমরা তুলে ধরি তখন তা রাজনীতিকদের কাছে তিক্ত শুনায়।
কিন্তু যতই জ্বালা যন্ত্রণা হোক না কেন সত্য প্রকাশ করা থেকে আমরা বিরত থাকতে পারবো না। সত্য প্রকাশ না করলে আমরা থাকতে পারবো না। আমাদের মুক্তি মিলবে না। যারা মিথ্যার ব্যাপারী তাদের গায়ে সত্যের আমদানি জ্বালা ধরাবেই। ছোটবেলার একটা ঘটনা বলি, যে কোন চর্মরোগের জ্বালা পোড়ায় যখন দিনরাত অস্থির থাকতাম তখন দাদীমা নিমপাতার রস করে গোসল করাতেন। যখনই ঐ রস একটুখানি মুখে যেত তখনই দাদীমাকে বকাবকি শুরু করতাম। বুঝতাম না ঐ প্রচণ্ড তেতো রসটিই আমার রোগটি সারিয়ে তুলবে আর দাদীমা যে কষ্ট করে পাতা বেটে আমাকে গোসল করাচ্ছেন তা নিঃস্বার্থভাবে করছেন। আমাকে ভালোবেসে করছেন আমি যাতে নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারি। আবার ঐ পাতা দিয়ে বড়ি বানিয়ে ভাতের মধ্যে লুকিয়ে আমাকে খাওয়াতেন। যখন টের পেতাম ভাতের ভিতর তেতো তখন প্রচণ্ড ক্ষেপে যেতাম। কিন্তু দাদীমাও ছিলেন নাছোড়বান্দা। শত বকাবকি আর নাতীর অত্যাচারেও তিনি ক্ষান্ত হতেন না। ঔষধ খাইয়ে তবেই ছাড়তেন। ঔষধ খাওয়ার কয়েকদিনের মধ্যেই সম্পূর্ণ সুস্থ হোয়ে যেতাম এবং সারা রাত আরামে ঘুমোতে পারতাম। পরে মনে মনে ভাবতাম যে, আমি দাদীমার সাথে কী খারাপ ব্যবহারই না করেছি। অথচ তিনি শত বকাবকি আর অত্যাচার সহ্য করেও শুধু আমার প্রতি অকৃত্রিম ভালবাসার জন্য নিঃস্বার্থভাবে আমার ভালোর জন্য চেষ্টা করে গেছেন। আজ দাদীমা নেই, তবু আজও মনে মনে তার কাছে ক্ষমা চাই।
আজ আমরা যে সত্য তুলে ধরছি তা অনেকর কাছেই নিম রসের মতো তিতা। এটা রোগীর ক্ষেত্রে প্রথমে একটু বিস্বাদ লাগবেই। আমাদের গালাগালি দিচ্ছেন দিন, কিন্তু আমরা নিঃস্বার্থভাবে মানবতার মুক্তির জন্য, সমাজকে পরিবর্তনের জন্য এ মহাসত্যকে আপনাদের সামনে তুলে ধরছি। আমাদের কাজের পিছনে মানবজাতির মুক্তি ও আল্লাহর সন্তুষ্টি ছাড়া আর কোন স্বার্থ নেই। আমরা এ কাজ করছিই আপনাদের জন্য। আপনাদের কাছে এ মহাসত্যকে পেীঁছে দেয়ার মাধ্যমে আপনারা যাতে শান্তিতে বসবাস করতে পারেন সেই জন্য। দয়া করে আমদের এই মহৌষধটি গ্রহণ করুন, কথা দিচ্ছি আপনি ও আপনার ভবিষ্যৎ প্রজন্ম আরামে ঘুমাতে পারবেন ইনশাল্লাহ।
[লেখক: সহকারী সাহিত্য সম্পাদক, হেযবুত তওহীদ]