হেযবুত তওহীদের এমাম হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম বলেছেন, আমাদেরকে সকল সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে পারে আল্লাহর দেওয়া নিখুঁত সিস্টেম। পুরো মানবজাতি যদি এভাবে আল্লাহর সত্যদ্বীনকে তাদের জীবনব্যবস্থা বা সিস্টেম হিসাবে বরণ করে নেয়, তবে তাদের জীবন থেকেও সর্বপ্রকার অন্যায়, অপরাধ এবং অশান্তি নির্মূল হয়ে যাবে। তিনি আরো বলেন, এর জন্য দরকার এক নেতার অনুসরণ করা, তার পিছনে ঐক্যবদ্ধ হওয়া। হেযবুত তওহীদ পুরো মানবজাতিকে আল্লাহর তওহীদের উপর ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে আসছে।
গত শুক্রবার রাজধানীর উত্তরায় হেযবুত তওহীদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত ‘মিট দ্যা প্রেস’ অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। হেযবুত তওহীদের উদ্যোগে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল ‘পাবনায় সুজন হত্যার বিচারসহ উগ্রবাদী সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর মোকাবেলায় আমাদের করণীয়’। অনুষ্ঠানটি একযোগে প্রায় অর্ধশতাধিক প্রিন্ট এবং অনলাইন গণমাধ্যমে সরাসরি সম্প্রচারিত হয়। অনুষ্ঠানে পাবনায় হেযবুত তওহীদের সদস্য সুজন হত্যা ও কার্যালয়ে হামলার বিচারের দাবিতে দেশব্যাপী চলমান হেযবুত তওহীদের মানববন্ধন, বিক্ষোভ সমাবেশ, মৌন মিছিল, অর্ধশতাধিক জেলা প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে স্মারকলিপি প্রদান ও গণসংযোগ কর্মসূচির বিস্তারিত সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরা হয়। মূল বক্তব্য উপস্থাপন শেষে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন হেযবুত তওহীদের শীর্ষনেতা এমাম হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম।
তিনি বলেন, মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ সকল দেশে আজ একটি অস্থিতিশীল অবস্থা বিরাজ করছে। ঘন ঘন সরকার পরিবর্তন, আন্দোলন, ভাংচুর, হরতাল, জ্বালাও পোড়াও ইত্যাদির মাধ্যমে প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি, প্রাণহানি হচ্ছে। আমাদের দেশেও সারা বছর ধরে চলে সরকার আর বিরোধীদলের ইঁদুর বেড়াল খেলা, সরকার পতনের আন্দোলন, দাবি দাওয়া আদায়ের জন্য হরতাল, ঘেরাও, বিক্ষোভ। আর এক্ষেত্রে বলির পাঠা জনগণ। পাঁচ বছর অন্ত্যে অনুষ্ঠিত হয় নির্বাচনী খেলা, ক্ষমতায় আসে অপর সংখ্যাগরিষ্ঠ দল। তারা এসে আবার পূর্ববর্তী সরকারের মতই দুর্নীতি, লুটপাট, স্বজনপ্রীতি, চাঁদাবাজি, অর্থ-সম্পদ বিদেশে পাচার করতে থাকে। সরকারও চালায় বিরুদ্ধবাদীদের উপর দমন পীড়ন। এভাবে একেরপর এক পরিবর্তিত হয় সরকার, কিন্তু সিস্টেম থেকে যায় আগের মতই। চলমান এই রাজনৈতিক সংস্কৃতি দেখে দেখে মানুষ বিরক্ত, হতাশ। কিন্তু তাদের কাছে কোন উত্তম বিকল্প নেই।
এই পরিস্থিতি থেকে মানবজাতির মুক্তির পথ আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদেরকে সকল সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে পারে আল্লাহর দেওয়া নিখুঁত সিস্টেম। চৌদ্দশ’ বছর আগে যেই জীবনব্যবস্থা মানুষের জীবনে প্রয়োগের ফলে অর্ধ পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, বর্তমানে প্রয়োগ করলেও সেই একই ফল হবে এবং লক্ষ বছর পরে প্রয়োগ করলেও সকলের প্রত্যাশিত সেই অকল্পনীয় ফলই পাওয়া যাবে। আল্লাহর দেওয়া সিস্টেমই পারে সকল প্রকার অন্যায়, অবিচার ও পাপাচারের দুয়ার বন্ধ করে দিতে। আসুন, আমরা সবাই মিলে এই নারকীয় সিস্টেমটাকে পাল্টাই। আল্লাহ-রসুলের দেওয়া প্রকৃত, সত্য জীবনব্যবস্থা গ্রহণ করি। অশান্তিময় জীবনকে শান্তিময় করি। এমন একটি জীবনব্যবস্থা বা সিস্টেম কায়েম করি যেখানে সুখ, শান্তি আর নিরাপত্তায় আনন্দময় জীবনযাপন করবে মানবজাতি। পুরো মানবজাতি যদি এভাবে আল্লাহর সত্যদ্বীনকে তাদের জীবনব্যবস্থা বা সিস্টেম হিসাবে বরণ করে নেয়, তবে তাদের জীবন থেকেও সর্বপ্রকার অন্যায়, অপরাধ এবং অশান্তি নির্মূল হয়ে যাবে।
রাজনীতিতে যোগ না দেওয়ার প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, বর্তমানে নির্বাচনি ব্যবস্থাটি এমন একটি অবস্থায় গেছে, যে ধাপ্পাবাজের রাজনীতি না করলে নির্বাচনি ব্যবস্থায় প্রবেশ করা যাবে না। তবে সুষ্ঠু নির্বাচন হোক বা না হোক আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি হচ্ছে, এই পুরো প্রক্রিয়াটিই একটি ভুল প্রক্রিয়া। মানুষের সামনে এই প্রশ্ন রাখতে হবে, তারা আল্লাহর হুকুম মানবে কি মানবে না। যদি তারা মানতে চান তবে প্রথম কাজ হচ্ছে, একজন নেতার অধীনে আসা। তার কথা অক্ষরে অক্ষরে পালন করতে হবে। এখানে কোন মতামত চলবে না। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই একটি শক্তিশালী জাতিসত্তা গড়ে উঠবে। সেই জাতির যিনি এমাম হবেন, তিনিই রাষ্ট্রকে পরিচালনা করবেন। এটাই হচ্ছে সঠিক প্রক্রিয়া।
এক নেতা বাছাই করার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ঐক্যবদ্ধ হওয়ার মূল সূত্র হচ্ছে তওহীদ। অন্যকোন কথার উপর ঐকব্যদ্ধ করানো যাবে না। তর্ক লেগেই যাবে। এই ঐক্যবদ্ধ হওয়ার জন্য আমরা ডাক দিচ্ছি। আল্লাহর অভিপ্রায় ছাড়াতো আমরা ডাক দিতে পারি না, কারণ আল্লাহই তো আমাদের প্রকৃত তওহীদের জ্ঞান দান করেছেন। আমি মনে করি, আমাদের এই ডাক মানুষের বিবেচন করা উচিত।
হেযবুত তওহীদে যোগদান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, হেযবুত তওহীদ হচ্ছে হেদায়াহ। আল্লাহর দেওয়া সঠিক পথ। আল্লাহর স্বার্বভৌমত্বের দিকে ডাকছে হেযবুত তওহীদ। যদি দুনিয়াতে শান্তি পেতে হয়, ইবলিসের দাসত্ব থেকে মুক্তি পেতে হলে, জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচতে হলে অবশ্যই তওহীদে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। আর এই তওহীদের দিকেই আহ্বান করছে হেযবুত তওহীদ। সত্যদীনের প্রকৃত আকিদা হেযবুত তওহীদের কাছেই আছে। এখানে যোগ দিলে ইসলামের প্রকৃত আকিদা জানতে পারবেন। আর এই সত্যদীন প্রতিষ্ঠা করা প্রক্রিয়া যেটা রসুল (সা.) অনুসরণ করে গেছেন, সেটা হেযবুত তওহীদ গ্রহণ করেছে।
সম্প্রতি মেয়েদের ফুটবল খেলা বিতর্ক হচ্ছে- এ নিয়ে হেযবুত তওহীদের এমামের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, নব্বই শতাংশ মুসলমানের এই দেশে আল্লাহর বিধান মোতাবেক জীবন পরিচালিত হচ্ছে না। আমাদের পুরো ব্যবস্থাটিই ব্রিটিশের তৈরি করা। এই ফুটবল খেলারও মূল কর্তৃপক্ষ আমরা না, পশ্চিমারা। এটা তাদের আবিষ্কার করা। এখন এই খেলাতে অংশগ্রহণ করলে আপনি হাফ প্যান্ট পড়বেন নাকি ফুল প্যান্ট পড়বেন তার সিদ্ধান্ত আপনার নয়, ওদের সিদ্ধান্তই আপনার মানতে হবে। আপনি যদি মনে করেন, আপনি হাটু দেখাবেন না তবে আপনি ফুটবল খেলায় অংশ নিবেন না। কিন্তু আপনি যদি ফুটবল খেলায় অংশ নিতে চান, তবে তাদের তৈরি মানদণ্ড মানতে হবে। যেহেতু সেই মানদণ্ড ঠিক করে দেওয়ার এখতিয়ার আমরা হতে পারি নাই, তাই আমরা এই ব্যাপারে কোন কথা বলার অধিকার রাখি না। আমাদের আগে আল্লাহর দেয়া মানদণ্ড প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন হেযবুত তওহীদের কেন্দ্রীয় নারী বিষয়ক সম্পাদক ও দৈনিক দেশেরপত্রের সম্পাদক রুফায়দাহ পন্নী, স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক উম্মুত তিজান মাখদুমা পন্নী, ঢাকা বিভাগীয় সভাপতি ডা. মাহবুব আলম মাহফুজ, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও দৈনিক বজ্রশক্তির সম্পাদক এস এম সামসুল হুদা, সদস্য ও জেটিভি’র সিইও মোখলেছুর রহমান সুমন প্রমুখ।