পৃথিবী থেকে সকল প্রকার জঙ্গিবাদ, যুদ্ধ, রক্তপাত, অশান্তি ও অন্যায়-অত্যাচার মুক্ত করার দাবি জানিয়েছেন লক্ষ্মীপুরের সুশীল সমাজ। মঙ্গলবার লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার নছির আহাম্মদ ভূঁইয়া মিলনায়তনে, দৈনিক দেশেরপত্র ও দৈনিক নিউজের যৌথ উদ্যোগে “জঙ্গিবাদ তথা যাবতীয় সন্ত্রাস দমনে আমাদের প্রস্তাবনা” এবং “অন্যায় দূরীকরণে সিস্টেম পরিবর্তনের বিকল্প নেই” শীর্ষক এক আলোচনা সভায় বক্তারা এ দাবি জানান। দৈনিক দেশেরপত্রের বৃহত্তর নোয়াখালী ব্যুরো প্রধান মোঃ মাঈন উদ্দিনের সভাপতিত্ত্বে লক্ষ্মীপুর জেলার বিভিন্ন স্কুল ও কলেজের অধ্যক্ষ, প্রভাষক, প্রধান শিক্ষক, শিক্ষক, প্রশাসনিক কর্মকর্তা, পৌর কমিশনার, ইউপি চেয়ারম্যান, মেম্বার, রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিবর্গ, ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব, চিকিৎসক, ব্যবসায়ী, শিল্প-উদ্যোক্তা, আইনজীবী, বুদ্ধিজীবী, সমাজ সেবক এবং স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গদের নিয়ে আয়োজিত এই আলোচনা সভায় সমাজে ‘জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ’ এর কারণে সৃষ্ট নানাবিধ সমস্যা এবং তা থেকে উত্তরণের উপায় নিয়ে আলোচনা করেন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে দৈনিক দেশেরপত্রের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক রুফায়দাহ পন্নী বলেন, “আল্লাহ আমাদেরকে একটি চমৎকার ভারসাম্যপূর্ণ জীবনব্যবস্থা দিয়েছেন কিন্তু আমরা আল্লাহর দেওয়া সেই পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থাকে পুরোপুরি ত্যাগ করে দাজ্জালীয় জীবনব্যবস্থাকে গ্রহণ করেছি। আজ আমাদের সমাজে শান্তির জন্য তন্ত্রের পর তন্ত্র এমনকি ব্যক্তির পর ব্যক্তি পরিবর্তন করে যাচ্ছি কিন্তু ফলাফল খারাপ থেকে আরও খারাপ হচ্ছে। বর্তমান সমাজে নারীদের অবমূল্যায়ন সম্পর্কে তিনি বলেন, “আমাদের দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক নারী হওয়া সত্ত্বেও তারা ধর্মব্যবসায়ীদের ভুল ব্যাখ্যায় প্রভাবিত হয়ে ঘরের চার দেয়ালে বন্দী জীবন কাটাচ্ছেন। অথচ রসুলের যুগের নারীদের রাষ্ট্রীয়, পারিবারিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক সকল কাজে অংশগ্রহণ, মসজিদে গিয়ে জুমার সালাহ আদায় এমনকি যুুদ্ধক্ষেত্রেও অবাধ বিচরণ ছিল।” সবশেষে তিনি সরকারসহ সকল দেশবাসীকে যামানার এমামের জঙ্গি দমনের প্রস্তাবনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন এবং সিস্টেম পরিবর্তনের মাধ্যমে শান্তি প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানান। দৈনিক দেশেরপত্রের উপদেষ্টা জনাব মসীহ উর রহমান জঙ্গিবাদ দমনে বিগত ৪ বছর আগে বাংলাদেশ সরকারকে দেওয়া যামানার এমাম জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নীর প্রস্তাবনার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখেন এবং বর্তমান পরিস্থিতিতে এই প্রস্তাবনার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “জঙ্গিবাদ বর্তমান পৃথিবীর এক ভয়াবহ সমস্যা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। শত দমননীতি প্রয়োগ করেও এর কোন সমাধান আসছে না। যারা জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন তারা জীবনকে পরোয়া করেন না। নিজের বুকে বোমা বেঁধে এরা শত্র“ দমনে নেমে পড়ে। সুতরাং ভয় দেখিয়ে তাদের কিছুতেই নির্মূল করা সম্ভব নয়। তাদেরকে নির্মূল করতে প্রয়োজন বিকল্প আদর্শ। সে আদর্শই ২০০৯ সালে প্রশাসনের সকল স্তরে তুলে ধরেছেন হেযবুত তওহীদের এমাম এমামুযামান জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নী। এখন সরকারের উচিত সে প্রস্তাবকে আমলে নেওয়া। একমাত্র হেযবুত তওহীদই পারবে জঙ্গিবাদের মত এমন একটি ভুল মতবাদের মোকাবেলা করতে।”এ ছাড়াও তিনি বর্তমানে প্রচলিত সিস্টেমের অসারতাগুলো একে একে তুলে ধরে বলেন, “যে সিস্টেম ঘুষ, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতির বিস্তার ঘটায়, যে সিস্টেম সমাজের একজন নিরীহ ছেলেকে সন্ত্রাসী বানায়, যে সিস্টেম একজন সৎ ব্যবসায়ীকে ভেজাল মেশাতে প্রলুব্ধ করে, মানুষকে জড়বাদী ও স্রষ্টাবিমুখ করে সেই সিস্টেমের পরিবর্তন করে আল্লাহর দেওয়া সিস্টেমে পুনরায় ফিরে গিয়ে আমাদের সমাজের যাবতীয় অন্যায় ও অশান্তি দূর করা আজকের মানবতার দাবী।” তিনি জঙ্গিবাদ দমন ও সিস্টেম পরিবর্তনে সমাজের সবাইকে একত্রে কাজ করার আহ্বান জানান।”
দৈনিক নিউজের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক জনাব হুমায়ুন কবির তার বক্তব্যে বলেন, “পৃথিবীতে আল্লাহর পাঠানো সকল নবী রসুলগণই মানবজাতির কল্যাণের জন্য স্রষ্টার পক্ষ থেকে সত্য বিধান নিয়ে এসেছেন এবং মানবতার কল্যাণে সেই সত্যকে প্রকাশ করেছেন। বর্তমান পৃথিবীতে যেসব ধর্মগুলি প্রচলিত আছে সেগুলোর সবই আল্লাহর পাঠানো। তবে ঐসব নবীদের অনুসারীরা এই ধর্মগুলিকে বিকৃত কোরে ভারসাম্যহীন করে ফেলছে, যে কারণে এই সব ধর্মগুলি তার অনাবিল গতি হারিয়ে নির্জীব একটি অনুষ্ঠান সর্বস্ব ধর্মে পরিণত হয়েছে।” ধর্মের নামে গজিয়ে উঠা একশ্রেণীর ধর্মব্যবসায়ী পুরোহিত ও আলেমদের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “সকল ধর্মগ্রন্থ এবং কোরআনের বাণী অনুযায়ী ধর্মীয় কাজের বিনিময়ে অর্থ উপার্জন করা নিষিদ্ধ। কিন্তু কিছু ধর্মের ঠিকাদার পরিচয়দানকারী পুরোহিত ও আলেম নিজেদেরকে অবতার ও রসুলদের ওয়ারিশ পরিচয় দিয়ে সেই নিষিদ্ধ কর্মটিই অবলীলায় করে যাচ্ছেন, তাই তাদের দ্বারা সমাজ, জাতি এবং দেশ কোনভাবেই উপকৃত হচ্ছে না। তাদের ব্যবসায়ীক স্বার্থ ফাঁস হয়ে যাবে মনে করে তারা ধর্মগ্রন্থ থেকে সাধারণ মানুষকে দূরে সরিয়ে রাখছে। অথচ প্রত্যেক ধর্মের অনুসারীদের জন্য স্রষ্টা প্রেরিত গ্রন্থগুলো তারা পাঠ করলে দেখতে পেতেন যে ধর্মের মূল বাণীতে কোন ভেদ নেই। ভেদ ও বিকৃতি এনেছে সেই কায়েমী স্বার্থবাদী গোষ্ঠীটি।” তিনি একজন মিডিয়াকর্মী হিসাবে সকল গণমাধ্যমকে মিথ্যা বর্জন করে প্রকৃত সত্য তুলে ধরার আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানে আগত অন্যান্য অতিথিবৃন্দ তাদের আলোচনায় জাতির বিশেষ সঙ্কটকালে দেশেরপত্রের এই উদ্যোগ ও প্রস্তাবনাকে অভিনন্দন জানান। তারা এই উদ্যোগকে একান্ত সময়োপযোগী ও কার্যকরী উল্লেখ করে সবাইকে দেশেরপত্রের সঙ্গে একাত্ম হয়ে কাজ করার আহ্বান জানান। অনুষ্ঠানের একপর্যায়ে মানবতার কল্যাণে সত্য প্রকাশে দৈনিক দেশেরপত্রের গৃহীত বিভিন্ন কার্যক্রম এবং জঙ্গিবাদের উত্থান ও উত্তরণের উপায়ের উপর নির্মিত সংক্ষিপ্ত ভিডিওচিত্র প্রদর্শন করা হয়। যামানার এমাম জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নীর জীবনী নিয়ে গান পরিবেশনে অনুষ্ঠান আরও প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে। মোঃ মাঈন উদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথিদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বঙ্গবন্ধু পরিষদের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোঃ শাহজাহান কামাল, লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলা চেয়ারম্যান ফরিদা ইয়াসমিন লিকা, সদর উপজেলা ভাইস-চেয়ারম্যান রাহেলা আক্তার, সদর উপজেলা মহিলা আওয়ামীলীগ সভাপতি জাহানারা আক্তার, বঙ্গবন্ধু প্রজন্মলীগের লক্ষ্মীপুর সভাপতি মোঃ তফসির, জেলা কৃষকদলের সভাপতি আমীর হোসেন চাষী, রামগতি প্রেসকাব সভাপতি রেজাউল হক, রায়পুর প্রেসক্লাব সাধারণ আতাউর রহমান মনির, মিনার গ্রীন হোমস্ লিঃ এর চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন খন্দকার প্রমুখ।