রেজাউল করিম
যুগে যুগে ধর্মই নারীদের প্রাপ্য অধিকার ও মর্যাদা প্রদান করেছে বলে মন্তব্য করেছেন হেযবুত তওহীদের ফরিদপুর জেলার আমীর রেজাউল করিম। গতকাল দৈনিক বজ্রশক্তি’র ফরিদপুর জেলা কার্যালয়ে আয়োজিত ‘নারীর প্রকৃত অধিকার ও বর্তমান সামাজিক অবস্থান’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় বক্তব্য দানকালে তিনি এ কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘একটি জাতির উন্নতি ও সমৃদ্ধির অন্যতম মাপকাঠি হচ্ছে সে জাতির নারীদের অবস্থান। নারীকে যদি প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করে রাখা হয়, অসম্মান ও অমর্যাদা করা হয়, বুঝতে হবে সে জাতি জাতিগতভাবে অধঃপতনের শিকার। একই কথা পুরো মানবজাতির ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। বর্তমানে সমস্ত পৃথিবীতে পাশ্চাত্যের বস্তুবাদী সভ্যতা নারীদেরকে চরম বিপর্যয়ের মুখোমুখী এনে দাড় করিয়েছে। ঘরে বাইরে প্রতারণা ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছে নারী। সমস্ত পৃথিবীতে নারীদের সীমাহীন দুর্ভোগ, নির্যাতন ও কষ্টকর জীবন প্রমাণ করে বর্তমান সভ্যতা মানবজাতিকে অধঃপতনের কত গভীরে নিয়ে গেছে।’ নারীদের বর্তমান দুর্দশার জন্য ধর্মব্যবসায়ীদের দায়ী করে তিনি বলেন, ‘মানবজাতির ইতিহাসে একমাত্র ধর্মই নারীকে প্রকৃত শান্তি, নিরাপত্তা ও অধিকার প্রদান করতে পেরেছে। ইসলামের পারিবারিক ও সামাজিক নীতিমালা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় নারীকে কী অতুলনীয় সম্মান ও স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ধর্মব্যবসায়ী মোল্লা-পুরোহিতরা ইসলামের মর্মার্থ বুঝতে অক্ষম বিধায় নারীদের গৃহবন্দী করে রাখতে চায়। তাদের কূপমণ্ডূকতার কারণে নারীরা পাশ্চাত্য সভ্যতার প্রতারণায় পা দিয়ে অশ্লীলতার দিকে ধাবিত হচ্ছে। একদিকে অপসংস্কৃতি, বেলেল্লাপোনা, অশ্লীলতা ও অবাধ যৌনতার প্রসার ঘটিয়ে পশ্চিমা বস্তুবাদী সভ্যতা নারীকে ভোগ্য পণ্যে পরিণত করছে, নারীদেহকে বাজারে বস্তু বানিয়ে বেচাকেনা করছে, অনৈতিকতার প্রসার ঘটাচ্ছে, অন্যদিকে ধর্মজীবীরা ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়ে নারীকে কার্যত গৃহবন্দী হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করতে বাধ্য করছে, ফলে নারীরা যেদিকেই পা বাড়াচ্ছে তারা না পাচ্ছে সত্যিকারের স্বাধীনতা, না পাচ্ছে সুন্দর জীবন। চারদিকে নারীমুক্তির নামে হাজারো রঙ-বেরঙের স্লোগান উঠছে, কিন্তু মুক্তির দেখা মিলছে না কোথাও।’ ইসলামের ইতিহাসের দৃষ্টান্ত তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘যে কেউ ইসলামের ইতিহাস ঘাটলে দেখবেন নারীরা রসুলের সাথে থেকে প্রত্যেকটি গুরুত্বপূর্ণ কাজে অংশগ্রহণ করেছে। বাজার পরিচালনা, হাসপাতাল পরিচালনার মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজ তো করেছেই, তদুপরি রসুলের সাথে থেকে যুদ্ধ পর্যন্ত করেছে নারীরা। আলী (রা.) এর বিরুদ্ধে উটের যুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন রসুলের সহধর্মীণী আয়েশা (রা.) এ কথা আমরা সকলেই জানি। ওহুদের যুদ্ধে যখন মুসলিমরা চরম বিপর্যয়ের মুখে পড়ে তখন উম্মে আম্মারা (রা.) চরম সাহসিকতার সাথে কাফেরদের মোকাবেলা করছিলেন যে ইতিহাস আমাদের ধর্মজীবী মোল্লা-মাওলানারাই ওয়াজে-নসিহতে বর্ণনা করেন। অথচ যখন বর্তমানে নারীদেরকে পরিবারের বাইরে গিয়ে সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় কাজে অবদান রাখার প্রশ্ন আসে, আমাদের মোল্লা-মাওলানারা সেটাকে ইসলামবিরোধী ফতোয়া প্রদান করে নারীদেরকে গৃহাভ্যন্তরে থাকার ব্যবস্থা পাকাপাকি করেন। সত্য প্রতিষ্ঠার স্বার্থে ধর্মব্যবসায়ীদের এই মিথ্যাচারের বিরুদ্ধে আমাদের রুখে দাঁড়াতে হবে। মনে রাখতে হবে, ধর্ম নয়, নারীকে প্রকৃত অধিকার থেকে বঞ্চিত রেখেছে ধর্মব্যবসায়ীরা। প্রকৃত ধর্ম প্রতিষ্ঠিত হলে অবশ্যই নারী তার পূর্ণ স্বাধীনতা, অধিকার ও মর্যাদা ভোগ করবে।