হেযবুত তওহীদ

মানবতার কল্যাণে নিবেদিত

মানুষ কেন মানুষের বিধাতা (এলাহ) হতে পারে না?

মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম

‘Laws are for survivors’ – আইন জীবিতদের জন্য। মৃত ব্যক্তির জন্য আইনের দরকার নেই। বর্তমান বলে আসলে কিছু নেই, কারণ যে মুহূর্ত্ত এখনও আসে নি, তা ভবিষ্যৎ আর যেটা এসে গেল সেটা চোখের নিমেষ ফেলার আগেই অতীত হয়ে গেল। তাই আইন যা কিছুই করা হয় সবই ভবিষ্যতের জন্য। যেটা অতীত হয়ে, গেছে অর্থাৎ অতীত কালের জন্য আইনের প্রয়োজন নাই। মানুষ কিভাবে তাদের ব্যক্তিগত, জাতীয় ও সামষ্টিক জীবন পরিচালিত করবে সেটা একটা জীবন ব্যবস্থা অর্থাৎ (System of life)। মানুষের সব চাইতে বড় সীমাবদ্ধতা হলো সে ভবিষ্যৎ জানে না। ভবিষ্যৎতে কি হবে সে নিশ্চিত রূপে বলতে পারে না। আল্লাহ তাকে কিছু অনুমানশক্তি দিয়েছেন, সেই অনুমান করে কেবল একটি তত্ত্ব (Theory) দাঁড় করাতে পারে যদিও আল্লাহ বলে দিয়েছেন, “তাদের অধিকাংশ ব্যক্তিই নিজেদের আন্দাজ অনুমানের অনুসরণ করে, আর সত্যের পরিবর্তে অনুমান তো কোনো কাজে আসে না; আল্লাহ তায়ালা অবশ্যই ওদের কর্মকাণ্ড স¤পর্কে পূর্ণাঙ্গ ওয়াকেবহাল রয়েছেন [সূরা ইউনুস -৩৬]”। ব্যক্তি মানুষ জানে না, এখন থেকে এক মিনিট পরে তার জীবনের কি পরিবর্তন হবে, কাজেই সমাজের সকল মানুষের ভবিষ্যৎ কি হবে তা বলার প্রশ্নই আসে না। যে কোন আকষ্মিক ঘটনায় কোন সমাজের, জাতির, দেশের বিরাট পরিবর্তন হয়ে যায় যা মাথায় রেখে বিধান রচনা করা মানুষের পক্ষে অসম্ভব। আশ্চর্য্য ও হাস্যকর বিষয় হল, যে তার ভবিষ্যৎই জানে না অথচ সে তার ভবিষ্যৎ চলার পথ, বিধান রচনা করে। মেলা হুলুস্থুল করে সে একটি আইন তৈরী করে, কিন্তু কিছুদিন না যেতেই সেই আইনের অসঙ্গতি, অপ্রযোজ্যতা তার চোখে ধরা পড়ে, তখন আবার তাড়াহুড়া করে সেটা সংশোধনের জন্য বসে। আবার সেটা তাছাড়া এমন এক জীবনব্যবস্থা তৈরি করা কি কোন মানুষের পক্ষে সম্ভব যে জীবনব্যবস্থা একসঙ্গে পৃথিবীর সকল মানুষের সকল সমস্যা সমধান করবে? পৃথিবীর ভৌগোলিক অবস্থা এমন যে মরু এলাকার মানুষদের চিন্তা ভাবনা. মন মেজাজ রুচি, সংস্কৃতি, আর কৃষিনির্ভর সমভূমির এলাকার মানুষের মন মেজাজ রুচি অভিরুচি এক নয়, পাহাড়ী এলাকার আর বরফাচ্ছন্ন এলাকার মানুষের চরিত্রও এক নয়, বৈচিত্র আছে, বিভিন্নতা আছে। এক কথায় পৃথিবীর সকল মানুষের মন মেজাজ রুচি অভিরুচি একত্রে বিবেচনা করে এমন একটা জীবন ব্যবস্থা যা সর্বত্র কার্যকরী হবে, প্রয়োগ হবে সেটা কি মানুষের পক্ষে তৈরী করা সম্ভব? সম্ভব নয়। কারণ একটাই যুক্তি, যে তার ভবিষ্যৎ জানে না, সে কি করে তার ভবিষ্যতের জন্য আইন প্রণয়ন করতে পারে? এটা করতে পারেন একমাত্র আল্লাহ যিনি এই মহাবিশ্ব সৃষ্টি করেছেন, মানবজাতি সৃষ্টি করেছেন, মানবজাতির পৃথক মন মানসিকতাও তিনি সৃষ্টি করেছেন। কাজেই কী ভাবে পৃথিবীতে জীবন যাপন করলে মানুষ অন্যায়, অত্যাচার অবিচার, নিরাপত্তাহীনতা ইত্যাদি সবকিছু থেকে বেঁচে পরম নিরাপত্তা ও সুখে থাকতে পারবে তা আল্লাহর পক্ষেই জানা সম্ভব। তিনিই বলছেন, যিনি সৃষ্টি করেছেন তিনি কি জানেন না? তিনি সুক্ষ্মতম বিষয়ও জানেন (কোর’আন, সূরা মুল্ক ১৪)। এই কথার কোন জবাব আছে কি? তদুপরি আল্লাহ বলেছেন, আমি তোমাদের সামান্য জ্ঞানই দিয়েছি (কোর’আন, সূরা বনী ইসরাঈল ৮৫)।
ক্ষুদ্র জ্ঞানের অধিকারী মানুষের পক্ষে কি অসীম জ্ঞানের অধিকারী আল্লাহর মত নিখুঁত কোন কাজ করা সম্ভব? এই ধারণাতীত বিশাল বিশ্বজগৎ যিনি সৃষ্টি করেছেন, যার একটি পরমাণুতেও কোন খুঁত নেই, মানুষ জাতির জন্য তাঁর তৈরী জীবনব্যবস্থার চেয়ে অন্য কোন জীবনব্যবস্থা নিখুঁত হওয়া কি  সম্ভব? তবুও যিনি আমাদের স্রষ্টা, যিনি সমস্ত ভুল-ত্র“টির ঊর্দ্ধে, তাঁর দেওয়া জীবনবিধান প্রত্যাখ্যান করে আমরা নিজেরাই নিজেদের জন্য জীবনব্যবস্থা তৈরী করে নিয়ে জীবনযাপন করছি। ফলে আজ সমস্ত মানবজাতি অশান্ত, অস্থির। অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, বিচারিক ইত্যাদি অন্যায়ের পরিণাম ভোগ করছে; মানুষে মানুষে সংঘাতে, রক্তপাতে মানবজাতি ভারাক্রান্ত। এটা কোন যুক্তি?

লেখাটি শেয়ার করুন আপনার প্রিয়জনের সাথে

Email
Facebook
Twitter
Skype
WhatsApp
সার্চ করুন

যুক্ত হোন আমাদের ফেসবুক পেজের সাথে...