– আলী হোসেন, আমীর, ঢাকা মহানগরী, হেযবুত তওহীদ
আমাদের অনেকের কাছেই ইসলাম মানে দাড়ি, টুপি, পায়জামা, মিলাদ, মিসওয়াক, ঢিলা কুলুক, মসজিদ, মাদ্রাসা, সুর করে কোর’আন তেলাওয়াত করা, মসজিদে মসজিদে আজান দেওয়া, দলে দলে মক্কায় যাওয়া এগুলোই ইসলাম। আসলে কি তাই? মূলতঃ মানবতা ও ইসলাম একই সূত্রে গাঁথা। ইসলাম অর্থ শান্তি, শান্তি প্রতিষ্ঠা মানেই মানবতা প্রতিষ্ঠা। ইসলামের দাবি হচ্ছে সমাজে এমন একটা পরিস্থিতি থাকবে যে মানুষ দরজা খুলে ঘুমাবে। আতঙ্ক নেই, ভয় নেই, কাল কী খাবে তা নিয়ে দুশ্চিন্তা নেই এমন একটা শান্তিপূর্ণ পরিস্থিতির নাম হলো ইসলাম। আজকে ধর্মব্যবসায়ীরা এটা বিকৃত করে ইসলামটাকে ঐ গুটিকয় ব্যক্তিগত আমল, রুচি-অভিরুচি, পোশাক-পরিচ্ছদ ও আচার-আচরণের মধ্যে বন্দি করে রেখেছে। সেজন্যই আজ এই প্রশ্ন উঠছে যে, আমরা কি মানবতা চাই না ইসলাম চাই। আসলে ধর্ম আর মানবতা একই কথা। ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হওয়া মানেই মানবতা প্রতিষ্ঠিত হওয়া। যে মানবতার প্রতিষ্ঠা চায়, সে-ই ইসলাম চায়, সে হিসাবে সমস্ত পৃথিবীর মানুষ ইসলাম চায়, গুটিকয় দাঙ্গাবাজ শয়তান বাদে। হ্যাঁ, বলতে পারেন, মানবতাবাদী বহু আন্দোলন পৃথিবীতে আছে যারা ধর্মকে বাদ দিয়েই প্রচেষ্টা চালাচ্ছে, সেবামূলক কাজ করছে। তারা মিটিং, সিম্পোজিয়াম করছে, মানববন্ধন করছে কিন্তু তারা আজ পর্যন্ত কোথাও মানবতা প্রতিষ্ঠা করতে পারে নাই। এটা প্রমাণিত হয়ে গেছে। আজকাল তো ধর্মব্যবসার মতো মানবতার ব্যবসাও হয়, এটা সরকারী-বেসরকারী-আন্তর্জাতিক সব ক্ষেত্রেই হয়। তাদের এ ব্যর্থতার কারণ তারা নৌকা ছিদ্র করে দিয়ে পানি সেচছেন। এটা কোনো কাজের কথা না। এটা ইতিহাস যে, মানুষ যখন স্রষ্টার দেওয়া বিধান, মূল্যবোধ, ন্যায়-নীতি মান্য করেছে সেখানেই মানবতা বিকশিত হয়েছে। তাকে পুলিশের ভয় দেখিয়ে ভালো মানুষ বানাতে হয় নি, সে সব সময় স্রষ্টার উপস্থিতি ও স্রষ্টার দৃষ্টির গণ্ডির মধ্যে আছে বলে বিশ্বাস করার কারণে যেখানে সে একা সেখানেও সেও নীতিভ্রষ্ট হয় নি, সে ভেবেছে আমি যদি এখন অন্যায় করি তাহলে আমাকে একদিন এর জন্য জবাবদিহি করতে হবে। মানুষ অন্য মানুষকে শ্রদ্ধা করতে শিখেছে। অপরের অধিকার সম্পর্কে সচেতন ছিল। সে উপলব্ধি করেছে যে আমি যেমন মানুষ সেও মানুষ। এই পৃথিবীর সকল উপাদানের উপরে আমার যেমন অধিকার রয়েছে মাটির উপরে অন্যদেরও অধিকার রয়েছে। কাজেই আমি অন্যের অধিকার হরণ করতে পারি না। এই হলো মানবতাবাদী। আর এই চিন্তাকে মানুষ তখনই ধারণ করতে পারবে যখন তার মধ্যে স্রষ্টার ভয় থাকবে অর্থাৎ ধর্মগুণ থাকবে। এছাড়া ব্যক্তিগতভাবে বিক্ষিপ্ত-বিচ্ছিন্ন দু’ একজনকে মানবতাবাদী করা গেলেও জাতিগতভাবে অসম্ভব। আজ বিশ্বে সবচেয়ে বেশি মানবতাবাদী র্যালি, কর্মসূচি, শ্লোগান হয় আমেরিকায়, কিন্তু পৃথিবীর বুকে সবচেয়ে মানবতাবিরোধী কাজ তারাই করছে। তারা নিজেরা যুদ্ধ করছে, অন্যদের মধ্যে যুদ্ধ বাধিয়ে দিয়ে উভয়পক্ষের কাছে অস্ত্র বিক্রি করছে। বিগত কয়েক শতাব্দীতে এই পশ্চিমা সভ্যতা যা করেছে, পৃথিবীর হাজার হাজার বছরের ইতিহাসে এরকম মানবতার লঙ্ঘন আর হয় নাই। কিন্তু রাষ্ট্রীয় জীবনে ধর্মীয় মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠিত হলেই মানবতার প্রকৃত রূপ মানবজাতি দেখতে পেয়েছে। এই ইসলাম যখন প্রকৃত ইসলাম ছিল- অর্থাৎ বিশ্বনবীর (দ.) কাছ থেকে যারা সরাসরি শিক্ষা-গ্রহণ করেছিলেন, তাদের অন্যতম, দ্বিতীয় খলিফা ওমরের (রা.) সময় একবার দুর্ভিক্ষ হয়েছিল। যতদিন দুর্ভিক্ষ ছিল ততদিন দুর্ভিক্ষপীড়িত মানুষ যেমন অর্দ্ধাহারে অনাহারে থাকে তিনিও তেমনি থাকতেন। ওমর (রা.) প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, যতদিন না জনসাধারণ এমন অবস্থায় পৌঁছবে যে তারা ভালো করে খাবার পরও উদ্বৃত্ত থাকবে ততদিন তিনি গোশত-মাখন এমনকি দুধ পর্যন্ত খাবেন না এবং খানও নি। তিনি বলতেন “আমি যদি ঠিকমত খাই তবে আমি কী করে বুঝব আমার জা
তি কী কষ্ট সহ্য করছে?” এই অর্ধাহারে অনাহারে থেকে খলিফা ওমরের (রা.) মুখ রক্তশূন্য ও চুপসে গিয়েছিল। এই ঘটনা ও ওমরের (রা.) ঐ কথাগুলো ঐতিহাসিক সত্য, যারা বিস্তারিত জানতে চান, স্যার উইলিয়াম ম্যুর এর অহহধষং ড়ভ ঊধৎষু ঈধষরঢ়যধঃব বইটি পড়ে নেবেন। এই বছর চুরির জন্য হাত কাটার বিধান পর্যন্ত উমর (রা.) স্থগিত করেছিলেন। এর চেয়ে মানবিক আর কী হতে পারে?