– মো: মসীহ উর রহমান, আমীর, হেযবুত তওহীদ
রসুলাল্লাহর মক্কা জীবন ছিল মো’মেনদের উপর চরম নির্যাতনের যুগ। এদিকে বেলালকে (রা:) মরুভূমিতে পাথরচাপা দিয়ে রাখা হোয়েছে, ওদিকে খাব্বাবকে (রা:) শোয়ানো হোয়েছে জ্বলন্ত কয়লার উপর। বর্শার আঘাতে শহীদ হোলেন সুমাইয়া (রা:), ইয়াসীর (রা:) হোলেন দ্বিখণ্ডিত। মহানবী তবু অটল, একের পর এক গোত্রের কাছে যাচ্ছেন কলেমার আহ্বান নিয়ে, প্রত্যাখ্যাত হোচ্ছেন, রক্তাক্ত হোচ্ছেন, ধিকৃত হোচ্ছেন সর্বত্র। অপবাদ, মিথ্যাচারে সত্যকে আচ্ছাদিত করা হোল। মহানবীর বিরুদ্ধে এমন মিথ্যা বানোয়াট কল্পকাহিনী সাজিয়ে পরিকল্পিত প্রোপাগান্ডা চালানো হোল যা কোন সুস্থ বিবেকবান মানুষ চিন্তাও কোরতে পারবে না। সাধারণ মানুষ এই মিথ্যায় দারুন প্রভাবিত হোল। পুরো জাতিকে বন্দী কোরে রাখা হোল উন্মুক্ত গিরিসঙ্কটে, খাদ্যহীন, পানিহীন। শহীদ হোল অনেক দুধের শিশু। বিজয়ের কোন সম্ভাবনা নেই, আশার কোন আলো নেই, নির্যাতন থেকে রক্ষা করার কেউ নেই, এমন কি পক্ষে কথা বলারও কেউ নেই। ভরসা শুধু আল্লাহ। এমন কঠিন সময়ে আল্লাহ রসুলকে বোললেন কাফেরদের প্রতি এক সাংঘাতিক ঘোষণার নির্দেশ।
“(হে নবী আপনি বলুন) তোমরা যাদেরকে আল্লাহর শরীক কোরেছ (অর্থাৎ আল্লাহকে বাদ দিয়ে যাদের হুকুম, বিধান, আইন মানছো) তাদেরকে ডাক, অতঃপর আমার বিরুদ্ধে সম্মিলিতভাবে ষড়যন্ত্র কর এবং আমাকে কোনও বিশ্রাম দিয়ো না।” (সুরা আ’রাফ- ১৯৫)।
“(হে নবী আপনি বলুন) তোমরা সকলে আমার ক্ষতি করার জন্য প্রচেষ্টা চালাও; এবং আমাকে বিন্দুমাত্র অবকাশ ও বিশ্রাম দিয়ো না” (সুরা হূদ- ৫৫)
উপরোক্ত আয়াতগুলিতে আল্লাহ রব্বুল আলামীন তাঁর সত্য নবীর মাধ্যমে সকল মিথ্যা সমালোচনাকারী, ষড়যন্ত্রকারী, অপপ্রচারকারীদেরকে বোলেছেন, তোমরা যত পার আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র কর, তোমাদের যত শুভাকাক্সক্ষী আছে, যত প্রভু আছে (অর্থাৎ যাদের আইন, বিধান, হুকুমের গোলাম তোমরা) তাদের ডাকো এবং তোমাদের সমস্ত শক্তি দিয়ে আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র কর, বিরতি দিয়ো না, বিশ্রাম দিয়ো না।
আল্লাহপাকের এই ঘোষণা দেবার অন্যতম কারণ হোল- তিনি জানেন যে, তিনি যেমন হক, সত্য, তেমনি তাঁর প্রেরিত নবী হক, সত্য, নবীর উপর তিনি যে দীন দিয়েছেন তাও হক, সত্য। সুতরাং তাঁর ঐ সত্যদীন, তাঁর নূর বা আলো খুব শীঘ্রই স্বমহিমায় উদ্ভাসিত হবেই, রসুল বিজয়ী হবেনই। কোন অপপ্রচার, কোন মিথ্যাচার, কোন ষড়যন্ত্রই এই সত্যকে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে আড়াল কোরতে পারবে না। এ জন্যই আল্লাহপাক তাঁর প্রিয় নবীকে মিথ্যাবাদীদের মিথ্যাচারে কোনরূপ কান না দিয়ে, ষড়যন্ত্রকারীদের ষড়যন্ত্রে বিচলিত না হোয়ে, অপপ্রচারকারীদের অপপ্রচারে হতাশ না হোয়ে সবরের সাথে সত্যদীন প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম চালিয়ে যেতে বোলেছেন। আল্লাহ ঘোষণা কোরেছেন,
“আমার প্রেরিত বান্দাদের সম্পর্কে আমার এ কথা সত্য হোয়েছে। তারা অবশ্যই সাহায্যপ্রাপ্ত হবে এবং আমার বাহিনীই বিজয়ী হবে। অতএব কিছু কালের জন্য তাদেরকে তুমি উপেক্ষা কর। তুমি তাদের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করতে থাক; অচিরেই তাদের পরিণাম দেখতে পাবে।” (সুরা আস-সাফ্ফাত: ১৭১-১৭৫)
“আল্লাহ লিখে দিয়েছেন, আমি এবং আমার রসুলগণ অবশ্যই বিজয়ী হবো (সুরা মুজাদালাহ ২১)।
পরবর্তী ইতিহাস সাক্ষী, আল্লাহর রসুল বিজয়ী হোলেন, মিথ্যাবাদী, অপপ্রচারকারী, ষড়যন্ত্রকারীদের মুখ কালিমালিপ্ত হোল। অবশ্য যারা তওবা কোরে সত্য গ্রহণ কোরলো তারা তো পরিত্রাণ পেল কিন্তু যারা মিথ্যাকেই আঁকড়ে ধোরে থেকে মৃত্যুবরণ কোরল তারা পতিত হোল জাহান্নামে এবং কেয়ামত পর্যন্ত তারা হোল লা’নতের পাত্র।
১৩০০ বছরের কালপরিক্রমায় আবার আজকের পৃথিবীও জাহেলিয়াতের অন্ধকারে নিমজ্জিত; শুধু মোসলেম নয় সমস্ত মানব জাতি আজ আল্লাহর সার্বভৌমত্ব পরিত্যাগ কোরে ইহুদি খ্রিস্টান ‘সভ্যতা’ দাজ্জালের পায়ে সাজদাবনত। তাই আজ সমগ্র পৃথিবী অন্যায়, অবিচার, মারামারি, যুদ্ধ, রক্তপাত, ক্ষুধা, দারিদ্র্য, নিরাপত্তাহীনতা এক কথায় চরম অশান্তিতে ডুবে আছে যা প্রাচীন আরবের আইয়্যামে জাহেলিয়াতকেও হার মানায়। এই চরম অশান্তির দাবানল থেকে মানবজাতিকে রক্ষা করার জন্য আল্লাহপাক অশেষ রহম কোরে যামানার এমাম, এমামুযযামান জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নীকে সেই প্রকৃত ইসলাম বোঝালেন। মহামান্য এমামুযযামান আখেরী নবীর উম্মত হিসাবে সেই হারিয়ে যাওয়া সত্য আবার আমাদের মাঝে তুলে ধোরেছেন। সেই সত্য নিয়ে আল্লাহর অশেষ করুণায় হেযবুত তওহীদ দাঁড়িয়েছে পৃথিবীর সকল মিথ্যা, সকল অন্যায়, অবিচারের বিরুদ্ধে। গত ১৮ বছর ধোরে হেযবুত তওহীদ সকল আইন মান্য কোরে, কারও জান-মালের কোন ক্ষতিসাধন না কোরে, জ্বালাও-পোড়াও, ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ ইত্যাদি ধ্বংসাত্মক কোন কাজে অংশগ্রহণ না কোরে সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ উপায়ে এই সত্য মানুষের সামনে তুলে ধোরছে। সত্য প্রকাশ হোলে মিথ্যার মুখোশের আড়ালে ঢেকে থাকা কুৎসিত চেহারাগুলি প্রকাশ পেয়ে যাবে- এই ভয়ে গত ১৮ বছর ধোরে আমাদের বিরুদ্ধে এক শ্রেণির ধর্মব্যবসায়ী আলেম মোল্লা ও ধর্মবিদ্বেষী, ইহুদি খ্রিস্টান ‘সভ্যতা’ দাজ্জালের তল্পিবাহক মিডিয়া আমাদের বিরুদ্ধে বিভিন্নভাবে মিথ্যাচার, ষড়যন্ত্র কোরে আসছে। ধর্মজীবী মোল্লারা বলে, হেযবুত তওহীদ খ্রিস্টান, কাফের হোয়ে গেছে, ইসলাম বিদ্বেষী মিডিয়া বলে তার ঠিক বিপরীত কথা, হেযবুত তওহীদ জঙ্গি। সাধারণ মানুষ এদের বিপরীতমুখী অপপ্রচারে প্রভাবিত হোয়ে কখনও হেযবুত তওহীদকে খ্রিস্টান বোলছে, কখনও জঙ্গি বোলছে এবং নির্যাতন কোরে প্রশাসনের হাতে তুলে দিচ্ছে। প্রশাসনও ‘প্রথাসিদ্ধভাবে’ আমাদের কোন কথা না শুনেই রিমান্ডের নামে অমানুষিক নির্যাতন চালাচ্ছে, বিনা অপরাধে মাসের পর মাস আটকিয়ে রাখছে। এসব অপপ্রচারের কারণে আমাদের জান-মালের অনেক ক্ষয়ক্ষতি হোয়েছে, আমাদের অনেকের বাড়িঘর ভষ্মীভূত কোরে দেওয়া হোয়েছে, অনেকের বাড়িঘর, দোকানপাট লুটপাট কোরে নেওয়া হোয়েছে, পাকা ফসল কেটে নেওয়া হোয়েছে অনেক সদস্যের, বিষ দিয়ে পুকুরের মাছ মেরে ফেলা হোয়েছে, সংঘবদ্ধভাবে আক্রমণ কোরে মেরে আহত ও পঙ্গু কোরে দেওয়া হোয়েছে, এমনকি একজন নারী ও একজন পুরুষকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা পর্যন্ত কোরেছে। ঠিক মক্কাতে রসুল ও তাঁর উম্মাহকে যে পরিস্থিতিতে পড়তে হোয়েছিল, আজ হেযবুত তওহীদেরও সেই অবস্থা। চারিদিকে অপবাদ, অপপ্রচার, নির্যাতন, যুলুম। এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে আমাদের পক্ষে কথা বলারও কেউ নেই। আমাদের একমাত্র সান্ত্বনা, আল্লাহর রসুলের জীবন, আমার সহায় একমাত্র আল্লাহ। আমরা আল্লাহর ঐ কথাগুলির উপরে বিশ্বাস রাখি যে, আল্লাহ ও তাঁর রসুল শেষ পর্যন্ত জয়ী হবেন অর্থাৎ মিথ্যার মেঘ কাটবে, সত্য উদ্ভাসিত হবে। তাই এত নির্যাতন সত্ত্বেও আমরা একদিনের জন্যও আমাদের বালাগ বন্ধ কোরি নি। দুনিয়ার এই অশান্তিময় অবস্থা থেকে মানবজাতির মুক্তির একমাত্র পথ আল্লাহ দয়া কোরে আমাদের কাছে দিয়েছেন, এই মহামূল্যবান আমানত নিয়ে ঘরে বোসে থাকলে হবে না, মানুষের কাছে তা তুলে ধোরতে হবে।
১৮ বছর এভাবেই কেটে গেল। ধীরে ধীরে সাধারণ মানুষ ও প্রশাসন আমাদের সম্পর্কে অনেকটাই জানতে পারছে। ইতোপূর্বে যারা হেযবুত তওহীদকে ভুল বুঝেছিল, এর সদস্যদেরকে নির্যাতন কোরেছিল তাদের অনেকেই ভুল বুঝতে পেরে দুঃখপ্রকাশ কোরছে। হেযবুত তওহীদের প্রচারিত মহাসত্যগুলি মানুষ জেনে ফেলায় কায়েমী স্বার্থবাদী, মিথ্যাচারী, ষড়যন্ত্রকারীদের চোখের ঘুম যেন হারাম হোয়ে গেছে; তারা আবার আমাদের বিরুদ্ধে আটঘাট বেঁধে অপপ্রচারে নেমেছে। এরা হোচ্ছে মূলত ধর্মজীবী মোল্লাশ্রেণী এবং ইসলাম-বিদ্বেষী গণমাধ্যমগুলি, প্রকৃত ইসলামের কথা শুনলে যাদের মাথা থেকে পা পর্যন্ত যেন জ্বলে যায়। সাধারণ সময়ে এই শ্রেণিদু’টি একে অপরের বিরোধী, কিন্তু হেযবুত তওহীদের বিরুদ্ধে তারা একাট্টা। এই উভয়পক্ষের কমন ইন্টারেস্ট হোল, এরা দু’দলই মিথ্যার উপরে প্রতিষ্ঠিত, আর হেযবুত তওহীদের প্রচারিত সত্যের শর এদের উভয়ের মর্মস্থল ভেদ কোরে চোলে যায়। এটাই তাদের মর্মবেদনার কারণ। হেযবুত তওহীদের প্রচারিত এই সত্যগুলি যদি সর্বত্র গৃহীত হোয়ে যায়, তখন তাদের এই মিথ্যার সওদাগরি বন্ধ হোয়ে যাবে। তাই তারা আমাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে জোটবদ্ধ।
আমরা তাদেরকে সাফ জানিয়ে দিতে চাই- তাদের এই ষড়যন্ত্রে আমরা এতটুকুও বিচলিত নই, তাদের মিথ্যাচারে আমরা শঙ্কিত নই। আমরা আল্লাহর নির্দেশনা অনুযায়ী সবরের সাথে সত্যের পথে, সত্য ধারণ, সত্য প্রকাশ ও সত্য প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম কোরেই যাব এনশাল্লাহ। আল্লাহর ঘোষণা স্মরণ কোরিয়ে দিয়ে তাদেরকে বোলতে চাই- আমাদের বিরোধিতায় তারা তাদের সামর্থ্যরে সবটুকু বিনিয়োগ কোরুক, যত খুশি ষড়যন্ত্র কোরতে থাকুক, তাদের যত শক্তি আছে, যত শুভাকাক্সক্ষী আছে সবাইকে একত্র কোরে আমাদেরকে ধ্বংস কোরে দেওয়ার চেষ্টা কোরুক, এবং বিরতিহীনভাবে এই চেষ্টা কোরে যাক; আমাদেরকে একটুও বিরাম বা অবকাশ দেওয়ার প্রয়োজন নেই। তারা জেনে রাখুক, আল্লাহ আমাদের সঙ্গে আছেন, এবং তিনিই আমাদের জন্য যথেষ্ট (হাসবুনাল্লাহ)। আল্লাহপাক এক মহান মো’জেজা ঘোটিয়ে জানিয়ে দিয়েছেন, “হেযবুত তওহীদ হক, হেযবুত তওহীদের এমাম তাঁর মনোনীত ও হক এবং হেযবুত তওহীদ দিয়েই আল্লাহ সমস্ত পৃথিবীতে তাঁর সত্যদীন প্রতিষ্ঠিত কোরবেন।” সুতরাং অপপ্রচারকারী ষড়যন্ত্রকারীদের মিথ্যার জাল ছিন্ন কোরে সমস্ত পৃথিবীময় আল্লাহ তাঁর নূর, আলো উদ্ভাসিত কোরবেনই এনশাল্লাহ। আর তারাই মহাকালের আঁস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হবেন, নমরুদ, ফেরাউন আর আবু জাহেলের মত। ইতিহাস আবর্তিত হয়, এটাই প্রাকৃতিক নিয়ম।