বিশ্বজুড়ে অন্যায় অপশক্তির জয়জয়কার। পরাশক্তিধর রাষ্ট্রগুলোর অন্যায্য আবদার-দাবি জানমাল দিয়ে মিটিয়ে যেতে হচ্ছে অনুন্নত, দুর্বল, পিছিয়ে পড়া রাষ্ট্রগুলোকে। তাদের যেন কিছুই করার নেই। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা যাদের লক্ষ্যই ছিল শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলোর শোষণের হাত থেকে দুর্বল রাষ্ট্রগুলোকে রক্ষা করার, তাদের অধিকার সমুন্নত রাখা। কিন্তু বাস্তবে তা তো হচ্ছেই না বরং জাতিসংঘ, কমনওয়েলথ ইত্যাদি বড় বড় সংস্থারগুলো কাজই যেন হয়ে দাঁড়িয়েছে পরাশক্তিধর রাষ্ট্রগুলোর হুকুমের তাবেদারি করা। অথচ প্রতিষ্ঠাকালে এসব সংস্থাগুলোর লক্ষ্য ছিল সদস্যভুক্ত সকল রাষ্ট্রের জন্য আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আইন, নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক উন্নয়নসহ মানবাধিকার সমুন্নত রেখে পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে শান্তিপূর্ণ একটি বিশ্ব নির্মাণ করা। কিন্তু সেই সংস্থাগুলো এখন বিশ্বের বড় বড় সুপার পাওয়ার পরাশক্তিধর রাষ্ট্রগুলোর হাতে মুঠোয় বন্দি, তাদের চাওয়া পাওয়া গণ্ডিতে আবদ্ধ। এর বাইরে এদের ভূমিকা নীরব দর্শকের মতই নির্বিকার, নিষ্ক্রিয়। এসব পরাশক্তিধর যেকোনো একটি রাষ্ট্রের ভেটো বা বাধাপ্রদান ক্ষমতা আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর যেকোনো ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও আইন বাস্তবায়নে বাধা প্রদান করতে পারে। বাকি সংখ্যাগরিষ্ঠ রাষ্ট্রগুলোর মতামত সেখানে অগ্রহণযোগ্য। ন্যায়-অন্যায়ের তো প্রশ্নই আসে না।
কথা হচ্ছে, পরাশক্তিধর রাষ্ট্রগুলোর এই বিশেষ ক্ষমতা কেন? তাদের হাতের মুঠোতে পুরো বিশ্বের ভালোমন্দ নির্ভর করছে কেন? বিশ্বের পিছিয়ে পড়া রাষ্ট্রগুলো তাদের মুখাপেক্ষী কেন? এর কারণ, বিশ্বের মোঁ সম্পদের সিংহভাগই তাদের হাতে। বিশ্বের বড় বড় ব্যবসা-বাণিজ্য, প্রতিষ্ঠান, অর্থ-সম্পদ, প্রযুক্তি, উদ্ভাবন, আবিষ্কার, জ্ঞান-বিজ্ঞানে উৎকর্ষতা সকলকিছুই এই গুটিকয়েক রাষ্ট্রের হাতের মুঠোয়। স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট এর সর্বশেষ (২০১৭-২০২১) রিপোর্ঁ অনুযায়ী বৈশ্বিক অস্ত্র উৎপাদন ও রপ্তানিতে শীর্ষ ১০ দেশের তালিকার প্রথম দিকেই রয়েছে জাতিসংঘের ভেটোপ্রদানকারী পাঁচটি দেশ। বাকি রাষ্ট্রগুলো নিজেদের সুরক্ষা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে অর্থনৈতিক-রাজনৈতিক স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী বিভিন্ন রাষ্ট্রগুলোর সাথে গড়ে তুলেছে অর্থনৈতিক ও আঞ্চলিক বিভিন্ন জোঁ। এটাতো স্পষ্টই যে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে হুকুমদাতারা হুকুম দেয় স্বেচ্ছাচারিতায়, বাকি রাষ্ট্রনেতাদের গুরুত্ব দেয় শক্তিমত্তার ভিত্তিতে।
এত গেল, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এক রাষ্ট্রের সাথে আরেক রাষ্ট্রের ক্ষমতার লড়াইয়ের কথা। এছাড়া প্রতিটি রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে অর্থনৈতিক-রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, অস্থিরতা, সংকট প্রতিনিয়ত লেগেই আছে। ক্ষমতাসীন ও বিরোধীদলের ক্ষমতার ভাগাভাগিতে নিষ্পেষিত হচ্ছে সাধারণ মানুষগুলো। যত দিন যাচ্ছে তত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার রাজনৈতিক সিস্টেমের প্রতিটি স্তর ধসে পড়ছে। সমাজ ততবেশি দুর্নীতিগ্রস্ত আর অন্যায়ের যাঁতাকলে পিষ্ট হচ্ছে। কঠিন থেকে কঠিনতর, স্বল্প থেকে দীর্ঘতর কলরবে রচিত-পরিমার্জিত-পরিবর্ধিত আইন-সংবিধান-প্রটোকল কোনোকিছুই বন্যার মত উপচে পড়া অন্যায়ের ঢলকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। দুর্নীতি, ক্ষমতা ও রাজনীতির অপপ্রয়োগ, সন্ত্রাস, খুনসহ সকল অপরাধ ধাঁই ধাঁই করে বেড়েই চলেছে। রাষ্ট্রের রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতির সয়লাব। সরকার, প্রশাসন, সচেতন মহলের কপালে আজ চিন্তার ভাঁজ, ‘সর্বাঙ্গে ব্যথা, ওষুধ দেব কোথা’?
এমন উদ্ভূত পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রের অভিভাবকগণের সময় এসেছে নতুন করে ভাবার, সিদ্ধান্ত নেবার। এই চ্যালেঞ্জ শুধু নির্দিষ্ট ভূখণ্ডের বা রাষ্ট্রের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয় বরং বিশ্বব্যবস্থার। যেখানে ন্যায়-অন্যায়, ন্যায্য-অন্যায্যের কোন বিচার চলে না। সেখানে আইন পরিমাপ হয়ে শক্তিমত্তার ভিত্তিতে। বাংলায় যেটাকে বলে ‘শক্তিমানের কথাই ঠিক’। বিশ্বজুড়ে হাজারো তন্ত্র-মন্ত্র, বাদ-মতবাদ, শাসনব্যবস্থা চালু রয়েছে। মানুষ একটার পর একটা জীবনব্যবস্থা তাদের সামগ্রিক জীবনে প্রয়োগ করছে। কখনো গণতন্ত্রের স্বাদ আস্বাদন করছে তো কখনো সমাজতন্ত্রের। কিন্তু ফলাফল শূন্য। কোনো ব্যবস্থাই মানুষের আত্মিক, সমাজের চূড়ান্ত অবক্ষয়কে রুখতে পারছে না। এ যেন ফুটন্ত কড়াই থেকে জ্বলন্ত চুলায় লাফ দেওয়ার মতো অবস্থা। মানুষ দিশেহারা। শান্তির জন্য হাহাকার করছে মানুষ। তারা প্রতিনিয়ত সংবিধান সংশোধন করছে, কঠোর থেকে কঠোরতর আইন তৈরি করছে, প্রশিক্ষিত সামরিক বাহিনী প্রস্তুত করছে, শান্তির জন্য সভা-সেমিনার করছে কিন্তু তাতে থেমে থাকেনি অপরাধপ্রবণতা। মানবসৃষ্ট গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, রাজতন্ত্র ইত্যাদি সিস্টেমের ব্যর্থতা এখানেই। তারা রাষ্ট্রের কল্যাণের জন্য যথেষ্ট আইন তৈরি করেছে ঠিকই কিন্তু সেগুলোর সমানভাবে প্রয়োগ ঘটাতে পারেনি। সেগুলো শুধু কাগজের পাতার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। ফলে বস্তুগত উন্নতি মানুষের আত্মিক উন্নতি করতে পারেনি। তার আদর্শিক ও নৈতিক গুণাবলীর বিকাশ ঘটাতে পারেনি। তার সমাজে ন্যায়, সুবিচার, সাম্য প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি। তাই প্রচণ্ড অন্যায়ের ঢেউয়ে প্লাবিত মানুষের সমাজ, তার জীবন, পুরো সিস্টেম। এখন যদি মানুষ চায় এই পচা ভিত্তিমূল উপড়ে ফেলে একটি শান্তিপূর্ণ সমাজ, রাষ্ট্র ও বিশ্বব্যবস্থা নির্মাণ করতে তাহলে লাগবে একটি সঠিক আদর্শ। যে আদর্শ হবে নিখুঁত এবং নির্ভুল। যে আদর্শের ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ হবে ক্ষুদ্র সমাজ থেকে শুরু করে পুরো বিশ্ব। তাহলেই মানুষ অন্যায়পূর্ণ সমাজব্যবস্থাকে পরিবর্তন করে একটি শান্তিপূর্ণ সমাজ নির্মাণ করতে সক্ষম হবে।
এমনিই একটি আদর্শের প্রস্তাব করছে হেযবুত তওহীদ। হেযবুত তওহীদের মাননীয় এমাম জনাব হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম, যিনি এই বৈশ্বিক সংকট মোকাবেলায় একটি সুনিপুণ আদর্শ ও ঐক্যের দিকে মানুষকে আহ্বান করে আসছে। তিনি এমন একটি নির্ভূল আদর্শ ও জীবনব্যবস্থার দিকে মানুষকে ডাকছেন যা আজ থেকে ১৪০০ বছর জাজিরাতুল আরবসহ অর্ধ পৃথিবীতে অকল্পনীয় শান্তি, ন্যায়, সুবিচার ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছিল।
তিনি এমন একটি আদর্শের দিকে মানুষকে আহ্বান করছেন, যে আদর্শ মানুষকে বাস্তব সমস্যার বাস্তব সমাধান দিতে সক্ষম। যে আদর্শ পারে মানুষের যাবতীয় সংকট মোকাবেলা করে একটি শান্তিপূর্ণ সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে। তিনি ১৪০০ বছর আগে হারিয়ে যাওয়া সেই আদর্শ পুনরায় প্রতিষ্ঠা করতে প্রতিনিয়ত মাঠে-ময়দানে, পথে-ঘাটে, প্রান্তরে ছুটে বেড়াচ্ছেন। হাজার হাজার সভা সেমিনার, আলোচনা ও পথসভা তিনি করে যাচ্ছেন। বই-পুস্তক প্রকাশনা, অনলাইন-অফলাইন সর্বত্র তিনি তওহীদের ভিত্তিকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে একক জাতিসত্তা গড়ে তুলতে মানুষকে আহ্বান করছেন। তার এই আহ্বানে সাড়া দিয়ে প্রতিনিয়ত অসংখ্য মানুষ হেযবুত তওহীদের সাথে ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে। তারা হারিয়ে যাওয়া ইসলামের প্রকৃত রূপ সম্পর্কে জানতে পারছে। একটি নিরাপদ সমাজ বিনির্মাণে হেযবুত তওহীদের সাথে অঙ্গীকারাবদ্ধ হচ্ছে। ইনশাল্লাহ অচিরেই হেযবুত তওহীদের আদর্শ বুকে ধারণ করে একটি সমাজ থেকে শুরু করে পুরো বিশ্বকে একটি শান্তিপূর্ণ জীবনব্যবস্থা উপহার দিতে সক্ষম হবে। এমন একটি সমাজব্যবস্থা নির্মাণ করতে সক্ষম করবে যা ক্ষুদ্র পরিবার থেকে শুরু করে পুরো বিশ্বের সকল সমস্যাকে মোকাবেলা করে মানবজাতিকে একক জাতিসত্তার ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ করে গড়ে তুলবে ইনশাল্লাহ। সে সময়ের অপেক্ষায়…।