হেযবুত তওহীদ

মানবতার কল্যাণে নিবেদিত

বাবার জন্মদিনে সবাইকে শুভেচ্ছা

উম্মুতিজান মাখদুমা পন্নী

১৫ শাবান পবিত্র লাইলাতুল বরাত। ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার মত দুটি বড় উৎসবের পরেই আরেকটি বড় আনুষ্ঠানিকতা এই উপমহাদেশের মুসলিমদের মধ্যে পালন করতে দেখা যায়, তা হল পবিত্র শবে বরাত। যদিও হাদিস ও ইতিহাসে শবে বরাত সম্বন্ধে বিস্তারিত কোনো বর্ণনা নেই তবে এটুকু জানা যায় যে রসুলাল্লাহ (স.) এ রাতে জাগ্রত থেকে নফল ইবাদত করতেন এবং মো’মেনদের এ দিনে সিয়াম পালন করার জন্য বলেছেন (মুসলিম)। তবে বর্তমানে মুসলিম উম্মাহ এ রজনীকে সৌভাগ্যরজনী হিসেবেও পালন করে আসছে। যে যেভাবেই পালন করুক না কেনো আমার জন্য এ রাতের তাৎপর্য একটু ভিন্নরকম। কারণ আমার শ্রদ্ধেয় বাবা হেযবুত তওহীদের প্রতিষ্ঠাতা এমাম, এমামুয্যামান জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নীর জন্ম হয়েছিল এই রাতে। তিনি ১৫ শাবান ১৩৪৩ হেজরী মোতাবেক ১৯২৫ সনের ১১ মার্চ শেষ রাতে জন্মগ্রহণ করেন। একদিকে এই রাত আমার জন্য আনন্দের কারণ আজ তাঁর জন্মদিন যাঁর শিক্ষা, আদর্শ, স্নেহে ও ভালোবাসায় আমি বড় হয়েছি এবং অপরদিকে এ রাত আমার জন্য গৌরবময় কারণ আজ তাঁর জন্মদিন, আল্লাহর মনোনীত একজন মহামানব, যাঁর আগমনের মাধ্যমে মহান আল্লাহ পুরো মানবজাতির বর্তমান সংকটময় অবস্থা থেকে মুক্তির পথ নিশ্চিত করেছেন। তাঁর সন্তান হতে পেরে আমি মহামহীম আল্লাহর কাছে চিরকৃতজ্ঞ।

ছোটবেলা থেকেই বাবার কাছ থেকে সত্যের পথে চলার অনুপ্রেরণা পেয়েছি, পেয়েছি সত্যের পথে অটল থাকার শিক্ষা। বাবাকে কখনোই মিথ্যার সামনে নত হতে দেখিনি, মিথ্যার সাথে আপোষ করতে দেখিনি। মহান আল্লাহর প্রতি ও রসুলে পাক (সা.) এর প্রতি তিনি যেরূপ ঈমান এনেছিলেন, যেভাবে নির্ভর করতেন, যেরূপ এই বিষয়ে পর্বতের ন্যায় অটল-অনড় থাকতেন সেরূপ আমি আর কাউকে দেখিনি এবং পৃথিবীতে তাঁর মত এমন একজন মানুষ খুঁজে পাওয়া শুধু দুস্করই নয় প্রায় অসম্ভব। বাবার ৮৬ বছরের জীবনে একবারের জন্যও আইনভঙ্গের কোন রেকর্ড নেই, নৈতিক স্খলনের কোন নজির নেই। তিনি আধ্যাত্মিক ও মানবিক চরিত্রে এতটাই বলীয়ান ছিলেন যে, সারাজীবনে তিনি একটি মিথ্যা শব্দও উচ্চারণ করেন।

আল্লাহ তাঁকে প্রকৃত ইসলামের জ্ঞান দান করেছেন এবং সেই জ্ঞান তিনি মানবজাতির সামনে তুলে ধরেছেন। তাঁর আবির্ভাবে দুনিয়া আলোকিত হয়েছে, অন্ধকার দূর হয়েছে, মানুষ মুক্তির পথ লাভ করেছে। মহান মহান আল্লাহ এক অলৌকিক ঘটনার মাধ্যমে জানিয়ে দিয়েছেন হেযবুত তওহীদ হক্ব, হেযবুত তওহীদের এমাম হক্ব, হেযবুত তওহীদ দিয়ে সারা পৃথিবীতে আল্লাহর সত্যদ্বীন প্রতিষ্ঠিত হবে তাঁর মাধ্যমে মহান আল্লাহ ইবলিসের দেয়া চ্যালেঞ্জে বিজয়ী হবেন, মানবজাতি ঐক্যসূত্রে আবদ্ধ হবে, মানবজাতির মধ্যকার অন্যায়, অত্যাচার, জুলুম, নির্যাতন, হত্যা, রক্তপাত অর্থাৎ ফাসাদ ও সাফাকুদ্দিমা দূরীভূত হয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে। তাই আমার মতে যে রাতে তিনি জন্ম নিয়েছেন সে রাত শুধু মুসলিমদের জন্যই সৌভাগ্যরজনী নয়, পুরো মানবজাতির জন্য সৌভাগ্যরজনী।

পন্নী পরিবারের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস ইতিহাসের পাঠকমাত্রই জানেন। সুলতানী যুগে ও মোঘল আমলে আমাদের পূর্বপুরুষগণ বাংলা, বিহার, উড়িষ্যাসহ ভারতের উত্তর প্রদেশ নিয়ে গঠিত রাজ্য গৌড়ের স্বাধীন সুলতান ছিলেন। প্রাচ্যের আলীগড় আখ্যাত টাঙ্গাইলের ‘সা’দাত কলেজের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন করটিয়ার জমিদার ওয়াজেদ আলী খান পন্নী ওরফে চান মিয়া যিনি সম্পর্কে আমার বাবার দাদা জনাব হায়দার আলী খান পন্নীর বড় ভাই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রধান উদ্যোক্তা নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী ছিলেন বাবার মায়ের নানাজান।

বাবার শৈশব কাটে করটিয়ায় নিজ গ্রামে। ১৯৪২ সনে তিনি মেট্রিকুলেশন পাশ করেন। বাবা যখন কলকাতার ইসলামিয়া কলেজে পড়ছেন তখন পুরো ভারত উপমহাদেশ ছিল ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা সংগ্রামে উত্তাল। আন্দোলনের এই চরম মুহূর্তে বাবা তখন তরুণ। সেই তরুণ বয়সেই তিনি আল্লামা এনায়েত উল্লাহ খান আল মাশরেকীর প্রতিষ্ঠিত ‘তেহরীক এ খাকসার’ নামক আন্দোলনে যোগ দিয়ে ব্রিটিশবিরোধী সংগ্রামে নেমে পড়েন। সেই সুবাদে বাবা এ সংগ্রামের কিংবদন্তীতুল্য নেতৃবৃন্দের সাহচর্য লাভ করেন যাদের মধ্যে মহাত্মা গান্ধী, কায়েদে আযম মোহম্মদ আলী জিন্নাহ, অরবিন্দু ঘোস, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দি, সাইয়্যেদ আবুল আলা মওদুদী অন্যতম। বাবা আমাদের সাথে অবসরে এ সময়ের স্মৃতিচারণ করতেন।

তাঁর ছোট বেলা থেকেই ছিল শিকারের শখ। তিনি আমাদের শিকারের লোমহর্ষক অভিজ্ঞতার কথা বলতেন আর আমরা প্রচণ্ড আগ্রহ নিয়ে তাঁর অভিজ্ঞতার কথা শুনতাম ও বারবার শিহরিত হতাম। বাবা পরবর্তীতে তাঁর বাস্তব অভিজ্ঞতা নিয়ে ‘বাঘ-বন-বন্দুক’- নামক একটি বই লিখেন যা ১৯৬৪ সালে প্রকাশিত হয়েছিল। তৎকালীন খ্যাতনামা সাহিত্যিক ও সমালোচকদের দ্বারা বইটি প্রশংসিত হয়। ক্রীড়াঙ্গনেও তিনি ছিলেন একজন অগ্রপথিক। ১৯৫৬ সনে অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে অনুষ্ঠিত বিশ্ব অলিম্পিক চ্যাম্পিয়নশিপে অংশগ্রহণের জন্য পাকিস্তান দলের অন্যতম রায়ফেল শুটার হিসাবে নির্বাচিত হন।

রাজনীতিক অঙ্গনেও তিনি প্রত্যক্ষ ভূমিকা রাখেন। তিনি ১৯৬৩ সনে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের সদস্য অর্থাৎ এম.পি নির্বাচিত হন। এছাড়াও তিনি ছিলেন একজন দক্ষ ও প্রখ্যাত চিকিৎসক। বাবার চিকিৎসা পেশাকেই বর্তমানে আমি আমার পেশা হিসেবে গ্রহণ করেছি। বাবাকে দেখেই আমি চিকিৎসা পেশায় আসার অনুপ্রেরণা লাভ করি। বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রপ্রধান আবু সাঈদ চৌধুরী, সাবেক প্রধানমন্ত্রী আতাউর রহমান খান, জাতীয় কবি কাজি নজরুল ইসলামসহ অনেক বরেণ্য ব্যক্তি বাবার রোগীর তালিকায় অন্তর্ভুক্ত ছিলেন।

এছাড়াও বাবা ছিলেন একজন সঙ্গীত অনুরাগী। তিনি ভারতীয় রাগসঙ্গীতের একজন বিশেষজ্ঞ ছিলেন এবং তিনি ছিলেন বাংলাদেশ নজরুল একাডেমির একজন প্রতিষ্ঠাতা সদস্য।

১৯৬৩ সনে তিনি করটিয়ায় হায়দার আলী রেডক্রস ম্যাটার্নিটি অ্যান্ড চাইল্ড ওয়েলফেয়ার হসপিটাল প্রতিষ্ঠা করেন যার দ্বারা এখনও সে এলাকার বহু মানুষ উপকৃত হচ্ছেন। পরবর্তীতে তিনি বড় ভাইয়া সা’দাত আলী খান পন্নীর নাম অনুসারে ‘সা’দাত ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন’ নামে প্রতিবন্ধী শিশুদের উন্নয়নের জন্য একটি দাতব্য সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন।

এ পত্রিকার সকল পাঠকদের কাছে আমি দোয়াপ্রার্থী। আমি আমার বাবার আদর্শকে বুকে ধারণ করে পথ চলতে চাই, সেই মহাসত্য মানবজাতির সামনে তুলে ধরতে চাই। আমি জানি তিনি যে মহান আদর্শ প্রতিষ্ঠার আন্দোলন শুরু করেছিলেন সে আদর্শ প্রতিষ্ঠিত হলে সমগ্র দুনিয়ায় শান্তি ফিরে আসবে। তাই আমি পরম দয়ালু মহান আল্লাহর দরবারে দোয়া করি যাতে তিনি সে আদর্শ প্রতিষ্ঠার মহান কাজে আমি যাতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে পারি সে তৌফিক দান করেন। পরিশেষে আমার পরম শ্রদ্ধেয় পিতার জন্মদিনে আবারাও আপনাদের সবাইকে জানাই শুভেচ্ছা ও মোবারকবাদ।

লেখাটি শেয়ার করুন আপনার প্রিয়জনের সাথে

Email
Facebook
Twitter
Skype
WhatsApp
সার্চ করুন

যুক্ত হোন আমাদের ফেসবুক পেজের সাথে...