বর্তমান সময়কে বলা হয় বিজ্ঞানের যুগ। বিজ্ঞানের নানাবিধ আবিষ্কার আমাদেরকে বিস্মিত করছে প্রতিনিয়ত। পদার্থবিজ্ঞান, রসায়নবিজ্ঞান, উদ্ভিদবিজ্ঞান, প্রাণিবিজ্ঞান, চিকিৎসাবিজ্ঞান এক কথায় বিজ্ঞানের সকল শাখাই যেন আজ উন্নতির চরম শিখরে আরোহণ করেছে। সাম্প্রতিককালে বৈজ্ঞানিকগণ বিস্ময়কর একটি প্রাণী আবিষ্কার করেছেন। যার নাম দিয়েছেন লাইগার (Liger)। এই প্রাণীটি পুরুষ সিংহ (Lion) ও মেয়ে বাঘ (Tiger) এর কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে জন্ম হবার কারণে এর নাম দেওয়া হয়েছে লাইগার (Liger)। এটি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বিড়াল (Cat) জাতীয় প্রাণী। একটি পুরুষ সিংহের ওজন সাধারণত ৫০০ পাউন্ড এবং একটা বাঘের ওজন ৬০০ পাউন্ড হয়ে থাকে। অথচ লাইগারের ওজন হয় ১০০০ পাইন্ড বা তার বেশি। ওজন ও আকৃতিতে এটি এর বাবা-মায়ের প্রায় দ্বি’গুণ হয়ে থাকে। শক্তিও কোনো অংশে কম নয়। সাধারণ নিয়মেই এটি বনের রাজা হবার কথা, বনে ছেড়ে দিলে সমস্ত বন নিজের দখলে নেবার কথা খুব অল্প সময়েই। বনের যে কোনো প্রাণীকেই তার হিংস্রতা ও শক্তি দিয়ে ঘায়েল করে ভক্ষণ করার কথা। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই জঙ্গলের সমস্ত প্রাণী তার বশ্যতা স্বীকার করে তাকে রাজা হিসাবে স্বীকৃতি দেবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু বাস্তবতা ঠিক তার উল্টো। যদি কোনো লাইগারকে জঙ্গলে ছেড়ে দেন তবে সে সেখানে অত্যন্ত অসহায় হয়ে মনে মনে তার মালিককে স্মরণ করতে থাকবে এবং ভাববে তার মালিক হয়ত তার জন্য খাবার নিয়ে আসবে। অনেকবার করুণ স্বরে মালিককে ডাকবে, ডাকতে ডাকতে এক সময় সেখানেই খাদ্যাভাবে আত্মাহুতি দেবে। অথচ তার সামনেই ছিল অবারিত খাবার- হরিণ, খরগোশ, মহিশ ইত্যাদি। শিকার ধরে খাওয়াতো দূরের কথা যদি কখনো কোনো ছাগলও তার দিকে তেড়ে আসে তবে লাইগারটি দৌড়ে পালাতে গিয়ে দুর্ঘটনায় পড়ে জীবন হারাতে পারে। তাহলে লাইগারের বিশাল দৈত্যাকার দেহ, বড়মাপের ওজন, হিংস্র চেহারা এবং প্রচণ্ড শক্তি সবই বৃথা। এগুলির কোনটিই আর তার জন্য কাজে আসছে না।
কেন লাইগারের এই পরিণতি?
লাইগারের জন্ম হয়েছে মানুষের গবেষণাগারে। সে ছোটবেলা থেকে মানুষের কোলে চড়ে ফিডারে দুধ খেয়েছে। জন্ম থেকে বড় হওয়া পর্যন্ত সে একটি পশুও শিকার করেনি। সে জানেই না যে শিকার কীভাবে করতে হয়। তার মালিক খাবার হিসাবে যা দিয়েছে সে তা-ই খেয়েছে। তাকে জানতেই দেয়া হয়নি তার পূর্বপুরুষগণই বনের রাজা ছিল। উত্তরাধিকার সূত্রে তারই রাজত্ব গ্রহণ করা উচিত। তার মালিক বা প্রভু তার অতীত ইতিহাস তাকে জানতেই দেয়নি। তাকে শেখানো হয়েছে হিংস্রতা, সাহসিকতা, সম্মানবোধ এগুলি ভাল নয়, এগুলির কোনো প্রয়োজন নাই। তাকে বুঝতেই দেয়া হয়নি তার শরীরে কতো শক্তি। সে জানেই না যে তার প্রভু নিজ স্বার্থে তার নিকট থেকে কেড়ে নিয়েছে তার অতীত ঐতিহ্য, আত্মিক শক্তি, হিংস্রতা, সাহসিকতা, ক্ষিপ্রতা বিনিময়ে দিয়েছে চরম অসহায় পরনির্ভরশীল জীবন। এখনও সে তাকেই প্রভু মনে করে চরম আনুগত্যে গদগদ।
প্রিয় পাঠক, আমি যে লাইগারের গল্প আপনাদের শোনালাম তার মাধ্যমে বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার সম্পর্কে আপনাদেরকে জ্ঞাত করা আমার উদ্দেশ্য নয়, সেটা বোধকরি অনেকেই বুঝে ফেলেছেন। যাই হোক, মূল প্রসঙ্গে আসি। আজকে সমস্ত পৃথিবীব্যাপী বিশাল শরীর (১৮০ কোটির জনসংখ্যা), বিরাট ওজন (মসজিদ, মাদ্রাসা, খানকা, মাজার; পীর, ফকীর, দরবেশ, মোফাস্সের, মোহাদ্দেস, ফকীহ; মাসলা, মাসায়েল ইত্যাদি), চেহারাতেও পূর্ব উত্তরসূরীদের ভাব (দাড়ি, টুপি, পাগড়ি, জোব্বা, পাজামা ইত্যাদি) নিয়ে সমস্ত পৃথিবীব্যাপী ছড়িয়ে আছে বর্তমানের মুসলিম জাতিটি। ঠিক যেন লাইগারের মতোই অবস্থা এ জাতির। এই জাতিকে লাইগারের সাথে তুলনা করার আগে এ জাতি সম্পর্কে একটু জেনে নেওয়া দরকার। চলুন একটু জানি এ জাতি সম্পর্কে।
১৪০০ বছর আগের এই জাতি, যার মোট জনসংখ্যা চার পাঁচ লাখের বেশি হবে না, বিশ্বনবীর (দ.) সঙ্গে থেকে তাকে আল্লাহর দেয়া দায়িত্ব পালন করতে জানমাল দিয়ে সাহায্য করল, তার সঙ্গে থেকে তার কাছ থেকে সরাসরি এই দীন শিক্ষা করল, ঐ দ্বীনের প্রাণ কোথায়, দেহ কোথায় উদ্দেশ্য কী, সেই উদ্দেশ্য অর্জন করার প্রক্রিয়া কী এসব বুঝলো, হৃদয়ঙ্গম করল এবং তাঁর (দ.) পৃথিবী থেকে চলে যাবার পর তাদের নেতার আনা জীবন ব্যবস্থা পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠার জন্য তাদের সব কিছু ছেড়ে বের হয়ে পড়লো ও তদানীন্তন দুনিয়ার দুইটি মহাশক্তিকে এক এক করে নয় একই সঙ্গে পরাজিত করে আটলান্টিকের উপকূল থেকে চীন সীমান্ত পর্যন্ত এই দীন প্রতিষ্ঠা করে মানুষের জীবনে নিরাপত্তা, ন্যায় ও সুবিচার প্রতিষ্ঠা করল, এক মহা সভ্যতার জন্ম দিলো। সেই জাতিকে অর্থাৎ আমাদের উত্তরসূরীদেরকে আমি বলছি বাঘ-সিংহ।
আজকের এই জাতির (আমাদের) কোটি কোটি টাকার মসজিদগুলি কত সুন্দর, কত শান-শওকতওয়ালা, জাঁকজমকপূর্ণ মসজিদগুলো দেখে যে কেউ বলবেন, সুবহান আল্লাহ, অথচ ১৪০০ বছর আগের সেই মুসলিম জাতির খেজুর পাতার ছাদ আর মাটির মেঝের মসজিদগুলো ছিল অনেক দরিদ্র । সংখ্যায় আমরা প্রায় ১৮০ কোটির উপরে। তাঁরা কিন্তু চার পাঁচ লাখ হয়ে ৬০/৭০ বছরের মধ্যে অর্ধেক পৃথিবীতে আল্লাহর দেয়া দীন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন আর চৌদ্দশ বছর হয়ে গেলো এই ১৮০ কোটি হয়েও তার চেয়ে বেশি এগুতে পারিনি আমরা। আমাদের জ্ঞানভাণ্ডার, গত বারো শ বছরে যে সব জ্ঞানগর্ভ ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের বই কেতাব লিখেছি তা একসাথে রাখলে ক্রমে ক্রমে তা পর্বতের চেয়ে উচুঁ হয়ে যাবে। ঐ চার পাঁচ লাখ মানুষ ঢাকা পড়ার উপক্রম হবে। একটা পাহাড় সমান কেতাবের স্তুূপ হচ্ছে ফিকাহ, আরেকটা স্তুপ হাদীসের কেতাব (যদিও তাঁদের হাদীসের কোন বই-ই ছিল না), একটা বইয়ের পর্বত হচ্ছে কোরানের তফসীরের, একটা পর্বত দীনিয়াতের, একটা পাহাড় উসুলে ফিকাহর, একটা উসুলে হাদীসের, একটা মাসলা মাসায়েলের, একটা পর্বত তাসাওয়াফের, ঐ পাহাড় কিয়াসের, ঐ পর্বত ইজমার, এই পাহাড়… এই পর্যন্ত বল্লাম। তাঁরা এগুলোর কোনটা সম্বন্ধে জীবনেও শুনেন নাই। তাঁদের মাত্র একটা বইই ছিল কোরান, তাও মাত্র কয়েকটি কপি। আর পড়তে পারতেন মাত্র কয়েকজন, তারা পড়তেন অন্য সবাই শুনতেন আর তা কাজে পরিণত করতেন। যাই হোক, এত বিশ্লেষণ, ব্যাখ্যা আর পাণ্ডিত্যের পর আমাদের জীবনে তাহলে কোরানের আইনের ভালো প্রভাব প্রতিফলন নিশ্চয়ই হওয়া উচিত ছিল। আমাদের আরও ভাল মোমেন, মুসলিম হবার কথা ছিল, কিন্তু তাহলে এ দেড় হাজার বছর পরেও কেন আমরা সমস্ত পৃথিবীতে আল্লাহর দীন প্রতিষ্ঠা করতে পারিনি? বরং এ পৃথিবীর দিকে চেয়ে দেখছি আমরাই নিকৃষ্টতম জাতি, অন্যান্য জাতির ঘৃণা ও অবজ্ঞার পাত্র। ওদের ধার, ঋণ, আর খয়রাতের ওপর আমরা বেঁচে আছি। আল্লাহ বলেছেন আমরা যদি আল্লাহকে একমাত্র প্রভু স্বীকার করে তার আদেশ নিষেধকে, তার দীনকে পৃথিবীর মানুষের জীবনে প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম করি তবে তিনি আমাদের পৃথিবীর সবার ওপর আধিপত্য দেবেন, আমাদের শ্রেষ্ঠ জাতি করে রাখবেন (কোর’আন সুরা আন-নূর-৫৫)। আমাদের পূর্ব উত্তরসূরীগণ সরাসরি তাই করেছিলেন, কোনো ব্যাখ্যায় যাননি। কারণ তার দেখানো পথ সেরাতুল মুস্তাকীম- সহজ, সরল। তার প্রতিশ্রুতি যে সত্য তাতো ইতিহাস। তাঁদের তিনি শ্রেষ্ঠ জাতিতেই পরিণত করেছিলেন। কিন্তু এতকিছুর পরও পৃথিবীতে আমাদের এ অবস্থা কেন?
যদিও কোর’আনের ও হাদীসের আইন শরীয়াহ নিয়েই আমরা এতো সব ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করেছি, এ বিশ্লেষণের ওপর ভিত্তি করে বিরাট শাস্ত্র গড়ে তুলেছি, ওটা করে আমাদের মধ্যে বহু মাযহাব ও ফেরকা সৃষ্টি হয়েছে এবং তাদের মধ্যে মারামারিও হচ্ছে। কিন্তু সত্যি বলতে কি, ও আইন, শরীয়াহ আমরা জাতীয় জীবন থেকে বাদ দিয়েছি, জাতীয় জীবনে আমরা এখন পাশ্চাত্যের আইন, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ব্যবস্থা, বিচার ও দণ্ডবিধি গ্রহণ ও প্রতিষ্ঠা করেছি। আপনারা কিছু মনে করবেন না, জাতীয় জীবনে আল্লাহর আইন ইত্যাদি চালু করলে পাশ্চাত্যের সভ্য জাতিরা হাসবে, আমাদের অসভ্য ভাববে। কিন্তু তাই বলে আমাদের খারাপ মুসলিম ভাববেন না, আমরা খুব নামাযী, আমাদের মসজিদে জায়গা পাওয়া যায় না, আমাদের মধ্যে বহুলোক নিয়মিত তাহাজ্জুদ পড়েন, আমরা রমযানের রোযা রাখি, হজ্জ্ব করি এবং অনেকেই যাকাত দেই। শুধু তাই নয়, আমাদের মধ্যে বড় বড় পীর ফকীর আছেন, তারা তাসাওয়াফের কঠিন রেয়াযাত করেন এবং আমাদের কোটি কোটি লোক তাদের মুরীদ আছেন। আমরা লক্ষ লক্ষ লোকের বিশ্ব এজতেমা করি। জাতীয় জীবন থেকে আল্লাহ রসুলের আইন কানুন বাদ দিলেও ব্যক্তি জীবনে আমরা তা পুংখানুপুংখভাবে পালন করার চেষ্টা করি।
তাহলে আমরা ও উম্মতে মোহাম্মাদী এক জাতি, একই উম্মাহ্’তে কীভাবে থাকি? যে আল্লাহর আইন, জীবন ব্যবস্থা পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠা করে পৃথিবীতে অন্যায়, অশান্তি, অবিচার, রক্তপাত বন্ধ করতে ইবলিসের চ্যালেঞ্জে আল্লাহকে জয়ী করতে আল্লাহর রসুল (দ.) ও তার উম্মাহগণ স্বর্বস্ব ত্যাগ করে সংগ্রাম করেছিলেন, আল্লাহর সেই আইনকেই, সেই জাতীয় জীবন ব্যবস্থাকেই আমরা বর্জন করে ইহুদি খ্রিষ্টানদের তৈরি আইন ও জীবন ব্যবস্থা তসলিম করে নিয়েছি। তাহলে আমরা কি মোশরেক- আল্লাহর অংশীবাদী নই? যদি আমাদের প্রাণপ্রিয় নেতা বিশ্বনবীকে (দ.) আল্লাহ পাক এখন পৃথিবীতে পাঠান তবে তিনি নিশ্চয় আমাদের বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করবেন। কারণ ব্যক্তিগতভাবে আল্লাহ বিশ্বাসীতো আরবের মোশরেকরাও ছিল, খ্রিষ্টান আর ইহুদিরাও ছিল আমাদের মত। তিনি জেহাদ করেছিলেন তো জাতীয় জীবনে আল্লাহর দীন প্রতিষ্ঠার জন্য। আমাদের কোনো ক্ষমা নেই এটা নিশ্চিত, কারণ আল্লাহ প্রতিজ্ঞাবদ্ধ যে, তিনি ইচ্ছা হলে সমস্ত রকম গুনাহ মাফ করবেন কিন্তু শেরক ক্ষমা করবেন না (কোরান সূরা আন-নিসা-৪৮)।
আমি ১৪০০ বছর পূর্বের প্রকৃত উম্মতে মোহাম্মাদী এবং বর্তমানের উম্মতে মোহাম্মাদীর দাবিদার ১৮০ কোটির বিরাট জনসংখ্যার মধ্যে কিছু মৌলিক পার্থক্য উপস্থাপনের চেষ্টা করেছি, এবার একটু লাইগার (Liger) প্রসঙ্গে যাই। ১৪০০ বছর পূর্বের প্রকৃত উম্মতে মোহাম্মাদীর যে চিত্র তা কেবল বাঘ-সিংহের সাথেই মিলে, কিন্তু আজকের এ জাতির চিত্র মিলবে কেবল লাইগারের সাথেই। যাদের দৃষ্টি সংকীর্ণ তারা সবকিছুরই বাহ্যিক দিকটা দেখে কিন্তু দূরদৃষ্টি সম্পন্ন বিচক্ষণ ও জ্ঞানী ব্যক্তিগণ অন্তর্নিহিত তাৎপর্য খুঁজে বের করার চেষ্টা করেন। বাহ্যিকভাবে দেখলে লাইগারকে একটা বড় মাপের বাঘ ভাবা খুব স্বাভাবিক, কিন্তু বাঘ-সিংহের সবচেয়ে বড় ও প্রধান বৈশিষ্ট্যই হলো তাদের সাহসিকতা, ক্ষিপ্রতা ও হিংস্রতা; যা লাইগারের মধ্যে অনুপস্থিত। বাঘের সঙ্গে চেহারায় মিল কিন্তু বিড়ালেরও আছে, তাই বলে কি বিড়ালকে বাঘ ভাববেন?
ঠিক একইভাবে বাহ্যিক দৃষ্টিতে দেখলে বর্তমানের মুসলিম বলে পরিচিত এই দৈত্যাকার (১৮০ কোটির) জাতিকে ১৪০০ বছর আগের প্রকৃত উম্মতে মোহাম্মদীর মতই লাগবে, কারণ এদের বহিঃর্ত্বক (দাড়ি, টুপি, পাঞ্জাবী, পাজামা, পাগড়ি ইত্যাদি) এদের পূর্ব পুরুষ সেই প্রকৃত উম্মতে মোহাম্মাদীর মতই। কিন্তু উম্মতে মোহাম্মদীর প্রধান যে বৈশিষ্ট্যগুলি ছিল সে গুলির কোনটিই এদের মধ্যে নেই। উম্মতে মোহাম্মদীর সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য ছিল- অপরাজেয়, দুর্ধর্ষ যোদ্ধা জাতি; যাদের নাম শুনলেই শত্রুর অন্তরাত্মা কেঁপে উঠত, তাঁরা যেদিকে তাকাতো সেদিকেই বিজয় হাতছানি দিত; সম্মানে তাঁরা ছিলেন পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম জাতি; সংখ্যায় সামান্য পাঁচ লাখের মত হয়েও তাঁরা মাত্র ৬০-৭০ বৎসরের মধ্যে অর্ধ পৃথিবীতে ইসলাম (শান্তি) প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন, আল্লাহর বিধান (কোরান) অনুযায়ী অর্ধ পৃথিবী শাসন করেছেন। আর বর্তমানের উম্মতে মোহাম্মদীর দাবিদার এই জাতির প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি হলো- পরাজিত (যদিও বর্তমানে নিজেদের মধ্যে ছাড়া যুদ্ধই করে না), মৃত্যুভয়ে প্রচণ্ড ভীত, অন্য জাতিগুলি দ্বারা শাসিত, বঞ্ছিত, অপমানিত ও চরম লাঞ্ছিত সর্ব নিকৃষ্ট জাতি। অর্থাৎ এই জাতি দু’টির প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি শুধু আলাদা-ই নয়, সম্পূর্ণ বিপরীত। এই সম্পূর্ণ বিপরীত বৈশিষ্ট্যের দু’টি জাতিকে যারা একই ভাবছেন তারা বাঘ ও লাইগারের পার্থক্য বুঝতে পারেননি, তারা বিড়াল ও বাঘকে একই ভাবছেন।
একটা জঙ্গলে যত শক্তিশালী, যত বিরাট আকৃতির, একই প্রজাতির যত বেশি সংখক প্রাণীই থাক না কেন ঐ জঙ্গলে কিছু বাঘ-সিংহ ছেড়ে দিলে অল্প সময়ের মধ্যেই সেখানকার রাজত্ব করবে তারা, ঠিক তেমনই, মাত্র পাঁচলাখের প্রকৃত উম্মতে মোহাম্মাদী ৬০-৭০ বৎসরের মধ্যেই অর্ধ পৃথিবীর কর্তৃত্ব করেছিলেন। আর বর্তমানে বিকৃত ইসলামের ধ্বজাধারী উম্মতে মোহাম্মদীর দাবিদার ১৮০ কোটির এই জাতি অতি নিরিহ, পলায়নপর, পরনির্ভরশীল, ইহুদি-খ্রিষ্টানদের প্রতি আনুগত্যপরায়ন ঠিক যেন লাইগারের মতই গোলামে পরিণত হয়ে আছে। তবে এই জাতিকে বাঘ-সিংহ থেকে লাইগারে পরিণত করার পেছনে অবশ্য ঐ ইহুদি-খ্রিষ্টান প্রভুদের বিরাট অবদান আছে। বাঘ-সিংহের মতো হিংস্র প্রাণীর প্রজনন ঘটিয়ে হাইব্রিড প্রজাতির অতি নিরিহ লাইগার তৈরি যেমন একটা পরিকল্পনা ও সাধনার ফল ঠিক তেমনি অপরাজেয় দুর্ধর্ষ উম্মতে মোহাম্মদী থেকে আজকের এই মুসলিম নামক ভীতু, পলায়নপর, গোলাম জাতির জন্মও একটি সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের ফসল। কীভাবে, কোন প্রক্রিয়ায়, কোন প্রজাতির সাথে কোন প্রজাতির সংকরায়ণের মাধ্যমে লাইগার (Liger) সম অতি ভীতু, নিরীহ প্রকৃতির আজকের মুসলিম জাতি সৃষ্টি করা হলো- সেটা অন্য প্রসঙ্গ।
তবে লাইগারের শরীরে বইছে বাঘ-সিংহেরই রক্ত; ধারালো দাঁত, পায়ের তীক্ষ্ণ নখ, গায়ের শক্তি এসব এখনও বিদ্যমান। একবার যদি তাকে বোঝানো সম্ভব হয় যে, “রাজত্ব করার অধিকার একমাত্র তারই, রাজত্ব করার শক্তিও তার মধ্যে বিদ্যমান, শুধু তাকে একবার চাইতে হবে।” তবে আর কোনো শক্তিই তাকে আটকাতে পারবে না।