রিয়াদুল হাসান
এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হলে আমাদেরকে শোষকবর্গের একটি তালিকা প্রয়োজন। এ কথা সকলেই স্বীকার করবেন যে, বর্তমান যুগে তিনটি শ্রেণি বা শক্তির দ্বারা মানবজাতি সবচেয়ে বেশি শোষিত হচ্ছে।
- ধর্মব্যবসায়ী গোষ্ঠী
- গণতন্ত্রের ধ্বজাধারী গোষ্ঠী
- পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদী
এবার বিষয়টির গভীরে দৃষ্টিপাত করি। যে কেউ চাইলেই মানুষকে শোষণ করতে পারে না, বরং শোষক তারাই হতে পারে যার হাতে শাসন ক্ষমতা থাকে। ধর্ম যখন আমাদের সমাজকাঠামোর উপর প্রভাবশালী ছিল, শাসন ক্ষমতায় ধর্মগুরু আলেম পুরোহিতদের আধিপত্য বা অংশীদারত্ব ছিল প্রবল, তখন তারা সেই ক্ষমতাকে ব্যবহার করে সমাজের সাধারণ মানুষের উপর শাসন ত্রাসন চালাতে পারতেন, ধর্মবিশ্বাসী মানুষকে শোষণ করতে পারতেন। কিন্তু ইউরোপীয় মধ্যযুগের পরে যখন সেখানে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রকাঠামো প্রতিষ্ঠিত হলো তখন ধর্ম চলে গেল ব্যক্তিগত বিশ্বাসের ক্ষুদ্র পরিসরে, সেখান থেকে বৃহত্তর রাষ্ট্রকাঠামোকে নিয়ন্ত্রণ করার বা জনগণকে শোষণ করার অধিকার ধর্মগুরুদের আর রইল না। ফলে তাদের শাসন আর শোষণের মাত্রাটা বহুলাংশে হ্রাস পেল। ইউরোপে বিকশিত ঐ রাষ্ট্রব্যবস্থাটাই পরবর্তীতে প্রায় সমগ্র দুনিয়ার উপর তারা চাপিয়ে দিল। তখন থেকে ধর্মবিশ্বাসী মানুষের ধর্মবিশ্বাসকে ব্যবহার করে, পৌরোহিত্য করে কিছু কিছু অর্থ তারা জীবিকার মাধ্যম হিসাবে আয় করার মত একটা সামাজিক স্বীকৃতি তাদের রইল, যেটা ওয়াজ করে বা মসজিদে ইমামতি করে তারা করে থাকেন। কিন্তু সেটা আর কতটুকু শোষণ, তার অর্থমূল্য কত টাকা?
কিন্তু পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদীরা কী করছে দেখুন? তারা কয়েকশ বছর আগে যখন প্রায় গোটা বিশ্বে উপনিবেশ স্থাপন করল, তারা যার যার উপনিবেশের যাবতীয় স¤পদকে এমনভাবে নিংড়ে নিল যে কোটি কোটি মানুষ উপর্যূপুরি দুর্ভিক্ষ-মন্বন্তরে মারা গেল। সেই থেকে আমরা ভারতীয় উপমহাদেশের লোকেরা ভাতের অধিকার আদায় নিয়েই পড়ে আছি। এখনও আমাদের সারাদিনের মূল চিন্তা দুটো অন্ন। মস্তিষ্ক ব্যস্ত ভাত নিয়ে, বড় চিন্তা সে করবে কখন? আর আফ্রিকা তো চির দুর্ভিক্ষের মহাদেশে পরিণত হয়েছে।
তারপর আপাত স্বাধীনতা পেলেও বিশ্বব্যবস্থার পরিচালনা পশ্চিমা প্রভুদের হাতেই রয়েছে। তারা সারা বিশ্বের মানুষের স¤পদ সিস্টেমের মাধ্যমে নিংড়ে তো নিচ্ছেই, উপরন্তু যে কোনো দেশের খনিজ স¤পদের মালিকানা প্রকৃতপক্ষে তাদেরই হাতে। মধ্যপ্রাচ্যের তেলের দখলের জন্য নির্বিচারে গণহত্যা চালিয়ে অর্ধকোটি মানুষ তারা হত্যা করে ফেলল গত কয়েক দশকে। সেই তেলের অধিকার নিয়ে যুদ্ধ এখনও চলছে আমেরিকা রাশিয়ার মধ্যে।
এই পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদীরা তাদের অনুগত দালাল শ্রেণির কিছু মানুষকে প্রতিটি দেশের শাসন ক্ষমতায় বসিয়ে রেখেছে। এই লোকগুলো সরকার চালাতে গিয়ে একইভাবে জনগণের স¤পদ গণতন্ত্রের নামে চুষে খাচ্ছে। পদ্ধতি হলো ট্যাক্স, ভ্যাট ইত্যাদি। এছাড়াও রাষ্ট্র থেকে গ্রাম পর্যন্ত রাজনৈতিক চাঁদাবাজি তো আছেই।
প্রশ্নটি ছিল শোষকের তালিকা করা হলে কার নাম প্রথমে লিখতে হবে। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপট বিবেচনা করলে ধর্মব্যবসায়ীদের শোষণ এখন কয়েক হাজার থেকে লাখের মধ্যে সীমাবদ্ধ। গণতান্ত্রিক শোষকদের শোষণ কোটির অংকে যায়। কিন্তু পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদীদের শোষণের পরিমাণ আমাদের মাথাতেও ধরবে না, ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন ডলার।
প্রত্যেক যুগের মূল শয়তান, অপশক্তি (ঊারষ) কে সেটা জানা ঐ যুগের মানুষের জন্য খুবই জরুরি। নয়তো ভুল টার্গেটে গুলি করতে করতেই বন্দুক খালি হয়ে যায় আর আসল শত্রু থেকে যায় পর্দার অন্তরালে। আমাদের এই ক্রান্তিলগ্নে সিদ্ধান্তে পৌঁছাতেই হবে যে, কারা আমাদের তথা মানবতার মূল শত্রু, কে এ যুগের প্রধান খলনায়ক।
আমাদের বুঝতে হবে যে, সেই খলনায়ক আর কেউ নয়, পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদী পরাশক্তি, সেই আত্মাহীন ধর্মহীন বস্তুবাদী ‘সভ্যতা’ যারা দুই দুইটা বিশ্বযুদ্ধ ঘটিয়ে এখন তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধটি ঘটানোর হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। যারা পারমাণকি অস্ত্রের শক্তিতে গোটা মানবজাতিকে পায়ের নিচে দাবিয়ে রেখেছে। তারা গোটা বিশ্বকে শোষণে জীর্ণ করে নিজেরা একচোখা দানবাকৃতি ধারণ করেছে। আমাদের এই দানবটিকে চিনতে হবে। কারণ এই দানবকেই আল্লাহর শেষ রসুল দাজ্জাল বলে অভিহিত করে গেছেন। তিনি বলে গেছে, আদম (আ.) থেকে কেয়ামত পর্যন্ত মানবজাতির জীবনের সবচেয়ে বড় ঘটনা, সবচেয়ে ভয়াবহ বিপদ হবে এই দাজ্জালের আবির্ভাব।