নিজস্ব প্রতিবেদক:
ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা আর উৎসবমুখর পরিবেশের মধ্য দিয়ে উদযাপিত হলো দৈনিক বজ্রশক্তির চতুর্থ বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠান। গতকাল বাংলাদেশ শিশু একাডেমি মিলনায়তনে এ উপলক্ষে এক আলোচনা সভা ও মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। দেশের শিক্ষা, শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি ও সংগীত অঙ্গনের বহু প্রতিথযশা ব্যক্তির উপস্থিতিতে এ সময় শিশু একাডেমির মিলনায়তন পূর্ণ হয়ে ওঠে। একের পর এক অতিথিদের উদ্দীপনামূলক বক্তব্য ও শিল্পীদের সংগীত পরিবেশন আর দর্শকদের মুহুর্মুহু করতালিতে মেতে উঠে পুরো মিলনায়তন।
গতকাল বিকাল ৩ টা ৩০ মিনিটে ‘মাটি শিল্পগোষ্ঠী’র সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। পরে দৈনিক বজ্রশক্তির প্রকাশক ও সম্পাদক এস এম সামসুল হুদা’র স্বাগত বক্তব্যের মধ্য দিয়ে শুরু হয় মূল অনুষ্ঠান। স্বাগত বক্তব্যে তিনি অনুষ্ঠানে আগত অতিথিদের ধন্যবাদ জানিয়ে দৈনিক বজ্রশক্তির আদর্শ ও পথচলার উপর সংক্ষিপ্ত আলোকপাত করেন। এরপর দৈনিক বজ্রশক্তির বিগত দিনগুলির পথচলার উপর নির্মিত একটি প্রামাণ্যচিত্র উপস্থিত অতিথিদের উদ্দেশ্যে প্রদর্শন করা হয়।
এরপর অতিথিদের সামনে অনুষ্ঠানের প্রতিপাদ্য বিষয় তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন পত্রিকাটির প্রধান উপদেষ্টা ও সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ-সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী সোসাইটির চেয়ারম্যান হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম। তিনি বলেন, “যখন কোনো সমাজ অচলায়তনে পরিণত হয়, প্রথাগুলো প্রগতির অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়, ধর্মান্ধতা ও কূপমণ্ডূকতা প্রবল শক্তিমান হয়ে ওঠে, অযৌক্তিক বিজ্ঞানহীন চিন্তাচেতনায় মাকড়শার জালে বন্দী পতঙ্গের ন্যায় সমাজ ছটফট করতে থাকে তখন সেই জালকে ছিন্ন করতে আবির্ভুত হন কিছু দৃষ্টিবান মানুষ যারা আপ্রাণ চেষ্টা করেন সমাজব্যবস্থাকে পরিবর্তন করার জন্য। তারা ইতিহাসের গতিপথকে পাল্টে দেন। তাদের এই সম্মিলিত আঘাতকে বলা হয় রেনেসাঁ।”
সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ-সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী সোসাইটির চেয়ারম্যান হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম বলেন, “মধ্যযুগের ইউরোপেও দীর্ঘকাল থেকে চলছিল দাসপ্রথা, সামন্তপ্রভুদের দুঃশাসন আর খ্রিষ্টান ধর্মযাজকদের ফতোয়ার তরবারিতে নির্দোষ মানুষের রক্তসাগর বয়ে গিয়েছিল। একদিকে বিপুল ভোগ বিলাস আর ক্ষমতার চাবুক, অপরদিকে সীমাহীন দারিদ্র আর বঞ্চনা। যারা মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য কথা বলতেন, যারা চিন্তাশীল, বিজ্ঞানী, সংস্কারপন্থী দার্শনিক ছিলেন তাদেরকে ধর্ম-অবমাননার অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হতো। এই সময়কেই বলা হয় ডার্ক এইজ বা অন্ধকারের যুগ, জাহেলিয়াতের যুগ। তখন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান আর রাজতন্ত্রের যাঁতাকলের নিষ্পেষণ থেকে অসহায় মানবতাকে পরিত্রাণ করতে ইউরোপের সাহিত্যিকরা সাহিত্য রচনা করতে লাগলেন, নাট্যকাররা নাটক লিখতে লাগলেন, কবিরা কবিতা লিখলেন, শিল্পীরা ছবি আঁকলেন। তাদের সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় মানুষের চিন্তার বন্ধঘরের তালা খুলে গেল, নতুন নতুন জ্ঞানের দুয়ার উন্মোচিত হলো। সাংঘাতিক এক রেনেসাঁর সৃষ্টি হলো। সেই সকল রেনেসাঁর ফলেই আজকে আমরা মানবজাতি জ্ঞান-বিজ্ঞান প্রযুক্তিগত এই উন্নতির যুগে উপনীত হয়েছে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে জ্ঞানের ভারসাম্যহীনতার ফলে, ন্যায়-নীতির ভুল মানদণ্ডকে ধারণ করার কারণে জ্ঞান বিজ্ঞানের এই চরম উৎকর্ষের যুগেও মানুষকে এখনও তাদের বাস্তবজীবনে চরম অন্যায়-অবিচার, খুন-ধর্ষণ, নিরাপত্তাহীনতা, দুঃখ-ক্লেশ, যুদ্ধবিগ্রহ, রক্তপাতের মধ্যেই বাস করতে হচ্ছে। যে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ছিল আশীর্বাদ সেই বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিই অপশক্তির কুক্ষিগত হওয়ার কারণে মানবতার বিপর্যয়ের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, মানবজাতিকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে উপস্থিত করেছে, ফেলে দিয়েছে অস্তিত্বের সংকটে। আজও চলছে শক্তিমানের শাসন, পুরো মানবজাতি ন্যায়-অন্যায় ভুলে পারমাণবিক শক্তির সামনে, তাদের যাবতীয় অন্যায়ের সামনে আত্মসমর্পণ করে আছে। গ্রাম থেকে শুরু করে বিশ্ব সর্বত্র এখন সরলের উপর ধূর্তের প্রতারণা, দরিদ্রের উপর ধনীর বঞ্চনা, শাসিতের উপর শাসকের জুলুম। নিরপরাধ শিশুর রক্তে আজ পৃথিবীর মাটি ভেজা। যেন সেই অন্ধকার যুগ, ডার্ক এজের প্রেতাত্মা এই সময়ের কাঁধে ভর করেছে।”
তিনি বলেন, “পবিত্র কোর’আনে অবতীর্ণ প্রথম শব্দটিই হলো একটি আদেশ- ইক্রা। অর্থাৎ পড়ো, জানো। সেই অজ্ঞতার অন্ধকারে নিমজ্জিত আরবদেরকে বলা হচ্ছে জানতে, বলা হচ্ছে চিন্তা করতে, গবেষণা করতে, অন্ধত্ব থেকে মুক্ত হয়ে তাদের মস্তিষ্ককে ব্যবহার করতে তাগিদ করা হচ্ছে। আল্লাহর রসুল তাদের চিন্তাজগতে জাগরণ, রেনেসাঁ সৃষ্টি করে দিলেন। তার ফলাফল তো ইতিহাস, সকলেই জানেন। তারা যখন জানল, বুঝল, পড়ল, শিখল জ্ঞানে-বিজ্ঞানে সামরিক শক্তিতে পৃথিবীর সকল জাতির শীর্ষে উন্নীত হয়েছিল, সকলের শিক্ষকের আসন অধিকার করেছিল, হয়েছি প্রধান পরাশক্তিধর সভ্যতা। নতুন নতুন বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারে, শিল্পে, সাহিত্যে রেনেসাঁ সৃষ্টি হয়েছিল। সেই রেনেসাঁর ঢেউ সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়েছিল। তেমনই একটি রেনেসাঁ এখন প্রয়োজন। ধর্ম মানুষের চিন্তার দুয়ার খুলে দিয়েছিল। সেই ধর্মের নামে আজকে মানুষকে সমস্ত চিন্তা থেকে, সৃষ্টিশীলতা থেকে, মুক্তবুদ্ধির চর্চা থেকে বিরত রাখা হয়। ধর্মের নামে অন্ধত্ব, কূপমণ্ডূকতা, স্থবিরতা চালু করে ফেলা হয়েছে। অচলায়তনে বন্দী হয়ে গেছে মানুষ। এর বিরুদ্ধে সংগ্রাম দরকার, নবজাগরণ দরকার। সেটার জন্য আপনারা এগিয়ে আসুন, আমরা আপনাদের সহযোগিতা ও আশীর্বাদ চাই।”
অনুষ্ঠানের মূল প্রতিপাদ্য উপস্থাপনের পর কেক কেটে দৈনিক বজ্রশক্তির চতুর্থ বর্ষপূর্তি উদযাপন করেন সম্মানিত অতিথিবৃন্দ। এ সময় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন বিচারপতি সিকাদর মকবুল হক, বিচারপতি সিদ্দিকুর রহমান মিয়া, নাট্যব্যক্তিত্ব মামুনুর রশীদ, হিউম্যান রাইটস এন্ড পিস ফর বাংলাদেশের চেয়ারম্যান এড. মনজিল মোরসেদ, বিশিষ্ট সাংবাদিক ও লেখক আব্দুর রহিম, প্রকৃতি ও নগর সৌন্দর্যবিদ রাফেয়া আবেদীন, বিশিষ্ট সমাজসেবক জাফর ইকবাল বাপ্পী, বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন ফাউন্ডেশনের মহাসচিব এস এম সাইফুর রেজা, জেটিভি অনলাইন ও বাংলাদেশ অনলাইন টেলিভিশন অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান মশিউর রহমান, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের এডভোকেট ব্যারিস্টার সারওয়ার জাহান শামীম, বাংলাদেশ ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের প্রধান সমন্বয়কারী মুশতারী বেগম, স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্র’র কণ্ঠসৈনিক মাজহারুল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মুহাম্মদ বেলাল হোসাইন, দর্শন বিভাগের সুপার নিউমারারী অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. মো. বেলায়েত হোসেন খান, বিশিষ্ট সমাজসেবক ও নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি রোকন উদ্দিন আহম্মেদ, দৈনিক গণমানুষের আওয়াজ পত্রিকার সহযোগী সম্পাদক শাহজাহান সিরাজ সবুজ প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে আরো আমন্ত্রিত ছিলেন ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান; গোলাম কুদ্দুছ, সভাপতি, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট; মোস্তাফা জব্বার, তথ্য প্রযুক্তিবিদ; শাহজাহান আলম সাজু, সভাপতি, স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদ; অধ্যাপক ড. আবুল কাশেম ফজলুল হক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আব্দুল আজিজ, ডিন, বিজ্ঞান অনুষদ, ঢাবি; অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আলী, চেয়ারম্যান, পুরাকৌশল বিভাগ, বুয়েট; অধ্যাপক ড. সিরাজুল হক, চেয়ারম্যান, মৃত্তিকা, পানি ও পরিবেশ বিভাগ, ঢাবি; অধ্যাপক ড. লীনা তাপসী খান, চেয়ারম্যান, সংগীত বিভাগ, ঢাবি; অধ্যাপক ড. মো. ইউসুফ, চেয়ারম্যান, আরবী বিভাগ ঢাবি; অধ্যাপক ডা. সালমা চৌধুরী, অবস ও গাইনী, ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল; অভিনেতা সায়েম সামাদ, হেড অব সেলস এন্ড মার্কেটিং, এসএটিভি; ব্যারিস্টার এম আমির উল্ ইসলাম; এস এম আলাউদ্দিন, সাবেক সচিব; কৃষিবিদ মো. নজরুল ইসলাম, উপদেষ্টা, কৃষিবিদ ইন্সটিটিউট বাংলাদেশ; বিগ্রেডিয়ার জেনারেল (অব.) এ বি এম তায়েফুল ইসলাম; আলহাজ্ব মোঃ হামিদুর রহমান খান সিএসপি; ব্যারিস্টার মেজর (অব.) এম সারোয়ার হোসেন, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব; কবি নাহিদা আশরাফি, সম্পাদক, জলধি; হাসান মাহমুদ, সভাপতি, স্বপ্নকুঁড়ি; ইয়াছিন মোহাম্মদ, সম্পাদক, বঙ্গবন্ধু শিশু কিশোর মেলা।
অনুষ্ঠানের এ পর্যায়ে দৈনিক বজ্রশক্তির উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি কামনা করে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন সম্মানিত অতিথিবৃন্দ। অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি সাংবাদিক ও লেখক আব্দুর রহিম তার বক্তব্যে বলেন, আজ আমরা একটি স্বাধীন দেশের অধিবাসী। আমরা স্বাধীনতার পর আজ পর্যন্ত অনেক উন্নতি করেছি। কিন্তু আমার মনে একটা প্রশ্ন জাগে, আমরা কি সেই স্বাধীনতার ফসল ভোগ করতে পেরেছি? আমি বজ্রশক্তি পত্রিকাটি দেখেছি। আজ সেলিম সাহেবের বক্তব্যও শুনলাম। আমি তার বক্তব্যের প্রশংসা করছি। আজ আমাদের দেশে সাধারণ মানুষ বিচার পায় না, বিচারের বাণী নির্ভৃতে কাঁদে। আমি বজ্রশক্তির সকল কর্মী ও আগত অতিথিদের আবারও শুভেচ্ছাবাদ জানিয়ে এবং পত্রিকাটির উজ্জল ভবিষ্যৎ কামনা করে আমার বক্তব্য এখানেই শেষ করছি।
অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি বিচারপতি সিদ্দিকুর রহমান মিয়া তার বক্তব্যের প্রথমেই দৈনিক বজ্রশক্তির ভবিষ্যৎ সমৃদ্ধি কামনা করেন। তিনি এমন একটি অনুষ্ঠান আয়োজন করার জন্য সকলকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, যদিও বজ্রশক্তির বয়স অনেক কম কিন্তু এই অল্প সময়ের মধ্যেই পত্রিকাটি দেশের সংবাদ অঙ্গনে একটি জায়গা করে নিয়েছে। তিনি বলেন, আমরা দুনিয়াতে থাকবো অল্প সময়। আমাদেরকে এই অল্প সময়ের মধ্যেই দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজ করে যেতে হবে। কারণ দুনিয়ার সৎকর্মই আমাদের পরকালের জন্য উপকারে আসবে।
নাট্য ব্যক্তিত্ব মামুনুর রশিদ বলেন, দৈনিক বজ্রশক্তি যে জঙ্গিবাদে, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কাজ করে যাচ্ছে তাদের এই আদর্শের সাথে আমি একমত। আজকে আমাদের দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলো আদর্শহীন হয়ে পড়েছে। তাছাড়া আমরা স্বাধীনতার এতো বছর পরও আমাদের দেশকে মানবিক করতে পারিনি। আমাদের লক্ষ্য থাকতে হবে, কিভাবে আমারা আমাদের দেশকে মানবিক করতে পারি। তিনি আরও বলেন, দৈনিক বজ্রশক্তি যে লক্ষ্য নিয়েছে তা অর্জন করতে হলে অনেক পরিশ্রম করতে হবে। অনেক রাজনৈতিক দলও এখন ধর্মকে ব্যবহার করছে। এর বিরুদ্ধে আমাদেরকে রুখে দাঁড়াতেই হবে। তিনি আমাদের সমাজের প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থার অসারতা তুলে ধরে বলেন, আমাদের সন্তানদেরকে শুধু শিক্ষিত করলেই হবে না, রাষ্ট্রকে মানবিক করার কাজে তাদেরকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে।
অনুষ্ঠানের আরেক অতিথি এড. মনজিল মোরসেদ অনুষ্ঠানের সকল অতিথি ও আয়োজকদের শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, বজ্রশক্তি যে আদর্শ নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে, তাদের সামনে এখন বিরাট চ্যালেঞ্জ। তিনি অনুষ্ঠানের প্রারম্ভে হয়ে যাওয়া সঙ্গিতানুষ্ঠানে গান পরিবেশনকারী শিল্পীদের প্রসংশা করে বলেন, তাদের গানগুলো সবই মৌলিক এবং দেশাত্ববোধক। গানগুলোর মধ্যে দেশপ্রেমের বাণী পেয়েছি। আশা কারি, ভবিষ্যতে দৈনিক বজ্রশক্তি এদেশের সংবাদ জগতে তার নিজের স্থান দখল করে নিতে পারবে।
প্রকৃতি ও নগর সৌন্দর্যবিদ রাফেয়া আবেদীন অনুষ্ঠানের সকল উপস্থিতিকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, আমি আপনাদেরকে একটা পরামর্শ দিব। সেটা হচ্ছে, আপনারা পত্রিকার মাধ্যমে প্রকৃতি ও পরিবেশ সংরক্ষণের বিষয়েও মানুষকে সচেতন করে তোলার চেষ্টার করবেন। তিনি বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও উপলক্ষগুলোতে বৃক্ষরোপনের জন্য সকলকে আহŸান জানিয়ে তার বক্তব্য শেষ করেন।
বিশেষ অতিথি সিকদার মকবুল হক তার বক্তব্যের শুরুতেই অনুষ্ঠানের আয়োজক ও অতিথিদের অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানান। তিনি বলেন, দৈনিক বজ্রশক্তি যে আদর্শের কথা বলছে সে আদর্শ ধারণ করতে হলে সামনে অনেক বাধা-বিপত্তি আসতে পারে। অনেক বড় বড় শত্রæর দ্বারাও আক্রান্ত হতে পারে। আজ সন্ত্রাসের পক্ষে এবং শান্তির বিপক্ষে বড় বড় শক্তি কাজ করছে। কিন্তু তারপরও আমি মনে করি আল্লাহর অভিপ্রায় যেদিন হবে সেদিনই পৃথিবী ধ্বংস হবে। তার আগে নয়। তিনি বলেন, বজ্রশক্তির প্রধান উপদেষ্টা হুসাইন মোহাম্মদ সেলিম সাহেবের বক্তব্য আমি শুনেছি। তার কথা শুনে আমার মনে হয়েছে- তার ভেতরে একটা আগুন আছে। তিনি আমাদের মৃতপ্রায় জাতিকে উজ্জীবিত করতে পারবেন। আমি আশা করবো, দেশের শান্তি রক্ষায় এবং এ দেশ থেকে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ দূরীকরণে দৈনিক বজ্রশক্তি ভবিষ্যতে আরও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে। বজ্রশক্তি দীর্ঘজীবি হোক, এরকম আনন্দঘন অনুষ্ঠান আরও বহু বছর পালিত হোক এই কামনায় আমার বক্তব্য এখানেই শেষ করছি।
অনুষ্ঠানের আরেক অতিথি বিশিষ্ট সমাজসেবক জাফর ইকবাল বাপ্পী বলেন, বজ্রশক্তি পত্রিকাটি এখনও শিশু। তবে তারা দেশব্যাপী যে কাজ করছে তা সত্যিই প্রসংশার দাবিদার। তিনি বলেন, আমাদের মধ্য থেকে সকল প্রকার ধর্মান্ধতা দূর করতে হবে। আপনাদের এই বাণী দেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে হবে।
ব্যারিস্টার মেজর (অব.) এম সারোয়ার হোসেন অনুষ্ঠানটি আয়োজন করার জন্য এর আয়োজকবৃন্দকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, আমি আশা করব এমন একটি অনুষ্ঠান প্রতি বছর হোক। সেলিম সাহেবের বক্তব্যের মধ্যে বজ্রকণ্ঠ আছে। যেমনি তার পত্রিকাটির নাম ‘বজ্রশক্তি’র মধ্যেই একটি গতি একটি প্রাণ রয়েছে। তিনি বলেন, আজকে শুধু আমাদের দেশের জন্যই নয় সমগ্র বিশ্বের জন্যই সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গিবাদ একটি বড় হুমকি। বিশ্বের পরাশক্তিধর দেশগুলোর নেতারা শুধুমাত্র ধর্মের কারণে পুরো মুসলিম জাতিটিকে ধংস করে দেওয়ার চেষ্টা করছে। তাই এখন আমাদের মধ্যেকার সকল রাজনৈতিক অপ-সংস্কৃতি দূর করতে হবে। আমাদেরকে আজ ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
এডভোকেট ব্যারিস্টার সারওয়ার জাহান শামীম তার বক্তব্যের প্রথমেই অনুষ্ঠানের উপস্থিত সকল অতিথিদের শুভেচ্ছা জানান। তিনি বলেন, সেলিম সাহেবের বক্তব্য শুনে আমি অভিভূত হয়েছি। আপনারা যে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে, সকল অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন আপনাদের এই কাজের সাথে আমি একমত। আমরা সবাই চাই এদেশের সকল মানুষ তাদের নিজ নিজ ধর্ম স্বাধীনভাবে পালন করুক। তিনি দৈনিক বজ্রশক্তির কার্যক্রমের প্রসংশা করে এই কাজকে স্বাগত জানান।
সম্মানিত অতিথিদের বক্তব্য শেষে শুরু হয় সংগীত পরিবেশন অধীবেশন। এ সময় সংগীত পরিবেশন করেন স্বাধীন বাংলা বেতারের কণ্ঠসৈনিক গাজী মাজহারুল ইসলাম। তিনি তার চমৎকার উপস্থাপনা ও সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে উপস্থিত উপস্থিত দর্শকদের মাতিয়ে তুলেন। এ সময় তিনি স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শুরুর দিনগুলোর কথা স্মৃতিচারণ করেন। আরো সংগীত পরিবেশন করেন বর্তমান সময়ের অন্যতম জনপ্রিয় ও আলোচিত সংগীতশিল্পী সুমি আক্তার এবং মাটি শিল্পগোষ্ঠীর সংগীতশিল্পী নাজমুল আলম শান্তু, জিল্লুল শাহীন, শাহীন আলম, তাহমিনা আক্তার চাঁদ ও মোহন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন দৈনিক বজ্রশক্তির প্রকাশক ও সম্পাদক এস এম সামসুল হুদা। এছাড়াও অনুষ্ঠানে বিভিন্ন ইলেকট্রনিক, প্রিন্ট ও অনলাইন মিডিয়ার গণমাধ্যমকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।