বরিশালে হেযবুত তওহীদের কর্মী সম্মেলন বানচাল করার উদ্দেশ্যে চরমোনাইয়ের অনুসারীদের উগ্রবাদি তৎপরতার বিচার দাবি ও সেখানে অবস্থানরত হেযবুত তওহীদের সদস্যদের জানমালের নিরাপত্তাসহ ছয় দফা বাস্তবায়নের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছে বরিশাল জেলা হেযবুত তওহীদ।
গতকাল বেলা ১২টায় বরিশাল জেলা হেযবুত তওহীদের কার্যালয়ে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বরিশালের কৃতি সন্তান হেযবুত তওহীদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. মাহবুব আলম মাহফুজ। এসময় সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন বরিশাল বিভাগীয় আমির মো. আলামিন সবুজ।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, গত ১৪ জানুয়ারি বরিশাল জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে হেযবুত তওহীদের কর্মী সম্মেলন আয়োজনের জন্য প্রশাসনের সব ধরনের অনুমতি নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু অনুষ্ঠানের দিন চরমোনাই ইসলামী আন্দোলনের নেতা মাওলানা ওবায়দুর রহমান মাহবুব, ইসলামী আন্দোলন বরিশালের মুখপাত্র আব্দুল্লাহ্ আল মামুন টিটু, বরিশাল মহানগর সেক্রেটারী মুফতি সৈয়দ নাসির আহম্মেদ কাওসার, জয়েন্ট সেক্রেটারী মাওলানা মো. আবুল খায়ের এর নেতৃত্বে ২০-২৫ জন লোক গিয়ে থানা ঘেরাও করে। তারা উদ্ধতভাবে ও উচ্ছৃঙ্খলভাবে থানা অফিসারের রুমে গিয়ে হুমকি দিয়ে বলে এখানে হেযবুত তওহীদের অনুষ্ঠান করতে দেওয়া যাবে না। তারা প্রশাসনকে হুমকি দেয় যে, সম্মেলন হলে এখানে তারা অনুষ্ঠানস্থলে হামলা চালাবে। যথারীতি জঙ্গিবাদী, উগ্রপন্থী, ধর্মব্যবসায়ী শক্তির সামনে মাথা নত করে প্রশাসন। পুলিশের পক্ষ থেকে হেযবুত তওহীদের নেতাকর্মীদেরকে শিল্পকলা একাডেমিতে না যাওয়ার অনুরোধ জানাতে থাকে। প্রশাসনকে হুমকি প্রদানের পাশাপাশি উগ্রবাদী গোষ্ঠীটি সকাল থেকেই অনুষ্ঠানস্থলে অবস্থান নেয়। হেযবুত তওহীদের সদস্যরা যেন সম্মেলনে আসতে না পারে সেজন্য বিভিন্ন প্রকার ষড়যন্ত্র করতে থাকে।
সংবাদ সম্মেলনে ডা. মাহবুব আলম মাহফুজ আরো বলেন, আমরা হেযবুত তওহীদ আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতির জন্য সামাজিক অরাজনৈতিক প্লাটফর্ম হিসাবে কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের কোনো রাজনৈতিক অভিপ্রায় নেই। আমরা তো সংঘাত চাই না। আমরা সংঘাত না করার সিদ্ধান্ত নিলাম এবং আমাদের কর্মীদের ওখানে যেতে নিষেধ করলাম। ওখানে আমাদের যাওয়ার শতভাগ অধিকার ছিল। আমরা পুলিশের অনুরোধ আমলে নিয়ে সেখানে গেলাম না। অথচ পুলিশের নতজানু নীতির কারণে সেই সন্ত্রাসীরা আমাদের ভাড়া করা হলের সামনে সমাবেশ করল। এটা আমাদের সামনে একটা বিরাট প্রশ্ন। পুলিশ তাদেরকে কেন সমাবেশ করতে দিল?
সংবাদ সম্মেলনের শেষ দিকে হেযবুত তওহীদের পক্ষ থেকে ছয়টি দাবি উপস্থাপন করা হয়, ১. চরমোনাইয়ের উগ্রবাদী, সন্ত্রাসী, জঙ্গিবাদী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ও মদদদাতাদের পাশাপাশি সেদিন সন্ধ্যার পর দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে যারা হেযবুত তওহীদের স্থানীয় কার্যালয়ের সামনে হামলা করার উদ্দেশ্যে জড়ো হয়েছিল অবিলম্বে তাদের সকলকেই আইনের আওতায় আনতে হবে। ২. সংগঠনের কার্যালয়সহ সদস্যদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, শিল্প-কারখানা ও কর্মস্থলে জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। ৩. হেযবুত তওহীদের বিরুদ্ধে অনলাইনে যে মিথ্যাচার, প্রোপাগান্ডা করা হয়েছে তার উপর আইসিটি আইনে (ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন) ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ৪. অনুষ্ঠান বানচাল হওয়ায় ক্ষতিপূরণ আদায়ের দাবি জানিয়েছে হেযবুত তওহীদ; যার ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১০ (দশ) লক্ষ টাকা। ৫. চরমোনাই গোষ্ঠীর অপপ্রচার, মিথ্যাচার, ধর্মকে ব্যবহার করে অপরাজনীতির চালচিত্র এবং গত দুইদিন ধরে বরিশালে তারা যেসব অন্যায় কর্মকাণ্ডগুলো করেছে সেগুলো গণমাধ্যমে তুলে ধরতে হবে। ৬. বরিশালে সর্বোচ্চ প্রচারকার্য চলাকালীন পূর্ণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
এ সময় নেতারা আরো বলেন, নিজস্ব মত প্রকাশের অধিকার আমাদের বৈধ শাসনতান্ত্রিক অধিকার ও মানবাধিকার। এতে হস্তক্ষেপ করার কারো অধিকার নাই। আমরা উগ্রবাদ ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জনসচেতনতা সৃষ্টি করছি, হাটে বাজারে বিভিন্ন স্থানে প্রকৃত ইসলাম প্রচার করছি। বরিশালের হাটে, বাজারে সকল স্থানে আমরা এ প্রচার করে চলেছি। আমাদের কার্যক্রমে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করার দাবি জানাচ্ছি। এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন হেযবুত তওহীদের বরিশাল জেলা সভাপতি মো: কবির মৃধা, সাবেক সভাপতি রুহুল আমিন মৃধা, বরিশাল মহানগর সভাপতি নূর মোহাম্মদ আরিফ, বরিশাল মহানগর সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান প্রমুখ।