মোসলেম নামক এই জনগোষ্ঠীর বর্তমান এই দুর্ভাগ্যজনক পতন, হীনতা, সকল জাতির দাসত্ব এবং সর্ববিষয়ে পশ্চাৎপদতার কারণ ব্যাখ্যা কোরতে গিয়ে অনেকে বোলে থাকেন যে, শিক্ষা-দীক্ষার অভাবই এর মূল কারণ। যে জাতি যত বেশি শিক্ষিত, সে জাতি তত বেশি উন্নত, শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড ইত্যাদি। কিন্তু ইতিহাস কি তাই বলে? ইতিহাস বলে, আল্লাহর রসুল পাঁচ লাখের যে ছোট জাতিটি রেখে গিয়েছিলেন তাদের মধ্যে লেখাপড়া জানতেন মাত্র চল্লিশজন ব্যক্তি। সেই উম্মাহ ছিল পৃথিবীর মধ্যে অপরাজেয় পরাশক্তি। রসুলাল্লাহর ওফাতের মাত্র ১০ বছরের মধ্যে তারা তদানীন্তন পৃথিবীর দুটি বিশ্বশক্তি রোমান ও পারস্য সাম্রাজ্যের সুশিক্ষিত ও বহুগুণ বড় সেনাবাহিনীকে সামরিক সংঘর্ষে পরাজিত কোরে দিয়েছিল। পরবর্তী কয়েক শত বছরে যখন মোসলেম জাতি শিক্ষা দীক্ষায়, জ্ঞানে বিজ্ঞানে প্রভূত উন্নতি অর্জন কোরল এবং অন্যান্য সকল জাতির শিক্ষকের আসন অধিকার কোরল, তখনই তাদের পতন ঘোটল। না, শিক্ষিত হওয়ার কারণে তাদের পতন এসেছে বিষয়টি তা নয়, বরং পতন হোল এই কারণে যে, আল্লাহর রসুল এই জাতির সামনে সংগ্রামের মাধ্যমে সমগ্র পৃথিবীতে আল্লাহর সত্যদীন প্রতিষ্ঠার যে লক্ষ্য স্থির কোরে গিয়েছিলেন এবং তাদের মধ্যে যে নির্ভীক, শাহাদাত পিয়াসী, দুঃসাহসী যোদ্ধা চরিত্র সৃষ্টি কোরে গিয়েছিলেন, সেই লক্ষ্য ও চরিত্র এই জাতি হারিয়ে ফেলেছিল। জাতিটি যখন ইউরোপীয় খ্রিস্টান জাতিগুলির পদানত গোলামে পরিণত হোল, তখন এই জাতির মধ্যে হাজার হাজার মুফতি, মোফাসসের, মোহাদ্দেস, সুফী, দরবেশ, ওলিয়ে কামেল উপস্থিত। তাদের আধ্যাত্মিক শক্তি, দীনের মাসলা মাসায়েলের সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম জ্ঞান বিষ্ময়কর কিন্তু তা জাতির গোলাম হওয়া ঠেকাতে পারে নি, আলেমের কলম আর দরবেশের তসবিহ শত্র“র তলোয়ার থেকে জাতিকে বাঁচাতে পারে নি। আজকের মোসলেম নামক এই ১৬০ কোটির জনসংখ্যার মধ্যে কোটি কোটি লোক লেখা পড়া জানে, লক্ষ লক্ষ লোক উচ্চ শিক্ষিত ইঞ্জিনিয়ার, ডাক্তার, আইনজ্ঞ, বিজ্ঞানী, শিল্পী এবং লক্ষ লক্ষ মসজিদ, মাদ্রাসা, খানকা, হাফেজে কোর’আন, ফকিহ, মুহাদ্দিস, আলেম ওলামা, পীর-মাশায়েখ ইত্যাদি সবই আছে। কিন্তু এ জাতির মধ্যে একজন খালেদ (রা:), একজন ওমর (রা:), একজন আম্মার (রা:) নেই। এই বাস্তবতাই প্রমাণ করে যে, এক কোটি আলেমের চেয়ে একজন খালেদ, একজন আম্মার জাতির জন্য বেশি প্রয়োজন। বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব মোহাম্মদ (সা:) কর্তৃক ‘তাইয়্যিবুল মুতাইয়্যিব’ বা ‘পবিত্রদের মধ্যে পবিত্রতম’ খেতাবে ভূষিত হোয়েছিলেন আম্মার ইবনে ইয়াসের (রা:), যিনি ছিলেন অক্ষরজ্ঞানহীন একজন সাহাবী। তাঁর পুরো পরিবার ছিল কোরায়েশদের দাস। কিন্তু ঈমানের অগ্নিপরীক্ষায় উত্তীর্ণ নবীর এক অতি প্রিয় সাহাবী ছিলেন তিনি। নবুয়তের প্রথম তিন বছরের মধ্যে রসুলাল্লাহ গোপনে মানুষকে তওহীদের বালাগ প্রদান কোরেছিলেন। এ সময় যে গুটিকয়েক মানুষ ঈমান এনেছিলেন তিনি ছিলেন তাদের অন্যতম। কিন্তু ইসলাম গ্রহণের অপরাধে তাকে অবর্ণনীয় দুঃখ কষ্টের সম্মুখীন হোতে হোয়েছিল।
রসুলাল্লাহর নব্যুয়ত প্রাপ্তির ৪৫ বছর আগে আম্মার (রা:) এর পিতা ইয়াসের বিন আমের (রা:) ইয়ামেন থেকে মক্কায় আসেন এবং মক্কার আবু হুজাইফা বিন আল মুগিরা মাখজুমীর সাথে বন্ধুত্ব সম্পর্ক স্থাপন কোরে এখানেই স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। আবু হুজাইফা বিন আল মুগিরা নিজের দাসী সুমাইয়া (রা:) বিনতে খাবাতের সাথে ইয়াসের বিন আমেরের বিবাহ দিয়েছিলেন। তাদের সন্তান আম্মার ছিলেন সুঠাম ও দীর্ঘদেহী, প্রশস্ত বুক ও নার্গিস ফুল সদৃশ চক্ষু বিশিষ্ট এক ব্যক্তি। রসুলাল্লাহর আহ্বানে আম্মার (রা:) এর পুরো পরিবার ঈমান গ্রহণ কোরেছিল। জুলুমের প্রাথমিক পর্যায়ে এ পরিবারটির আপনজন বা জ্ঞাতী গোষ্ঠী কেউ মক্কায় ছিল না বলে গোটা কোরাইশ বংশসহ আশ্রয়দানকারী মাখযুমী গোত্র থেকেই অত্যাচার হয় বেশি। ইসলামের ইতিহাসে পুরুষদের মধ্যে প্রথম শহীদ হন তার পিতা ইয়াসের (রা:) এবং মহিলাদের মধ্যে প্রথম শহীদ হন মাতা সুমাইয়া (রা:)। বৃদ্ধ পিতা ইয়াসেরের (রা:) দুই পা দুটি উটের সঙ্গে বেঁধে উট দু’টিকে বিপরীত দিকে চালিত করা হয়। ফলে ইয়াসের (রা:) দ্বিখণ্ডিত হোয়ে শাহাদাত বরণ করেন। বৃদ্ধা মাতা ক্রুদ্ধ আবু জেহেলের বর্শার আঘাতে শাহাদাত বরণ করেন। আর ঘাতক আবু জেহেল আবদুল্লাহ বিন ইয়াসেরকে (রা:) তীর মেরে শহীদ করেন। পিতা, মাতা ও ভাইকে হারানো নিঃস্ব আম্মারের (রা:) উপর অত্যাচার নির্যাতন আরো বেড়ে যায়। একদিন মোশরেকরা আম্মারকে (রা:) আগুনের উপর শুইয়ে দিল। রসুলাল্লাহ সে খবর পেলেন কিন্তু তখন কাফেরদের নির্মম নির্যাতনের হাত থেকে আসহাবদেরকে উদ্ধার করার কোন ক্ষমতা তাঁর ছিল না। তাই তিনি জ্বলন্ত আগুনের উপরে শায়িত আম্মার (রা:) এর মাথায় হাত রেখে বোললেন- “হে আগুন! তুমি আম্মারের উপর এমন শীতল হোয়ে যাও যেমন তুমি পিতা এবরাহীম (আ:) উপর হোয়েছিলে”।
দিন দিন অত্যাচারের মাত্রা বৃদ্ধি পেতে থাকলো। প্রচণ্ড নির্যাতনে তিনি মাঝে মাঝেই অজ্ঞান হোয়ে পড়তেন। একদিন তাকে মোশরেকরা পানিতে এমনভাবে চেপে ধরল যে, তিনি একেবারে দিশেহারা হয়ে গেলেন। সে সময় আরবের মোশরেকরা যা চাইল সবই আম্মারের মুখ দিয়ে স্বীকার করিয়ে নিল, এমন কি তামাশা কোরে আম্মারকে দিয়ে বিভিন্ন পোকামাকড়কেও মা’বুদ হিসাবে স্বীকার কোরিয়ে নিল। পরে আম্মার বিন ইয়াসির (রা:) যখন মুশরিকদের থেকে ছাড়া পেয়ে রসুলাল্লাহর (সা:) দরবারে এলেন, তখন তার চোখ দিয়ে পানি ঝরছিল। রসুল (সা:) জিজ্ঞাসা করলেন-“আম্মার! কী খবর?” তিনি বললেন-“ইয়া রসুলাল্লাহ! খুবই খারাপ সংবাদ! আজ আমার প্রাণ সে পর্যন্ত মুক্তি পায় নি, যতক্ষণ না আমি আপনার নামে মন্দ কথা ও তাদের বাতিল প্রভুদের সত্য বলে উত্তম প্রশংসা করেছি”।
আল্লাহর রসুল (সা:) জিজ্ঞাসা করলেন-“আম্মার! তোমার মনের অবস্থা কেমন ছিল?” তিনি বললেন-“মন ঈমানের উপর অটল ছিল”। তখন রসুলাল্লাহ (সা:) অত্যন্ত মমতার সাথে হযরত আম্মার রা: এর চোখের পানি মুছে দিলেন। বোললেন-“কোন সমস্যা নেই। যদি আবার তোমার সাথে এমন করে, তাহোলে তুমিও এমনি কোরে নিও।” এ ঘটনার পর কোর’আনে কারীমের এ আয়াত নাযেল হয় যে, “যার উপর জবরদস্তি করা হয় এবং তার অন্তর ঈমানের উপর অটল থাকে সে ব্যতীত যে ঈমান আনার পর পুনরায় কুফর করে এবং কুফরের জন্য হৃদয়কে উন্মুক্ত কোরে দেয় তার উপর আপতিত হয় আল্লাহর গজব এবং তার জন্য রয়েছে আল্লাহর শাস্তি (সুরা নহল ১০৬)। মদীনায় হেজরতের আগে পর্যন্ত আম্মার ইবনে ইয়াসের (রা:) এভাবেই অসহ্য নির্যাতন দুঃখ-কষ্ট সহ্য কোরেছিলেন।
আম্মার ইবনে ইয়াসের (রা:) ছিলেন একজন দুঃসাহসী বীর যোদ্ধা। তিনি নবীর সাথে বদর থেকে শুরু কোরে তাবুক যুদ্ধ পর্যন্ত প্রতিটি যুদ্ধে অংশ গ্রহণ কোরেছিলেন। আল্লাহর রসুল তাকে অত্যন্ত øেহ ও সম্মান কোরতেন। খালিদ (রা:) একবার তার সম্পর্কে অবজ্ঞাসূচক কথা বললে-রসুল বলেছিলেন- ‘হে খালিদ! আম্মারের ব্যাপারে থেমে যাও। যে আম্মারকে মন্দ বলে আল্লাহ তাকে মন্দ বলেন। যে আম্মারকে ঘৃণা করে সে আল্লাহর কাছে ঘৃণার পাত্র হয় যে আম্মারকে অবজ্ঞা করে সে আল্লাহর কাছে ঘৃণিত হয়’। খালিদ (রা:) অবস্থা বুঝতে পেরে আম্মারকে যথোচিত সম্মান করেন। এভাবে প্রথম পর্যায়ের সাহাবীদের নিকট তিনি সম্মানের পাত্র ছিলেন।
আম্মার ইবনে ইয়াসের (রা:) ইসলামের প্রতিটি সংকটময় মুহূর্তে নিজেকে উৎসর্গ কোরে গিয়েছিলেন। ভণ্ড নবী মুসায়লামা বিন কাজ্জাবের বিরুদ্ধে ইয়ামামার যুদ্ধের ময়দানে প্রাণ বাজি রেখে তিনি যুদ্ধ কোরেছিলেন। ইয়ামামার যুদ্ধে আম্মারের (রা:) একটি কান দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন হোয়ে মাটিতে পড়ে লাফাতে থাকে। তা সত্ত্বেও তিনি বেপরোয়াভাবে হামলার পর হামলা চালাতে থাকেন। যে দিকে তিনি যাচ্ছিলেন, কাফেরদের ব্যুহ তছনছ হোয়ে যাচ্ছিল। একবাার কাফেরদের প্রবল আক্রমণের মুখে মোসলেম বাহিনী প্রায় ছত্রভঙ্গ হবার উপক্রম হোল। আম্মার (রা:) এক বিস্তীর্ণ মাঠের মাঝখানে একটি পাথরের উপরে দাঁড়িয়ে চেঁচিয়ে বোলতে লাগলেন: “ওহে মোসলেম মোজাহেদরা! তোমরা কি জান্নাত থেকে পলায়ন কোরছ? আমি আম্মার বিন ইয়াসীর। তোমরা আমার দিকে এসো।” তাঁর এই আওয়াজ যাদুর মত কাজ করে, মোজাহেদরা আবার রুখে দাঁড়ায়। এসময় তার বয়স ছিল ৬৫ বছর।
ওমর (রা:) এর খেলাফতকালে আবু সুফিয়ান (রা:) প্রমুখ খলিফার সাক্ষাতে আসলেন। ইতোমধ্যে আম্মার, বেলাল (রা:) সহ আরো কিছু সাহাবীও খলিফার সাক্ষাতে আসলেন। খলিফার নিকট সংবাদ পৌঁছানো হোল। তিনি প্রথমে আম্মার (রা:), বেলাল (রা:) প্রমুখকে ভিতরে সাক্ষাতের জন্য ডাকলেন। পরবর্তীতে আবু সুফিয়ান (রা:) প্রমুখকে ডাকা হয়। আবু সুফিয়ান (রা:) খলিফার নিকট অনুযোগ কোরে বোললেন- ‘আমাদের মত নেতৃস্থানীয়দের বসে বসে অপেক্ষা কোরতে হয় আর গোলামদের তাৎক্ষণিক ভাবে সাক্ষাত দেয়া হয়।’ আমিরুল মোমেনীন বোললেন- ‘এর জবাব আপনাদের অন্তরই দিতে পারে। ইসলাম সবার সাথে আপনাদেরকেও ডেকেছে কিন্তু এই মানুষগুলিই আপনাদের আগে ইসলামের আহ্বানে সাড়া দিয়েছে’।
আম্মার (রা:) অত্যন্ত সাদামাটা জীবন যাপন কোরতেন। উমর (রা:) এর খেলাফত কালে তাকে একবার কুফার প্রশাসক করা হোয়েছিল। ১ বছর ৯ মাস কাল তিনি এ দায়িত্ব পালন কোরেছিলেন। কিন্তু কুফাবাসীদের হঠকারীতার কারণে এবং দুর্বল প্রশাসক বলে অভিযোগ এনে খলিফার কান ভারী করার পরিপ্রেক্ষিতে খলিফা আম্মার (রা:) এর স্থলে অন্য একজনকে প্রশাসক কোরে প্রেরণ করেন। খলিফা এ ব্যাপারে তিনি মনোকষ্ট পেয়েছেন কি না জানতে চাইলে তিনি সাথে সাথেই জবাব দেন-‘আপনি যখন জিজ্ঞাস কোরছেন তখন প্রকৃত কথা হোল- আপনি আমাকে যখন প্রশাসক নিযুক্ত করেন তখনও আমি খুশী হই নি, এখনও আমার স্থলে অন্য লোক নিয়োগ দেয়ায় অসন্তুষ্ট নই’।
আম্মার (রা:) ছিলেন অত্যন্ত সহনশীল ও ধৈর্যশীল। ইয়ামামার যুদ্ধে তিনি একটি কান হারিয়েছিলেন। পরবর্তী কোন এক সময় এক ব্যক্তি তাকে কান কাটা বলে গালি দিলে তিনি কেবল বোলেছিলেন- ‘হে ভাল কানের মালিক! আফসোস, তুমি আমার সবচেয়ে প্রিয় এবং উত্তম কানটিকে গালি দিলে। আমার এই কান তো আল্লাহর পথে কাটা গেছে’। কুফার আমীর থাকার সময়ও তিনি নিজে বাজার কোরতেন, নিজের বোঝা নিজের কাঁধে বহন কোরতেন। অক্ষম ব্যক্তিদের বাজারও তিনি কোরে দিতেন এবং নিজে তা তাদের বাড়িতে বহন কোরে পৌঁছে দিয়ে আসতেন। ঘরের কাজও নিজে কোরতেন। অতি সাধারণ পোশাক পরিধান কোরতেন। ছিঁড়ে গেলে তালি দিয়ে পরতেন। আব্বাস (রা:) এর ভাষ্যমতে কোর’আনের সুরা যুমার এর ৯ নম্বর আয়াতটি তার সম্পর্কেই নাজিল হোয়েছিল- ‘যে ব্যক্তি রাত্রির বিভিন্ন প্রহরে সেজদাবনত হোয়ে ও দাঁড়িয়ে আনুগত্য প্রকাশ করে এবং আখিরাতকে ভয় করে এবং প্রতিপালকের অনুগ্রহ প্রত্যাশা করে’।
আল্লাহর রসুল আম্মার (রা:) সম্পর্কে দু’টি ভবিষ্যৎ বাণী কোরেছিলেনÑ একটি ছিল, জীবনের শেষ চুমুক যা তুমি পান করবে তা হবে দুুধ এবং অপরটি হোল- ‘আফসোস হে আম্মার! তোমাকে হত্যা কোরবে এক বিদ্রোহী দল’। একদিন সন্ধ্যায় সূর্য ডুবে যাচ্ছিল তখনও প্রচণ্ড যুদ্ধ চলছে। আম্মার এক চুমুক দুধ পান কোরে, বাঘ যেমন শিকারের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে তেমনি তিনি শত্র“র উপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। সঙ্গীদের বোললেন- ‘সম্মুখে অগ্রসর হও। জান্নাতের দরজা খোলা হোয়েছে। অতঃপর এক সিরীয় সৈন্যের বর্শার আঘাতে তিনি মাটিতে পড়ে যান এবং অপর এক সৈন্য তার দেহ থেকে মস্তক বিচ্ছিন্ন কোরে ফেলে। তখন তাঁর বয়স ছিল তিরানব্বই বছর।
আম্মারের জীবনের প্রতিটি কাজের উদ্দেশ্য ও মূল প্রেরণা ছিল আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন। সিফফীনের যুদ্ধে যাওয়ার পথে তিনি বার বার বোলেছিলেন, ‘হে আল্লাহ! আমি যদি জানতাম পাহাড় থেকে লাফিয়ে পড়ে, আগুনে ঝাঁপ দিয়ে অথবা পানিতে ডুব দিয়ে আমার জীবন ত্যাগ কোরলে তুমি খুশি হবে, আমি তাই কোরতাম। আমি জেহাদে যাচ্ছি, আমার উদ্দেশ্য শুধুই তোমার সন্তুষ্টি। আমি আশা কোরি, তুমি আমার এই উদ্দেশ্য বিফল কোরবে না (তাবাকাত)।”
আম্মারের (রা:) মত রসুলাল্লাহর প্রতিটি আসহাবের দেহের রক্তপ্রবাহ ছিল আল্লাহর রাস্তায় সংগ্রাম, জেহাদ, তাদের জীবনের একমাত্র কাম্য ছিল শাহাদাত। তাই ৯৩ বছর বয়সেও তাঁর আসহাবরা জেহাদের আহ্বানের জন্য উদগ্রীব হোয়ে অপেক্ষা কোরতেন। চাইতেন তাঁর কবর যেন হয় কোন রণাঙ্গণের রক্তøাত ভূমিতে। উম্মতে মোহাম্মদী আবার যেদিন এই আকিদা ফিরে পাবে, এনশা’আল্লাহ এই জাতির উত্থান কেউ ফিরিয়ে রাখতে পারবে না। আবারও বোলি ১৬০ কোটির শতধা বিচ্ছিন্ন বিক্ষিপ্ত ইহুদি-খ্রিস্টান ‘সভ্যতা’র গোলাম এই জাতির মধ্যে লক্ষ লক্ষ আলেম, পুরোহিত, পীর, মুফতি, মাশায়েখ, মোহাদ্দেস, মোফাসসের রয়েছে, কিন্তু যদি একজনও খালেদ, আম্মার বেলাল থাকতো!