আতাহার হোসাইনঃ
প্রাচ্যের দর্শন, কৃষ্টি-কালচার ও মননশীলতা ক্রমেই পাশ্চাত্যনির্ভর হোয়ে পড়ছে, তা অস্বীকার করার কোন উপায় নেই। গত কয়েক শতাব্দী পূর্বেও যে প্রাচ্যের কাছে পাশ্চাত্য ছিল ঘৃণিত ও ধিকৃত, আজ তারা উর্ধ্বশ্বাসে সেই পাশ্চাত্যের পেছনে দৌঁড়াচ্ছে। পাশ্চাত্যই এখন প্রাচ্যের দিশারী, নিয়ন্ত্রক, অভিভাবক, ত্রাণকর্তা ও পরামর্শদাতা। প্রাচ্যের রাষ্ট্রগুলো এখন সম্পূর্ণভাবে পাশ্চাত্যের তৈরি রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, প্রশাসনিক ও বিচারিক সিস্টেম অনুসারে চোলছে। তারা পাশ্চাত্যের কাছে শিখেছে যে, একমাত্র অর্থনৈতিক উন্নতিই হোল মানবজীবনের প্রধান উদ্দেশ্য, এটা কোরতে পারলেই মানুষ সফল। পাশ্চাত্য সেটা কোরেছে তথা সফল হোয়েছে; কাজেই এখন যদি প্রাচ্যও তাদের জীবনে সফলতা-সমৃদ্ধি আনতে চায় তাহলে তাদেরকেও বিপুল পরিমাণ অর্থ-সম্পদ উপার্জন কোরতে হবে, জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন কোরতে হবে। এই মোহে পড়ে এখন প্রাচ্যের দরিদ্র ও দীর্ঘদিন যাবৎ পাশ্চাত্য কর্তৃক শোষিত জাতিগোষ্ঠিগুলো পাশ্চাত্যের অনুকরণে নিত্য নতুন কলকারখানা, মিল, ফ্যাক্টরি স্থাপন কোরছে, দেশে ও বিদেশে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটাচ্ছে, দিবা-রাত্রি চেষ্টা কোরছে জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে।
কিন্তু এতকিছুর পরও পাশ্চাত্য আর প্রাচ্যের অর্থনৈতিক ব্যবধান কোনভাবেই ঘুঁচছে না। আর না ঘোঁচানোর পেছনে অন্যতম একটি কারণ হিসেবে উল্লেখ করা যায় প্রাচ্যের জাতিগুলোর চারিত্রিক অবনতিকে। একই রাজনৈতিক, প্রশাসনিক, বিচারিক সিস্টেমে বড় হয়েও প্রাচ্যের মানুষগুলো পরিণত হোচ্ছে কপট-ভণ্ড, মিথ্যাবাদী, প্রতারক আর জাতীয় স্বার্থ নির্বাসন দিয়ে ব্যক্তিস্বার্থভোগীতে; অন্যদিকে পাশ্চাত্যের মানুষ পরিণত হোচ্ছে ব্যক্তিস্বার্থের চেয়ে জাতীয় স্বার্থের প্রতি বেশি যতœশীল ব্যক্তিত্বে। এই যে ব্যক্তিগত ও জাতীয় স্বার্থের প্রশ্নে একই ধারার মানুষের দুই ধরনের সিদ্ধান্ত মূলত সেটাই এই ব্যবধানকে দিনকে দিন প্রলম্বিত কোরছে।
কাজেই জানা দরকার যে, প্রাচ্যের এই চরিত্রহীনতার কারণ কী? কারণ হোল শিক্ষাব্যবস্থা। প্রাচ্য আর পাশ্চাত্যের শিক্ষাব্যবস্থা এক নয়, ভিত্তিগতভাবে বিপরীত। একটি শিক্ষাব্যবস্থা তৈরি করা হোয়েছে প্রকৃতপক্ষেই জাতির সর্বদিক দিয়ে উন্নতি-অগ্রগতি সাধন করার উদ্দেশ্য নিয়ে যা আজও পাশ্চাত্যের শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষা দেয়া হয়, আর অপরটি তৈরি করা হোয়েছে একটি সামরিকভাবে পদানত জাতিকে প্রকৃত শিক্ষা থেকে আড়াল করে হীনমন্য ও অজ্ঞ-অসভ্য জাতিতে পরিণত করা অর্থাৎ সে জাতির বিষদাঁত ভেঙে দেবার উদ্দেশ্যে, যা গত কয়েকশ’ বছর যাবৎ প্রাচ্যের শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষা দেওয়া হোচ্ছে। কাজেই উদ্দেশ্যগতভাবেই দু’টি ভিন্ন জিনিস। আজ প্রাচ্যের যে বিদ্যাপীঠগুলোতে লক্ষ লক্ষ শিক্ষার্থী ভক্তি সহকারে লেখাপড়া কোরছে তার অধিকাংশই তৈরি হোয়েছে পাশ্চাত্যের গোলামির যুগে। যার উদ্দেশ্য ছিলো, প্রাচ্যের জাতিগোষ্ঠিগুলোকে এমন এমন বিষয় শিক্ষাদান করা, যার দ্বারা ‘শাপও মরে আবার লাঠিও না ভাঙে’। এটি ছিল পাশ্চাত্যের অন্যতম একটি ষড়যন্ত্র; আর যেহেতু এই ষড়যন্ত্রগুলো বাস্তবায়িত হয় এমন সময় যখন প্রাচ্যের জাতিগুলোর সামরিক ক্ষমতা ছিলো ঐ পাশ্চাত্যের হাতেই কাজেই সেই ষড়যন্ত্রকে নস্যাৎ করাও ছিলো অসম্ভব। এখানে আমি অন্য কোন অঞ্চলের কথা না বোলে শুধু আমাদের ভারতীয় উপমহাদেশকেই আলোচনায় আনছি। আমাদের ভারতীয় উপমহাদেশে ব্রিটিশরা যে সুদূরপ্রসারী ষড়যন্ত্রের বীজ বপন কোরেছিল এবং সফলও হোয়েছিল সে ধারণা পেলেই আশা করি, প্রাচ্যের অন্যান্য জায়গাতেও পাশ্চাত্যের সাম্রাজ্যবাদীদের কৃত ষড়যন্ত্রের প্রতিচ্ছবি কল্পনা সহজ হবে।
দীর্ঘ দুইশতাধিক বছর আমরা ব্রিটিশ উপনিবেশের অধীন ছিলাম। এই দীর্ঘ সময় তারা আমাদেরকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে নিয়ন্ত্রণ কোরেছে, শাসন ও শোষণ কোরেছে। মূলতঃ তখন থেকেই তারা আমাদের বিরুদ্ধে নানামুখী ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তারে সচেষ্ট হয়। আর সে কাজের জন্য অন্যতম একটি মাধ্যম হিসেবে বেছে নেয় শিক্ষাব্যবস্থাকে। পূর্ববর্তী শিক্ষাব্যবস্থা বাতিল করে তারা এতদঞ্চলের শিক্ষাব্যবস্থাকে নতুনভাবে ঢেলে সাজায়। মূলতঃ এই বিশাল অঞ্চলের প্রশাসন চালানোর জন্য ব্রিটিশদের যে লোকবলের প্রয়োজন তার যোগান দেওয়ার জন্যই তারা নতুনভাবে শিক্ষা কার্যক্রম চালু কোরেছিল। বলা বাহুল্য, এতে তাদের নিজেদের দেশের স্কুল-কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো কোন নৈতিক বা আদর্শিক শিক্ষা ছিলো না। ছিলো ব্রিটিশ প্রভুদের অধীনে কেরাণী মানের চাকরি-বাকরি কোরে খাওয়ার জন্য যে যোগ্যতা দরকার তা আনয়নের জন্য কিছু ইংরেজি, গণিত, ইতিহাস (মূলত ইংল্যান্ডের রাজা-রাণীর ইতিহাস)। যার জ্ঞান লাভ করে এখানকার ছাত্র-ছাত্রীরা হীনমন্যতায় ভুগতে বাধ্য হোত। ফলে এই শিক্ষায় শিক্ষিত শ্রেণিটি জানলোই না যে, তাদের কোন গৌরবময় অতীত আছে কি না। তারা নিজেদেরকে হঠাৎ আবির্ভূত জাতি হিসেবে জ্ঞান কোরতে লাগলো। নিজেদের সকল কিছুই তাদের চোখে খারাপ দেখাতে লাগলো আর ব্রিটিশ প্রভুদের সবকিছুই উত্তম মনে হোতে লাগলো। পরিস্থিতি এমন দাঁড়ালো যে, এদের না ভারতীয় বলা চলে, না ব্রিটিশ। তারা পরিণত হোল শেকড়হীন পরগাছায়। তখন তাদের চরিত্রে জাতীয়তাবোধের ছিটে-ফোঁটাও নেই। অন্যদিকে তারা যেটা শিখলো সেটার পাশাপাশি নৈতিক বা আধ্যাত্মিক কোন শিক্ষা না থাকায় চারিত্রিকভাবেও তাদের অধঃপতন ছিলো উল্লেখযোগ্য। অথচ এই নৈতিক শিক্ষাহীন পরগাছা শ্রেণিটিকেই লাগানো হলো জাতির রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, ব্যবসায়িক ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলোতে। কারণ, তাছাড়া কোন উপায় ছিল না, এদের বাইরে যে বিরাট সংখ্যক জনগোষ্ঠি রোয়েছে তাদের বোলতে গেলে কোন অক্ষরজ্ঞানই নেই, অন্যদিকে মাদ্রাসা-মক্তবে পড়–য়া শ্রেণিটি তখন ব্যস্ত ধর্মের নানা প্রয়োজনীয়-অপ্রয়োজনীয়, খুঁটিনাটি বিষয়াবলী নিয়ে ফতোয়াবাজীতে। তাদের দ্বারা জাতির নেতৃত্ব লাভের আশা কেউই কোরত না। ফলে ব্রিটিশরা তথাকথিত স্বাধীনতা দিয়ে চোলে যাবার সময় এই অঞ্চলের জাতিগোষ্ঠিগুলোর নেতৃত্বের আসনে বসলো ঐ পরগাছা-অসৎ শ্রেণিটি। এই শ্রেণিটিই আজ পর্যন্ত আমাদের নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছে, জাতির অর্থনীতির চাকা ঘুরাচ্ছে, বৈদেশিক চুক্তি করছে, ঋণ নিচ্ছে বা পরিশোধ কোরছে। যেহেতু তারা স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পাশ্চাত্যকেই সর্বশ্রেষ্ঠ হিসেবে জেনেছে কাজেই স্বাভাবিকভাবেই তারা যেখানেই গেছে, যে চেয়ারেই বসেছে ঐ পাশ্চাত্যকেই অনুকরণ কোরতে চেষ্টা কোরেছে, যে কথা পূর্বে বলে এসেছি। কিন্তু নৈতিকতাহীন ও জাতীয়তাবোধ বিবর্জিত তাদের এই অনুকরণ কতটা সফল হচ্ছে তা একবার চিন্তা করারও প্রয়োজনবোধ করে নি। কিন্তু বাস্তবতা এটাই যে, তাদের এই অন্ধ অনুকরণ সম্পূর্ণই ব্যর্থ হোয়েছে। কীভাবে ব্যর্থ হোয়েছে তা একটু বিশদভাবে ব্যাখ্যা কোরছি।
পাশ্চাত্যের অন্ধ অনুকরণ কোরেও আমরা ব্যর্থ কেন?
পাশ্চাত্য জাতিগুলি তাদের ভৌগোলিক রাষ্ট্রে বিশ্বাসী, এবং ঐ ভৌগোলিক রাষ্ট্রের স্বার্থকে তাদের অধিকাংশ মানুষ তাদের ব্যক্তিগত স্বার্থের উপর স্থান দেয়। আমার লাভ হবে কিন্তু রাষ্ট্রের ক্ষতি হবে এমন কাজ তাদের অধিকাংশ লোকেই কোরবে না। তাদের বিদ্যালয়, স্কুল-কলেজে, ছোট বেলা থেকেই কতকগুলি বুনিয়াদী শিক্ষা এমনভাবে তাদের চরিত্রের মধ্যে গেথে দেওয়া হয় যে, তা থেকে কিছু সংখ্যক অপরাধী চরিত্রের লোক ছাড়া কেউ মুক্ত হোতে পারে না। ফলে দেখা যায় যে ওসব দেশের মদখোর, মাতাল, ব্যভিচারীকে দিয়েও তার দেশের, জাতির ক্ষতি হবে এমন কাজ করানো যায় না, খাওয়ার জিনিষে ভেজাল দেওয়ানো যায় না, মানুষের ক্ষতি হোতে পারে এমন জিনিষ বিক্রি করানো যায় না ইত্যাদি। পক্ষান্তরে প্রাচ্যের এই দেশগুলির নেতৃত্ব এখনও সেই ঔপনিবেশিক শিক্ষা ব্যবস্থা চালু রেখেছেন, যার একমাত্র উদ্দেশ্য ছিলো একটি কেরানি শ্রেণি সৃষ্টি করা, প্রভুদের শাসন যন্ত্রকে চালু রাখার জন্য। সে শিক্ষা ব্যবস্থায় ভাষা, অংক, ভূগোল, কিছু বিজ্ঞান, কিছু বিকৃত ইতিহাস শিক্ষা দেওয়া হতো। কিন্তু চরিত্র গঠনের কোন শিক্ষা তাতে ছিলো না এবং আজও নেই। কাজেই, স্বভাবতঃই পাশ্চাত্যের শিক্ষালয়গুলির ছাত্র-ছাত্রীরা সুশৃঙ্খল, প্রাচ্যের উশৃঙ্খল, সেখানে লেখাপড়া হয়, এখানে রাজনীতি, ছুরি মারামারি, গোলাগুলি হয়, পাশ্চাত্যের শিক্ষালয়গুলি থেকে ছাত্র-ছাত্রীরা একটা চরিত্র নিয়ে বের হয় আর প্রাচ্যের ছাত্র-ছাত্রীরা চরিত্রহীন হোয়ে বের হয়। এরা যখন সরকারি, বেসরকারি চাকরিতে যোগ দেয়, রাজনৈতিক নেতৃত্ব লাভ করে তখন স্বভাবতঃই প্রাচ্য-পাশ্চাত্য কোন আদর্শ দিয়েই পারিচালিত হয় না। রাষ্ট্রের স্বার্থকে নিজের স্বার্থের ওপরে স্থান দেওয়ার পাশ্চাত্য শিক্ষা পায়নি বোলে রাষ্ট্রের ক্ষতি কোরেও নিজের স্বার্থ উদ্ধার করে। নৈতিক শিক্ষা পায়নি বোলে ঘুষ খায়, মিথ্যা বলে, ন্যায়ের বিরুদ্ধাচারণ করে। কাজেই পাশ্চাত্য যা কোরে সফল, প্রাচ্য তাই কোরতে যেয়ে ব্যর্থ। এই নেতৃত্ব মাছিমারা কেরাণীর মত (প্রভুদের কেরাণীকুল সৃষ্টির শিক্ষা ব্যবস্থা কতখানি সফল হোয়েছিলো, তার প্রমাণ এইখানেই) পূর্ব প্রভূদের এমন নিখুঁত অনুকরণ করেন যে কোন কোন ক্ষেত্রে তা করুণ হোয়ে দাঁড়ায়।
পাশ্চাত্য সভ্যতার একনিষ্ঠ অন্ধ অনুকরণকারী এই নেতৃত্ব চোখ কান বুজে পাশ্চাত্যের বস্তুতান্ত্রিক অর্থাৎ ভারসাম্যহীন, একপেশে উন্নতির দিকে দৌড়াচ্ছেন। একপাশটা হোল অর্থনৈতিক উন্নতি, যে কথা পেছনে বোলে এসেছি। এই নেতৃত্ব একটা সোজা কথা বুঝতে পারছেন না, সেটা হোল এই যে, পাশ্চাত্যের মত বস্তুতান্ত্রিক, অর্থনৈতিক সাফল্য লাভ কোরতে গেলে যে চারিত্রিক গুণগুলি প্রয়োজন তার নিুতম মানও তাদের শিক্ষিত সংখ্যালঘু অংশেরও নেই অশিক্ষিত সংখ্যাগরিষ্ট অংশের তো নেই-ই। তার প্রমাণ পাশ্চাত্য প্রভুরা চলে যাবার দিনটির চেয়ে আজ প্রাচ্যের দেশগুলির সংখ্যাগরিষ্ট জনসাধারণের জীবনের মান নীচু, শুধু তেল সমৃদ্ধ দেশগুলি ছাড়া। অবশ্য ঐ শিক্ষিত সংখ্যালঘু শ্রেণির মান কিছুটা উঠেছে কিন্তু সে ওঠার কারণ সত্যিকার অর্থনেতিক উন্নতি নয়। সেটার কারণ হলো এই যে, দেশগুলির নেতৃত্ব ও সরকার পাশ্চাত্যের কাছ থেকে যে বিরাট বিরাট অংকের টাকা ঋণ কোরে এনেছে তার একটা মোটা ভাগ এই শ্রেণির পকেটে গেছে দুর্নীতি, ঘুষ ও চুরির মাধ্যমে। কেরানী সৃষ্টির শিক্ষা ব্যবস্থা চালু রাখার ফলে যে শিক্ষিত শ্রেণি সৃষ্টি হোয়েছে, হোচ্ছে তা একটি স্বাধীন জাতির পক্ষে, বিশেষ কোরে অনুন্নত দেশের জন্য কোন কাজে আসবে না। কারণ একটি জাতিকে বা দেশকে শুধুমাত্র অর্থনৈতিক উন্নতি কোরতে গেলেও যে কর্মনিষ্ঠা, যে সাধুতা, যে কর্ত্তব্যপরায়ণতা একান্ত প্রয়োজন তা এদের মধ্যে নেই। ব্যক্তিগত, দলীয় স্বার্থকে এরা দেশের স্বার্থের ওপরে স্থান দেয়। অলসতা, কাজে ফাঁকি এদের মজ্জাগত হোয়ে গেছে। বড় বড় ব্যাপার বাদ দিন অতি সাধারণ ও মানবিক দায়িত্ব পালনেও এরা ব্যর্থ। যাদের এরা নকল করেন তাদের দেশে কোন অপরাধ ঘটলে দু’থেকে পাঁচ মিনিটের মধ্যে পুলিশ পৌঁছায় আর এদের দেশে চব্বিশ ঘণ্টায়ও পৌঁছায় না। ও দেশে কোথাও দুর্ঘটনা হোলে কয়েক মিনিটের মধ্যে অ্যাম্বুলেন্স এসে আহতকে তীর বেগে হাসপাতালে নিয়ে যায় এবং অ্যাম্বুলেন্স পৌঁছার সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তার, নার্স ক্ষিপ্রতার সঙ্গে চিকিৎসা শুরু করে। আর এদের দেশে দুর্ঘটনা ঘটলে অ্যাম্বুলেন্স আসে অনেক চেষ্টা, ডাকাডাকির পর, যদি সেটা অচল হোয়ে পড়ে না থেকে থাকে এবং হাসপাতালে পৌঁছার সময় অবধি যদি আহত বেঁচে থাকে তবে দু’এক ঘণ্টা হাসপাতালের বারান্দায় চিকিৎসা ও পরিচর্য্যাহীন অবস্থায় পড়ে থাকে। ওদেশে সরকারি অফিসে কোন ফাইল আরম্ভ হোলে যথাসম্ভব কম সময়ে তার যা সিদ্ধান্ত হবার তা হয়। এদের দেশে যদি ফাইলটি হারিয়ে না যায় তবে রোজ যেয়ে চেষ্টা করতে হয় তাকে এক টেবিল থেকে অন্য টেবিলে নিতে এবং তা কোরতে কর্মকর্ত্তাদের শুধু দৃষ্টি আকর্ষণ কোরতেই পকেটের পয়সা খরচ কোরতে হয় এবং তারপরও কর্মকর্ত্তা পান চিবুতে চিবুতে বলেন, আপনার কাজটা এখন হোচ্ছে না, ব্যস্ত আছি, আপনি দু’এক মাস পরে খোঁজ কোরবেন। ওদের দেশে ট্রেনের আসা যাওয়া দেখে ঘড়ি মেলানো যায় এদের দেশে ট্রেন ইত্যাদির সময়ের অমিল মিনিটের নয় অনেক ঘণ্টার। না, যাদের নকল করা হোচ্ছে আর যারা নকলের চেষ্টায় ওষ্ঠাগত প্রাণ হোচ্ছেন তাদের তফাৎ বোলতে গেলে শেষ নেই। জীবনের প্রতি স্তরে, প্রতি বিভাগে ঐ একই তফাৎ- চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য, যার বীজ বুনেছিল ঐ পাশ্চাত্য। আর এ কারণেই একই সিস্টেমের অনুসরণ-অনুকরণ কোরেও পাশ্চাত্য যেখানে জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে সফল, প্রাচ্য সেখানে চূড়ান্তভাবে ব্যর্থ।