গত ১৪ মার্চ, ২০১৫ তারিখ নোয়াখালীর সোনাইমুড়িতে মসজিদ নির্মাণে স্বেচ্ছাশ্রম দিতে আসা হেযবুত তওহীদ সদস্যদের উপর ধর্মব্যবসায়ী স্থানীয় হেফাজত-জামায়াত সন্ত্রাসীদের ভয়াবহ হামলা ও নির্মমভাবে পুড়িয়ে হত্যাসহ শতাধিক সদস্যকে আহত করার প্রতিবাদে গত ১৪ মার্চ, ২০১৬ তারিখ সকাল ১১ টায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির এক্সটেনশন হলে একটি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে হেযবুত তওহীদ। এতে মূল বক্তব্য উপস্থাপনের পর সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা এমামুয্যামান জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নীর কন্যা রুফায়দাহ পন্নী।
এসময় সাংবাদিকদের তিনি বলেন, “হেযবুত তওহীদ একটি সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক আন্দোলন। গত ২১ বছর জঙ্গিবাদ, ধর্মব্যবসা, অপরাজনীতির বিরুদ্ধে মানুষকে সচেতন করে যাচ্ছে আন্দোলনটি। এ কারণে প্রথম থেকেই সেই সব স্বার্থান্বেষী মহল যারা ধর্মকে ব্যবহার করে পার্থিব ও রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিল করে, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসের বিস্তার ঘটায় তারা আমাদের বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার চালিয়ে আসছে। তারা সাধারণ মানুষকে ভুল বুঝিয়ে, আমাদের নামে মিথ্যা ফতোয়া জারি করে মানুষকে ক্ষিপ্ত করে আমাদের বাড়ি-ঘরে আক্রমণ, মারধর, লুটপাট, অগ্নিসংযোগসহ বহু সদস্যকে অতীতে আহত, এমনকি হত্যা পর্যন্ত করেছে। গত সোমবার সোনাইমুড়িতে জামায়াত-হেফাজত এবং আরও কিছু সংগঠনের সম্মিলিত ষড়যন্ত্রে উচ্ছৃঙ্খল সশস্ত্র ক্যাডার বাহিনী হেযবুত তওহীদের এমাম হোসাইন মোহাম্মদ সেলিমের বাড়িতে আক্রমণ করে। তাঁর বাড়ির প্রাঙ্গনে মসজিদ নির্মাণ কাজে স্বেচ্ছাশ্রম দিতে আসা ৩ জন কর্মীকে তারা শহীদ করেছে, শতাধিক সদস্যকে আহত করেছে, লক্ষ লক্ষ টাকার মালামাল লুট করেছে, ১৫টা মটর সাইকেল জ্বালিয়ে দিয়েছে ও দুইটি বাড়ি জ্বালিয়ে ভস্মীভূত করে দিয়েছে।”
রুফায়দাহ পন্নী জানান, গত ১১ মার্চ কিছু বহিরাগত লোক জুম’আর সময় পোরকরা গ্রামের মসজিদে মসজিদে মুসল্লীদের মাঝে নাম-ঠিকানা বিহীন “হেযবুত তওহীদ একটি কুফরি সংগঠন” শিরোনামের এক হ্যান্ডবিল বিলি করে। তারপর হেযবুত তওহীদ সদস্যদের গ্রাম থেকে উচ্ছেদ করার জন্য খ্রিষ্টান কাফের ফতোয়া দিয়ে, নির্মাণাধীন মসজিদকে ‘গির্জা/মন্দির’ বলে মসজিদের ইমামগণ প্রচার করতে থাকে। এই
ইমামগণ জামায়াত ও হে
ফাজতের সক্রিয় কর্মী। এর পর থেকেই তারা এলাকায় সন্ত্রাসী বাহিনী জড়ো করতে থাকে। এলাকার এই পরিস্থিতি হেযবুত তওহীদের পক্ষ থেকে প্রশাসনকে গত কয়েকদিন ধরে পুনঃ পুনঃ অবগত করা হচ্ছে। কিন্তু প্রশাসন সহিংসতার উসকানিদাতাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থাই গ্রহণ করেনি। ১৩ মার্চ সোনাইমুড়ি থানায় ষড়যন্ত্রকারীদের নাম-ঠিকানা উল্লেখ করে একটি জিডি দায়ের করা হয়। ঘটনার দিন হামলার আগে সকালে নোয়াখালী পুলিশ সুপারের হাতে ২৪০ জন স্থানীয় ব্যক্তির স্বাক্ষর সংবলিত একটি স্মারকলিপিও প্রদান করা হয়। তথাপি প্রশাসনের চোখের সামনে তাদের নির্লিপ্ততার সুযোগেই দাঙ্গাবাজেরা এমন হত্যাকা- ও ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। তিনি জানান, ২০০৯ সালেও তারা হেযবুত তওহীদের বিরুদ্ধে এমনই মিথ্যা ফতোয়াবাজী করে সাধারণ মুসল্লিদের ধর্মবিশ্বাসকে ভুল খাতে প্রবাহিত করে আমাদের ৮ টি বাড়ি লুট করে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে ভস্মীভূত করে দিয়েছিল। “আর কত প্রাণহানী হলে কর্তৃপক্ষ বুঝবে যে ধর্মব্যবসায়ীরা দেশের শত্রু, মানবতার শত্রু?”, প্রশ্ন রুফায়দাহ পন্নীর।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন হেযবুত তওহীদের আমীর মো. মসীহ উর রহমান, মুখপাত্র এস এম সামসুল হুদা ও সাহিত্য সম্পাদক রিয়াদুল হাসান। সংবাদ সম্মেলনে আগত সংবাদকর্মীদেরকে হত্যাযজ্ঞের ইন্ধন জড়িতদের নামের তালিকা সংবলিত একটি প্রেসনোট প্রদান করা হয়। প্রেসনোটে যাদের নাম ছিল তারা হচ্ছেন, (১) ইউনুস মিয়া, পিতা মৃত নুর বকশ ব্যাপারী, (২) মহিউদ্দিন বেচু, পিতা- মৃত উজির মিয়া (৩) জহির, পিতা ইউনুস মিয়া, (৪) মোঃ নুরুল আলম মওলানা, পূর্বপাড়া নুর বক্স ব্যাপারী বাড়ি মসজিদের খতিব, পিতা- মৃত সালামত উল্যাহ (৫) আলাউদ্দিন, পিতা- মজিবুল হক, (৬) আমিনুল হক, পিতা- মৃত সেরাজুল হক হাজী (৭) বশীর, পিতা: নুরুল আলম মুন্সি, (৮) আমিনুল হক, পিতা- মৃত দাইয়া মিয়া, (৯) শফিক উল্যাহ মুন্সি, পিতা- মৃত মন্তাজ মিয়া, (১০) শাহাদাৎ, সভাপতি, পোরকরা ইউনিয়ন ছাত্র শিবির, পিতা- খালেক, (১১). হিরন, পিতা- মৃত: মনুড্রাইভার, (১২) ইমন, পিতা- অজ্ঞাত, (কুমিল্লা গাড়ি পোড়ানো মামলার আসামি), (১৩) মো: বেলায়েত হোসেন, কচুয়াকান্দি জামে মসজিদের ইমাম, পিতা- মৃত ছিদ্দিক উল্যাহ, (১৪) রবিউল, পিতা- লাল মিয়া, (১৫) হাসান, পিতা- মতিন, (১৬) হানিফ মোল্লা, আমীর, সোনাইমুড়ি উপজেলা, জামায়াত ইসলামী বাংলাদেশ, পিতা: মৃত ফজর আলী মুন্সী, (১৭) আব্দুর রহিম, পিতা আলী হায়দার। দুষ্কৃতকারীদের অবিলম্বে গ্রেফতার করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে।
গত সোমবার নোয়াখালীর সোনাইমুড়িতে হেযবুত তওহীদের স্থানীয় সদস্যদের উপর হামলার ঘটনা ঘটে। হামলায় সংগঠনটির তিনজন নিহত হওয়ার ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া গেছে। তবে কয়েকজন এখনো নিখোঁজ রয়েছে। সোমবার রাতে গুরুতর আহতদের নোয়াখালী সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বাকিদের একদিন পুলিশ হেফাজতে রাখার পর গতকাল ৫৪ ধারায় মামলায় দায়ের করে তাদেরকে নোয়াখালী চিফ জুডিশয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে হাজির করা হয়। আদালত তাদের জেলহাজতে প্রেরণের নির্দেশ দেন।
এ ব্যাপারে হেযবুত তওহীদের আমীর মসীহ উর রহমান প্রতিবেদককে বলেন, “আমরা বিস্মিত। প্রশাসনের এটা কেমন আচরণ? আমরা নিরস্ত্র কিছু মানুষ সন্ত্রাসী হামলার শিকার হলাম। আমরাই আহত-নিহত হলাম, আমাদেরই ঘর-বাড়ি, এমনকি লাশ পুড়িয়ে দেওয়া হলো। সেই আমাদের বিরুদ্ধেই পুলিশ বাদী হয়ে ৫৪ ধারায় মামলা দিল। অথচ যারা এই ধ্বংসযজ্ঞ ও হত্যাকা- চালাল, যারা তার ইন্ধন দিল, অর্গানাইজ করল, এমনকি থানায় পর্যন্ত হামলা করল, তাদের বিরুদ্ধে পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নিল না। এখানে অন্যায়কে চূড়ান্তরূপে প্রশ্রয় দেওয়া হয়েছে। ঘটনাপূর্ব, ঘটনাকালীন ও ঘটনার পরবর্তী প্রতিটি ক্ষেত্রে পুলিশ পেশাদারিত্বের পরিচয় দিতে ব্যর্থ হয়েছে।” তিনি জানান, “স্থানীয় হামলাকারীদের বিরুদ্ধে আমরা মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছি। শীঘ্রই তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”