পাবনায় হেযবুত তওহীদের সদস্য সুজন শেখের হত্যাকাণ্ডের বিচার ও স্থানীয় কার্যালয়ে হামলায় জড়িতদের খুঁজে বের করার দাবিতে সারাদেশের ন্যায় নোয়াখালীতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। ৩০ আগস্ট, ২০২২ মঙ্গলবার সকাল ১০টায় নোয়াখালী জেলা প্রেসক্লাবের সামনে এ মানববন্ধনের আয়োজন করে জেলা হেযবুত তওহীদ। এরআগে আশেপাশের বিভিন্ন উপজেলা থেকে হেযবুত তওহীদের হাজার হাজার নেতাকর্মীরা সুজন হত্যার বিচারের দাবি সম্বলিত বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে বিক্ষোভ সমাবেশে যোগ দেন।
মানববন্ধন শেষে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় অভিমুখে এক বিশাল মিছিল বের হয়। হাজারো জনতার অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত এই মিছিলে সমস্বর উচ্চারণে ‘সুজন ভাইয়ের রক্ত বৃথা যেতে দিব না’, ‘সুজন হত্যার বিচার চাই’, ‘এক সুজন শহীদ হল, লক্ষ সুজন ঘরে ঘরে’, ‘পাবনা অফিসে হামলা কেন, প্রশাসনের জবাব চাই’, ‘সন্ত্রাসীদের ঠিকানা বাংলাদেশে হবে না’ ইত্যাদি শ্লোগানে মুখরিত হয়। পরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে গিয়ে মিছিলটি শেষ হয়।
মানববন্ধনে চট্টগ্রাম বিভাগীয় আমির ও কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারাণ সম্পাদক মো. নিজাম উদ্দিন বলেন, সুজনের লাশ যখন তার গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, তখন হাজার হাজার মানুষের বাঁধভাঙ্গা স্রোত এটাই প্রমাণ করে বাংলাদেশের মানুষের মনে ধর্মব্যবসায়ী, সন্ত্রাসীদের জন্য জায়গা নেই। তারা নিরপরাধ সুজনের মৃত্যু মেনে নিতে পারেনি। তাদের চোখে শোকের চেয়ে ছিল ক্ষোভের আগুন, তারা এই হত্যার দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি করেছেন। এই যে জনমানুষের সুজনের প্রতি সমর্থন, তাতে পরাজয় ঘটেছে সন্ত্রাসীদের, পরাজয় ঘটেছে জঙ্গিবাদের। সুজনের রক্তের বিনিময়ে জয় হয়েছে ন্যায় ও সত্য প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের। তিনি আরো বলেন, সুজনের উপর এই হামলা নতুন কোন ঘটনা নয়। ১৯ বছর পূর্বে ২০০৩ সালে মাদারীপুরের কালকিনিতে হেযবুত তওহীদের সদস্য সাইফুল্লাহতে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। আমরা তার বিচারের জন্য মামলা পর্যন্ত করতে পারি নি। আমাদের সেই সুযোগ দেওয়া হয় নি। এরপর কুষ্টিয়ায় শহীদ রাবেয়াকে তার বাড়িতে আক্রমণ করে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৬ সালে আপনাদের ঘরের কাছেই সোনাইমুড়িতে হেযবুত তওহীদের এমামের বাড়িতে হামলা চালিয়ে আমাদের দুইজন ভাইকে শহীদ করেছে সন্ত্রাসীরা। তার বিচার আমরা আজও পাইনি। সোনাইমুড়ি হামলার সেই সন্ত্রাসীরা জামিনে বেরিয়ে এখন বীরদর্পে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আজকে সোনাইমুড়ির ঘটনার যদি বিচার হতো, মাদারীপুরে ঘটনার যদি বিচার হতো তবে সন্ত্রাসীরা পাবনার এই ঘটনা ঘটানোর সাহস পেত না। আদমরা প্রশাসনের কাছে একটি দৃষ্টান্ত তৈরি করার দাবি জানাচ্ছি, পাবনার হামলার সাথে যারা জড়িত তাদের এমনভাবে বিচারের আওতায় আনতে হবে যাতে তারা কোন আইনের ফাঁক-ফোকড় দিয়ে বেরিয়ে যেতে না পারে। এই দৃষ্টান্ত ভবিষ্যতে সন্ত্রাসীদের হেযবুত তওহীদের উপর আক্রমণ করতে দুইবার ভাবাবে।
নোয়াখালী জেলা সভাপতি মো. গোলাম কবির বলেন, আমরা আজ নোয়াখালীর হাজার হাজার মানুষ একত্রিত হয়েছি শুধুমাত্র একটি উদ্দেশ্যে। আর সেটি হলো পাবনায় আমাদের যেই ভাইকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে তার বিচার চাইতে। এই মানববন্ধনে উপস্থিতি প্রতিটি মানুষের মনে এখন একটাই চাওয়া, সরকার দেখুক পাবনার সুজন একা নয় তার পেছনে দাঁড়িয়ে আছে তারা হাজারো আত্মার ভাই। তারা সুজনের হত্যার বিচার না পাওয়া পর্যন্ত রাজপথ ছাড়বে না। আমরা শপথ নিয়েছি, আমরা জীবন দিব তবুও এই বাংলার মাটিকে জঙ্গিবাদের, সন্ত্রাসীদের ঠিকানা হতে দিব না। আমরা প্রশাসনের কাছে প্রশ্ন রাখতে চাই, হেযবুত তওহীদ দেশের উন্নয়নের জন্য, সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য, দেশের মাটিকে জঙ্গিবাদের হাত থেকে মুক্ত রাখার জন্য কাজ করে যাচ্ছি- এটাই কি আমাদের অপরাধ? তাহলে বার বার কেন আমাদের আমাদের উপর হামলা হচ্ছে? দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে এর জবাব আজ না হোক কাল অবশ্যই দিতে হবে।
বেগমগঞ্জ থানার সভাপতি সাহিদুর রহমান বলেন, কিছুদিন আগে চৌমুহনিতে আমাদের সদস্য ইসমাইল হোসেনের বাড়িতে হামলা হয়েছে। আমরা মামলা করতে গিয়েছি, আমাদের মামলা নেওয়া হয় নাই। একইভাবে হাতিয়াতে আমাদের ভাইদের উপর আক্রমণ চালিয়ে তাদের রক্তাক্ত করা হয়েছে, আমরা প্রশাসনের কাছে গিয়েছি কিন্তু কোন প্রতিকার পাই নি। সেনবাগে আমাদের সদস্য আমীর হোসেনকে পিটিয়ে আহত করা হয়েছে, তবুও আমাদের মামলা নেয় নাই। এমনকি ঈদের দিন মাইজদী হাসপাতাল রোডে আমাদের বোনেরা পত্রিকা বিক্রি করতে গেলে তাদের উপর নির্যাতন করা হয়েছে, আমরা সদর থানায় বার বার গিয়েছি কিন্তু আমাদের অভিযোগ গ্রহণ করা হয় নাই। প্রশাসনের পক্ষ থেকে কেন আমাদের এভাবে অগ্রাহ্য করা হচ্ছে। তারা আমাদের অভিযোগ নিচ্ছে না কারণ তারা সন্ত্রাসীদের ভয় পায়। তাদের সংখ্যাগরিষ্ঠতাকে ভয় পায়। আমরা প্রশাসন ও সরকারকে জানাতে চাই, আপনারা সন্ত্রাসীদের ভয় পাবেন না। হেযবুত তওহীদের কর্মীরা আজ মাঠে নেমেছে। তাদের সাথে রয়েছে লক্ষ লক্ষ জনতা। এক সুজন হত্যার বিচারের দাবিতে গত কয়েকদিনে দেশের ৩০টি জেলারও অধিক জায়গায় মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে, যা আগামী দিনেও অব্যাহত থাকবে। তাই আপনাদের বলবো, সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার এখনই সময়। পাবনায় সুজন হত্যার সাথে জড়িত সন্ত্রাসীদের কঠোর শাস্তি দিয়ে দৃষ্টান্তমূলক উদাহরণ তৈরি করুন।
কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রাকীব আল হাসান বলেন, হেযবুত তওহীদের সদস্যরা প্রতিনিয়ত হামলার হুমকি পাচ্ছে। প্রশাসনকে আর অবহেলা করার সুযোগ নেই। দেশের আইন অনুযায়ী আমাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব তাদের। তারা যদি এই নিরাপত্তা নিশ্চিত না করতে পারে তবে আমাদের বলে দিক, আমরা আত্মরক্ষার অধিকার কাজে লাগাবো। কিন্তু বছরের পর বছর, মাসের পর মাস, দিনের পর দিন এভাবে চলতে পারে না। প্রতিটি ঘটনার আগেই আমরা ঘটনার পেছনের ইন্ধনদাতাদের উস্কানি টের পাই, এবং সেটি প্রশাসনকে জানাই। কিন্তু প্রশাসন আমাদের বরাবরই অবহেলা করে আসছে। পাবনার ঘটনার আগেই আমরা জিডি করেছিলাম, কিন্তু আমাদের সেই জিডি আমলে নেওয়া হয় নাই। যদি প্রশাসন কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করতো, তবে আজকে সুজনকে তার প্রাণ হারাতে হত না। এই দায়ভার আজ কে নেবে? প্রশাসন, সরকার নাকি বিচারহীনতা। আমি আজকের এই মানববন্ধন থেকে সুজন হত্যার প্রকৃত আসামীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছি একইসাথে হেযবুত তওহীদের এমাম এবং তার অনুসারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানাচ্ছি।
মানববন্ধনে আরো বক্তব্য দেন নোয়াখালী সদর উপজেলা সভাপতি মোহাম্মদ আশিক, সেনবাগ উপজেলা সভাপতি মো. আমির হোসেন ও স্থানীয় নারী নেত্রী নাজমা আক্তার।
প্রসঙ্গত, গত ২৩ আগস্ট মঙ্গলবার রাতে একটি সংঘবদ্ধ সন্ত্রাসী চক্র দেশীয় ধারালো অস্ত্র নিয়ে হেযবুত তওহীদের পাবনা স্থানীয় কার্যালয়ে হামলা চালায়। এতে হেযবুত তওহীদের ১০ সদস্য আহত হন। এরমধ্যে গুরুতর আহত অবস্থায় দুইজনকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজে পাঠানো হলে সেখানেই ২৪ আগস্ট রাত আড়াইটায় সুজন শেখ নামে এক সদস্য মারা যান। আহত অপর সদস্য মো. আমিনুল ইসলাম এখনো আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আছেন।
এ ঘটনায় রাতেই হেযবুত তওহীদের জেলা সভাপতি সেলিম শেখ বাদী হয়ে ১৪ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামাদের বিরুদ্ধে পাবনা সদর থানায় মামলা করে। পরে পুলিশ বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে ৭ জনকে আটক করতে সক্ষম হয়। পরে আসামিদের পাবনার অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পাঠানো হলে আদালত ৩ আসামির বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ড মঞ্জুর করেন। তারা বর্তমানে রিমান্ডে রয়েছেন। এদিকে বাকী ৭ আসামিকে পুলিশ এখনো গ্রেফতার করতে সক্ষম না হওয়ায় সারাদেশে ক্ষোভ বাড়ছে। ইতোমধ্যে আসামিদের গ্রেফতারের দাবিতে দেশের ৩০টি জেলায় বিক্ষোভ সমাবেশ ও মানববন্ধন করেছে স্থানীয় হেযবুত তওহীদের নেতাকর্মীরা। আগামী দিনেও এসব কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন দলটির নেতারা।