সানিয়াত আল আহমেদ
একটি জাতির যখন নৈতিক অধঃপতন ঘটে, বিশেষ করে যুব সমাজের, তখন সেই জাতির স্থিতিশীলতা নষ্ট হয়ে যায়, সমাজে অপরাধের মাত্রা বেড়ে যায় এবং এক সময় তা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। রাষ্ট্র তখন শত শক্তি প্রয়োগ করে, আইন তৈরি করে, শাস্তি দিয়েও সমাজের স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে পারে না। তার প্রকৃষ্ট প্রমাণ দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপট। ছোটখাটো ঘটনাকে কেন্দ্র করে গ্রামেগঞ্জে দাঙ্গা-হাঙ্গামা, হত্যা, লুণ্ঠন এবং রাজনৈতিক দলগুলো বিভিন্ন কর্মসূচিতে যে নৃশংসতা, নির্মমতার পরিচয় দিয়ে আসছে তা থেকেই স্পষ্ট হয়ে উঠছে মানুষ আজ আত্মা হারিয়ে ফেলেছে। সমস্ত নৈতিকতা, মনুষ্যত্ব হারিয়ে পশুর চেয়েও নিকৃষ্ট হয়ে উঠেছে একশ্রেণির মানুষ। পশু-পাখি পর্যন্তও পুড়িয়ে মারা হয় নানা ইস্যুতে, নৈতিক অধঃপতনের কোন পর্যায়ে পৌঁছালে নিরীহ, মুক, আজন্ম মানুষের সেবায় নিয়োজিত, প্রতিবাদহীন পশু পুড়িয়ে মারতে পারে কেউ! সামাজিক অপরাধ প্রবণতা বাংলাদেশে নতুন কোন ঘটনা নয়, তবে সম্প্রতি এটি অত্যধিক হারে বেড়ে গেছে। এই অপরাধগুলি নিয়ন্ত্রণে সরকার বরাবরই শক্তিপ্রয়োগকেই একমাত্র পথ হিসেবে বেছে নেয়। কিন্তু এই সহিংসতা ক্রমেই নৃশংসতা, নির্মমতায় রূপ নিচ্ছে এবং রাষ্ট্র কোনভাবেই তা বন্ধ করতে পারছে না। এই অবস্থানে এসে আমাদের উপলব্ধি করতে হবে একজন মানুষ দেহ ও আত্মার সমন্বয়ে গঠিত। আত্মার অধঃপতন যখন মানুষকে পশু পর্যায়ে নিয়ে যায় তখন শক্তি প্রয়োগ করে সমাজে শান্তি আনা যায় না।
তাই বর্তমান পরিস্থিতিতে সমাজে শান্তি, নিরাপত্তা, স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে হলে আগে জাতির আত্মিক উন্নতি ঘটাতে হবে। মানুষের মধ্য থেকে ন্যায়-অন্যায়, ঠিক-বেঠিক, উচিত-অনুচিত, ভালো-মন্দ, সত্য-মিথ্যার যে জ্ঞান লুপ্ত হয়ে গেছে তা পুনরুদ্ধার করতে হবে। কিন্তু কিভাবে? দেশে প্রচলিত জীবনব্যবস্থা যে মানুষকে আত্মিক উন্নয়নে সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। তাই আগে বুঝতে হবে জাতির এই নৈতিক স্খলনের একমাত্র কারণ বর্তমান প্রচলিত জীবনব্যবস্থা। পাশ্চাত্যের অনুকরণে নৈতিক শিক্ষাহীন, আত্মাহীন, দেহকেন্দ্রিক, যান্ত্রিকতাকেন্দ্রিক যে জীবনব্যবস্থাটি আমরা এতগুলো বছর ধরে চর্চা করে আসছি তারই চূড়ান্ত ফল এই অধঃপতন। আত্মাহীন এই সিস্টেমটাই এই সমাজের মানুষগুলোকে পশু পর্যায়ে নিয়ে গেছে। এই অধঃপতিত সমাজকে বেঁচে থাকার উপযোগী করে তুলতে হলে প্রয়োজন স্রষ্টার সার্বভৌমত্বময় এমন একটি ভারসাম্যপূর্ণ জীবনব্যবস্থা যা একই সাথে মানুষের দৈহিক ও আত্মিক চরিত্রের বিকাশ ঘটায়। আর ইসলামই একমাত্র জীবনব্যবস্থা যেখানে দেহ ও আত্মার ভারসাম্য রয়েছে। তাই মানবসৃষ্ট সমস্ত জীবনব্যবস্থাকে ত্যাগ করে স্রষ্টাপ্রদত্ত জীবনব্যবস্থা ইসলামকে সমাজ জীবনে মেনে নিয়ে তা কার্যকর করার মাধ্যমেই আমাদের এই রুদ্ধশ্বাস পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণ পেতে হবে।