জঙ্গিবাদ, ধর্মব্যবসা, ধর্মীয় অনুভূতি ছিনতাই করে সন্ত্রাস সৃষ্টির বিরুদ্ধে হেযবুত তওহীদের আদর্শিক সংগ্রামের হাতিয়ার দৈনিক পত্রিকা, বই, হ্যান্ডবিল ইত্যাদি। এই প্রকাশনাগুলো সরকারের যথাযথ দপ্তরের অনুমোদন প্রাপ্ত হলেও এগুলো জনগণের কাছে প্রচার করতে গেলে হেযবুত তওহীদের সদস্যদের উপর শারীরিক আঘাত, হামলা, মারধোর এখন নিত্যদিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেবল পুরুষ সদস্যই নয় সম্প্রতি পত্রিকা ও বই প্রচার করতে গিয়ে ধর্মব্যবসায়ী একটি শ্রেণীর বাধার শিকার হয়েছেন হেযবুত তওহীদের নারী সদস্যগণও। টাঙ্গাইল, জামালপুর, রংপুর, মুন্সিগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলার হেযবুত তওহীদের নারী সদস্যরা ধর্মব্যবসায়ীদের দ্বারা লাঞ্ছনার শিকার হন।
গত ৩ জুলাই ২০২২ টাঙ্গাইল জেলার ঘাটাইল উপজেলায় দৈনিক বজ্রশক্তির প্রবন্ধ সংকলন প্রচার করতে গেলে ৫ জন আলেম দাবিদার প্রায় তিনশত লোক নিয়ে করে হেযবুত তওহীদের নারী সদস্যদের ঘিরে ধরে। তারা জনগণকে উত্তেজিত করার জন্য হেযবুত তওহীদের এমাম ভণ্ড, নাস্তিক, হেযবুত তওহীদের সদস্যরা খ্রিষ্টান ইত্যাদি বলে অপপ্রচার চালাতে থাকে এবং অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। তারা জনসাধারণকে হেযবুত তওহীদের নারীদেরকে বেঁধে, বস্ত্রহীন করে গায়ে গরম পানি ঢালার জন্য উস্কানি দেয়। একইভাবে গত ১৮ আগস্টেও মুন্সিগঞ্জে হেযবুত তওহীদের নারী সদস্যরা আন্দোলনের প্রচারকার্য করতে গেলে স্থানীয় ধর্মব্যবসায়ীরা তাদেরকে প্রচারকার্যে বাধা দেয়। তাদেরকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে এবং নানা রকম হুমকি ধামকি দিতে থাকে। জানা যায় তারা চরমোনাই পীরের অনুসারী। সংঘর্ষ বাধানোর অভিসন্ধি নিয়ে তারা সর্ব উপায়ে পরিস্থিতি উত্তপ্ত করে তোলার পায়তারা করতে থাকে।
গত কোরবানির ঈদের সময় (২০২২) হেযবুত তওহীদের জামালপুর জেলার নারী সদস্যদের সাথে ধর্মব্যবসায়ীদের অপপ্রচারে বিভ্রান্ত এক ব্যক্তির সাথে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। ৩০ আগস্ট রংপুরেও একটি মাদ্রাসার ছাত্র ও শিক্ষকেরা হেযবুত তওহীদের সদস্যাদের পথরোধ করে পত্রিকা বিক্রিতে বাধা প্রদান করে। একপর্যায়ে তারা সদস্যাদের হাত থেকে পত্রিকা ছিনিয়ে নেয়। একজন সদস্যা তাদের এই অপকর্ম ভিডিও রেকর্ড করতে গেলে তার হাত থেকে ফোন কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হয় এবং তাদেরকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা হয়।
হেযবুত তওহীদের সদস্যাদের সঙ্গে ঘটে যাওয়া সাম্প্রতিক যে ঘটনাগুলো বললাম এগুলো কিন্তু এইবারই প্রথম নয়। হেযবুত তওহীদ আন্দোলনের সূচনালগ্ন থেকেই একটি ধর্মব্যবসায়ী শ্রেণী প্রতিনিয়ত হেযবুত তওহীদের প্রচারকর্মীদের উপর এই ধরনের ছোটবড় হামলা চালিয়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে আসছে। স্বার্থান্বেষী এই গোষ্ঠীটি হেযবুত তওহীদের অগ্রযাত্রাকে রুখে দিতে সাধারণ মানুষের ঈমানকে হাইজ্যাক করে, তাদের ধর্মবিশ্বাসকে ভুল খাতে প্রবাহিত করে প্রতিনিয়ত হেযবুত তওহীদের নিবেদিত প্রাণ মো’মেনদের পথকে কণ্টকাকীর্ণ করে তুলেছে। হেযবুত তওহীদের পুরুষ সদস্যদের পাশাপাশি নারী সদস্যারও যখন একইভাবে প্রচার কাজের অংশ হিসেবে তওহীদের বাণী মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে সমানতালে মাঠে-ময়দানে ছুটে বেড়াচ্ছেন, তখন তারা হেযবুত তওহীদের বোনেদের পথকে ভয়াবহ মুশকিল করে তুলছে। পথে-ঘাটে, অলি-গলিতে, বাসা-বাড়িতে, সোশ্যাল মিডিয়ায় তারা যে যেখানে পারছে হেযবুত তওহীদের মেয়েদেরকে জঘন্য কায়দায় উত্যক্ত করে আসছে, অশ্লীল-অশ্রাব্য ভাষায় গালাগালি করছে, অপমান-অপদস্থ করছে, হামলা করছে, হত্যা করতে চাইছে। শুধু তাই নয়, তারা নিজেরা যে, এমন নিকৃষ্ট কাজ করে বসে থাকছে তা নয়। হেযবুত তওহীদের বক্তব্য যাতে সাধারণ মানুষ শুনতে না পারে সেজন্য প্রতিনিয়ত এই আলেম দাবিদার ধর্মজীবী শ্রেণিটি ওয়াজ মাহফিলে, সভা সেমিনারে, তাদের বক্তব্যে হেযবুত তওহীদের বিরুদ্ধে স্পষ্ট মিথ্যাচার, অপপ্রচার করে আসছে। তারা এমন এমন মিথ্যাচার প্রতিনিয়ত করছে যা হেযবুত তওহীদের কথা কাজ দূরে থাক, কল্পনাতেও নেই। তাদের এই ষড়যন্ত্র, উস্কানি, প্রোপাগাণ্ডায় সাধারণ মানুষ আমাদেরকে ভুল বুঝছে, আমাদের সম্পর্কে ভুল জানছে, তাদের ইন্ধনে আমাদের উপর হামলা হচ্ছে। আমরা আক্রান্ত হচ্ছি। আমাদের সদস্যদের নির্মমভাবে হত্যা পর্যন্ত করা হচ্ছে আর তার দায় চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে উত্তেজিত গ্রামবাসী, ধর্মপ্রাণ মুসলমান ও তওহীদী জনতার উপর। কারা তাদেরকে মিথ্যা কথা বলে উত্তেজিত করে তুলল সেটা থেকে যাচ্ছে ঘটনার আড়ালে।
আমাদের কথা হচ্ছে, বাংলাদেশ স্বাধীন সার্বভৌম একটি রাষ্ট্র। একটি স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে আমাদের নিজেদের ধর্মীয় বিশ্বাস লালন, প্রচার, মসজিদ নির্মাণ, বাকস্বাধীনতা তথা মতামত প্রকাশের অধিকার আমাদের সংবিধান প্রদত্ত মৌলিক অধিকার। সাংবিধানিক এই অধিকার হরণ করার এখতিয়ার অধিকার কারও নেই। বরং যারা আমাদের এই অধিকার হরণ করতে চেষ্টা করবে তারাই আইন অমান্যকারী হিসেবে চিহ্নিত হয়। তাহলে আমরা হেযবুত তওহীদ যখন আমাদের আদর্শ মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে নিজেদের কষ্টার্জিত সম্পদ ব্যয় করে কাজ করে যাচ্ছি, চলমান জাতীয় ও বৈশ্বিক সংকট থেকে মানুষকে রক্ষার জন্য তওহীদের ভিত্তিতে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করতে সর্বাত্মকভাবে কাজ করে যাচ্ছি, তখন কী করে একটি ধর্মব্যবসায়ী শ্রেণি আমাদের এই কাজে বেআইনীভাবে বাধা প্রদান করে যাচ্ছে? কেন আমরা বারবার আক্রান্ত হয়েও কোনো বিচার পাচ্ছি না? বিগত ২৭ বছরে হেযবুত তওহীদ রাষ্ট্রের একটিও আইন লঙ্ঘন করেনি, একটিও অন্যায় করেনি। এটা শুধু আমাদের মৌখিক দাবি নয়, এটা নিম্ন থেকে সর্বোচ্চ আদালতের সিদ্ধান্ত। আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকা, আইন নিজের হাতে তুলে না নেওয়াই কি তাহলে আমাদের ভুল সিদ্ধান্ত? যারা প্রতিনিয়ত হেযবুত তওহীদের এই সাংবিধানিক অধিকারচর্চার পথে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করছে, আইন অমান্য করছে, উগ্রবাদ, সন্ত্রাসকে উস্কে দিচ্ছে তাদের আইনের আওতায় আনা এখন সময়ের দাবি।
যে আলেমরূপী ধর্মব্যবসায়ী গোষ্ঠীটি আমাদের নারীদেরকে প্রচার কাজ করতে, বই-পত্রিকা বিক্রি করতে বাধা দেয় তাদের প্রধান অভিযোগ যে, হেযবুত তওহীদের নারীরা বেপর্দা চলাফেরা করে। ভাবে মনে হয়, তারা হলেন বাংলাদেশের নৈতিক পুলিশ। কে কতটুকু পর্দা করছে, কার চুল দেখা যাচ্ছে, কার গায়ে বোরকা নেই ইত্যাদি দেখে বেড়ানোর ঈশ্বরপ্রদত্ত ঠিকাদারি তারা লাভ করেছেন। যে দেশে নারী প্রধানমন্ত্রী, নারী বিরোধীদলীয় নেত্রী, নারী স্পিকার, সেই দেশে বাস করে তারা হেযবুত তওহীদের নারী সদস্যদেরকে নিজ এলাকায় বাগে পেয়ে মনের অক্ষম আক্রোশ ও ক্ষোভ তাদের উপর ঢেলে দিতে চেষ্টা করে। তাদের প্রতি আমাদের স্পষ্ট জবাব, হেযবুত তওহীদের নারীরা কোর’আনে আল্লাহপ্রদত্ত পর্দার সীমারেখা মেনেই শালীনতার সাথে প্রতিটা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করছেন। তারা ততটুকুই পর্দা করছে যতটুকু আল্লাহ বলেছেন। (সুরা আহযাব- ৫৯) নং আয়াতে আল্লাহ বলেন, “হে নবী! আপনি আপনার স্ত্রীদেরকে, কন্যাদেরকে ও মো’মেনদের নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের চাদরের কিছু অংশ নিজেদের বুকের উপর টেনে দেয়। এতে তাদেরকে চেনা সহজতর হবে, ফলে তাদেরকে উত্যক্ত করা হবে না। আর আল্লাহ্ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।” এখানে আল্লাহ সুস্পষ্টভাবে মো’মেন নারীদের পোশাক সংক্রান্ত নীতিমালা নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন। আল্লাহ মো’মেন নারীদের এমন পোশাক পরতে বলেছেন, যাতে করে তাদের চেনা সহজ হয়। এ আয়াতের আলোকে হেযবুত তওহীদের নারীরা মুখ ঢাকেন না। কারণ চেহারাই হচ্ছে মানুষকে চেনার সহজ উপায়। আর আপাদমস্তক বোরখা পরতেও আল্লাহ বলেন নি। কেবল বলেছেন ওড়না বা চাদর দিয়ে বক্ষদেশ আবৃত করতে। সেটা তারা করেন।
অন্যদিকে (সুরা নুর- ৩১) নং আয়াতে আল্লাহ বলছেন, “ঈমানদার নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের যৌন অঙ্গের হেফাযত করে। তারা যেন যা সাধারণত প্রকাশমান তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে।” এখানে নারীদের যৌন অঙ্গের হেফাজত করতে বলা হয়েছে। মানুষের মুখ নিশ্চয়ই যৌন অঙ্গ নয় যে ঢেকে রাখতে হবে। তাছাড়া আরও সুস্পষ্ট করে তিনি বললেন, সাধারণ প্রকাশমান অংশসমূহ খোলা রাখতে। সাধারণ প্রকাশমান অঙ্গ কী তা বুঝতে মহাকাশ বিজ্ঞানী হওয়া লাগে না। সাধারণ কাজগুলো করতে ও জীবনধারণের জন্য যে অঙ্গসমূহ সর্বদা ব্যবহার করা লাগে সেগুলোও সাধারণ প্রকাশমান অঙ্গ; যেমন চোখ, কান, নাক, মুখ, হাত, পা ইত্যাদি। এই সহজ, সরল স্বাভাবিক পোশাকরীতি বা ড্রেসকোড আল্লাহ মো’মেন নারীদের জন্য দিয়েছেন। হেযবুত তওহীদের নারীরা এই পর্দার বিধান মেনেই পুরুষের পাশাপাশি আন্দোলনের কাজ করে যাচ্ছেন। অথচ ধর্মব্যবসায়ী গোষ্ঠীটি বাড়াবাড়ি করে নিজেদের বানানো বিকৃত পর্দাপ্রথা নারীদের উপর যুগ যুগ ধরে চাপিয়ে আসছে, ফতোয়ার বেড়াজালে নারীদের বন্দী করে নারীদের স্বাভাবিক কার্যক্রম ও চলাফেরাকে বাধাগ্রস্ত করে আসছে। হেযবুত তওহীদের নারীরা যখন তাদের এই বিকৃত পর্দা প্রথার বেড়াজাল ছিন্ন করে আল্লাহ রসুলের (সা.) প্রকৃত ইসলামের শিক্ষাকে ধারণ করছেন, তুলে ধরছেন, উম্মতে মোহাম্মদীর নারীদের মতো তাদের মেধা, জ্ঞান, যোগ্যতার বিকাশ ঘটাচ্ছেন, উম্মতে মোহাম্মদীর নারীদের মতোই পুরুষের পাশাপাশি সমাজের জন্য, দেশের জন্য, মানবতার জন্য কাজ করছেন তখন তারা হেযবুত তওহীদের নারীদের পথে এভাবেই বাধার সৃষ্টি করছে, তাদের হামলা করছে, জনগণকে তাদের বিরুদ্ধে উস্কে দিচ্ছে। তাদের এই ইসলামবিরোধী ও বে-আইনী কর্মকাণ্ডের দ্বারা আক্রান্ত হচ্ছে হেযবুত তওহীদের নিবেদিতপ্রাণ সদস্য-সদস্যারা। প্রচলিত আইন বা ইসলাম যে দৃষ্টিকোণ থেকেই বলি, কোনোদিক থেকেই ধর্মব্যবসায়ী শ্রেণীটির এই আচরণ চালিয়ে যাওয়ার ন্যায্যতা পাওয়া যায় না। আইনের প্রতি তাদের এই বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন, উগ্রবাদী তাণ্ডব, সন্ত্রাসবাদের বিস্তার, আইন নিজের হাতে তুলে নিয়ে নিরপরাধ মানুষের উপর হামলাসহ এসব বর্বর নীতি-নৈতিকতাবর্জিত কর্মকাণ্ডের কালো হাত চেপে ধরার এখনই সময়। এখনো যদি ধর্মব্যবসায়ীদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে জাতি না জাগে তাহলে তারা এ দেশে ধর্মান্ধতার উত্থান ঘটিয়ে দেশকে ইরাক-সিরিয়া, আফগানিস্তানের মত করুণ পরিণতির দিকে নিয়ে যাবে। সে দিন দেখার আগেই আসুন, অন্যায় যে-ই করুক তার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করি, আল্লাহর হুকুমের ভিত্তিতে একজন নেতার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ হই।