সাইদুর রহমান:
সুরা আল এমরানের ১০৩ নং আয়াতে বলেছেন- ঐক্যবদ্ধ হয়ে আল্লাহর রজ্জু (হেদায়াহ, দীন) ধরে রাখতে, বিচ্ছিন্ন না হতে; সুরা আস্ সফ-এর ৪ নং আয়াতে আমাদের আদেশ করছেন গলিত সীসার দেয়ালের মতো ঐক্যবদ্ধ হয়ে জেহাদ করতে। গলিত সীসার দেয়ালে একটি সূঁচ ঢোকার জায়গাও থাকে না। যাদের কাজে, কথায় ঐক্য নষ্ট হবার সম্ভাবনা থাকে তাদের জন্য রেখেছেন কঠিন শাস্তি, আযাব কোর’আনের বহু স্থানে। যে সব কাজে ও কথায় উম্মাহর ঐক্য নষ্ট হবার সম্ভাবনা আছে সে সব কাজকে আল্লাহর রসুল সরাসরি কুফর বলে আখ্যায়িত করেছেন। কেবল শেষ দীনেই নয়, ইতঃপূর্বে আল্লাহ যত নবী রসুল পাঠিয়েছেন এবং তাদের প্রতি যত কিতাব নাজিল করেছেন সর্বত্র জাতির ঐক্যের বিষয়ে বিরাট গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। সনাতন ধর্মের গ্রন্থগুলিতেও ঐক্যের বিষয়ে বলা আছে। যেমন মহাভারতের কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের প্রাক্কালে মহারাজ ধৃতরাষ্ট্রকে মহাত্মা বিদুর বলেছিলেন, “দৃঢ়বদ্ধমূল অতিমহৎ একমাত্র মহীরুহ সমীরণভরে অনায়াসে মর্দিত ও পতিত হইয়া থাকে, কিন্তু বহু বৃক্ষ একত্র মিলিত ও বদ্ধমূল হইলে অক্লেশে প্রবল বায়ুবেগ সহ্য করিতে পারে; এইরূপ গুণসমন্বিত ব্যক্তিও একাকী হইলে শত্র“গণ তাঁহাকে পরাজয় করা অনায়াসসাধ্য মনে করিয়া থাকে।” সরল বাংলায় বিস্তীর্ণ মাঠের মধ্যে যদি বিরাট কোনো বৃক্ষ একাকী দাঁড়িয়ে থাকে, তাহলে প্রবল ঝড়ে সেটা উপড়ে পড়ে যায়। পক্ষান্তরে বহুসংখ্যক বৃক্ষ একত্রিতভাবে থাকলে প্রবল ঝড়েও তাদের তেমন কোনো ক্ষতি হয় না। একইভাবে অতি বড় বীরও একা থাকলে শত্র“রা তাকে পরাজিত করাকে সহজ মনে করে। ঐক্যের শক্তি কত বিরাট তা এই প্রাকৃতিক ঘটনাটির মধ্যেই সুস্পষ্টভাবে ফুটে ওঠে।
আজ আমাদের দেশের এই ষোল কোটি মানুষ শত সহস্রভাবে বিভক্ত হয়ে আছে। তারা বিচ্ছিন্ন গাছের মতো একাকী ও শক্তিহীন। তাই যে কোনো হালকা ঝড়েও তাদের অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে যায়।