রিয়াদুল হাসান
ধর্ম শব্দের অর্থ ধারণ করা। কোনো বস্তু, প্রাণী বা শক্তি যে বৈশিষ্ট্য বা গুণ ধারণ করে সেটাই হচ্ছে তার ধর্ম। আগুনের ধর্ম পোড়ানো। পোড়ানোর ক্ষমতা হারালে সে তার ধর্ম হারালো। অথচ প্রচলিত ধারণা হচ্ছে যে ব্যক্তি নির্দিষ্ট লেবাস ধারণ করে সুরা কালাম, শাস্ত্র মুখস্থ বলতে পারে, নামাজ-রোজা, প্রার্থনা করে সে-ই ধার্মিক। এটা সঠিক ধারণা নয়।
মানুষের প্রকৃত ধর্ম আসলে কী? মানুষের ধর্ম হচ্ছে মানবতা। অর্থাৎ যে ব্যক্তি অন্যের দুঃখ-কষ্ট হৃদয়ে অনুভব করে এবং সেটা দূর করার জন্য আপ্রাণ প্রচেষ্টা চালায় সে-ই ধার্মিক। মানবজাতির সুখ শান্তিই হচ্ছে ধর্মের আসল উদ্দেশ্য। সেই মানুষই যদি কষ্টে থাকে তাহলে সবার সব ধর্মপরিচয় মিথ্যা। এই মানবতার ধর্ম পরিত্যাগ করে বক ধার্মিকরা মসজিদে, চার্চে, মন্দিরে, প্যাগোডায় বুঁদ হয়ে পড়ে আছে, ওদিকে দাজ্জাল, শয়তান, আসুরিক শক্তির তা-বে সমস্ত বিশ্ব ছারখার হচ্ছে।
এই অবস্থা দেখেই বিদ্রোহী কবি নজরুল লিখেছিলেন, “আমার আবার ধর্ম কী? যার ঘরে বসে কথা কইবার অধিকার নেই, দুপুর রাতে দুঃস্বপ্নে যার ঘুম ভেঙ্গে যায়, অত্যাচারকে চোখ রাঙ্গাবার যার শক্তি নেই, তার আবার ধর্ম কী? যাকে নিজের ঘরে পরে এসে অবহেলায় পশুর মত মেরে ফেলতে পারে, যার ভাই বোন বাপ মাকে মেরে ফেললেও বাক্যস্ফুট করবার আশা নাই, তার আবার ধর্ম কী? দু’বেলা দুটি খাবার জন্যই যার বাঁচা, একটু আরাম করে কাল কাটিয়ে দেবার জন্যেই যার থাকা, তার আবার ধর্ম কী? মানুষের দাস তুমি, তোমার আবার ধর্ম কী? তোমার ধর্মের কথা বলবার অধিকার কী?
ওরে আমার তরুণ, ওরে আমার লক্ষ্মীছাড়ার দল, তোরা আয়, তোরা ছুটে আয়। এই ভ-ামী থেকে চলে আয়। তোরা বল্, আমাদের আগে বাঁচতে হবে। কীসের শিক্ষা? কে শেখাবে? দাস কখনও দাসকে শেখাতে পারে? আমরা কিছু শিখবো না, আমরা কিছু শুনবো না; আগে বাঁচবো। আমরা বাঁচবো।”