মাননীয় এমামুয্যামানের লেখা থেকে সম্পাদিত:
আল্লাহর রসুল বোলেছেন, “দাজ্জালের সঙ্গে জান্নাত ও জাহান্নামের মতো দুটি জিনিস থাকবে। সে যেটাকে জান্নাত বোলবে আসলে সেটা হবে জাহান্নাম, আর সে যেটাকে জাহান্নাম বোলবে সেটা আসলে হবে জান্নাত। তোমরা যদি তার (দাজ্জালের) সময় পাও তবে দাজ্জাল যেটাকে জাহান্নাম বোলবে সেটাতে তোমরা পতিত হয়ো, সেটা তোমাদের জন্য জান্নাত হবে।” (আবু হোরায়রা (রাঃ) এবং আবু হোযায়ফা (রাঃ) থেকে বোখারী ও মোসলেম)
সময়কাল ১৫৩৭, রাজা অষ্টম হেনরির রাজত্বকাল। খ্রিস্টধর্মে রাষ্ট্রীয় আইন বিধান না থাকায় এর মাধ্যমে সমষ্টিগত জীবন পরিচালনা ব্যর্থ হওয়ার পর সার্বভৌমত্ব আল্লাহর হাত থেকে মানুষের হাতে তুলে নেবার মধ্য দিয়েই জন্ম দাজ্জালের। দাজ্জালীয় সভ্যতায় মানুষের দ্বারাই সংবিধান, আইন-কানুন, দণ্ডবিধি, অর্থনীতি ইত্যাদি তৈরি কোরে মানব জীবন পরিচালনা আরম্ভ হোল, যার নাম দেয়া হোল ধর্মনিরপেক্ষ গণতন্ত্র (Secular Democracy) । এই গণতন্ত্রের সার্বভৌমত্ব রোইল মানুষের সংখ্যাগরিষ্ঠের হাতে। মানুষকে আল্লাহ সামান্য জ্ঞানই দিয়েছেন সেহেতু সে এমন সংবিধান, আইন-কানুন দণ্ডবিধি, অর্থনীতি তৈরি কোরতে পারে না যা নিখুঁত, নির্ভুল ও ত্র“টিহীন, যা মানুষের মধ্যকার সমস্ত অন্যায়, অবিচার দূর কোরে মানুষকে প্রকৃত শান্তি (এসলাম) দিতে পারে। কাজেই ইউরোপের মানুষের তৈরি ত্র“টিপূর্ণ ও ভুল আইন-কানুনের ফলে জীবনের প্রতিক্ষেত্রে অন্যায় ও অবিচার প্রকট হোয়ে উঠলো। বিশেষ কোরে অর্থনৈতিক জীবনে সুদভিত্তিক ধনতান্ত্রিক অর্থনীতি চালু করায় সেখানে চরম অবিচার ও অন্যায় আরম্ভ হোয়ে গেলো। মুষ্টিমেয় মানুষ ধনকুবের হোয়ে সীমাহীন প্রাচুর্য ও ভোগবিলাসের মধ্যে ডুবে গেলো আর অধিকাংশ মানুষ শোষিত হোয়ে দারিদ্র্যের চরম সীমায় নেমে গেলো। স্বাভাবিক নিয়মেই ঐ অর্থনৈতিক অন্যায়, অবিচারের বিরুদ্ধে ইউরোপের মানুষের এক অংশ বিদ্রোহ কোরল ও গণতান্ত্রিক ধনতন্ত্রকে বাদ দিয়ে সমাজতন্ত্র ও সাম্যবাদ প্রতিষ্ঠা কোরল। ইউরোপের মানুষের অন্য একটা অংশ গণতান্ত্রিক পদ্ধতির অন্যান্য দিকের ব্যর্থতা দেখে সেটা বাদ দিয়ে একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা কোরল। অর্থাৎ গণতন্ত্র থেকে একনায়কতন্ত্র, ধনতন্ত্র থেকে সমাজতন্ত্র, সাম্যবাদ এগুলো সবই অন্ধকারে হাতড়ানো, এক ব্যবস্থার ব্যর্থতায় অন্য নতুন আরেকটি ব্যবস্থা তৈরি করা কিন্তু মনে রাখতে হবে যে আল্লাহর সার্বভৌমত্বকে বাদ দিয়ে ধর্মনিরপেক্ষতা, প্রকৃতপক্ষে সমষ্টিগত জীবনের ধর্মহীনতা অবলম্বন করার পর থেকে যতো তন্ত্র (-cracy), যতো বাদই (-ism) চালু করার চেষ্টা ইউরোপের মানুষ কোরেছে সবগুলির সার্বভৌমত্ব মানুষের হাতে রোয়েছে। অর্থাৎ রাজতন্ত্র, গণতন্ত্র, ধনতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, সাম্যবাদ, একনায়কতন্ত্র, এসবগুলিই মানুষের সার্বভৌমত্বের বিভিন্ন ধাপ, বিভিন্ন পর্যায় (Phase, step) মাত্র। এই সবগুলি তন্ত্র বা বাদের সমষ্টিই হোচ্ছে এই ইহুদি-খ্রিস্টান সভ্যতা, দাজ্জাল।
এই দাজ্জাল অর্থাৎ ইহুদি-খ্রিস্টান সভ্যতা পৃথিবীর মানবজাতিকে বোলছে- মানুষের সমষ্টিগত জীবন যাপনের জন্য আমাদের এই ধর্মনিরপেক্ষ প্রণালীই হোচ্ছে সর্বশ্রেষ্ঠ। তোমরা এই ব্যবস্থা মেনে নাও, গ্রহণ করো তাহোলে তোমরা স্বর্গসুখে বাস কোরবে। আর যদি আমাদের এই নীতি তোমরা গ্রহণ না করো, তবে তোমরা দারিদ্র্য, ক্ষুুধা অশিক্ষার মধ্যে জাহান্নামের কষ্ট ভোগ কোরতে থাকবে। যারা দাজ্জালের কথায় বিশ্বাস কোরে ইহুদি-খ্রিস্টান সভ্যতার ধর্মনিরপেক্ষ অর্থাৎ আল্লাহর সার্বভৌমত্বহীন জীবন-ব্যবস্থা মেনে নেবে তাদের সে গ্রহণ কোরে তার জান্নাতে স্থান দেবে, তাদের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামরিক ইত্যাদি সর্বতোভাবে সাহায্য কোরবে। আর যারা দাজ্জালের জীবন-ব্যবস্থা প্রত্যাখ্যান কোরবে তাদের সে তার বিরাট ধন ভাণ্ডার থেকে কোন অর্থনৈতিক সাহায্য দেবে না, তাদের সে রাজনৈতিক, সামরিকভাবে বিরোধিতা কোরবে অর্থাৎ সে তাদের তার জাহান্নামে নিক্ষেপ কোরবে।
আল্লাহর রসুল বোলেছেন- যারা দাজ্জালের জীবন-ব্যবস্থা স্বীকার কোরে নেবার ফলে দাজ্জালের জান্নাতে স্থান পাবে তারা দেখবে প্রকৃতপক্ষে তা জাহান্নাম। আর যারা দাজ্জালকে অস্বীকার করার দরুন তার জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে দেখবে তারা জান্নাতে আছে। আল্লাহর রসুলের কথা সত্য কিনা যাচাই কোরে দেখা যাক। দাজ্জালের অর্থাৎ ইহুদি-খ্রিস্টান যান্ত্রিক সভ্যতাই মানুষের একমাত্র গ্রহণযোগ্য সভ্যতা, জীবন-ব্যবস্থা এই প্রচারণায় বিশ্বাস কোরে যে জনসমষ্টি, জাতি বা দেশ তা গ্রহণ কোরেছে অর্থাৎ দাজ্জালের জান্নাতে, স্বর্গে প্রবেশ কোরেছে অতি শীঘ্রই তারা বুঝতে পেরেছে যে তারা আসলে নরকে প্রবেশ কোরেছে। কথাটা ভালো কোরে বোঝার জন্য দাজ্জালের উগ্রতম রূপ কমিউনিজমকে বিবেচনায় নেয়া যাক।
সোভিয়েত ইউনিয়ন ও চীনে সাম্যবাদ প্রতিষ্ঠার পর থেকে তাদের প্রচারযন্ত্রের মাধ্যমে অর্থাৎ রেডিও, টেলিভিশনে-এ কথা লক্ষ কোটি বার বলা হোয়েছে যে সাম্যবাদী সমাজে, দেশে থাকা স্বর্গের সুখে থাকার সমান। তারা তাদের সমাজটাকে সর্বদাই স্বর্গ (Paradise) বোলে বাকি পৃথিবীকে সাম্যবাদ গ্রহণ কোরে স্বর্গে প্রবেশের আমন্ত্রণ জানিয়েছে এবং বিশ্বনবী ঠিক ঐ জান্নাত অর্থাৎ Paradise শব্দটাই ব্যবহার কোরেছেন। কমিউনিস্ট ব্যবস্থা গ্রহণ ও কার্যকরী করার কিছু পরই সোভিয়েত ইউনিয়ন নিজেকে বাকি পৃথিবী থেকে সম্পূর্ণভাবে বিচ্ছিন্ন কোরে ফেললো। তার কারণ হোল এই যে, স্বর্গের প্রতিশ্র“তি পেয়ে সেই স্বর্গে প্রবেশ করার পর সেসব দেশের জনসাধারণ অতি শীঘ্রই বুঝতে পারলো যে এ তো স্বর্গ নয়, এ তো নরক। তখন ঐসব দেশের জনসাধারণ তাদের জন্মভূমি থেকে পালিয়ে অজানা দেশে চোলে যাবার জন্য নিরবচ্ছিন্ন চেষ্টা চালিয়ে গেছে। এই চেষ্টায় তারা পরিবারের অন্যদের প্রাণও বিপন্ন কোরেছে, সহায়-সম্পদ বিসর্জন তো ছোট কথা। কমিউনিস্ট পূর্ব বার্লিন থেকে পশ্চিম বার্লিনে লোক পালিয়ে যাওয়া বন্ধ কোরতে রাশিয়ানরা কুখ্যাত বার্লিন দেয়াল তৈরি কোরল। তবুও মানুষ পালানো বন্ধ করা যায় না দেখে দেয়ালের ওপর প্রতি পঞ্চাশ গজ অন্তর স্তম্ভ (Watch tower) তৈরি কোরে সেখানে মেশিনগান বসানো হোল। হুকুম দেয়া হোল কাউকে দেয়াল টপকে পালাতে দেখলেই গুলী কোরে হত্যা কোরতে। তবু লোক পালানো বন্ধ হয় না দেখে পরিখা খোড়া হোল, কঁাঁটাতারের বেড়া দেয়া হোল ও নানা রকম বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি বসানো হোল পলায়নকারীদের খুঁজে বের কোরে হত্যা বা বন্দী করার জন্য। কিন্তু কিছুতেই- ‘স্বর্গ’ থেকে পালানো বন্ধ করা গেলো না। ১৯৪৯ সন থেকে ১৯৬১ সন পর্যন্ত ২৭ লাখ নর-নারী, শিশু কমিউনিস্ট স্বর্গ থেকে পালিয়ে যেতে সমর্থ হয় এবং ঐ সংখ্যার চেয়ে বহুগুণ ঐ পালাবার চেষ্টায় নিহত হয়, বন্দি হয়।
চীনেও ঐ একই ব্যাপার হোয়েছে। মোহভঙ্গের পর হাজার হাজার চীনা তাদের দেশ থেকে বাইরের জগতে পালিয়ে যাবার চেষ্টায় প্রাণ হারিয়েছে, বন্দি হোয়েছে। যুদ্ধে আমেরিকানরা হেরে যাবার পর সম্পূর্ণ ভিয়েতনাম কমিউনিস্টদের হাতে চোলে যাবার পর শুধু দাজ্জালের ‘স্বর্গ’ থেকে পালাবার জন্য মরিয়া হোয়ে যে নৌকায় একশ’ জনের স্থান হবে সে নৌকায় পাঁচ সাতশ’ মানুষ ভর্তি হোয়ে সমুদ্রে ভেসেছে। হাজার হাজার নৌকা জোর বাতাসে, ঝড়ে ডুবে গেছে, হাজার হাজার নৌকা জলদস্যুরা (Pirates) আক্রমণ কোরে লুটে নিয়েছে, মানুষদের হত্যা কোরে সমুদ্রে ফেলে দিয়েছে, মেয়েদের ধর্ষণ কোরেছে, তাদের বিদেশে বিক্রি কোরে দিয়েছে।
এ সমস্ত খবর হাজার হাজার বার সমস্ত পৃথিবীর সংবাদপত্রে প্রকাশিত হোয়েছে, বহু ছবি ওগুলিতে ছাপা হোয়েছে। ভিয়েতনামেও এসব খবর পৌঁছেছে, কিন্তু তাতেও ঐ স্বর্গের অধিবাসীদের ফেরাতে পারে নি। তারপরও তারা স্ত্রী-পুরুষ, নারী ও শিশুদের দিয়ে নৌকা অতিরিক্ত বোঝাই কোরে প্রাণ হাতে নিয়ে অজানা সমুদ্রে নৌকা ভাসিয়েছে।
এখন প্রশ্ন হোল- এ কী রকম ‘স্বর্গ’ যে স্বর্গের অধিবাসীরা সেখান থেকে পালানোর জন্য প্রাণ হাতে নেয়, সমুদ্র সাঁতরে পার হবার চেষ্টায় ডুবে মরে, ছোট ছোট নৌকায় সমুদ্র পাড়ি দেবার চেষ্টা করে, ইলেকট্রিক কাঁটা তারের শক্ খেয়ে মরে, ‘স্বর্গরক্ষীদের’ গুলী খেয়ে মরে!
এসবই প্রমাণ কোরে দিয়েছে মহানবীর সেই ভবিষ্যদ্বাণীর সত্যতা। আজ সমস্ত পৃথিবী দাজ্জালের জান্নাত, প্রকৃতপক্ষে জাহান্নামে পরিণত হোয়ে আছে।
সুতরাং এখন মানবজাতির সর্বপ্রধান কর্তব্য হোল ইহুদি খ্রিস্টান ‘সভ্যতা’-কে প্রত্যাখ্যান করা এবং মানবজাতিকে এই ভয়ঙ্কর ফেতনা থেকে উদ্ধার করা। আল্লাহর রহমে হেযবুত তওহীদ এই কাজই কোরছে। দাজ্জালের মানদণ্ডে বিশ্বাসী সামাজিক কাঠামোর নিুতম পর্যায় থেকে শুরু কোরে রাষ্ট্রীয় পর্যায় পর্যন্ত সর্বক্ষেত্রে হেযবুত তওহীদের অনুসারীগণ চরমভাবে দাজ্জালের অনুসারীদের দ্বারা প্রতিনিয়ত নিগৃহীত, নিপীড়িত হোয়েছেন। হাজারো মিথ্যা অভিযোগে তাদেরকে কারারুদ্ধ করা হোয়েছে, জিজ্ঞাসাবাদের নামে নিষ্ঠুর নির্যাতন করা হোয়েছে, বহুজনকে নিজ পৈত্রিক ভিটা থেকে উচ্ছেদ কোরে দেওয়া হোয়েছে, সহায় সম্পত্তি লুট করা হোয়েছে, অনেকের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেওয়া হোয়েছে, একজন পুরুষ ও একজন নারীকে নির্মমভাবে পিটিয়ে শহীদ করা হোয়েছে। অর্থাৎ রসুলের কথামত দাজ্জাল তার প্রতিরোধকারীদেরকে তার জাহান্নামে নিক্ষেপ কোরছে। এটা হেযবুত তওহীদের জন্য অতি বড় সুসংবাদ, কেননা দাজ্জালের জাহান্নামই হবে প্রকৃতপক্ষে জান্নাত।