আতাহার হোসাইন:
‘দাজ্জালের আবির্ভাব আদম (আ.) থেকে শুরু করে কেয়ামত পর্যন্ত সবচেয়ে বড় ঘটনা এবং দাজ্জালের ফেৎনা হতে নূহ (আ.) থেকে শুরু করে প্রত্যেক নবী-রসুল তাঁদের উম্মাহকে সতর্ক ও সাবধান করে গেছেন’- (এমরান বিন হোসায়েন (রা.) থেকে মুসলিম ও আবু ওবায়দা বিন যাররাহ ও আব্দুল্লাহ বিন ওমর (রা.) থেকে আবু দাউদ বোখারী ও মুসলিম)। রসুলাল্লাহর এই বাণীর যথেষ্ট গুরুত্ব এবং তাৎপর্য রয়েছে। এটা সাধারণ কোন মানুষের মুখের কথা নয়, এবং সাধারণ কোন বাণীও নয়। এই বাণী সেই মহামানবের যাঁকে আল্লাহ সমস্ত মানবজাতির জন্য উত্তম আদর্শ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন (আহযাব-২১)। তাঁর মুখের বাণী অকাট্য এবং কোন ধরনের বাহুল্য বর্জিত। কারণ, তিনি যা বলতেন (ব্যক্তিগত বিষয় ছাড়া) তা অবশ্যই আল্লাহর পক্ষ থেকেই বলতেন। এ ব্যাপারে আল্লাহ তাঁর কোর’আনে বলেছেন ‘আমার রসুল যদি নিজ থেকে কোন কথা বলতো তবে আমি তাঁর কণ্ঠনালী চেপে ধরে কেটে ফেলতাম- (সুরা হাক্কাহা-৪৪-৪৬)।’ তাই সেই মহান রসুলের কথা মানবজাতির জন্য অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ।
কিন্তু বাস্তবে রসুলের সেই সাংঘাতিক সতর্কবাণীকে আমরা কতটুকু গুরুত্ব দিচ্ছি? ইসলামকে যারা ভালোবাসেন, পৃথিবীময় ইসলাম প্রতিষ্ঠা হোক এটা যারা কামনা করেন তাদের প্রত্যেকেই আজ ইসলামকে পালন করতে গিয়ে ছোট ছোট ব্যাপারে আল্লাহ রসুলের পদাঙ্ক অনুসরণ করার চেষ্টা করেন। যাতে কোথাও কোন ভুল না হয়, কোন বিষয়ে আমল করতে বাদ না যায়, সে জন্য তারা প্রতিটি বিষয়ের চুল-চেরা বিশ্লেষণ করতে কুণ্ঠা বোধ করেন না। ঐতিহাসিক এবং হাদিস সংগ্রাহকগণ প্রচুর শ্রম এবং অধ্যবসায়ের মাধ্যমে নবী আচরিত সেসব বিষয় নিয়ে মোটা মোটা কেতাব রচনা করেছেন এবং এখনও এর পরিমাণ বেড়েই চলছে। হায়েজ-নেফাজ, ঢিলা-কুলুপ, ডান কাতে শোয়া, খাওয়ার পর একটু লবণ খাওয়া থেকে শুরু করে তাঁর ব্যক্তিগত অভ্যাস-অনভ্যাস, পোশাক-আশাক, চুল-দাড়ি সবই অনুকরণ করার চেষ্টা করেন। কিন্তু সেই একই ব্যক্তির করা ভয়ঙ্কর সাবধানবাণী, সমস্ত মানবজাতির জন্য ভয়ঙ্কর ঘটনা দাজ্জালের আবির্ভাব নিয়ে তাদের চিন্তার কোন উন্নতি নেই, এমন কি সেটা নিয়ে যথেষ্ট আলোচনাও হয় না। যেটুকু হয় সেটুকও আজ থেকে চৌদ্দশত বছর আগে নিরক্ষর আরববাসীদেরকে দাজ্জালের মতো ভয়ঙ্কর এবং বিরাট বিষয়কে বোঝানোর জন্য রসুলাল্লাহ যে রূপক ভাষা ও শব্দের আশ্রয় নিয়েছেন সেসবের আক্ষরিক মিল খোঁজার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। দাজ্জাল শব্দের অর্থই চাক-চিক্যময় মিথ্যাবাদী, প্রতারক। সে তার প্রতারণা দিয়ে মানুষের চোখকে ধাঁধিয়ে দেবে, মন্দকে ভালো হিসেবে উপস্থাপন করবে আর ভালোকে উপস্থাপন করবে মন্দ হিসেবে। দাজ্জাল কতটা প্রতারক হবে তা তার নামের মধ্যেই স্বীকৃত। রসুলের কথা মোতাবেক দাজ্জালের কপালে ‘কাফের’ লেখা থাকবে। কিন্তু সেটা মোমেন না হলে শিক্ষিত ব্যক্তিরাও পড়তে (চিনতে) পারবে না। অথচ মোমেন হলে তারা চিনতে পারবে যদি অশিক্ষিতও হয়। কিন্তু বর্তমানে মো’মেন হওয়ার এই পূর্বশর্তকে উপেক্ষা করে শুধু রসুলাল্লাহর শাব্দিক বর্ণনাকে পুঁজি করে দাজ্জালকে বোঝার চেষ্টা চলছে। অথচ দাজ্জাল যদি একটি দানব সদৃশ মানুষ হতো তবে তাকে না চেনার কোন কারণ থাকতে পারে না। প্রথম দেখাতেই তাকে শিক্ষিত-অশিক্ষিত যে কেউ তাকে চিনে ফেলত।
দাজ্জালকে রসুলাল্লাহ রূপকভাবে একটি প্রাণী বা দৈত্য হিসেবে বর্ণনা করলেও দাজ্জাল সম্পর্কে তাঁর অপরাপর বর্ণনাসমূহ মেলালে দেখা যায় দাজ্জাল কোন মানুষ বা প্রাণী হওয়া মোটেও সম্ভব নয়। কারণ, একজন মানুষ একই সাথে পৃথিবীর সমস্ত স্থান দৃষ্টি এবং শ্রবণ ক্ষমতার অধীনে আনতে পারে না। তাছাড়া যে প্রাণীর এক পা পৃথিবীর পূর্ব প্রান্তে আরেক পা পশ্চিম প্রান্তে সে প্রাণীটির স্থানসংকুলানও পৃথিবীতে হতে পারে না। দাজ্জালকে যদি একটি সভ্যতা অর্থাৎ প্রযুক্তির উপর নির্ভরশীল বর্তমান পৃথিবী নিয়ন্ত্রণকারী পশ্চিমা বস্তুবাদী যান্ত্রিক সভ্যতাকে ধরে নেওয়া হয় তবেই দেখা যায় দাজ্জাল ধারণাটি খাপে খাপে মিলে যায়। এ সংক্রান্ত ধারণাটিকে প্রকৃতপক্ষে তুলে ধরেছেন হেযবুত তওহীদের প্রতিষ্ঠাতা এমাম, জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নী। তিনি দীর্ঘ গবেষণার মাধ্যমে হাদিস, বাইবেল এবং বিজ্ঞানের আলোকে ‘দাজ্জাল! ইহুদি-খ্রিষ্টান সভ্যতা?’ নামে একটি বই প্রকাশ করে তার স্বপক্ষে বিস্তারিত প্রমাণ তুলে ধরেছেন। তাঁর এই চিন্তাধারা চিন্তাশীল মহলে ব্যাপক সাড়া ফেলে দেয়। বিষয়টি সর্বত্র আলোচিত হতে থাকে। কিন্তু তাঁর প্রকাশ করা এই ধারণাটি এদেশের আলেম সমাজ নামে পরিচিত শ্রেণিটি গ্রহণ করেনি। তারা দাজ্জাল সংক্রান্ত অপরাপর বর্ণনা তুলে ধরে দাবি করছেন দাজ্জাল একজন ব্যক্তিই হবে, দাজ্জাল এখনো আসেনি, ভবিষ্যতে আসবে।
ব্রিটিশ প্রবর্তিত শিক্ষাব্যবস্থার ফলে ভারতীয় উপমহাদেশের জনসংখ্যা তিনটি ধারায় বিভক্ত হয়ে যায়। এর একটি হচ্ছে সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিত, দ্বিতীয়টি হচ্ছে ধর্মীয় শিক্ষায় শিক্ষিত এবং তৃতীয়টি হচ্ছে অশিক্ষিত ও মূর্খ জনসংখ্যা। তৃতীয় অংশটিই সংখ্যায় সবচেয়ে বেশি। সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিতরা ধর্ম সংক্রান্ত বিষয়ে বলা যায় প্রায় অন্ধের পর্যায়ে রয়েছেন। তারা ঘৃণা করেই হোক আর অপ্রয়োজনীয় মনে করেই হোক ধর্মের ধারে কাছেও যান না। আর ধর্মীয় শিক্ষিতরা আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞান থেকে বঞ্চিত। যেহেতু নিজেরা ধর্মবিশ্বাসী তাই বিয়ে, জানাজা, খৎনা, ইমামতি, ওয়াজ-নসিহত ইত্যাদি পরকালীন ব্যাপারে সাধারণ শিক্ষিতরা ধার্মিকদের দ্বারস্থ হতে বাধ্য হোন। অপরদিকে ধর্মীয় জ্ঞানের বাইরে জ্ঞান না থাকায় ধার্মিকরা জাগতিক বিষয়ের জন্য সর্বদা সাধারণ শিক্ষিতদের মুখাপেক্ষী। কিন্তু এদেশের অধিকাংশ সাধারণ মানুষ জাগতিক এবং পারলৌকি এই উভয় বিষয়েই এই দুই শ্রেণির কাছে নির্ভরশীল। জাগতিক বিষয় তারা ছুটে যায় সাধারণ শিক্ষিতদের কাছে আর পারলৌকিক বিষয়ের জন্য তারা ছুটে যায় ধর্মীয় পণ্ডিতদের কাছে। এর বাইরে চিন্তা করা, কোন বিষয় যাচাই করার যোগ্যতা তাদের নেই। ব্রিটিশ প্রভুরা অর্ধশতাব্দী আগে চলে গেলেও এ অঞ্চলের মানুষ আজও এই ধারা থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি। সুতরাং দাজ্জাল সংক্রান্ত বিষয়টি নিয়ে যখন অনেক আগে থেকে চলে আসা ধারণার বাইরে এমামুযযামান মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নী যখন নতুন একটি মত তুলে ধরলেন তখন তারা প্রথমেই ছুটে গেল ধর্মীয় আলেম-মোল্লাদের কাছে। কিন্তু তারা নিজেদের সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গির (Confined concept) কারণে পূর্বোক্ত ধারণায় অটল থেকে এই মতকে পরিত্যাজ্য বলে ঘোষণা দিলেন। তারা অপেক্ষায় বসে আছেন সেই একচক্ষু বিশিষ্ট ভয়ঙ্কর দানবের জন্য। ফলে সাধারণ মানুষ আর বুঝতে সক্ষম হয়নি যে, প্রচণ্ড সমর শক্তিতে বলীয়ান ও দোর্দণ্ডপ্রতাপে পৃথিবী নিয়ন্ত্রণকারী ‘ইহুদি-খ্রিষ্টান বস্তুবাদী যান্ত্রিক সভ্যতাই (Materialistic civilization) রসুল বর্ণিত দাজ্জাল, চাকচিক্যময় প্রতারক। পাশ্চাত্য সভ্যতার আধুনিক বেশ-ভূষা, চাল-চলন, ভোগ-বিলাস, অবাধ যৌনতা, মাদক, যার যা খুশি করার স্বাধীনতা ইত্যাদি মানুষকে মোহগ্রস্ত করে তুলেছে। পুরো পৃথিবী আজ বাইরে থেকে সেসব দেখে পাশ্চাত্যের অনুগামী। কিন্তু তারা দেখতে পাচ্ছে না এর ফলে তাদের উপর নেমে আসা কুফলগুলো। সেখানে মানুষের মানবিকতা প্রায় শূন্যের কোঠায়। পিতা-মাতা ও সন্তানের মধ্যে বন্ধন অত্যন্ত শিথীল। বৃদ্ধ বয়সে অধিকাংশ পিতা-মাতা জীবন পার করেন বৃদ্ধাশ্রমে। ভোগ-বিলাসে মত্ত তরুণরা তাদের প্রতি কোন দায়িত্ব পালন করে না। আমরা বাইরে থেকে সিনেমা-টেলিভিশনের মাধ্যমে তাদের বিলাসী জীবন-যাপনই দেখি, কিন্তু দেখিনা সেই সীমাহীন ভোগ-বিলাসের আয়োজন করতে গিয়ে তারা কতটা অমানবিক জীবন-যাপন করছে। উদয়াস্ত পরিশ্রম করো আর উপভোগ করো- এই হচ্ছে পাশ্চাত্যের মানুষদের নীতি। হালাল-হারাম তাদের কাছে গৌণ। পার্থিব দুনিয়াই তাদের কাছে একমাত্র জীবন। পরকাল নিয়ে তাদের কোন ভাবনা নেই। ফলে মানুষ আত্মিকভাবে প্রায় পশু পর্যায়ে নেমে গেছে। মানুষ শুধু জৈবিক প্রাণী নয়। তার আত্মাও আছে। কিন্তু ধর্মহীন জীবন-যাপনের কারণে আত্মিক সংকটে পড়ে তারা ব্যাপক ভোগ-বিলাসে থেকেও এক সময় জীবন নিয়ে হতাশ হয়ে পড়ে। পাশ্চাত্যের কূট-কৌশল, প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ শাসন-শোষণের কারণে প্রাচ্যের মানুষ যেখানে ঋণ, দারিদ্র্যতা ও ক্ষুধার কারণে আত্মহত্যা করে, সেখানে পাশ্চাত্যের মানুষ আত্মহত্যা করে ব্যাপক বিলাসীতায় ডুবে থেকেও। অধিকাংশ মানুষ ভোগে বিষণœতায়। অপরদিকে পাশ্চাত্যের জনগণের বিলাসীতার যোগান দিতে গিয়ে তাদের রাষ্ট্রনায়করা অস্ত্রব্যবসা, যুদ্ধ-বিগ্রহ, দেশের পর দেশ আক্রমণ করে ধ্বংস এবং লুটপাট চালাতে দ্বিধা বোধ করে না। তাদের
এই আগ্রাসী নীতির সামনে কেউ মাথা তুলে দাঁড়ালেই তাদেরকে দেশসুদ্ধ গুড়িয়ে দেওয়া হয়। ফলে পৃথিবীর বিরাট একটি অংশ জুড়ে সব সময়ই লেগে থাকে যুদ্ধ-বিগ্রহ। অন্যদিকে উৎপাদন বাড়াতে নতুন নতুন শিল্প-কারখানা স্থাপন ও খনিজ সম্পদের জন্য প্রাকৃতিক পরিবেশ ধ্বংস করা হচ্ছে প্রতিনিয়ত। আর তাই প্রকৃতিও বিরূপ প্রতিক্রিয়া হিসেবে কোথাও অতি উষ্ণতা, কোথাওবা অতি ঠাণ্ডা, অতিবৃষ্টি-অনাবৃষ্টির সৃষ্টি করছে। আবার পাশ্চাত্য সভ্যতার এই অনাচারকে ঢেকে রাখছে দাজ্জালেরই অনুসারী পাশ্চাত্য মিডিয়াযন্ত্র। এ কারণেই দাজ্জাল এক চাকচিক্যময় প্রতারক। মানুষ তার প্রকৃত চরিত্র ধরতেই পারছে না।
রসুল বর্ণিত দাজ্জালীয় এই নীতি ও দাজ্জালকে না চেনার কারণে আজ মুসলিম বলে পরিচিত জনসংখ্যাও পাশ্চাত্যের অনুকরণে ব্যস্ত। যে কোন কিছুর বিনিময়ে তারা পাশ্চাত্যের পানে ধাবিত হচ্ছে। পুঙ্খানুপুঙ্খ অনুসরণ-অনুকরণ করা চেষ্টা চলছে সর্বত্র। এ কারণে তারাও পরিণত হচ্ছে দেহসর্বস্ব জৈবিক প্রাণীতে। ফলে দিন দিন পাশ্চাত্য বস্তুবাদী সভ্যতার প্রভাব পৃথিবীর সকল অঞ্চলেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। গোটা মানবজাতিই আজ দাজ্জালের পায়ে সাজদায় অবনত হয়ে আছে। কোথাও তেমন কোন জোরালো বিরোধিতা নেই।
দাজ্জালের অধীনস্থ এই দুনিয়া যেমন অন্যায়-অত্যাচার, জুলুম, নির্যাতন আর অবিচারের মাধ্যমে জাহান্নামের অগ্নিকুণ্ডে পরিণত হয়েছে তেমনি পরকালের চিন্তাহীন এই মানুষগুলো হারাচ্ছে তাদের পরকাল। ধর্মহীন, আত্মাহীন, বস্তুবাদী এই সভ্যতাকে যদি মানুষ রসুল বর্ণিত দাজ্জাল হিসেবে চিনতে পারত তবে নিশ্চয় তারা রসুলের সাবধানবাণী মেনে তাকে প্রত্যাখ্যান করত। কিন্তু দুঃখের বিষয়, কথিত আলেম সমাজের দূর-দৃষ্টির কারণে তারা দাজ্জালকে চিনতে পারছে না। ফলে তারা দাজ্জালের প্রতারণার ফাঁদে পড়ে নিজেদের ইহকাল-পরকাল দুটোই হারাচ্ছে।
মাননীয় এমামুযযামান কর্তৃক লিখিত “দাজ্জাল? ইহুদি-খ্রিষ্টান ‘সভ্যতা’!” বইটি এবং বই অনুসারে নির্মিত প্রামাণ্যচিত্রটি যখন মানুষ পড়ে ও দেখে তখন স্বভাবতই তাদের প্রতিষ্ঠিত ধারণার জগতে একটি আলোড়ন সৃষ্টি হয়। অভ্যাসবশত তারা সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য দ্বারস্থ হয় সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে বসে থাকা কথিত আলেম-ওলামাদের কাছে। কারণ ধর্মপ্রাণ মানুষের মনে তারা ইতোমধ্যেই এ ধারণা কায়েম করে দিয়েছেন যে, ইসলাম দুর্বোধ্য। আরবি না জানলে, মাদ্রাসায় না পড়লে ইসলাম কোনোভাবেই বোঝা সম্ভব নয়। তাই ধর্মের যে কোনো বিষয় জানতে আলেমদের কাছেই আসতে হবে। এ বিশ্বাসের দরুন মানুষ যখন দাজ্জাল বিষয় নিয়ে কোনো আলেমের কাছে যায়, তখনই ঐ কূপমণ্ডূক, অজ্ঞ, দুনিয়া সম্পর্কে বেখবর লেবাসধারী লোকগুলো বলে দেয় যে, না, দাজ্জাল এখনো আসে নি। তাদের অনেকে এমামুযযামানকে গালি দিয়ে বলে, এই লোক যা বলছে তা ঠিক নয়। দাজ্জাল আরো অনেক পরে আসবে। তার বাহনের দুই পা বিশ্বের দুই প্রান্তে থাকবে। ব্যস! তাদের এক কথাতেই সব শেষ। এ কথাগুলো তো গত ১৪০০ বছর ধরেই মানুষ জানে। এমামুযযামান এ প্রসঙ্গে নতুন কী লিখলেন তা বোঝার জন্য মানুষকে যে চিন্তা করতে হবে, সেই চিন্তার দরজা এই আলেমরা এক কথায় বন্ধ করে দেয়। ফলে মানুষ আর দাজ্জাল সম্পর্কে রসুলাল্লাহর কথাগুলোকে বর্তমানের সঙ্গে মেলানোর চিন্তাও করে না। কিন্তু অন্ধ হলেই প্রলয় বন্ধ থাকে না। দাজ্জাল যথাসময়ে এসে ঠিকই সমগ্র মানবজাতিকে পদদলিত করে চলেছে। আমরা মানবতার এই মহাশত্র“কে চিনতে পেরে মানুষের কাছে সে সংবাদ পৌঁছে দিচ্ছি। কিন্তু আলেমরা বেহুঁশ জাতির হুশ ফিরতে দিচ্ছেন না। কারণ তাদের অহঙ্কার যে, ইসলামের কথা বলার অধিকার তো কেবল তাদেরই আছে, আর এমামুযযামান তো মাদ্রাসাতেই পড়েন নি। এই আলেমরা একবারও চিন্তা করলেন না যে, তাদের এই নিষেধাজ্ঞার ফলে মানবজাতির কী অপূরণীয় ক্ষতি হচ্ছে। মানুষের চিন্তাশক্তি, গবেষণা-শক্তি লুপ্ত হচ্ছে, মানুষ মহা প্রতারক দাজ্জালকে চিনতেও পারছে না ফলে প্রতিহতও করছে না। কাজেই সাধারণ মানুষের উচিত হবে এমামুযযামান লিখিত “দাজ্জাল? ইহুদি-খ্রিষ্টান সভ্যতা!” বইটি মনোযোগ দিয়ে পড়া, আল্লাহর দেওয়া যুক্তি-বুদ্ধি-জ্ঞান দ্বারা সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া। কারো মুখাপেক্ষী হয়ে থাকা জ্ঞানীর লক্ষণ নয়।