আমীরুল ইসলাম
ইসলামের প্রতি হিংসা ও বিদ্বেষবশত অনেকেই রসুলাল্লাহকে গালাগালি করে, কোর’আন পোড়ায়। যারা এই কাজগুলি করে, খোঁজ নিলে দেখা যাবে তারা প্রত্যেকেই এই কাজগুলি করে তাদের হীন স্বার্থ হাসিল করার জন্য। কেউ এটি করে রাজনীতিক স্বার্থে আবার কেউ করে তাদের ব্যবসায়িক স্বার্থে। যারা এভাবে অন্য ধর্মের সম্মানিত ব্যক্তি, আরাধ্য ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কার্টুন চলচ্চিত্র ইত্যাদি নির্মাণ করে অপপ্রচার করে তারা প্রকৃতপক্ষে কোনো ধর্মেরই অনুসারী নয়, তারা শয়তানের উপাসক। তারা হচ্ছে ধর্ম ব্যবসায়ী দ্বারা প্রভাবিত রাজনৈতিক ধান্দাবাজদের হাতিয়ার। তারা এভাবে ধর্মীয় উন্মাদনা সৃষ্টি করে দিয়ে ক্রুসেডের জন্ম দিয়েছে, শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে চলমান দাঙ্গা হাঙ্গামা সৃষ্টি করেছে। আজকে সারা দুনিয়ায় যতগুলি যুদ্ধ চলছে হিসাব করলে দেখা যাবে সেগুলির সিংহভাগই হচ্ছে ধর্মীয় চেতনার ভিত্তিতে। যেমন সিরিয়াতে চলছে শিয়া-সুন্নী-জঙ্গিদের সহিংসতা, ইরাকে চলছে বিকৃত ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য যুদ্ধ, ইসরাইল যে সারা পৃথিবীতে বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের মধ্যে কোন্দল, যুদ্ধ-বিগ্রহ বাধিয়ে রেখেছে এবং পশ্চিমা দেশগুলিকে এই যুদ্ধে ব্যবহার করে যাচ্ছে এর পেছনেও কাজ করছে বিকৃত ধর্মীয় চেতনা। এই ভারতীয় উপমহাদেশেও যতগুলি হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গার সৃষ্টি হয়েছে তার সবগুলোই এই ধর্মব্যবসায়ী এবং ব্রিটিশ শাসকদের ষড়যন্ত্রের ফসল। এভাবে যুদ্ধ, দাঙ্গা, সহিংসতা সব মিলিয়ে পশ্চিমা সভ্যতার রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র এবং ধর্মব্যবসায়ীদের অন্ধত্ব দুনিয়াটিকে নরক কুণ্ডে পরিণত করেছে। ঈসা (আ:) সম্পর্কে আল্লাহর রসুল বলেছেন, “মানবজাতির মধ্যে সবার চেয়ে ঈসা ইবনে মরিয়মের (আ:) ভাই হবার ক্ষেত্রে আমি সর্বাধিক দাবিদার, তাঁর ও আমার মধ্যে আর কোনো নবী নেই” (কানজুল উম্মাল, ১৭ খণ্ড, হাদিস ১০৩৩)। অন্যত্র বলেছেন, “দুনিয়ায় এবং আখেরাতে আমি ঈসা ইবনে মরিয়মের (আ:) সবচেয়ে নিকটতম। সকল নবীরাই ভাই ভাই, কেবল তাদের মা আলাদা। তবে তাদের সবাই একই ধর্মের অনুসারী। (হাদিস- আবু হোরায়রা রা. থেকে বোখারী)। অথচ যে বনী ইসরাইলের প্রতি ঈসা (আ:) এসেছিলেন তারা এবং খ্রিস্টানরা রসুলাল্লাহ ও ইসলামের বিরুদ্ধে ব্যাঙ্গাত্মক চলচ্চিত্র কার্টুন বানিয়ে ইচ্ছাকৃত দাঙ্গা সৃষ্টি করতে চায়, নিজেরা আলোচনায় আসতে চায়। আবার ঈসা (আ:) শেষ রসুল সম্পর্কে তাঁর আসহাবদেরকে বলেছেন, “বিশ্বাস করো আমি তাঁকে দেখেছি এবং তাঁকে সম্মান জানিয়েছি। এভাবে সকল নবী তাঁকে দেখেছেন। তাঁর রূহকে দর্শনের মাধ্যমে নবীগণ নবুয়তপ্রাপ্ত হয়েছেন। আমি যখন তাঁকে দেখলাম আত্মা প্রশান্ত হয়ে গেল। আমি বোললাম,O Muhammad;, God be with you, and may he make me worthy to untie your shoelatchet; for obtaining this I shall be a great prophet and holy one of God. হে মোহাম্মদ! আল্লাহ আপনার সহায় হোন। আমাকে তিনি আপনার জুতার ফিতা বাঁধার যোগ্যতা দান করুন। কারণ আমি যদি এই মর্যাদা লাভ করি তাহলে আমি একজন বড় নবী হবো এবং আল্লাহর একজন পবিত্র মানুষ হয়ে যাবো। (The Gospel of Barnabas, Chapter 44)”. এভাবেই একজন নবী আরেকজন নবীর প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিলেন, অবনত মস্তক ছিলেন, একে অপরকে ভাই মনে করেছেন। অথচ তাঁদের বিকৃত অনুসারীরা সেই নবী বা অবতারদের বিরুদ্ধে কুৎসা রটনায় লিপ্ত, একে অপরের রক্ত দিয়ে হোলি খেলে চোলেছে আর ভাবছে স্রষ্টা ভগবান ঈশ্বর মহাপ্রভু তাদের জন্য স্বর্গের দরজায় লাল গালিচা বিছিয়ে রেখেছেন। করুণ পরিহাস!!
যারা ধর্মের নামে দাঙ্গাবিস্তার করে তারা যে জাহান্নামে যাবে এটা আল্লাহরই ঘোষণা। তিনি পবিত্র কোর’আনে বলেন, “এমন কিছু লোক রয়েছে যাদের পার্থিব জীবনের কথাবার্তা তোমাকে চমৎকৃত করবে। আর তারা সাক্ষ্য স্থাপন করে আল্লাহকে নিজের মনের কথার ব্যাপারে। প্রকৃতপক্ষে তারা কঠিন ঝগড়াটে লোক। যখন তারা ফিরে যায় তখন চেষ্টা করে যাতে সেখানে অকল্যাণ সৃষ্টি করতে পারে এবং শস্যক্ষেত্র ও প্রাণনাশ করতে পারে। আল্লাহ ফাসাদ ও দাঙ্গা-হাঙ্গামা পছন্দ করেন না। আর যখন তাকে বলা হয় যে, আল্লাহকে ভয় কর, তখন তার পাপ তাকে অহঙ্কারে উদ্বুদ্ধ করে। সুতরাং তার জন্যে জাহান্নামই যথেষ্ট। আর নিঃসন্দেহে তা হলো নিকৃষ্টতর ঠিকানা। (সুরা বাকারা ২০৪-৬)
সুতরাং এইসব কপট, স্বার্থবাজ ধর্মব্যবসায়ী ও প্রতারক রাজনীতিকদের প্রভাব থেকে প্রকৃত ধর্মকে উদ্ধার করতে না পারলে মানবজাতি কোনোদিনও মুক্তি পাবে না।