হেযবুত তওহীদ

মানবতার কল্যাণে নিবেদিত

তওহীদ: শ্রেষ্ঠত্ব ফিরে পাওয়ার মূলমন্ত্র

হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম

ভাষণ থেকে সম্পাদিত

যারা ইসলামের ইতিহাস ও ইসলামপূর্ব জাহেলি আরব সমাজের ইতিহাস জানেন তাদেরকে বলে দিতে হবে না যে, আল্লাহর শেষ রসুল (সা.) অক্লান্ত পরিশ্রম করে, কঠোর সাধনা ও অধ্যবসায়ের মাধ্যমে, খেয়ে না খেয়ে, শত্রুর আঘাতে জর্জারিত হয়ে, রক্ত দিয়ে প্রাণান্তকর সংগ্রাম করে তওহীদভিত্তিক যে সত্যদীন প্রতিষ্ঠা করলেন, সে তওহীদ মানুষের ভাগ্য একেবারে পাল্টে দিয়েছিল। সেই দীন মানুষের আধ্যাত্মিক জীবন, ব্যক্তিজীবন, পারিবারিক জীবন, সামাজিক জীবন, রাজনৈতিক জীবন, রাষ্ট্রীয় জীবন কীভাবে পাল্টিয়ে দিয়েছিল তা এক বিস্ময়কর ইতিহাস। আজকের একবিংশ শতাব্দীর একটি সময়ে দাঁড়িয়ে ভাগ্যাহত, অন্য জাতির হাতে পরাজিত, নিজেরা নিজেদের বিরুদ্ধে হানাহানিরত শতধাবিচ্ছিন্ন মুসলিম জাতির ঘুরে দাঁড়াতে সেই বিস্ময়কর ইতিহাসকে অনুধাবন করা অবশ্যকর্তব্য।

তিনি আল্লাহর দীনের দ্বারা পরিচালিত সাড়ে বারো লক্ষ বর্গকিলোমিটারের একটি আদর্শ রাষ্ট্রব্যবস্থা ও সুশৃঙ্খল সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করলেন। সেই সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থায় বসবাসের ফলে মানুষগুলোর মধ্যে কী পরিবর্তন ঘটল তা এই যুগের মানুষের কল্পনারও অতীত। যে সমাজে ঘরে ঘরে চলত মদ্যপান, সেই সমাজ মাদকমুক্ত হয়ে গেল। যে সমাজে চুরি ডাকাতি করা ছিল গৌরবের কাজ, সেই সমাজ থেকে চুরি-ডাকাতি, লুটপাট এমনভাবে নির্মূল হয়ে গেল যে মানুষ কোথাও গেলে বসতবাড়ির দরজা বন্ধ করারও প্রয়োজন বোধ করত না। সোনার দোকান খোলা রেখে লোকেরা মসজিদে চলে যেত। একজন নারী শত শত মাইল পথ একা অতিক্রম করতো, কেউ তার ক্ষতি করার চিন্তাও করতো না। এমন একটি জীবনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করে এবং সেটা প্রতিষ্ঠার পন্থা ও প্রক্রিয়া হাতে কলমে শিক্ষা দিয়ে তিনি আল্লাহর কাছে চলে গেলেন। সেই প্রক্রিয়াটি হচ্ছে পাঁচ দফার একটি কর্মসূচি যার পুন পুন বিবরণ হাদিসে এসেছে। আল্লাহর রসুল বলেছেন, আল্লাহ আমাকে পাঁচটি কাজের আদেশ করেছেন, আমিও তোমাদেরকে সেই পাঁচটি কাজের আদেশ করছি। সেগুলো হচ্ছে, ঐক্যবদ্ধ হওয়া, নেতার আদেশ শ্রবণ করা, নেতার আদেশ পালন করা, হেজরত করা ও জীবন-সম্পদ দিয়ে আল্লাহর রাস্তায় জেহাদ (সংগ্রাম) করা। যারা এই ঐক্যবন্ধনী থেকে আধ হাত পরিমাণও বহির্গত হবে তাদের গলদেশ থেকে ইসলামের বন্ধন খুলে যাবে। আর যারা জাহেলিয়াতের যুগের কোনো প্রক্রিয়ার দিকে আহ্বান করে তাহলে তারা জাহান্নামের জ্বালানি পাথরে পরিণত হবে যদিও তারা নামাজ পড়ে, রোজা রাখে এমনকি নিজেকে মুসলিম বলে বিশ্বাস করে (হাদিস- হারিস আল আশ’আরি রা. থেকে আহমেদ, তিরমিজি, মেশকাত, বাব-উল ইমারত, ইবনে মাজাহ)।

এই পাঁচদফা কর্মসূচির উপরে প্রতিষ্ঠিত থেকে রসুলাল্লাহর হাতে গড়া উম্মতে মোহাম্মদী সত্যনিষ্ঠ খলিফাদের নেতৃত্বে লড়াই করে অর্ধ দুনিয়াতে আল্লাহর তওহীদভিত্তিক সত্যদীন প্রতিষ্ঠা করলেন। তারপর প্রাকৃতিক নিয়মে রসুলাল্লাহর সাহাবিরাও একে একে চলে গেলেন ধরাধাম থেকে। ৬০/৭০ বছর চলে গেল। এরপর ঘটল এক ভয়াবহ  দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা! ইবলিসের প্ররোচনায় জাতি তাদের আকিদা ভুলে গেল, লক্ষ্য ভুলে গেল, উদ্দেশ্য ভুলে গেল। কী জন্য তাদেরকে বানানো হয়েছে সেটা তারা ভুলে গেল। তাদের সামনে জীবনের ভিন্ন লক্ষ্য, ভিন্ন উদ্দেশ্য দাঁড়িয়ে গেল। তাদের কাজ ছিল সমগ্র পৃথিবীতে যে শান্তিময় সমাজের কথা একটু আগে উল্লেখ করলাম, অনুরূপ শান্তি প্রতিষ্ঠা করা। কিন্তু সেই শান্তি (ইসলাম) প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম করা ভুলে গিয়ে তারা ঘরের মধ্যে বসে গেল, তারা অন্তর্মুখী হয়ে গেল। জেহাদের ময়দান ত্যাগ করে তারা ঘরের চার দেয়ালের মধ্যে আবদ্ধ হলো। তারা তসবির দানা ধরল, তারা সোবাহান আল্লাহ, সোবাহান আল্লাহ জপতে শুরু করলে চোখ বন্ধ করে। জাতির মধ্যে জন্ম নিল আলেম, পণ্ডিত, মোফাস্সের মোহাদ্দেস শ্রেণি। তারা দীনের সকল বিষয় নিয়ে সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করে বিরাট বিরাট কেতাবের পাহাড় গড়ে তুলল। তাদের শাসকরা তখন নামে খলিফা হলেও পৃথিবীর আর সব জাতির রাজা-বাদশাহদের (মালিক, সুলতান) মতোই ভোগবিলাসে মত্ত হয়ে গেল। তারা খোলাফায়ে রাশিদার জীবনযাপন ও নীতি-আদর্শ ত্যাগ করল। তাদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সাধনের জন্য লক্ষ লক্ষ জাল হাদিস রচনা করে আল্লাহর রসুলের নামে প্রচার করা হলো।

তখন থেকে যা যা ঘটনা আমরা ইতিহাসের পাতায় দেখি সেগুলো আর ইসলামের ইতিহাস নয়। খলিফারা আর আল্লাহর প্রতিনিধিত্ব করছেন না, করছেন রাজত্ব। যুদ্ধ চলছে ইসলামের নামে কিন্তু সেটা আসলে রাজ্যবিস্তার ছাড়া আর কিছুই ছিল না। অর্ধেক পৃথিবীর একেক অঞ্চলে একেক খলিফা বা সুলতান তার শাসন কায়েম করলেন। প্রত্যেকটি খেলাফতের ইতিহাস সিংহাসন নিয়ে কামড়াকামড়ির ইতিহাস। লড়াইগুলো তখন আর বহিঃশত্রুর বিরুদ্ধে নয়, নিজেদের বিরুদ্ধে। কখনও সেটা রাজনৈতিক, কখনও সেটা ধর্মীয় মতভেদের ফসল। সেই ইতিহাসগুলোই ইসলামের ইতিহাস নাম দিয়ে মানুষকে যখন শেখানো হয় তখন ইসলামের প্রতি শিক্ষিত মানুষের শ্রদ্ধাভক্তি হারিয়ে যেতে বাধ্য। কে তাদেরকে বলে দেবে যে ওটা ইসলামের ইতিহাস ছিল না, ইসলাম হারিয়ে গেছে রসুলাল্লাহ চলে যাওয়ার ৬০/৭০ বছর পরই। যেটা পড়ানো হচ্ছে সেটা আসলে উমাইয়া, আব্বাসীয়, শিয়া, সুন্নি, শাফেয়ি, হাম্বলি, হানাফি ইত্যাদি ফেরকা ও মাজহাবের কামড়া-কামড়ির ইতিহাস। দীনের সূক্ষ্মাতিসূক্ষ¥ ও উদ্দেশ্যমূলক ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করে স্বার্থোদ্ধার করার ইতিহাস, রাজ্যজয়ের ইতিহাস।

আলেমরা আলাদা আলাদা মাজহাবের স্কুল বসালেন। বিরাট বিরাট মাহফিল ও বাহাসের আয়োজন করতে লাগলেন। একজন আরেকজন মতামত ও মাসলাকে তীক্ষ্ণ বাক্যবাণে জর্জরিত করে মিথ্যা প্রতিপন্ন করতে লাগলেন। কে কত বড় আলেম, কত বড় পণ্ডিত এটা নিয়ে গবেষণা ও বিতর্কই জাতির একটি বড় কাজ হয়ে দাঁড়াল। একজন এমামের নেতৃত্বে মাহফিল করা হলো আরেকজন এমামের বিরুদ্ধে ফতোয়াবাজি হলো সারা রাত ধরে। এগুলো আবার তারা কেতাবের মধ্যে লিপিবদ্ধ করলেন। কেতাবের পাহাড় জমে গেল। যে সাহাবিরা অর্ধ-উলঙ্গ, ভুখানাঙ্গা থাকতেন তারাই যুদ্ধ করে রক্ত দিয়ে অর্ধ দুনিয়ার এক মহান সভ্যতা প্রতিষ্ঠা করলেন, দীন প্রতিষ্ঠা করলেন আর তাদের উত্তরপুরুষরা মহা-আলেম হয়ে বড় বড় কেতাব রচনা করে পরাজিত হলেন। এর প্রমাণ হালাকু খান, চেঙ্গিস খান এসে মুসলমানদেরকে একেবারে কচুকাটা করল। সমস্ত কেতাবগুলো জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছাই করে ফেলল। যখন সেই কেতাবের পাহাড় নিয়ে নদীতে ফেলা হলো, নদীর পানি কালো হয়ে গেল। যেখানে মঙ্গোলরা গেল, সেখানেই লক্ষ লক্ষ মানুষের মাথা কেটে পিরামিড বানাল।

তবুও জাতির হুঁশ হলো না। তারপরও এ জতি ঐ সমস্ত ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র বিষয়গুলো নিয়ে তর্কাতর্কি করতেই লাগল। সংগ্রাম ত্যাগের শাস্তি হিসাবে আল্লাহ বলেছিলেন তোমাদেরকে অন্যজাতির পদানত করে দেব (সুরা তওবা, ৩৯)। এর বাস্তবায়ন ঘটাতে এলো ইউরোপীয় সাম্রাজ্যবাদীরা। সেখানকার ডাচ, ফ্রেঞ্চ, ব্রিটিশ, পর্তুগিজ ইত্যাদি ছোট ছোট জাতিগুলো এসে অর্ধেক পৃথিবীর মুসলিমদেরকে গোলাম বানিয়ে দিল। তারপর থেকে আজও আমরা গোলাম। আজ আমরা নামে মুসলমান, মুখে বলি আমাদের দীন ইসলাম কিন্তু আমাদের রাজনীতি চলে ব্রিটিশদের নিয়মে। আমাদের অর্থনীতি, সমাজনীতি, শিক্ষানীতি সব তাদের। সেসব নিয়ে আমাদের ধর্মগুরুদের কোনো মাথাব্যথা নেই। তারা আজও ব্যস্ত ঐ দাড়ি কতটুকু হবে, কুলুখ করলে কী ফজিলত, নারীর চুল দেখা গেলে কী শাস্তি হবে, রসুল নূরের তৈরি নাকি মাটির তৈরি এসব বিষয় নিয়ে চুলচেরা গবেষণায়। তারা কোর’আন হাদিসের অক্ষর মুখস্থ করছেন, শানে নুজুল মুখস্থ করছেন, প্রতিটি আয়াতে ব্যাখ্যা নিয়ে মাহফিল করছেন। এসব করে তারা টাইটেল ধারণ করছেন মোফাসসের, মোহাদ্দেস, আল্লামা, শায়েখ ইত্যাদি। কিন্তু সেই দীনের সকল ব্যবস্থা এখন অচল। তাহলে তারা খাবেন কী?

তারা এখন দীনের এই ক্ষুদ্র বিষয়গুলোকেই মহা গুরুত্বপূর্ণ অবয়ব দান করে জাতির সামনে উপস্থাপন করলেন। তাদের ভাবে মনে হবে ইসলামের মূল বিষয়ই হচ্ছে দাড়ি, টুপি, লেবাস, বোরকা ইত্যাদি। তারা এখন পুরোহিত। মুর্দা দাফন, মিলাদ মাহফিল, কোর’আন খানি, ওয়াজ মাহফিল করে ধর্ম বেচে খাচ্ছেন। সারা রাত ওয়াজ করেন, সকাল বেলায় এক বান্ডিল টাকা নিয়ে বাড়ি ফেরেন। তারা সুদের বিরুদ্ধে কথা বলেন, সুদের আয়াতের তাফসির করেন। কিন্তু জাতীয় জীবনে সবাই খাচ্ছে সুদ। সুদ ছাড়া ব্যবসা-বাণিজ্যে, সরকারি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কোথাও কোনো লেনদেন নেই। এটাই রসুল বলে গেছেন যে, ইসলাম শুধু নাম থাকবে, কোর’আন শুধু অক্ষর থাকবে। আজ সেটাই হয়েছে।

তবে এখন আমরা কী করব? উপায় আছে একটা। সেটা হলো যদি আবার আমরা আল্লাহর তওহীদের ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ হতে পারি তবে এই জাতি বাঁচবে, মানুষ বাঁচবে, প্রকৃতি বাঁচবে, মাটি বাঁচবে, পানি বাঁচবে, বাতাস বাঁচবে। তাদেরকে আল্লাহর হুকুমের পক্ষে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে, এ ঘোষণা দিতে হবে যে, আল্লাহ ছাড়া আর কারো হুকুম আমরা মানবো না।

আজকে সমগ্র দুনিয়াতে প্রায় আটশো কোটি মানুষ। এই দুনিয়া এখন দাজ্জালের হাতে। আমাদের এমামুজ্জামান বই লিখেছেন “দাজ্জাল? ইহুদী খ্রীষ্টান সভ্যতা!” এই দাজ্জালটা কী? এটা হচ্ছে একটি সভ্যতা (Civilization) যার হাতে সমস্ত দুনিয়া। পাশ্চাত্য সভ্যতা আজ সম্পূর্ণরূপে নিয়ন্ত্রণ করছে মানবজাতিকে। তারা মাটির নিচের সম্পদ তুলে আনছে, আকাশ তাদের দখলে, সাগর তাদের দখলে। অর্থব্যবস্থা তাদের নিয়ন্ত্রণে। গুটিকয়েক মানুষের হাতে পৃথিবীর সমস্ত সম্পদ বন্দী। এই মুহূর্তে জাতিসংঘের হিসাব মোতাবেক প্রায় একশো কোটি মানুষ দারিদ্রসীমার নিচে বাস করছে। প্রায় ৮০ কোটি লোকের না খেয়ে থাকতে হয়। জাতিসংঘের মহাসচিব তিনি নিজেই তার বক্তব্যে এসব কথা বলেছেন। যেখানে সারা বিশ্বে আশি কোটি লোককে না খেয়ে থাকতে হয় সেখানে মানুষ হিসাবে কেউ আমরা আমাদের দায়িত্ব এড়াতে পারি না। কিছুদিন আগেও আমেরিকা এত শক্তিশালী ছিল না। দীর্ঘদিন ধরে চলমান শিল্পবিপ্লবের পর পাশ্চাত্য সভ্যতা দাজ্জাল যখন সিদ্ধান্ত নিল আল্লাহর হুকুম মানবে না, ধর্ম মানবে না, আমরা যা বলব তাই হবে সিদ্ধান্ত। এটাই ছিল ইবলিসের অভিপ্রায়, অর্থাৎ সিদ্ধান্ত নেবে মানুষ- স্রষ্টা হাতে সিদ্ধান্ত গ্রহণের কোনো এখতিয়ার থাকবে না। তারা প্রযুক্তির জগতে ঝড় তুলে ফেলল। এর নামই শিল্পবিপ্লব।

নিত্য নতুন যন্ত্রপাতি আর কলাকৌশল তারা আবিষ্কার করতে লাগল। এ কথা শুনে কেউ যেন না ভাবেন যে আমরা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির বিরুদ্ধে কিছু বললাম। বিজ্ঞানের আবিষ্কার আসলেই মানবজাতির জন্য আশীর্বাদ। কিন্তু যখন একে মানবতার অকল্যাণে ব্যবহার করা হয় তখন তা অভিশাপে রূপ নেয়। আধুনিক বিজ্ঞানের ভিত্তি স্থাপন করেছে কিন্তু মুসলমানরা। জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রগতি একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। এর মালিকানা কোনো ব্যক্তি, দেশ বা জাতিই এককভাবে দাবি করতে পারে না। আদম হাওয়ার সন্তানেরা সেই প্রথম থেকে এই যে আবিষ্কারের পেছন পেছন লেগেছে তারপর থেকে একটার পর একটা অজানা বিষয়ের রহস্য উদ্ঘাটন করে চলছে। এর সংক্ষিপ্ত নামটাই হলো বিজ্ঞান। যেই জাতি শাসক হয়েছে তারাই জ্ঞান-বিজ্ঞানে উন্নতি করেছে। এখন প্রশ্ন হলো এই যে জ্ঞান-বিজ্ঞানকে কোনদিকে নিবেন আপনি? ডানদিকে না বামদিকে? বন্দুকের কোন দোষ নাই। বন্দুক ব্যবহার করবেন কি কাজে সেটা হলো কথা। দোষগুণ সব ব্যবহারের মধ্যে। বন্দুক দিয়ে ডাকাতিও করা যায় আবার ডাকাত দমনও করা যায়। প্রযুক্তি যখন আবিষ্কৃত হলো তখন তারা নতুন নতুন অস্ত্রও আবিষ্কার করল। সেগুলো ব্যবহার করে সমস্ত দুনিয়াকে তারা সামরিকভাবে পদানত করল। পদানত এলাকাগুলোতে একটা জীবনব্যবস্থা তো লাগবে। সেটা তারা নিজেদের দেশ থেকেই নিয়ে আসলো। তাদের তৈরি করা গণতন্ত্র, পুঁজিবাদী সুদভিত্তিক অর্থনীতি ইত্যাদি তারা আমাদের উপর চাপিয়ে দিল। সেই সুদের ফলটা কি?

সম্পত্তি আস্তে আস্তে গুটিকয়েক লোকের হাতে পুঞ্জিভূত হতে থাকে বা জমা হতে থাকে, ওদিকে কোটি কোটি লোক বঞ্চিত হতে থাকে। এটা অনেকটা উঠোনের ছড়ানো ধানগুলোকে পাওটের সাহায্যে টেনে টেনে এক জায়গায় জড় করার মতো। ঠিক তেমনি সুদভিত্তিক অর্থনীতি সমস্ত সম্পত্তিগুলো এক জায়গায় টেনে এনে জড়ো করা হয়। এটা একটা রাষ্ট্রে যদি করা হয় তবে রাষ্ট্রের গুটিকতক লোক কোটি কোটি টাকার মালিক হয়ে যাবে এবং কোটি কোটি লোক না খেয়ে মারা যাবে। এটা যদি সমগ্র বিশ্বে করা হয় তবে কয়েকটা রাষ্ট্র টাকা রাখার জায়গা পাবে না আর অধিকাংশ রাষ্ট্রের মানুষ মানবেতর জীবনযাপন করবে। এরা গণতন্ত্রের নামে এমন একটি ব্যবস্থা চালু করল সম্পূর্ণই প্রতারণামূলক। বলা হলো জনগণ যা বলবে সে মোতাবেক দেশ চলবে। কিন্তু কার্যত ঘটনল উল্টো। একটি অর্থশালী, ক্ষমতাবান, শক্তিশালী পাণ্ডা গোষ্ঠী গজিয়ে উঠল যারা সমাজের কর্তা, রাষ্ট্রের কর্তা হিসাবে আবির্ভূত হলো। তারাই জনগণের ভাগ্যনিয়ন্তাতে পরিণত হলো।  মক্কার ইতিহাস পড়ে দেখুন, ইসলাম গ্রহণের আগে ওমর (রা.) ছিলেন একজন মাস্তান প্রকৃতির মানুষ। বিভিন্ন জনের সঙ্গে চ্যালেঞ্জ করে কুস্তি খেলতেন। এই করে উপার্জনও করতেন। কিন্তু সেই ওমরকে (রা.) ন্যায়বিচারক বানিয়েছিল ইসলাম। সেই ইসলাম ছাড়া, আল্লাহর হুকুম মানা ছাড়া ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করার মন্ত্র কারো কাছে নাই।

লেখাটি শেয়ার করুন আপনার প্রিয়জনের সাথে

Email
Facebook
Twitter
Skype
WhatsApp
সার্চ করুন

যুক্ত হোন আমাদের ফেসবুক পেজের সাথে...