ঐক্যসূত্রের এক বিন্দুতে বিভিন্ন ধর্মের বিশিষ্টজনরা
আজ সমগ্র মানবজাতি যে নিদারুণ সঙ্কটে পতিত, তার একমাত্র কারণ আমাদের ত্র“টিপূর্ণ জীবনব্যবস্থা। জীবনব্যবস্থা হতে পারে দুই প্রকার- স্রষ্টার দেওয়া অথবা মানুষের তৈরি। যুগে যুগে মানুষের জীবনযাপনকে শান্তিময় করতে স্রষ্টা তাঁর নবী-রসুল-অবতারগণের মাধ্যমে জীবনবিধান পাঠিয়েছেন, যেগুলিকে আমরা ধর্ম বলে থাকি। পরিসংখ্যান অনুযায়ী পৃথিবীতে বিরাজিত মোট ধর্মের সংখ্যা ৪,২০০টি, যার মধ্যে প্রধান পাঁচটিকে বলা হয় বিশ্বধর্ম বা ডড়ৎষফ জবষরমরড়হ. পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি আছেন খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বী- প্রায় ২২০ কোটি, এসলাম ধর্মের অনুসারী ১৬০ কোটি, সনাতন ধর্মাবলম্বী ১১০ কোটি, বৌদ্ধ আছেন প্রায় ৫০ কোটি, ইহুদি আছেন ১ কোটি ৪০ লক্ষের মত। আর প্রায় ১১০ কোটি মানুষ আছেন যারা কোনো ধর্মের উপরই আস্থাশীল নন। ধর্মের প্রতি এত বিরাট সংখ্যক মানুষের বীতশ্রদ্ধ হওয়ার কারণ, মানবজাতির শান্তির জন্য যে ধর্মের আগমন তা আজ অশান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই সমগ্র মানবজাতি, এমন কি যারা নিজেদেরকে অতি ধার্মিক বলে দাবি করেন তারাও নিজেদের সামগ্রিক জীবন থেকে স্রষ্টার বিধান বাদ দিয়েছেন এবং পাশ্চাত্য সভ্যতার চাপিয়ে দেওয়া জীবনব্যবস্থা, তন্ত্র-মন্ত্র মেনে চলেছেন।
প্রতিটি ধর্মের মূল শিক্ষা এক: মানবসৃষ্টির পর থেকে আজ পর্যন্ত কেবলমাত্র স্রষ্টার বিধানই মানুষকে শান্তি দিতে পেরেছে। এটাই মানুষের ঐতিহাসিক অভিজ্ঞতা। এই অভিজ্ঞতার সঠিক মূল্যায়নই আমাদেরকে সঠিক সিদ্ধান্তের দিকে নিয়ে যেতে পারে। স্রষ্টায় বিশ্বাসী সকলকে আজ হৃদয় দিয়ে বুঝতে হবে যে, সকল মানুষ একই স্রষ্টার সৃষ্টি, তারা একই বাবা-মা আদম হাওয়ার সন্তান।
মহান স্রষ্টার অভিপ্রায় হচ্ছে, মানবজাতি একতাবদ্ধ হয়ে শান্তিতে জীবনযাপন করুক, ঠিক যেমনভাবে একজন পিতা চান তার সন্তানেরা মিলেমিশে থাকুক। পবিত্র কোর’আনে আল্লাহ বলেছেন, “তোমরা সকলে ঐক্যবদ্ধভাবে আল্লাহর রজ্জুকে সুদৃঢ়হস্তে ধারণ কর এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না।” (সুরা এমরান ১০৩)
বেদে বলা হয়েছে, “হে মানবজাতি! তোমরা সম্মিলিতভাবে মানুষের কল্যাণে নিয়োজিত হও, পারস্পরিক মমতা ও শুভেচ্ছা নিয়ে একত্রে পরিশ্রম কর, জীবনের আনন্দে সম অংশীদার হও। একটি চাকার শিকগুলো সমভাবে কেন্দ্রে মিলিত হলে যেমন গতিসঞ্চার হয়, তেমনি সাম্য-মৈত্রীর ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ হও, তাহলেই অগ্রগতি অবধারিত। (অথর্ববেদ, ৩/৩০/৬-৭)।
বাইবেলে ঈসা (আ:) বলেছেন, “যে রাজ্য নিজের মধ্যে ভাগ হয়ে যায় সে রাজ্য ধ্বংস হয়, আর যে শহর বা পরিবার নিজের মধ্যে ভাগ হয়ে যায় সেই শহর বা পরিবার টেকে না।” (মথি ১২:২৫)
সত্য এক লক্ষ বছর পুরাতন হলেও তা মিথ্যা হয়ে যায় না, আবার পৃথিবীর সমস্ত মানুষ একটি মিথ্যাকে মেনে নিলেও সেটা সত্য হয়ে যায় না। আল্লাহর দেওয়া জীবনব্যবস্থার আরেক নাম দীনুল কাইয়্যেমাহ (সুরা ইউসুফ ৪০, সুরা বাইয়্যেনাহ ৫, সুরা রুম ৩০, ৪৩)। দীন শব্দের অর্থ জীবনব্যবস্থা আর কাইয়্যেমাহ শব্দটি এসেছে কায়েম থেকে যার অর্থ প্রতিষ্ঠিত, আদি, শাশ্বত, চিরন্তন। যা ছিল, আছে, থাকবে। সনাতন শব্দের অর্থও আদি, শাশ্বত, চিরন্তন। এই হিসাবে আমরা বলতে পারি, স্রষ্টার প্রেরিত সকল ধর্মই সনাতন ধর্ম। সুতরাং সকল ধর্মের অনুসারীরাই একে অপরের ভাই।
সকলের আদিতে যিনি তিনিই স্রষ্টা, সবকিছুর শেষেও তিনি (সুরা হাদীদ ৩)। তিনিই আলফা, তিনিই ওমেগা। (জবাবষধঃরড়হ ২২:১৩). কারও কাছে তিনি আল্লাহ, কারো কাছে ব্রহ্মা, কারো কাছে গড। যে যে নামেই ডাকুক সেই মহান স্রষ্টার প্রশ্নহীন আনুগত্যই সকল ধর্মের ভিত্তি। তাই সনাতন ধর্মের মহাবাক্য ‘একমেবাদ্বিতীয়ম’ (ছান্দোগ্য উপনিষদ ৬:২:১) অর্থাৎ একত্ববাদ। ‘একম ব্রহ্মা দ্বৈত্য নাস্তি’ অর্থাৎ ব্রহ্মা এক, তাঁর মত কেউ নেই। নিউ টেস্টামেন্টে বলা হচ্ছে: ঞযবৎব রং ড়হষু ড়হব খধমিরাবৎ ধহফ ঔঁফমব. (ঘবি ঞবংঃধসবহঃ: ঔধসবং ৪:১২) অর্থাৎ বিধানদাতা এবং বিচারক কেবলমাত্র একজনই। কোরানের শিক্ষাও তাই, ‘আল্লাহ ছাড়া আর কারও বিধান দেওয়ার ক্ষমতা নেই, তিনি আদেশ দিয়েছেন যে আল্লাহ ছাড়া আর কারও আনুগত্য করো না। এটাই দীনুল কাইয়্যেমাহ অর্থাৎ শাশ্বত-সনাতন জীবনবিধান। সমস্ত মানবজাতি এক পিতা-মাতা আদম-হাওয়ার সন্তান। বাইবেলে তাঁদের নাম অ্যাডাম ও ইভ। ভবিষ্যপুরাণে তাঁরা আদম ও হব্যবতী। ভবিষ্যপুরাণমতে, “আদমকে প্রভু বিষ্ণু কাদামাটি থেকে সৃষ্টি করেন। তারপর তারা কলি বা এবলিসের প্ররোচনায় নিষিদ্ধ রম্যফল ভক্ষণ করে স্বর্গ থেকে বহি®কৃত হন।” কোর’আন ও বাইবেলের বর্ণনাও প্রায় একই।
স্রষ্টার দেওয়া সম্ভবত প্রাচীনতম গ্রন্থ হচ্ছে বেদ। আমাদের বিশ্বাসমতে, মহর্ষী মনু, রাজা রামচন্দ্র, শ্রীকৃষ্ণ, ধর্মরাজ যুধিষ্ঠির, মহাবীর জৈন, মহামতি বুদ্ধ এঁরা সবাই ছিলেন ভারতবর্ষে আগত আল্লাহর নবী। অনেক গবেষক মনে করেন বৈবস্বতঃ মনুই হচ্ছেন বৈদিক ধর্মের মূল প্রবর্তক, যাঁকে কোরানে ও বাইবেলে বলা হয়েছে নূহ (আ:), ভবিষ্যপুরাণে বলা হয়েছে রাজা ন্যূহ। তাঁর উপরই নাযেল হয় বেদের মূল অংশ। তাঁর সময়ে এক মহাপ্লাবন হয় যাতে কেবল তিনি ও তাঁর সঙ্গীরা একটি বড় নৌকায় আরোহণ করে জীবন রক্ষা করেন। তাঁদের সঙ্গে প্রতিটি প্রাণীর এক জোড়া করে রক্ষা পায়। এই ঘটনাগুলি কোরানে যেমন আছে (সুরা মো’মেনুন-২৭, সুরা হুদ ৪০, সুরা আরাফ ৬৪, সুরা ছাফফাত ৭৭), বাইবেলেও (এবহবংরং পযধঢ়ঃবৎং ৬–৯) আছে আবার মহাভারতে (বনপর্ব, ১৮৭ অধ্যায়: প্রলয় সম্ভাবনায় মনুকর্তৃক সংসারবীজরক্ষা) মৎস্যপুরাণেও আছে। যা প্রমাণ করে যে, এই সব গ্রন্থই একই স্থান থেকে আগত।
শাস্ত্রের শাসন যখন ভারতবর্ষে প্রতিষ্ঠিত ছিল, তখন এখানে বিরাজ করত অকল্পনীয় শান্তি। উদাহরণ হিসাবে রামরাজত্বের কথা বলতে পারি। রামরাজত্বে বাঘ ও ছাগ একসঙ্গে জল পান করত। মানুষের মধ্যে কেউ কারও শত্র“ ছিল না। ধর্মীয় জ্ঞান ধর্মব্যবসায়ীদের কুক্ষিগত ছিল না, সাধারণ মানুষও ধর্মের বিধানগুলি জানত। ন্যায়বিচারের ক্ষেত্রে ধনী-দরিদ্রের কোন পার্থক্য ছিল না। রাজ্যের নামই হয়েছিল অযোদ্ধা অর্থাৎ যেখানে কোন যুদ্ধ নেই। শিক্ষকের মর্যাদা ছিলো সবার ঊর্ধ্বে। নীতি-নৈতিকতায় পূর্ণ ছিল মানুষ।
কিন্তু এই শান্তি চিরস্থায়ী হয় নি। অবতারগণের বিদায় নেওয়ার পর তাদের অনুসারীদের মধ্য হতে অতি ভক্তিবাদী কিছু মানুষ ধর্মের সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করতে আরম্ভ করেছে এবং ধর্মকে সাধারণ মানুষের জ্ঞানের বাইরে নিয়ে গেছে। ধর্ম হয়ে দাঁড়িয়েছে একটি বিশেষ শ্রেণির ব্যবসার পুঁজি। ফলে ধর্ম শান্তির কারণ হওয়ার পরিবর্তে শোষণের যন্ত্রে পরিণত হয়েছে। এ থেকে মানুষকে রক্ষা করার জন্যই স্রষ্টা আবার নতুন অবতার পাঠিয়েছেন। শ্রীকৃষ্ণ (আ:) অর্জুনকে বলছেন: হে ভারত! যখনই ধর্মের অধঃপতন হয় এবং অধর্মের অভ্যুত্থান হয়, তখন আমি অবতীর্ণ হই এবং সাধুদিগের পরিত্রাণ, দু®কৃতকারীদের বিনাশ এবং ধর্ম সংস্থাপন করি। শ্রীগীতা ৪:৭/৮।
সুতরাং ধর্মকে পুনস্থাপন করে মানুষের কল্যাণ সাধনের জন্যই ভারতবর্ষে এসেছেন শ্রীকৃষ্ণ (আ:), রামচন্দ্র (আ:), যুধিষ্ঠির (আ:), মধ্য এশিয়ায় এসেছেন এব্রাহীম (আ:), ইহুদীদের মধ্যে এসেছেন মুসা (আ:), দাউদ (আ:), ঈসা (আ:), ইয়াহিয়া (আ:), ইয়াকুব (আ:) এমনই আরও বহু নবী রসুল। এভাবে সকল যুগে, সকল জাতি গোষ্ঠীর কাছে তাদের মাতৃভাষায় আল্লাহ নবী-রসুল, ও গ্রন্থ পাঠিয়েছেন। (সুরা ইউনুস ৪৮, সুরা রাদ ৮, সুরা নাহল-৩৭, সুরা ফাতির -২৫, সুরা ইব্রাহীম-৫)। তাঁদের অনেকের মাধ্যমেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল রামরাজ্যের অনুরূপ শান্তিময়, প্রগতিশীল সমাজ।
এঁদেরই ধারাবাহিকতায় মক্কায় আসলেন সর্বশেষ রসুল মোহাম্মদ (স:)। তিনি যে জীবনব্যবস্থা মানবজাতির সামনে উপস্থাপন করেছেন সেটা যখন অর্ধ পৃথিবীতে প্রয়োগ করা হলো, সেখানে প্রতিষ্ঠিত হলো ন্যায়, সুবিচার, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি, জীবন ও সম্পদের পূর্ণ নিরাপত্তা এক কথায় শান্তি। স¤পদের এমন প্রাচুর্য তৈরি হয়েছিল যে, দান গ্রহণ করার মত লোক খুঁজে পাওয়া যেত না। একজন যুবতী মেয়ে সমস্ত গায়ে অলংকার পরিহিত অবস্থায় শত শত মাইল পথ অতিক্রম করতে পারত, তার মনে কোনো ক্ষতির আশঙ্কাও জাগ্রত হত না। আদালতে মাসের পর মাস কোন অভিযোগ আসত না। আল্লাহর দেওয়া সত্য জীবনব্যবস্থার প্রভাবে সত্যবাদিতা, আমানতদারী, পরোপকার, অতিথিপরায়ণতা, উদারতা, ত্যাগ, ওয়াদারক্ষা, দানশীলতা, গুরুজনে শ্রদ্ধা ইত্যাদি চারিত্রিক গুণাবলীতে মানুষের চরিত্র পূর্ণ হয়ে গিয়েছিল। এটাই ছিল সত্যদীনের সর্বশেষ সংস্করণ যা আইয়ামে জাহেলিয়াতের দারিদ্র্যপীড়িত, বর্বর, কলহবিবাদে লিপ্ত, অশ্লীল জীবনাচারে অভ্যস্ত জাতিটিকে একটি সুসভ্য জাতিতে পরিণত করেছিল। তারা অতি অল্প সময়ে অর্থনৈতিক, সামরিক, জ্ঞান বিজ্ঞানের প্রতিটি শাখায় পৃথিবীর সকল জাতির শিক্ষকের আসনে অধিষ্ঠিত হয়েছিল। সুতরাং যুগে যুগে শাস্ত্রের বিধান যে সর্বদাই সত্যযুগের সৃষ্টি করে সেটাই বারবার প্রমাণিত হয়েছে।
আল্লাহর শেষ রসুলের উপর অবতীর্ণ কোর’আন আজও অবিকৃত আছে, কিন্তু তাঁর শিক্ষাগুলিকে পরবর্তী যুগের অতি-বিশ্লেষণকারী আলেম, ফকীহ, মোফাসসেররা যথারীতি বিকৃত করে ফেলেছেন। তাদের সৃষ্ট মতবাদ ও লক্ষ লক্ষ মাসলা মাসায়েলের দ্বারা সৃষ্টি হয়েছে অগণিত ফেরকা, মাজহাব, তরিকা। তারা একদা ইস্পাতকঠিন ঐক্যবদ্ধ জাতিকে ভেঙে টুকরো টুকরো করে ফেলেছেন। তাদের কাজের ফলে মুসলমান নামের জাতিটি আজ চরম অশান্তিতে পতিত। যারা নিজেরাই আছে চরম অশান্তির মধ্যে তারা কী করে অন্য জাতিকে শান্তি দেবে?
সাম্প্র্রদায়িক অনৈক্য ঔপনিবেশিক ষড়যন্ত্রের বিষফল: ইংরেজরা আসার আগে সাতশত বছর মুসলিমরা ভারতবর্ষ শাসন করেছে। এই দীর্ঘ সময়ে এ অঞ্চলে সিংহাসন নিয়ে যুদ্ধ অনেক হয়েছে কিন্তু হিন্দু-মুসলমান দাঙ্গার একটিও উদাহরণ নেই। বিশ্বের শ্রেষ্ঠতম সভ্যতার লীলাক্ষেত্র ভারতবর্ষের অতুল সম্পদরাশি লুট করার জন্যই বণিকের বেশে আগমন করেছিল পর্তুগীজ, ওলন্দাজ ও ইংরেজরা। ইংরেজরা কীভাবে সমৃদ্ধ ভারতবর্ষকে ভিক্ষুকের দেশে পরিণত করেছিল, কিভাবে তারা ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে কোটি কোটি মানুষকে ভাতের অভাবে মরতে বাধ্য করেছিল, কিভাবে তাদেরকে শিয়াল শকুনের খাদ্যে পরিণত করেছিল- সে এক হৃদয়বিদারক ইতিহাস।
তাদেরই চাপিয়ে দেওয়া জীবনব্যবস্থা বা সিস্টেম আমাদের মনুষ্যত্ব কেড়ে নিয়ে গেছে। ষড়যন্ত্রমূলক শিক্ষাব্যবস্থার মাধ্যমে এই জাতির চারিত্রিক মেরুদণ্ড তারা ভেঙ্গে দিয়েছে। জাতিকে হীনমন্যতায় আপ্লুত গোলাম বানিয়ে দিয়েছে। এই শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে মানুষ দুর্নীতিগ্রস্ত হয়েছে, তারা নিজেদেরকে পশ্চিমাদের থেকে নিকৃষ্ট ভাবতে শিখেছে, ছাত্রসমাজ পরিণত হয়েছে সন্ত্রাস-বাহিনীতে।
তাদের চাপিয়ে দেয়া সিস্টেম মানুষকে সুদ, ঘুষ, খাদ্যে ভেজাল, রাজনৈতিক রক্তারক্তির দিকে ঠেলে দিয়েছে। সৎ মানুষকে অসৎ হতে বাধ্য করছে। নারীকে করা হয়েছে ভোগ্যপণ্য, দিকে দিকে কেবল নির্যাতিতা, ধর্ষিতার হাহাকার। আর এই নিজেদের তৈরি করা নরকে বসে ব্রিটিশপ্রবর্তিত ষড়যন্ত্রমূলক শিক্ষায় শিক্ষিত এক শ্রেণির মানুষ সকল শান্তির উৎস ধর্মকেই গালাগালি করছে।
বিকৃত এসলামের ধর্মব্যবসায়ীরা কথায় কথায় অন্য ধর্মের উপাস্য ও মহামানবদের অমর্যাদা করে কথা বলেন। অথচ এঁরা যে আল্লাহর নবীও হতে পারেন এটা তাদের ধারণারও বাইরে। একইভাবে মুসলিম ছাড়া অনেকেই এটা স্বীকার করেন না যে, মোহাম্মদ (দ:) নবী ছিলেন। তাই তাঁর ব্যাপারে ঘৃণাবিদ্বেষ ছড়াতে, কার্টুন আঁকতে বা চলচ্চিত্র বানাতে তাদের হৃদয়ে কোনো গ্লানি অনুভব করেন না। তাদের এসব কাজের ফলে সৃষ্টি হয় ক্ষোভের, পরিণতিতে শুরু হয় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা। এক ভাইয়ের নির্যাতনের শিকার হয়ে আরেক ভাই পূর্বপুরুষের ভিটা ছেড়ে ভিনদেশে পাড়ি জমান।
“ডিভাইড এ্যান্ড রুল অর্থাৎ ঐক্যহীন করে শাসন করো” এই ছিল ব্রিটিশদের নীতি। তারা নিজেদের শাসন ও শোষণ টিকিয়ে রাখার জন্য ভারতবর্ষে হিন্দু- মুসলমান শত্র“তার সৃষ্টি করেছিল। যখন শোষণ করার মত আর সম্পদ অবশিষ্ট ছিল না, তখন তারা স্বাধীনতা দেওয়ার নাম করে বিদায় নিয়েছে, কিন্তু সেই যে সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ তারা তৈরি করে রেখে গেছে সে বিদ্বেষ আজও আমরা রক্তকণিকায় বয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছি।
আর আমাদের কতিপয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ যারা প্রকৃতপক্ষে সেই ব্রিটিশদের প্রেতাত্মা তারা এই সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষকে ব্যবহার করে ভোটের যুদ্ধে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল করে যাচ্ছেন। তাই অধিকাংশ ধর্মীয় দাঙ্গার পেছনে মূল কারণ থাকে রাজনৈতিক। মায়ানমারে বৌদ্ধরা হাজারে হাজারে জীবিত মানুষ পুড়িয়ে মারছে, আর এদেশে মুসলমানেরা ভাঙছে বৌদ্ধ মন্দির, তালেবানরা আফগানে ভাঙছেন বৌদ্ধমূর্তি, চীনে মুসলমানদের দাড়ি রাখা নিষিদ্ধ করা হচ্ছে। খ্রিস্টানরা পোড়াচ্ছে কোরান, প্রতিবাদে মুসলমানেরা চালাচ্ছে আত্মঘাতী হামলা। ভারতে মসজিদ ভাঙা হচ্ছে, প্রতিবাদে এদেশে ভাঙা হচ্ছে মন্দির। আমরা যাঁদের অনুসারী- সেই বুদ্ধ (আ:), ঈসা (আ:), শ্রীকৃষ্ণ (আ:), মোহাম্মদ (দ:)- তাঁরা কি চান আমরা এভাবে একে অপরের রক্তে øান করি? না, তারা চান না। তবু তাদের নামেই চলছে এই রক্তের হোলি খেলা, পৈশাচিক নারকীয়তা। একবার ভেবে দেখুন আমাদের সবার বাবা মা আদম হাওয়ার কথা। আমরা- তাঁদের সন্তানেরা এই যে ধর্মের নামে শত সহস্র বছর ধরে একে অপরের রক্ত ঝরাচ্ছি, এই দৃশ্য দেখে তাদের হৃদয় কী অপরিসীম যন্ত্রণায় বিদীর্ণ হচ্ছে! এর চেয়ে মূর্খতা আর কী হতে পারে যে, আমরা একই বাবা মায়ের সন্তান হয়েও একে অপরকে অপবিত্র মনে করি? আচারের নামে এইসব অনাচার ধর্মের সৃষ্টি নয়, ধর্মব্যবসায়ীদের সৃষ্টি।
আনুষ্ঠানে আগত বক্তাগণ
অনুষ্ঠানে আগত অন্যান্য অতিথিবৃন্দ