মোস্তাফিজ শিহাব
ধর্মগ্রন্থগুলোতে পড়েছি নরকের বর্ণনা। নিকৃষ্ট ব্যক্তিরা মৃত্যুর পরে নরকে যাবে, যেখানে কেবল অশান্তি আর অশান্তি, দুঃখ আর কষ্ট, নিষ্ঠুরতা আর নির্মমতা। সেখানে কেউ কাউকে সাহায্য করবে না, কেউ কাউকে দয়া দেখাবে না। কিন্তু হায় ভাগ্য! নরকের সেই অশান্তির কালো ছায়া নেমে এসেছে পৃথিবীতেই, আর তা ভালো-মন্দ, উৎকৃষ্ট-নিকৃষ্ট, সৎ-অসৎ নির্বিশেষে সমস্ত মানুষের জীবনে!
অন্যায়, অবিচার, হানাহানি, খুন, ধর্ষণ, শোষণ, দুর্নীতি, যুদ্ধ, রক্তপাতে পৃথিবী ভরপুর। ক্ষমতার কাছে অসহায় মানুষ। গুটিকতক পরাশক্তিধর রাষ্ট্রের হাতে জিম্মি হয়ে আছে পৃথিবীর ৭০০ কোটি আদম সন্তান। তাদের ইচ্ছা হলো কোন দেশকে মাটির সাথে মিশিয়ে দিল, লক্ষ লক্ষ মানুষ হত্যা করে ফেলল, নারীদের ধর্ষণ করল- কারো কিছু বলার নেই, কিছু করার নেই, কেবল চেয়ে চেয়ে দেখা ছাড়া। ইরাক, আফগানিস্তান, লিবিয়া, সিরিয়া, ফিলিস্তিন, ইয়েমেন ধ্বংস করা হলো, সারা পৃথিবী কেবল চেয়ে চেয়ে দেখা ছাড়া কী করতে পারল? মিয়ানমারে মাত্র কয়েক মাসের ব্যবধানে হাজার হাজার নিরীহ রোহিঙ্গা মুসলিমকে জবাই করে, গুলি করে, আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করা হলো, হাজার হাজার নারীকে ধর্ষণ করা হলো, দশ লক্ষ মুসলমানকে বাড়িঘর থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হলো- সারা পৃথিবী কী করতে পারল?
পৃথিবীর ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট আজ বড়ই সঙ্গীন। দেশে দেশে চলছে অস্থিরতা, জনগণের মধ্যে দানা বাঁধছে অসন্তোষ, বেড়েছে ঘৃণা ও বিদ্বেষের চর্চা, গণতন্ত্রের পাতলা পর্দা ভেদ করে বেরিয়ে আসছে একবিংশ শতাব্দীর হিটলার-মুসোলিনিরা, যুদ্ধ বন্ধ নেই একটি দিনও, সীমান্তে সীমান্তে বিরাজ করছে উত্তেজনা, এক রাষ্ট্র অপর রাষ্ট্রের দিকে তাক করে রেখেছে আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র, ১৬ হাজার তরতাজা পরমাণু বোমা মজুদ হয়ে আছে রাষ্ট্রগুলোর হাতে। কেউ বলছেন তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ বেঁধে গেলে পৃথিবী থাকবে না। কেউ বলছেন ইতোমধ্যেই যুদ্ধ বেঁধে গেছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে সামরিক শক্তিধর রাষ্ট্রগুলো বিশ্বের দেশে দেশে দাদাগিরি করে আসছে। দেশে দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার নামে, শান্তি স্থাপনার নামে, সন্ত্রাস দমনের নামে অসংখ্য ছোট-বড় যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়ে লক্ষ লক্ষ মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করে যাচ্ছে। কোথাও ন্যায়-অন্যায়ের পার্থক্য নেই, কেবল সমীহ করা হচ্ছে শক্তিকে। যার শক্তি আছে তার কথাই ন্যায় সাব্যস্ত হচ্ছে। শক্তি নেই যার, তার কথার মূল্য নেই, তার কোনো বন্ধু নেই, সাহায্যকারী নেই।
একটা সীমানা উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছি আমরা। কিন্তু তা অক্ষয়, অভেদ্য কিছু নয়। বিভিন্ন দেশে, বিভিন্ন রাজ্যে বাঙালিদের বিরুদ্ধে পরিকল্পিতভাবে সাম্প্রদায়িক উন্মাদনা ছড়ানো হচ্ছে, বোঝাই যাচ্ছে এটা কারো ‘মাস্টার প্ল্যান’ যার লক্ষ্যবস্তু বাংলাদেশ। ভেতরে ভেতরে সবাই বাংলাদেশের বিরুদ্ধে হাত পাকিয়ে নিচ্ছে, যদিও আমরা কোনোদিকে দৃষ্টিপাত ও কর্ণপাত করছি না। এই সুযোগ নিয়ে অদূর ভবিষ্যতে যদি দেশের সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে পড়েই যায় তাহলে দেশপ্রেমে উজ্জীবিত হয়ে ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে ঈমানী দায়িত্ব মনে করে কয়টা লোক জান দিতে প্রস্তুত থাকবে?
আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার নেতৃত্বে পৃথিবীর শক্তিধর রাষ্ট্রগুলো বিভক্ত হয়ে প্রতিনিয়ত যুদ্ধাস্ত্রে শান দিচ্ছে। ইউক্রেন, সিরিয়াসহ বিভিন্ন ইস্যুতে বারবার রাশিয়া-আমেরিকা মুখোমুখী হয়েছে, এখনও মুখোমুখী দাঁড়িয়ে আছে। উত্তর কোরিয়ার সাথে যুক্তরাষ্ট্রের বিরোধ ক্রমশই উত্তাপ ছড়াচ্ছে। সামরিক হুমকির ভাষায় কথা বলছে পরমাণু অস্ত্রধারী উভয় দেশের রাষ্ট্রনায়ক। আবার উত্তর কোরিয়ার পরমাণু কর্মসূচির জবাব দিতে মরীয়া দক্ষিণ কোরিয়া। কিছুদিন আগে দক্ষিণ কোরিয়া ঘোষণা করেছে তারাও সবচাইতে শক্তিশালী ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করবে যেটা দিয়ে উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক কর্মসূচি ধ্বংস করে ফেলা সম্ভব। সমস্যা হচ্ছে, দক্ষিণ কোরিয়ার ঐ ক্ষেপণাস্ত্র যতক্ষণে উত্তর কোরিয়ায় আঘাত করবে, ততক্ষণে উত্তর কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্রও দক্ষিণ কোরিয়া বরাবর অর্ধেক পথ পেরিয়ে যাবে। আর তেমনটা হলে ভূরাজনৈতিক কারণে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়বে চীন, জাপান, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য শক্তিগুলোও। মাত্র একটি সিদ্ধান্ত ডেকে আনতে পারে ভয়াবহ পরমাণু যুদ্ধ।
ইদানীং সামরিক বাজেট বাড়ানোর কথা বলছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, যদিও বিশ্বের অন্য যে কোনো দেশের চাইতে সামরিক খাতে অনেক বেশি ব্যয় করে যুক্তরাষ্ট্র। বছরে প্রায় ৬০ হাজার কোটি ডলার। পৃথিবীময় ছড়িয়ে আছে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ঘাঁটি, সমুদ্রে ভাসছে নৌবহর। তা সত্ত্বেও আরও ১০ শতাংশ বাজেট বৃদ্ধির কারণ হিসেবে ট্রাম্প বলেছেন, এর মাধ্যমে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের শক্তি ও জাতীয় নিরাপত্তার ব্যাপারে বিশ্বকে একটি বার্তা দিতে চান। এই বার্তা যে শান্তির বার্তা নয়, তার প্রমাণ যুক্তরাষ্ট্রের বিমানবাহিনীকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে যাতে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পারমাণবিক বোমা হামলা চালানো যায়। জানা গেছে ১৯৯১ সালের পরে এই প্রথম দেশটিতে এমন প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
এদিকে রাশিয়াও বসে নেই। তারাও নতুন নতুন ক্ষেপণাস্ত্র বানাচ্ছে, যেগুলো পারমাণবিক বোমা বহনে সক্ষম। সম্প্রতি তারা একটি ক্ষেপনাস্ত্র বানিয়ে মিডিয়ায় সাড়া ফেলে দিয়েছে। দেশটির দাবি, ১১ হাজার কিলোমিটার পাল্লার এই আইসিবিএম যুক্তরাষ্ট্রের ‘প্রতিরক্ষাব্যবস্থা’ ভেঙে ফেলতে সক্ষম। একশ’ টনের বেশি ওজনের ওই ক্ষেপণাস্ত্র যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের সমপরিমাণ এলাকা ধ্বংস করতে সক্ষম। এর গতি শব্দের চেয়েও কয়েক গুণ বেশি। বিশ্বের পরাশক্তিগুলো যখন এমনি যুদ্ধসাজে সজ্জিত হচ্ছে, পৃথিবীর ভবিষ্যৎ নিয়ে বিশেষজ্ঞরা প্রতিনিয়ত আশঙ্কা ব্যক্ত করে যাচ্ছেন, তখন আমরা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের নিরাপত্তার জন্য কিছু ভাবছি কি?
আমরা কি ভেবেছি টালমাটাল এই বিশ্বপরিস্থিতে আমাদের ১৬ কোটি মানুষের সুরক্ষার কথাটি? গত বছরের শেষ প্রান্তে এসে মিয়ানমার সরকার বাংলাদেশের সাথে যে আচরণ করেছে তাকে সহজ ভাষায় বলতে হয়- ‘সামরিক উস্কানি’। দশ লক্ষ রোহিঙ্গাকে আমাদের দেশে ঠেলে দিয়েই তারা ক্ষান্ত নয়, ক্রমাগত বাংলাদেশের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ চালিয়ে যাচ্ছে, অন্তত ১৭ বার তাদের সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টার বাংলাদেশের আকাশসীমা লঙ্ঘন করেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, মিয়ানমার বাংলাদেশের সাথে একটা গোলোযোগ চায়। আরও অনেক কথাই বলা হচ্ছে যেগুলো বাংলাদেশের নিরাপত্তার দিকে প্রশ্নবোধক চিহ্ন ছুঁড়ে দেয়।
জঙ্গিবাদ মাথাচাড়া দেওয়ার জন্য উর্বর ভূমি এখন বাংলাদেশ। বিশেষত যখন মিয়ানমার থেকে নির্যাতিত হয়ে লক্ষ লক্ষ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে শরণার্থীর জীবনযাপন করছে। স্বভাবতই জঙ্গিবাদী মতাদর্শ প্রচারের জন্য এরচেয়ে অনুকূল পরিবেশ আর হয় না। এদিকে জঙ্গিবাদে মদদ যোগানো পশ্চিমারাদের নজর বহু আগে থেকেই বাংলাদেশের ভূখণ্ডে নিবদ্ধ রয়েছে। এর উপর চারদিকে শুরু হয়েছে বাঙালি বিতাড়ন কর্মসূচি। রাখাইন তো সারা পৃথিবীতে নাড়া ফেলে দিল। এখন নাড়া ফেলার অপেক্ষায় ভারতের আসাম, উত্তর প্রদেশ ইত্যাদি প্রদেশগুলো। এই প্রদেশগুলোতে বসবাসকারী বাংলাভাষী জনগোষ্ঠীকে অবৈধ অনুপ্রবেশকারী হিসেবে চিহ্নিত করার অপচেষ্টা শুরু হয়েছে। সেখানকার লক্ষ লক্ষ বাংলাভাষীর ভাগ্যে কী আছে কে জানে।
একটা সীমানা উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছি আমরা। কিন্তু তা অক্ষয়, অভেদ্য কিছু নয়। বিভিন্ন দেশে, বিভিন্ন রাজ্যে বাঙালিদের বিরুদ্ধে পরিকল্পিতভাবে সাম্প্রদায়িক উন্মাদনা ছড়ানো হচ্ছে, বোঝাই যাচ্ছে এটা কারো ‘মাস্টার প্ল্যান’ যার লক্ষ্যবস্তু বাংলাদেশ। ভেতরে ভেতরে সবাই বাংলাদেশের বিরুদ্ধে হাত পাকিয়ে নিচ্ছে, যদিও আমরা কোনোদিকে দৃষ্টিপাত ও কর্ণপাত করছি না। এই সুযোগ নিয়ে অদূর ভবিষ্যতে যদি দেশের সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে পড়েই যায় তাহলে দেশপ্রেমে উজ্জীবিত হয়ে ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে ঈমানী দায়িত্ব মনে করে কয়টা লোক জান দিতে প্রস্তুত থাকবে?
এই আশা করা বোকামী হবে যে, কোটি কোটি মানুষ ঘরের কপাট লাগিয়ে খাটের নিচে সিধিয়ে থাকবে, আর কয়েক লক্ষ মিলিটারি যুদ্ধ করে তাদের জানমাল রক্ষা করে দিবে। অতীতে তেমনটা ঘটে নাই। পুরো জাতি যদি মাতৃভূমির সুরক্ষায় ঝাঁপিয়ে পড়তে না পারে তাহলে কোনো বাহিনীর একার পক্ষে তা সম্ভব নয়। আর যদি পুরো জাতি সংগ্রামে অবতীর্ণ হয় তাহলে তাদেরকে ঠেকিয়ে রাখাও সম্ভব নয়। বড় বড় পরাশক্তিকেও কুপোকাত করার দৃষ্টান্ত আছে জাতির ঐক্য ও সাধারণ জনগণের সামরিক চরিত্রের কারণে। যেমন ভিয়েতনামে আমেরিকার মার খাওয়া, আফগানিস্তানে রাশিয়ার মার খাওয়া ইত্যাদি। আমাদের মুক্তিযুদ্ধেও তেমনটা হয়েছে। এই দৃষ্টান্তগুলোর কারণে বর্তমানে যে কোনো পরাশক্তি যে কোনো দেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার আগে জাতিটাকে আগাগোড়া দেখে নেয়। মানুষগুলো যোদ্ধা চরিত্রের কিনা, ঐক্যবদ্ধ কিনা, তাদের নেতৃত্ব অবিসংবাদিত কিনা। নিশ্চিন্ত হতে পারলেই কেবল আগ্রাসন চালায়। সেই দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে আমরা আসলে দেউলিয়া।
আজকে আমাদের না আছে যোদ্ধা চরিত্র, না আছে অবিসংবাদিত কোনো নেতৃত্ব, আর না আছে শক্তিশালী ঐক্য। ফলে কেউ যদি আমাদের বিরুদ্ধে সামরিক আগ্রাসন চালাতে চায় তবে এক মুহূর্তের জন্যও পিছন ফিরে তাকাতে হবে না। দেখা যাবে ধান্দাবাজ নেতারা সবার আগে দেশ ছেড়ে পালাবেন। বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে যারা বিদেশে পালাতে পারবেন না তারা চুপচাপ থেকে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে থাকবেন। উপাসনালয়ে দোয়া করা হবে যেন আল্লাহ আসমানি বালা নাজেল করে শত্রুকে ধ্বংস করে ফেলেন, কিন্তু নিজেরা কেউ এগিয়ে যাবে না। সরকারকে বেকায়দায় পড়তে দেখে বিরোধী দলগুলো হাঁফ ছেড়ে বাঁচবে। যুবসমাজ ঘরে বসে বসে ‘ক্ল্যাশ অব ক্ল্যানস’ খেলবে। শত্রুর বোমায় ঘরবাড়ি ধ্বংস না হওয়া পর্যন্ত কেউ ঘর ছাড়বে না, লড়াই তো করবেই না। তারপর উদ্বাস্তু হয়ে সমুদ্রে নৌকা ভাসাবে, আর নৌকাডুবি হলে সমুদ্রের নোনা পানি খেতে খেতে ভাববে এর চেয়ে তো যুদ্ধ করে মরাই ভালো ছিল!
কিন্তু না, উদ্বাস্তু হবার পরে হুঁশ ফিরলে লাভ নেই। সিদ্ধান্ত নিতে হবে এখনই। আমরা অবশ্যই যুদ্ধ-রক্তপাত চাইব না, তবে কোনো প্রকার আগ্রাসনকে ভয়ও পাব না। অন্যায়ের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে প্রস্তুত থাকব। কেউ অন্যায়ভাবে জাতির ক্ষতি করতে চাইলে পুরো জাতি একদেহ একপ্রাণ হয়ে লড়াই করব। আমাদের মধ্যে এই চেতনা জাগ্রত হলে, ১৬ কোটি মানুষ অন্যায়ের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ থাকলে এবং তাদেরকে সামরিক প্রশিক্ষণ দেওয়া থাকলে আমরা হব একটি ‘মাইট’। পৃথিবীর বুকে এমন শক্তি নেই তখন বাংলাদেশকে চোখ রাঙানোর সাহস পাবে!