হেযবুত তওহীদ

মানবতার কল্যাণে নিবেদিত

জীবকোষ ও মানবসমাজ

মুস্তাফিজ শিহাব
সমাজের মধ্যে অনৈক্য, অন্যায়, অবিচার, রক্তপাত ইত্যাদি যখন চরম আকারে বৃদ্ধি পায় তখন সমাজ ধ্বংসের প্রহর গুনতে থাকে। বর্তমান বিশ্ব সেইরকমই এক ধ্বংসযজ্ঞের প্রহর গুনছে। সমাজে বসবাসকৃত প্রতিটি মানুষ যারা ঐ সমাজেরই অংশ তারাও এই ধ্বংসের হাত থেকে রেহাই পাবে না। কিন্তু বর্তমানে সমাজের দিকে তাকালে দেখা যায় মানুষের মধ্যে এই সংকট নিয়ে কোন চিন্তুাই নেই। তারা এখনও আত্মকেন্দ্রিক হয়ে রয়েছে এবং স্বার্থপরের মতো নিজেদের আখের গুছানো নিয়ে ব্যস্ত। আমাদের দেশের মানুষগুলিও নিজেদের দেশ ও জাতির কথা ভুলে স্বার্থপরের ন্যায় আচরণ করছে। ধর্মের ভিত্তিতে, রাজনৈতিক কারণে নিজেদের মধ্যে বিভক্তির সৃষ্টি করছে। কিন্তু তাদের প্রত্যেকের জন্য এখন ঐক্যবদ্ধ হওয়া অত্যান্ত জরুরী। আসন্ন সংকট থেকে মুক্তির জন্য ঐক্যের কোন বিকল্প নেই।

এই বিষয়ে কোষ ও মানবদেহের উদাহারণ দেয়া যায়। কোষকে জীবদেহের একক বলা হয় অর্থাৎ প্রত্যেক জীবদেহ কোষ দিয়ে গঠিত। মানবসভ্যতার সাথে মানবদেহের কোষের মিল চমৎকার।
আমরা জানি শুক্রাণু এবং ডিম্বানুর মিলনের ফলে সর্বপ্রথম জাইগোট নামের কোষ উৎপন্ন হয়। পরবর্তিতে এই জাইগোট বিভাজিত হয়ে হয়ে একটি ছোট শিশুর দেহ ধারণ করে। মানব সভ্যাতর সূচনা হয়েছে এক আদম ও এক হাওয়া থেকে। পরবর্তিতে এই মানব সভ্যতা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেয়েছে। একটি মানবদেহের একাধিক কোষ মিলে গঠিত হয়ে কোষগুচ্ছ বা টিস্যু। একাধিক টিস্যু মিলে একটি অঙ্গ (Organ) গঠন করে।

মানবদেহের প্রতিটি কোষের কাজ, আকার ও বৈশিষ্ট্য ভিন্ন ভিন্ন। কোন কোষ দৈহিক বৃদ্ধি ঘটায়, কোন কোষ জননে সহায়তা করে, কোন কোষ খাদ্য ও শক্তি জমা রাখে, কোন কোষ প্রতিরক্ষা স্তরকে সাহায্য করে ইত্যাদি আরও অনেক কাজ কোষ করে থাকে। এই কোষগুলির মতো মানবসমাজের প্রতিটি মানুষ আলাদা আলাদা বিভিন্ন কাজে নিয়োজিত রয়েছে। কেউ কৃষক, কেউ শ্রমিক, কেউবা ডাক্তার। আবার প্রত্যেকের ধর্মও আলাদা আলাদা, কেউ হিন্দু, কেউ বৌদ্ধ, কেউ বা মুসলিম। কিন্তু কোষগুলির কাজ ও ধর্ম ভিন্ন ভিন্ন হলেও তাদের সবার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য একটিই। আর তা হলো দেহকে সুরক্ষিত রাখা এবং দেহেকে সচল ও জীবিত রাখা এবং জীবের সামগ্রিক উন্নতি সাধন। এই কাজের জন্য কোষগুলি সর্বদা তৎপর থাকে। এই কাজ করার জন্য অনেক সময় কোষগুলি স্বেচ্ছায় মৃত্যুবরণ করে, কখনওবা অন্য কোষকে ভক্ষণ করে অথবা ধ্বংস করে দেয়, অনেক সময় শক্তি ও তাপের তারতম্য ঘটিয়ে অর্থাৎ যে সকল কোষের শক্তি ও তাপ বেশি দরকার তাদের শক্তি ও তাপ দিয়ে অন্য কোষ কম শক্তি ও তাপ নিয়ে ভারসাম্য বজায় রাখে। তারা এই সকল কাজই করে একটি জীবের সামগ্রিক উন্নতির জন্য।
একবার ভেবে দেখুন তো, যদি এই কোষগুলি পারস্পারিক সহযোগিতার মাধ্যমে বসবাস না করে শুধু নিজেদের নিয়ে চিন্তা করতো? অন্য কোষকে সহায়তা না করে, তাদের সাথে একযোগে কাজ না করে যদি শুধু নিজের চিন্তায় চিন্তিত হতো তবে কি আপনার দেহ টিকতে পারতো? পারতো না! তখন আপনার আমার এবং সমস্ত জীবের ধ্বংস হতো সুনিশ্চিত।

কিন্তু আমরা সবাই কোষের মতো ভিন্ন ভিন্ন কাজ করলেও আমরা কোষের মতো ঐক্যবদ্ধ ও নিঃস্বার্থ নই বরং আমরা স্বার্থপর, আত্মকেন্দ্রিকতাকে গ্রহণ করেছি। আমরা আমাদের জাতি ও দেশকে নিয়ে চিন্তিত নই। আমরা শুধু আমাদের ফায়দা দেখছি এবং দেশ ও জাতির জন্য কোন চিন্তাই করছি না। কোষের মতো আমাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যও একটিই হওয়া উচিত আর তা হচ্ছে ঐক্যবদ্ধভাবে দেশ ও জাতির উন্নতি সাধন। জাতিকে শ্রেষ্ঠত্বের সর্বোচ্চ শিখরে পৌঁছানোর প্রচেষ্টা।

আমরা রাজনৈতিকভাবে বিভক্ত হয়ে রয়েছি, আমরা ধর্মের ভিত্তিতে, ফেরকা মাজহাব ইত্যাদির কারণে একই দেশের, একই জাতির অংশ হয়েও একজন আরেকজনের সাথে বিবাদ সংঘাত করেই চলেছি। এতে কোন লাভ তো হচ্ছেই না বরং আমাদের দেশ ও জাতির ক্ষতি হচ্ছে। আমরা স্বার্থপরের মতো ভাবছি আমাদের পকেট গরম হচ্ছে, সাময়িক সুখ মিলছে কিন্তু আমরা ভুলে যাচ্ছি যে দেশ ও জাতির অস্তিত্ব না থাকলে আমাদের কোন অস্তিত্ব থাকবে না। জীবদেহের কোষ এই কথা জানে তাই সে সবকিছুর চিন্তা বাদ দিয়ে সবার আগে জীবদেহের উন্নতি সাধনে নিজেকে নিয়োজিত করে।

আমাদেরও এখন কোষের ন্যায় হতে হবে। নিজের নিজের স্বার্থকে না দেখে সবার আগে দেশ ও জাতিকে নিয়ে ভাবতে হবে। ইস্পাত কঠিন ঐক্যবদ্ধ হয়ে বর্তমানের সংকটময় পরিস্থিতি এবং আসন্ন সংকট থেকে জাতিকে উদ্ধার করার আপ্রাণ প্রচেষ্টা করতে হবে। মনে রাখতে হবে, আমরা সবাই এই মাটির সন্তান। এই বাংলা মায়ের কোল যতদিন থাকবে ততদিন আমরা সুরক্ষিত। এই বাংলাকে রক্ষার জন্য এখন যদি ঐক্যবদ্ধ না হই তবে সব শেষ হয়ে যাবে। এই জাতি একটি দেহের ন্যায় এবং আপনি আমি আমরা সবাই সেই দেহের একেকটি কোষ। তাই আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টাই পারে জাতিকে উন্নতির দিকে নিয়ে যেতে ও আসন্ন সংকট থেকে মুক্ত করতে। মনে রাখবেন, আপনি এই জাতির ঠিক ততটাই গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ যতটা দেহের জন্য কোষ।

[লেখক: সহকারী সাহিত্য সম্পাদক, হেযবুত তওহীদ]

লেখাটি শেয়ার করুন আপনার প্রিয়জনের সাথে

Email
Facebook
Twitter
Skype
WhatsApp
সার্চ করুন

যুক্ত হোন আমাদের ফেসবুক পেজের সাথে...