মাননীয় এমামুযযামানের লেখা থেকে
১৪০০ বছর আগে আল্লাহর শেষ রসুল আমাদের এই সময় সম্বন্ধে যে ভবিষ্যদ্বাণীগুলি কোরে গেছেন আজ তা অক্ষরে অক্ষরে সত্য হোচ্ছে। পৃথিবীতে একটা টুকরো মাটি বা পানি নেই যা দাজ্জালের (ইহুদি-খ্রিস্টান যান্ত্রিক সভ্যতার, [Judio-Christian Technological Civilization) শক্তি ও প্রভাব বলয়ের বাইরে (মুসনাদে আহমদ, হাকীম, দারউন নশুর, বোখারী ও মোসলেম)। মানবজাতির কাছে দাজ্জাল দাবি কোরছে যে আল্লাহকে বাদ দিয়ে তারা যেন তাকে রব (প্রভু, প্রতিপালক) বোলে মেনে নেয়, অর্থাৎ আল্লাহর সার্বভৌমত্বকে পরিত্যাগ কোরে মানুষের সার্বভৌমত্বকে মেনে নেয়। মানুষের সার্বভৌমত্বের যে কয়টি ব্যবস্থা আছে অর্থাৎ রাজতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, সাম্যবাদ, একনায়কতন্ত্র ইত্যাদিকে পরাজিত কোরে বর্তমানে ধনতান্ত্রিক গণতন্ত্রই জয়ী এবং এর সার্বভৌমত্বই মেনে নেয়ার দাবি দাজ্জালের। দাজ্জালের এই দাবির কাছে মানবজাতি আজ আত্মসমর্পণ কোরেছে। যে ইসলামের ভিত্তিই হোচ্ছে আল্লাহর সার্বভৌমত্ব (তওহীদ), যে সার্বভৌমত্ব ছাড়া ইসলামই নেই, সেই ইসলামের দাবিদার, ‘মোসলেম’ বোলে পরিচিত জনসংখ্যাটিও ভুল আকিদার কারণে প্রায় সম্পূর্ণটাই ধনতান্ত্রিক গণতন্ত্রের সাবভৌমত্ব মেনে নিয়েছে, অর্থাৎ দাজ্জালের পায়ে সাজদায় প্রণত হোয়েছে। দাজ্জালের শিক্ষা-ব্যবস্থায় শিক্ষিতরা তো বটেই, দাজ্জালের প্রতিষ্ঠিত মাদ্রাসা ইত্যাদিতে, যেখানে দাজ্জালের তৈরি করা ইসলামের আলেম ওলামা, আল্লামা, মাশায়েখরাও দাজ্জালের দেয়া মানুষের সার্বভৌমত্বকে স্বীকার কোরে নিয়েও ভাবছেন তারা মো’মেন, মোসলেমই আছেন।
এই মোসলেম জনসংখ্যার একটি অতি ক্ষুদ্র অংশ দাজ্জালের সার্বভৌমত্বকে অস্বীকার করার চেষ্টা কোরছে যারা বর্তমান সময়ে জঙ্গি হিসাবে পরিচিত। এই ক্ষুদ্র অংশটিরও ইসলাম সম্বন্ধে সঠিক আকিদা নেই। মহান আল্লাহ মানুষ সৃষ্টি কোরে এই পৃথিবীতে তাকে তাঁর খলিফা, প্রতিনিধি নিযুক্ত কোরে (কোরআন- সুরা বাকারা, আয়াত ৩০), মানুষের মধ্যে তাঁর নিজের আত্মা ফুঁকে দিয়ে (কোরআন-সুরা হেজর, আয়াত ২৯; সুরা সাজদা, আয়াত ৯; সুরা সা’দ, আয়াত ৭২), তাকে পৃথিবীতে পাঠিয়ে (কোরআন-সুরা বাকারা, আয়াত ৩৬), মানুষের দেহ-আত্মার মধ্যে এবলিসকে প্রবেশ করার অনুমতি দিয়ে (কোরআন-সুরা বনী ইসরাঈল ৬৪), তারপর আবার নবী-রসুল পাঠিয়ে মানুষকে হেদায়াহ অর্থাৎ দিক নির্দেশনা দিলেন (কোরআন-সুরা বাকারা, আয়াত ৩৮)। এখন মানুষ হিসাবে তার উদ্দেশ্য কী, এই দীনের উদ্দেশ্য কী এক কথায় ইসলাম কী এ সম্বন্ধে তাদের সঠিক আকিদা (Comprehensive Concept) নেই। অথচ তারা আল্লাহকে, তাঁর রসুলকে ও দীনুল ইসলামকে প্রাণ দিয়ে ভালবাসেন, আর তাই তারা দাজ্জালের দাবি গণতন্ত্রের সার্বভৌমত্বকে মানতে রাজী নন, তারা চান পৃথিবীতে আল্লাহর সত্যদীন মানুষের জীবনে প্রতিষ্ঠিত হোক। দুর্ভাগ্যক্রমে এরা জানেন না সত্যদীন (দীনুল হক) কী, এবং এর প্রতিষ্ঠার সঠিক প্রক্রিয়া কী। এরা খ্রিস্টানদের প্রতিষ্ঠিত মাদ্রাসায় খ্রিস্টানদের তৈরি করা এক প্রাণহীন ইসলামকে প্রতিষ্ঠার জন্য ভুল পথে, ভুল প্রক্রিয়ায় চেষ্টা কোরছেন। দাজ্জালের পৃথিবীব্যাপী মহাশক্তির বিরুদ্ধে এরা অসহায়। দাজ্জালের প্রযুক্তি (Technology), অসংখ্য বোমারু বিমান, অসংখ্য ট্যাঙ্ক, যুদ্ধজাহাজের বিরুদ্ধে তাদের কিছুই নেই। তাই তারা মরিয়া হোয়ে এখানে ওখানে বোমা মেরে, পর্যটন কেন্দ্রে হামলা কোরে দাজ্জালকে প্রতিহত কোরতে চাইছেন। আল্লাহ, রসুল ও ইসলামের জন্য এরা এমন উৎসর্গীকৃত যে তারা শরীরে বোমা বেঁধে তা ফাটিয়ে শত্র“ হত্যা কোরতে চেষ্টা কোরছেন। তারা বুঝছেন না দাজ্জালকে প্রতিরোধ, সত্যদীনকে প্রতিষ্ঠার এগুলো সঠিক পথ নয়, সমস্ত পৃথিবী যার হাতে, ‘মোসলেম’ নামসর্বস্ব জনসংখ্যাসহ সমস্ত মানবজাতি যার পায়ে সাজদায় প্রণত সে মহাশক্তিধর দানবের এতে কিছুই হবে না। কিছু তো হবে না-ই বরং তার লাভ হবে এবং হোচ্ছে। এদের ‘সন্ত্রাসী’ (Terrorist), ‘মৌলবাদী’ (Fundamentalist), ‘চরমপন্থী’ (Extremist), ‘জঙ্গি’ (Militant) ইত্যাদি বহুবিধ নামে আখ্যায়িত কোরে, ‘মোসলেম’ জনসংখ্যাসহ সমস্ত মানবজাতিকে তাদের বিরুদ্ধে ক্ষিপ্ত কোরে দিয়েছে। এই মোসলেম জনসংখ্যার মহা-মুসুল্লীগণও যারা দাজ্জালের পায়ে সাজদায় পোড়ে আছেন তারা এই ‘সন্ত্রাসীদের’ বিরুদ্ধে, তাদের তারা ঘৃণা করেন।
দাজ্জালের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো এই অতি ক্ষুদ্র দলকে বুঝতে হবে দাজ্জালকে প্রতিরোধের এই পথ ভুল। তাদের বুঝতে হবে ইসলাম অর্থাৎ সত্যদীন (দীনুল হক) কী এবং এর প্রতিষ্ঠার সঠিক প্রক্রিয়া কী। তাদের বুঝতে হবে এবং উপলব্ধি কোরতে হবে যে পৃথিবীতে সত্যদীন প্রতিষ্ঠার একমাত্র সঠিক নীতি, পথ ও প্রক্রিয়া হোচ্ছে শুধু সেইটা যেটা আল্লাহর রসুল নিজে কোরেছেন এবং আমাদের শিখিয়ে গেছেন। ঐ পথ ছাড়া আর কোনও পথে, কোনও প্রক্রিয়ায় তারা আল্লাহর সাহায্য পাবেন না, তারা সফলও হবেন না এবং হোচ্ছেন না।
দাজ্জালের রব হবার দাবির বিরুদ্ধে আজ যে ক্ষুদ্র জনসমষ্টি দাঁড়িয়েছে, যাদের দাজ্জাল নাম দিয়েছে ‘সন্ত্রাসী’, তারা পৃথিবীর কোথাও ঐ মহাশক্তিধর দানবের সাথে পেরে উঠছেন না। কারণ তাদের জন্য আল্লাহর কোন সাহায্য নেই। আল্লাহর সাহায্য নেই তার প্রধান কারণ দু’টো। প্রথমত- যে ইসলামটাকে প্রতিষ্ঠার জন্য তারা সংগ্রাম কোরছেন সেটা আল্লাহ-রসুলের প্রকৃত ইসলাম নয়, সেটা পূর্বেই বোলেছি। সেটা কিভাবে? প্রধান কারণ হোল তারা আল্লাহর সার্বভৌমত্বের প্রকৃত অর্থ বোঝেন না, তারা ‘লা এলাহা এল্লা আল্লাহ’ এই কলেমার এলাহ শব্দের ভুল অর্থ করেন। তারা এলাহ শব্দের অর্থ করেন মা’বুদ অর্থাৎ যাকে উপাসনা করা হয়। এলাহ শব্দের প্রকৃত অর্থ হোল যার হুকুম, আদেশ, নির্দেশ শুনতে ও পালন কোরতে হবে, আনুগত্য কোরতে হবে অর্থাৎ সার্বভৌমত্ব। আর মা’বুদ শব্দের প্রচলিত অর্থ হোল- যাকে উপাসনা করা হয়, সেখানে সামগ্রিক জীবনে যার আদেশ নির্দেশ পালন করার, আনুগত্য করার প্রয়োজন নেই। এই ভুল অর্থের পরিণাম আজ এই হোয়েছে যে সমস্ত মানবজাতি, এই তথাকথিত ‘মোসলেম’ জনসংখ্যাসহ, মহাসমারোহে বিরাট বিরাট কারুকার্যময় অতি সুদৃশ্য মসজিদে, মন্দিরে, গীর্জায়, সিনাগগে ও প্যাগোডায় আল্লাহর উপাসনা করে, এবাদত করে, কিন্তু তাদের সমষ্টিগত জীবনে, আইন-কানুন, দণ্ডবিধি, বিচার ফায়সালায়, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক জীবনে আল্লাহকে, তাঁর সার্বভৌমত্বকে অস্বীকার কোরে মানুষের সার্বভৌমত্বের আনুগত্য করে, আর দাজ্জাল মানবজাতির কাছে ঠিক এটাই চায়। যে কলেমার ভিত্তির উপর দীনুল হক অর্থাৎ সত্য জীবন-ব্যবস্থার এমারত দাঁড়িয়ে আছে সেই কলেমার ভুল অর্থের আরেক পরিণাম এই হোয়েছে যে প্রকৃত, সঠিক ইসলাম আজ হারিয়ে গেছে এবং বর্তমানের ‘লা মা’বুদ এল্লা আল্লাহ’ অর্থাৎ ‘আল্লাহ ছাড়া কোন উপাস্য নেই’ কলেমার বিকৃত ইসলামটাকেই পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠার চেষ্টা ঐ ক্ষুদ্র দলটি কোরে যাচ্ছেন, কোথাও সফল হোচ্ছেন না এবং হবেনও না কারণ আল্লাহ বিকৃত ইসলামকে প্রতিষ্ঠার চেষ্টায় সাহায্য কোরবেন না। কাজেই যে ইসলামটাকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য সংগ্রাম কোরছেন এবং যে সংগ্রামে তাদের জানমাল উৎসর্গ কোরছেন সেটা প্রকৃত ইসলামই নয়। শুধু যে প্রকৃত ইসলামই নয় তা-ই নয়, সেটার আকিদা এবং পথ রসুলের মাধ্যমে প্রেরিত ইসলামের একেবারে বিপরীত।
দ্বিতীয়ত, তারা যে প্রক্রিয়ায় ইসলাম প্রতিষ্ঠার চেষ্টা কোরছে, অর্থাৎ তরিকা বা কর্মসূচি সেটাও রসুলের আল্লাহ-রসুলের প্রদর্শিত পদ্ধতি নয়। মহান আল্লাহ তাঁর সত্যদীনের প্রকৃত রূপ এবং সেটিকে মানবজাতির জীবনে প্রতিষ্ঠা করার পদ্ধতি ও প্রক্রিয়া আল্লাহ কেবলমাত্র হেযবুত তওহীদকেই দান কোরেছেন। হেযবুত তওহীদ মানবজাতিকে সেই সত্যদীন গ্রহণ কোরে প্রকৃত কর্মসূচির অধীনে এসে দাজ্জালের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করার আহ্বান জানাচ্ছে।