রাকীব আল হাসান
আল্লাহর রসুল আখেরী যামানা সম্পর্কে বলেছেন, এমন সময় আসবে যখন- (১) ইসলাম শুধু নাম থাকবে, (২) কোর’আন শুধু অক্ষর থাকবে, (৩) মসজিদসমূহ জাঁকজমকপূর্ণ ও লোকে লোকারণ্য হবে কিন্তু সেখানে হেদায়াত থাকবে না, (৪) আমার উম্মাহর আলেমরা হবে আসমানের নিচে সবচেয়ে নিকৃষ্ট জীব, (৫) তাদের তৈরি ফেতনা তাদের ওপর পতিত হবে। [হযরত আলী (রা:) থেকে বায়হাকী, মেশকাত]
কেন আলেমরা সর্বনিকৃষ্ট জীব তা অতি সংক্ষেপে তুলে ধরছি। প্রকৃত আলেম ও প্রতারক আলেম সম্পর্কে আল্লাহ ও তাঁর রসুলের অনেক উক্তি কোর’আন ও হাদিসে পাওয়া যায়। প্রকৃত আলেমদেরকে আল্লাহর রসুল নিকৃষ্ট জীব বলেন নি, বলেছেন প্রতারক আলেমদেরকে। আমরা প্রকৃত আলেম বলতে বুঝব আল্লাহর রসুলের আসহাবগণকে যাদেরকে স্বয়ং রসুল নিজে ইসলাম শিখিয়ে গেছেন, ইসলামের জ্ঞান তাদের চেয়ে বেশি আর কারও থাকা সম্ভব নয়। রসুলের আসহাবগণের পরবর্তীতে যারা আলেম হতে চান তাদের চরিত্র ও কাজ আসহাবদের মতোই হতে হবে। তা না হলে যত বড় টাইটেলধারীই হোন না কেন, যত বড় আলখেল্লাধারীই হোন না কেন তারা প্রকৃত আলেম নন। সুতরাং
১। প্রকৃত যারা আলেম তারা কখনও অহঙ্কারী হবেন না, কারণ অহঙ্কার কেবলমাত্র আল্লাহরই সাজে। প্রকৃত আলেমরা তাদের সঞ্চিত জ্ঞানকে খুবই সামান্য মনে করবেন এবং সর্বদা অতৃপ্ত থাকবেন। তারা নিজেদেরকে কখনোই আলেম বলে মনে করবেন না, দাবি বা প্রচার করা তো দূরের কথা।
২। তারা আল্লাহর দীন বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করবেন না। এই জ্ঞান অন্যকে দেওয়া তারা নিজেদের ঈমানী দায়িত্ব বলে মনে করবেন। আলী (রা.) কে রসুলাল্লাহ ‘জ্ঞান-নগরীর দ্বার’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি কি আজকের আলেমদের মতো তাঁর জ্ঞান বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন? জীবিকা অর্জনের জন্য তিনি কুলির কাজ করতেন এবং যাঁতার চাক্কি পিষে যবের আটা প্রস্তুত করতে গিয়ে তাঁর স্ত্রী জান্নাতের রানী মা ফাতেমার (রা.) পবিত্র হাতে কড়া পড়ে গিয়েছিল। এই জ্ঞানের দুয়ার আলীকেই (রা.) আমরা দেখি সিংহের বিক্রমে কাফেরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে। তার অনন্য সাহসিকতা ও বীরত্বের জন্য রসুলাল্লাহ তাঁকে আরেকটি উপাধি দিয়েছিলেন- সেটা হলো আসাদুল্লাহ বা আল্লাহর সিংহ। সুতরাং যিনি দীনের যত বড় আলেম হবেন তিনি তত বড় সংগ্রামী, যোদ্ধা হবেন অর্থাৎ আল্লাহর সার্বভৌমত্বের রক্ষক হবেন।
৩। প্রকৃত আলেম তার জ্ঞানকে মানবতার কল্যাণে নি:স্বার্থভাবে প্রচার করে যান। তার শিক্ষায় একটিও বিষয় থাকেনা বা থাকতে পারে না যা আল্লাহ বা তার রসুলের শিক্ষার বিপরীত। আল্লাহ ধর্মব্যবসা হারাম করেছেন, দীনের কাজের পার্থিব মূল্য গ্রহণকে তিনি আগুন ভক্ষণের সঙ্গে তুলনা করেছেন। যারা এই কাজ করে তাদেরকে তিনি বলেছেন পথভ্রষ্ট, অপবিত্র, জাহান্নামী (সুরা বাকারা- ১৭৪)। তাদের পেছনে দাঁড়াতে মুমিনদেরকে নিষেধ করেছেন (সুরা ইয়াসীন ২১)। অথচ আজকের সমাজের প্রতিষ্ঠিত আলেমগণ জীবিকা নির্বাহের মাধ্যম হিসেবেই দীন বিক্রি করাকেই বেছে নিয়েছেন। এরা আল্লাহর কোর’আনের আয়াতের পরিপন্থী কাজ করছেন এবং নিজেদের আলেম বলে দাবি করে অর্থের বিনিময়ে নামাজ পড়িয়ে, মুর্দা দাফন করে, খতম পড়ে, ওয়াজ মাহফিল, খুতবা দিয়ে বেড়াচ্ছেন। এদেরকেই আল্লাহর রসুল আসমানের নিচে সর্ব নিকৃষ্ট জীব বলেছেন।
৪। আল্লাহ কোর’আনে বলেছেন, তোমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে আমার রজ্জুকে ধরে রাখ। আজ এই নামধারী আলেমরা ইসলামকে নানান মাজহাব, ফেরকা, তরীকা, খানকা, পীরের অনুসারী এবং হাজারো ভাগে ভাগ করেছেন, সাধারণ মানুষ এই সব মাজহাব ফেরকা আবিষ্কার করে নি। এই কাজ করে নামধারী আলেমরা জাতিকে মেরে ফেলেছেন। প্রকৃত আলেমরা কখনই ইসলামকে এই ভাবে ধ্বংস করতে পারেন না।
৫। বর্তমানের আলেম দাবিদাররা যে মাদ্রাসা থেকে ইসলাম শিখে আলেম খেতাব পাচ্ছেন সেই মাদ্রাসাগুলি ব্রিটিশ খ্রিস্টানদের ষড়যন্ত্রের ফসল। ঔপনিবেশিক যুগে খ্রিস্টান পণ্ডিতরা বহু গবেষণা করে তওহীদহীন ও সংগ্রামহীন বিকৃত একটি ইসলাম তৈরি করে এবং ১৪৬ বছর ধরে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত মাদ্রাসায় সেই ইসলামটি এই জাতিকে শেখায়। সেই বিকৃত ইসলামটি বিক্রি করেই খাচ্ছেন এই আলেম-পুরোহিত শ্রেণিটি। সেই আত্মাহীন, ভারসাম্যহীন ইসলামের শিক্ষা গ্রহণ করে পদে পদে ফতোয়া দিয়ে, মতবাদ সৃষ্টি করে, জাতির মধ্যে অনৈক্য সৃষ্টি করে চলছে এই পরনির্ভরশীল পুরোহিত শ্রেণিটি।
আমরা চাই এ জাতির সত্যনিষ্ঠ আলেম ওলামাদের কালঘুম ভাঙুক। তারাও আল্লাহর প্রকৃত তওহীদের পতাকাতলে ঐক্যবদ্ধ হোক।