মুস্তাফিজ শিহাব:
২০০৬-২০০৭ এর কথা। তখন বিটিভিতে একটি কার্টুন দেখতাম। কার্টুনটির নাম ছিল ক্যাপ্টেন প্ল্যানেট। সেখানে পাঁচ বন্ধুর হাতে পাঁচটি আংটি ছিল। তারা এককভাবে শক্তিশালী হলেও যখন বিশেষ কোনো সংকট আসতো যা থেকে নিজেদের শক্তিতে উত্তরণ পাওয়া সম্ভব হতো না, তখন তারা পাঁচটি আংটিকে একত্র করত এবং তাদের আংটিগুলোর সম্মিলিত শক্তির মাধ্যমে ক্যাপ্টেন প্ল্যানেটের আবির্ভাব ঘটতো। তারপর? তারপর সব সমস্যার সমাধান। একটি সুন্দর সমাপ্তি। এই পাঁচ জনের একজনও যদি না থাকতো বা তাদের আংটি যদি না থাকতো তবে কিন্তু ক্যাপটেন প্লানেটের মতো সুপার পাওয়ারের আবির্ভাব সম্ভব হতো না।
ঐক্যের শক্তি সম্পর্কে সবাই আপ্তবাক্য শুনে থাকলেও কার্যক্ষেত্রে এ বিষয়টিকে তারা সর্বত্র প্রাধান্য দিতে চায় না। স্বার্থচিন্তা ও আত্মকেন্দ্রিকতা তাদের বাধা দেয়। অন্তর্গত অহংকার তাদেরকে ঐক্যবদ্ধ হতে দেয় না। কিন্তু সমাজে প্রতিটি স্তরে এমনকি প্রাণীজগতেও ঐক্য সব থেকে মূল্যবান। একটি সিংহ একা একটি মোষকে শিকার করার সাহস সচরাচর করে না কিন্তু কয়েকটি সিংহ ঐক্যবদ্ধ হলে তারা খুব সহজেই শিকার লাভ করে। অপরদিকে চিতাবাঘ ঐক্যবদ্ধ হতে পারে না বলে অনেকদিন পর্যন্তও না খেয়ে থাকতে হয় তাদের। ছোট ছোট শিকারেই নিজেদের উদরপূর্তি করতে হয়।
আমরা যদি বর্তমান বিশ্বের দিকে তাকাই তবে দেখাবো বর্তমান বিশ্বের সব থেকে ভালো অবস্থানে রয়েছে ইহুদী জাতি। ইহুদী জাতি দীর্ঘ সংগ্রামের পর ঐক্যকে গ্রহণ করেছে। পৃথিবীতে মাত্র দেড় কোটি ইহুদি কিন্তু তাদেও সবার লক্ষ্য এক, উদ্দেশ্য এক। তারা সবই ঐক্যবদ্ধ হয়ে সমগ্র দুনিয়াকে নিজেদের প্রভাব দ্বারা পরিচালিত করছে। তাদের ঐক্যের শক্তিকে শুধু উপলব্ধিই করেনি ধারণও করেছে। এরই ফলে তারা নিজেদের স্বার্থের বদলে জাতির স্বার্থকে সর্বদা অগ্রাধিকার দিয়ে আসছে। ইহুদি জাতি আজ যে ঈর্ষান্বিত পর্যায়ে যেতে পেরেছে তার মূল কারণই হল তাদের ঐক্য।
আসুন এখন মুসলিম জাতির দিকে একটু দৃষ্টি নিক্ষেপ করি। একশত ষাট কোটির এক বৃহৎ জাতি বর্তমানের মুসলিমরা। মুসলিমদের আলাদা আলাদা ৫৭ টি রাষ্ট্র রয়েছে। কিন্তু তাদের অবস্থা কী রূপ? তারা অন্যান্য সকল জাতির কাছে মার খাচ্ছে। তাদের গোলাম হয়ে রয়েছে। এমনকি নিজেরা নিজেরাও দ্বন্দ সংঘাতে লিপ্ত। ইরাক ইরানের সাথে, সৌদি ইয়েমেনের সাথে গোলযোগে লিপ্ত। তারা তাদের স্বার্থচিন্তা ও অহংকারের বশবর্তী হয়ে ঐক্যকে নিতে পারছে না। ইহুদিদের দেখছে কিন্তু তাদের থেকে শিখতে পারছে না। তারা নিজেদের মধ্যকার অনৈক্যেও জন্য সবচেয়ে নিকৃষ্টতর জাতিতে পরিণত হয়েছে। দেড় কোটি ইহুদিরা ঐক্যের বন্ধনের আবদ্ধ হয়ে একটি লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে নিজেদের সব থেকে উপরের অবস্থানে নিতে সক্ষম হয়েছে কিন্তু একশ ষাট কোটির মুসলিম জাতি এখনও নিজেদের স্বার্থ ও অহংকারের জন্য কুকুরের মতো কামড়া কামড়ি করছে।
এখন সময় ঐক্যের, এখন সময় সমৃদ্ধির। ইহুদি জাতি মার খেয়ে, নির্যাতিত হয়ে, দেশ থেকে বিতাড়িত হয়ে এরপর নিজেদের ব্যক্তি অহমিকা, স্বার্থের উপরে জাত্যবোধকে প্রাধান্য দিয়েছে বলেই তারা এখন আবার একটি সম্মানিত ও শক্তিশালী জাতিতে পরিণত হতে পেরেছে। কিন্তু তারা সত্যের উপর দ-ায়মান হয় নি, তারা দাঁড়িয়েছে শক্তির উপর। শক্তি তো পশুরও থাকে। মানুষ যখন সত্যকে বাদ দিয়ে শক্তিকে আশ্রয় করে তখন তার সাথে পশুর কোনো পার্থক্য থাকে না।
মুসলিমদের উপরও শত শত বছর ধরে আল্লাহর গজব ও লানত অব্যাহত আছে। সে কারণেই আজকে আমাদের এই দুর্দশা। এখন যদি আমরা এই দুর্দশা থেকে মুক্তি পেতে চাই তাহলে আমাদেরকে প্রকৃত উম্মতে মোহাম্মদীর ন্যায় ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। সেই ঐক্যটি হবে সত্যের ভিত্তিতে, কলেমার ভিত্তিতে। কারণ এই মুসলিম জনগোষ্ঠীর সকলেই একই কলেমা পাঠ করে থাকে এবং এই কলেমাই হতে পারে তাদের একমাত্র মুক্তির দিশারি। কলেমার তাৎপর্য হচ্ছে এই অঙ্গীকারে আবদ্ধ হওয়া যে ‘আমরা সবাই এক আল্লাহর হুকুম ছাড়া আর কারো হুকুম মানবো না’। এই একটি কথার উপর ঐক্যবদ্ধ হতে পারি তবে আমরাও পরিণত হবো এক অপ্রতিদ্বন্দ্বী জাতিতে। আমরাই হবো সুপার পাওয়ার। আমাদের সাথে কেউ অন্যায় করা দূরে থাক, চোখ তুলে তাকানোরও সাহস পাবে না।
[লেখক: সহকারী সাহিত্য সম্পাদক, হেযবুত তওহীদ]