মোহাম্মদ আসাদ আলী:
ধরুন আপনাকে চোখ বেঁধে স্টেশনে দাঁড়ানো ট্রেনের একটা বগী অর্থাৎ কামরায় নিয়ে যেয়ে আপনার চোখের বাঁধন খুলে দিলাম। তারপর আপনাকে বোঝালাম এই যে আপনাকে যেখানে নিয়ে এসেছি এটা একটা বসবাস করার ঘর। এই দেখুন এই যে গদীমোড়া বিছানা, এ যে টেবিল, ইলেকট্রিক বাতি, পাখা, মাথার কাছে পড়ার বাতি, দরজা, জানালা, এই যে পাশেই টয়লেট, পেশাব-পায়াখানা-হাতমুখ ধোয়ার বেসিন, পানি, গান শোনার জন্য টেপ রেকর্ডার ইত্যাদি বসবাস করার জন্য প্রয়োজনীয় সব কিছুই আছে। সুতরাং আপনি এখানে সুখে বসবাস করুন।
অতি শক্তিশালী যুক্তি। আপনি যদি ঐ যুক্তি শুনে বিশ্বাস করেন যে ট্রেনের ঐ কামরা সত্যিই বসবাস করার জন্য তৈরি করা হয়েছে তবে ট্রেন স¤পর্কে আপনার আকীদা ভুল হলো অর্থাৎ ঐ কামরার উদ্দেশ্য সম্বন্ধে ধারণা (ঈড়সঢ়ৎবযবহংরাব ঈড়হপবঢ়ঃ) ভুল হলো। বসবাস করার সমস্ত আয়োজন ওখানে থাকা সত্ত্বেও ওটার উদ্দেশ্য বসবাস করার জন্য নয়, ওটার উদ্দেশ্য আপনাকে সিলেট বা চট্টগ্রাম বা দিনাজপুর নিয়ে যাওয়া। আপনি শুধু ওটাকে আংশিকভাবে দেখছেন বলে বুঝতে পারছেন না ওর আসল উদ্দেশ্য কী। আপনি কামরাটা থেকে বাইরে বেরিয়ে এসে খানিকটা দূরে থেকে স¤পূর্ণ দৃষ্টিতে কামরাটাকে দেখুন। এবার আপনি দেখতে পাবেন ঐ কামরার নিচে চাকা লাগানো আছে অর্থাৎ ওটার চলার জন্য। তারপর আরও একটু দূরে যেয়ে দেখলে স¤পূর্ণ ট্রেন, সেটার ইনঞ্জিন, রেলের লাইন সব চোখে পড়বে। এইবার আপনি আপনার বুদ্ধি, যুক্তি, ব্যবহার করলেই বুঝতে পারবেন যে বসবাস করার সব রকম ব্যবস্থা থাকলেও ঐ কামরার উদ্দেশ্য তা নয়, ওর আসল উদ্দেশ্য হলো আপনাকে দূরে কোনো গন্তব্য স্থানে নিয়ে যাওয়া। ট্রেন স¤পর্কে এইবার আপনার আকীদা (ঈড়হপবঢ়ঃরড়হ) সঠিক হলো।
অর্থাৎ সামগ্রিকভাবে, একবারে স¤পূর্ণভাবে কোন বস্তু, পদার্থ বা বিষয়কে না দেখে ওগুলোর অংশবিশেষকে দেখে ওগুলো সম্বন্ধে সঠিক আকীদা করা যায় না। ইসলামের ক্ষেত্রেও এটি সত্য। নাট-বল্টু দেখে যেমন কখনও বলা যাবে না যে ওটা কেমন ইঞ্জিনের অংশ, তেমনি কোন জীবন-ব্যবস্থা, দীনের, ইসলামের কোন খ-াংশ দেখে দেখে বলা যাবে না ওর সমগ্র রূপটি কী, উদ্দেশ্য কী।
আমাদের ধর্মবিশ্বাসী মানুষের ইসলাম স¤পর্কে সেই আকিদা বা সামগ্রিক ধারণা নেই বলেই তাদেরকে কখনও ট্রেনের বগীকে বসবাসের জায়গা বলে বিশ্বাস করানো যায়, কখনও মোটর সাইকেলের নাট-বল্টু দেখিয়ে বিমানের নাট-বল্টু বলে চালিয়ে দেওয়া যায়। কেউ বলেন নামাজ পড় নামাজ পড়, রসুল নামাজকে গুরুত্ব দিয়েছেন, নামাজই জান্নাতে নিয়ে যাবে। কেউ বলেন রসুল রাজনীতি করেছেন কাজেই অমুক মার্কায় ভোট দাও, নিশ্চিত জান্নাত পাবে। কেউ বলেন মুর্শিদ ছাড়া গতি নাই, অমুক পীরের মুরিদ হও জান্নাত অবধারিত। কেউ বলেন রসুল জিহাদ করেছেন, জিহাদ ছাড়া মুক্তি নাই, কাজেই কাফের হত্যা কর। সবাই কোর’আনের আয়াত দেখাচ্ছে, সবাই হাদিস দেখাচ্ছে, সবাই আরবির প-িত। মানুষ তাহলে কার কথা শুনবে? দেখা যাচ্ছে ধর্মবিশ্বাসী মানুষ দিশেহারা হয়ে একেকজন একেকদিকে পা বাড়াচ্ছে। ঐক্য নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ক্ষুদ্রশক্তির কাছেও পরাজিত হয়ে গোলামির জীবন বরণ করছে। এমতাবস্থায় জাতির সামনে আল্লাহ-রসুলের প্রকৃত ইসলামের সামগ্রিক রূপটিকে তুলে ধরার কোনো বিকল্প নেই, যে ইসলামে পুরো জাতি থাকবে সকল অন্যায়ের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ, কর্তৃপক্ষ থাকবে একটি, লক্ষ্য হবে একটি, কর্মসূচি হবে একটি। আল্লাহর রহমে হেযবুত তওহীদ সে চেষ্টাই করে চলেছে।