মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের প্রিয় সৃষ্টি বনি আদম যেন পৃথিবীর জীবনে সুখ, শান্তি, ন্যায়, সুবিচার ও মানবাধিকার লাভ করতে পারে, মানুষে মানুষে সকল ভেদাভেদ যেন দূর হয়, দুর্বলের উপর সবলের অত্যাচার, শাসিতের উপর শাসকের জুলুম যেন বন্ধ হয়, এক কথায় সমস্ত মানবজাতি যেন সুখে-শান্তিতে থাকে সেজন্য মহান আল্লাহ যুগে যুগে নবী-রসুল প্রেরণ করেছেন। নবী-রসুলদের পাঠিয়ে তিনি মানুষকে হেদায়াহ বা সঠিক পথনির্দেশনা প্রদান করেছেন যাতে মানুষ ইবলিশের দাসত্ব না করে। শয়তানের প্ররোচনায় মানুষের সমাজে যেন যুদ্ধ, রক্তপাত সৃষ্টি না হয়।
ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায়, নবী ও রসুলরা নিদারুণ কষ্ট সহ্য করে করে মানুষকে আল্লাহর তওহীদের পথে ঐক্যবদ্ধ করে দিয়ে চলে যাওয়ার পর ইবলিশ আবারও তার পুরনো কৌশল অবলম্বন করে মানুষের সমাজে অশান্তি সৃষ্টি করেছে। নবী রসুলদের আগমনের ধারাবাহিকতায় সর্বশেষ আখেরি নবী, বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদকে (সা.) মহান আল্লাহ প্রেরণ করেছেন। অতীতের নবী রসুল ও সর্বশেষ রসুলের মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে অতীতের নবী রসুলগণ কেবল নির্দিষ্ট কোনো এলাকা বা গোত্রের জন্য এসেছেন। পক্ষান্তরে সর্বশেষ নবী এসেছে সমগ্র বিশ্বের জন্য। এজন্যই তিনি বিশ্বনবী। তিনি এসেছেন আরবে যা ভৌগোলিকভাবেও পৃথিবীর মধ্যভাগে অবস্থিত। তিনি কুরাইশ বংশের হাশেমি গোত্রে জন্ম গ্রহণ করেন যে গোত্রটি পবিত্র ঘরের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করত। মহান আল্লাহ রসুুলের কাছে দীনুল ইসলাম দিলেন অন্যান্য সকল বিকৃত দীন ও মানবরচিত জীবনবিধানের উপর এটিকে বিজয়ী করার জন্য। এ লক্ষ্যকে সামনে রেখে রসুলাল্লাহ খেয়ে না খেয়ে, সংগ্রাম করে, কঠোর সাধনা করে একটি জাতি তৈরি করলেন যার নাম উম্মতে মোহাম্মদী। এ জাতিকে নিয়ে তিনি যুদ্ধ করে, রক্ত দিয়ে, সংগ্রাম করে জাজিরাতুল আরবে দীনুল হক তথা সত্যদীন ইসলাম প্রতিষ্ঠা করলেন।
ইসলাম প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর আমরা দেখলাম যে, যে আরব সমাজ গুজব-হুজুগে মেতে উঠত, তাদের মধ্য থেকে সেই প্রবণতা চলে গেলো, যে আরব সমাজ ছোটছোট বিষয় নিয়ে পরস্পরের সাথে যুগ যুগ ধরে দাঙ্গা, হাঙ্গামা, রক্তারক্তি, হানাহানিতে লিপ্ত থাকত তারা পরস্পর ভাই হয়ে গেল, যে সমাজে মানুষ মদ খেয়ে চুর হয়ে থাকত সেই সমাজ মাদকমুক্ত হয়ে গেল। যে সমাজে নারীরা কথা বলার অধিকার পেত না, তারা রাষ্ট্রীয় সকল কাজে এমন কি যুদ্ধের ময়দানে যাওয়ারও অধিকার পেল। সর্বদিক থেকে ন্যায়বিচার সুবিচার ও শান্তি প্রতিষ্ঠিত হলো। রসুুলাল্লাহ মানবসমাজে একটি নব সভ্যতার মশাল জ্বালিয়ে দিয়ে গেলেন, একটি রেনেসাঁ সৃষ্টি করলেন যার অনুসরণ করে সমগ্র মানবজাতি তাদের জীবন থেকে তাবৎ অন্যায় ও অবিচার দূর করতে পারে।
আজকে রসুলের ওফাতের ১৪শ বছর পর আমরা যদি ইতিহাসের দিকে তাকাই, তাহলে দেখতে পাব যে আমরা রসুলের আদর্শ দীনুল হক থেকে কতখানি সরে গিয়েছি। ইসলামের প্রথম কথা ও কলেমা তওহীদের অঙ্গীকার ছিল আল্লাহর হুকুম ছাড়া কারও হুকুম মানা যাবে না। একজন মানুষ মো’মেন হয় আল্লাহর হুকুম মানার মধ্য দিয়ে, আর আল্লাহর হুকুম বিধান, আদেশ নিষেধ, বৈধ-অবৈধ, জায়েজ-নাজয়েজ কোর’আনে উল্লেখ করা আছে। যেকোন মানুষ কোর’আন পড়লে দেখতে পাবে একটি সমাজ বা একটি পরিবার কীভাবে শান্তিতে থাকবে বিবরণ কুরআনে বলা হয়েছে। আজকে আমাদের সমাজে ছোট, তুচ্ছ ব্যাপার নিয়ে গুজব রটনা করে দেওয়া হয়। সেই গুজব বিদ্যুতের বেগে সমস্ত সমাজে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে একটি গোষ্ঠী সক্রিয় থাকে, এই গোষ্ঠীটা হচ্ছে সে শয়তানের অনুসারী যাদের সম্পর্কে ইবলিশ মানব সৃষ্টির শুরুতেই বলেছিল অধিকাংশ মানুষকে সে তার দলভুক্ত করে ফেলবে। অথচ রসুলাল্লাহ কীভাবে গুজব দমন করেছেন তার বহু উদাহরণ তাঁর পবিত্র জীবনীতে পাওয়া যায়। তিনি ছিলেন একজন সত্যনিষ্ঠ মহামানব। তিনি তাঁর জীবনে মিথ্যা ও গুজবের ভিত্তিতে বা মানুষকে ধোঁকা দিয়ে কোনো উদ্দেশ্য চরিতার্থ করেননি। মদিনায় তাঁর ৩ বছরের ছেলে ইব্রাহিম যেদিন ইন্তেকাল করলেন, সেদিন সূর্যগ্রহণ হলো। আরবের নিরক্ষর, অনেকটা কুসংস্কারাচ্ছন্ন লোকদের মনে এই ধারণা জন্মাল যে, যার ছেলে মারা যাওয়ায় সূর্যগ্রহণ হয়, তিনি তো নিশ্চয়ই আল্লাহর রসুল, না হলে তাঁর ছেলের মৃত্যুতে কেন সূর্যগ্রহণ হবে? কাজেই চল, আমরা তাঁর হাতে বায়াত নেই, তাঁকে আল্লাহর রসুল হিসাবে মেনে নেই, তাঁর ধর্মমত গ্রহণ করি।
তাদের এ মনোভাব মুখে মুখে প্রচার হতে থাকল। আল্লাহর রসুল (সা.) যখন একথা শুনতে পেলেন, তিনি নিজ গৃহ থেকে বের হয়ে লোকজন ডাকলেন এবং বললেন, “আমি শুনতে পেলাম তোমরা অনেকেই বলছ, আমার ছেলে ইব্রাহিমের ইন্তেকালের জন্য নাকি সূর্যগ্রহণ হয়েছে। এ কথা ঠিক নয়। ইব্রাহিমকে আল্লাহ নিয়ে গিয়েছেন আর সূর্যগ্রহণ একটি প্রাকৃতিক নিয়ম। এর সাে ইব্রাহিমের মৃত্যুর কোনো স¤পর্ক নেই” (হাদিস: মুগীরা ইবনে শো’বা ও আবু মাসুদ (রা.) থেকে বোখারী)।
আম্মা আয়েশার (রা.) উপর মিথ্যা একটি অপবাদ আরোপ করা হয়েছিল এবং গুজব রটিয়ে দেওয়া হয়েছিল। যারা এই কাজের সঙ্গে জড়িত ছিল তাদের প্রত্যেককে এজন্য জুমার দিনে শাস্তি ভোগ করতে হয়েছিল। এখানে লক্ষণীয় যে, শাস্তি প্রদান করেছেন মদীনা নামক নবগঠিত রাষ্ট্রের বিচারিক কর্তৃপক্ষ রসুলাল্লাহ (সা.)। তিনি যথাযথ বিচার প্রক্রিয়া অনুসরণ করে, তদন্তসাপেক্ষে দোষীদের চিহ্নিত করে দণ্ড কার্যকর করেন। নিজ পরিবারের বিষয়ে এত বড় অপবাদ ও গুজব শুনেও পক্ষে বা বিপক্ষে কোনো মন্তব্যই করেন নি। দীর্ঘ সময় নিয়ে তিনি এই অভিযোগ যাচাই করেছেন। কাজেই গুজবের ভিত্তিতে মুসলমান সমাজে কথিত তওহীদী জনতার পক্ষ থেকে কারো উপরে কোনো দণ্ড প্রদান করার বা হামলা করার কোনো সুযোগ নেই।
যারা গুজব রটনা করে তাদের ব্যাপারে আল্লাহ কতটা কঠোর দেখুন। তিনি বলেন, মোনাফেকগণ এবং যাদের অন্তরে ব্যাধি আছে এবং যারা নগরে গুজব রটনা করে তারা বিরত না হলে আমি নিশ্চয়ই তাদের বিরুদ্ধে তোমাকে প্রবল করব, এরপর তারা এ নগরীতে অল্প দিনই তোমার প্রতিবেশীরূপে থাকবে। অভিশপ্ত অবস্থায় তাদেরকে যেখানেই পাওয়া যাবে, ধরা হবে এবং নির্দয়ভাবে হত্যা করা হবে। (সুরা আহযাব: ৬০-৬২)।
আল্লাহর হুকুম হলো যে কোনো সংবাদ শোনামাত্র প্রতিক্রিয়া না দেখিয়ে সেটা যথায কর্তৃপক্ষকে অবগত করতে হবে। কর্তৃপক্ষ সে বিষয় সম্পর্কে তদন্ত করে আল্লাহর হুকুম অনুযায়ী ফায়সালা করবেন। আল্লাহ বলেন, যখন শান্তি অথবা শংকার কোনো সংবাদ তাদের কাছে আসে তখন তারা সেটাকে প্রচার করতে শুরু করে। যদি তারা বিষয়টি রসুলাল্লাহ কিংবা আদেশদানকারী কর্তৃপক্ষের (উলিল আমর) গোচরে আনত, তবে যাচাই করে সংবাদের যথার্থতা নির্ণয় করা যেত। তোমাদের প্রতি যদি আল্লাহর অনুগ্রহ ও দয়া না থাকত তবে তোমাদের অল্প সংখ্যক ব্যতীত সকলে শয়তানের অনুসরণ করত। (সুরা নিসা ৮৩)।
সুতরাং ইসলামে গুজব হুজুগের কোন স্থান নেই। মুসলিমরা হবেন চিন্তাশীল মানুষ। ইসলামের আকিদাটাই হল আল্লাহ বলেছেন, যে সম্পর্কে তোমাদের কোন জ্ঞান নেই তার অনুসরণ করো না (সুরা বনি ইসরাইল ৩৬)। যেহেতু ইসলাম এতগুলো নীতিমালা রয়েছে এবং যারা আল্লাহকে আল্লাহর রসুুলকে এবং পরকালে বিশ্বাস করে তারা অবশ্যই জেনে বুঝে, চিন্তাভাবনা করে পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
আমাদের দেশে বর্তমানে একটি গোষ্ঠী ধর্মকে ইস্যু করে ব্যাপকভাবে অপরাজনীতি করছে এবং বিভিন্ন ইস্যু সৃষ্টি করে তাদের ভোটের হিসেব-নিকাশ কষছেন। এ কাজটি ধর্ম নিয়ে যারা রাজনীতি করেন তারাও করছেন এবং যারা সেকুলার রাজনীতি করেন তারাও করছেন। অর্থাৎ আমাদের এই সমাজে ধর্মকে অবলম্বন করে যেমন ধর্মব্যবসা করা হচ্ছে, উগ্রবাদী কর্মকাণ্ড করা হচ্ছে, তেমনি ধর্মকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবেও ব্যবহার করা হচ্ছে। ভোটের বাক্স ভরানোর জন্য মানুষের ধর্মীয় সেন্টিমেন্টকে ব্যবহার করার প্রবণতা কেবল বাংলাদেশেই নয়, সারা দুনিয়াতে রয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে অধিকাংশ মানুষই যেহেতু ইসলাম ধর্মাবলম্বী, তাদের মধ্যে মৃত্যুর পর আল্লাহর সামনে দাঁড়ানোর ভয় আছে। তাদের এই ধর্মানুভূতিকে পুঁজি করে ধর্মব্যবসায়ীরা ভোট আদায় করে থাকে, গুজব সন্ত্রাস করে থাকে, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লাগার ধুয়ো তুলে মানুষ হত্যা করতেও তারা এই সেন্টিমেন্টকেই ব্যবহার করে। এই বর্বরতার হাত থেকে আমাদেরকে মুক্ত হতে হলে এখন আমাদের মুসলিমদের জানতে হবে যে ইসলামে অনর্থক, অহেতুক কর্মকাণ্ডের কোনো জায়গা নেই।
দ্বিতীয়ত ইসলামে উগ্রবাদেরও কোনো স্থান নেই। ইসলাম সাম্য, ন্যায়বিচার, সুবিচার প্রতিষ্ঠা করতে ধরাপৃষ্ঠে আবির্ভূত হয়েছে। আল্লাহর রসুুল ৭৮ টি যুদ্ধ করে শান্তি প্রতিষ্ঠিত করেছেন। শত্রুতাবশত তাঁর চলার পথে কাঁটা বিছিয়ে রাখত যে বৃদ্ধা, তার সেবা করেও তিনি তার মন জয় করেছেন। এক ইহুদি তার ঘরে মলমূত্র ত্যাগ করেছিল, তিনি তা নিজ হাতে পরিষ্কার করেছেন। এসব ঘটনা কি ভিন্নমতের লোকের উপর উগ্রতার শিক্ষা দেয়? নাকি অনন্য সহিষ্ণুতার শিক্ষা দেয়।
আল্লাহর রসুল যুদ্ধের ময়দানে গিয়ে যুদ্ধের নীতি অনুসরণ করেছেন। নিজের হাতেগড়া বীর যোদ্ধা আলি (রা.) শত্রুর বুকের উপর বসেছেন। এমন অবস্থায় যখন শত্রু তাঁর মুখে থুতু মেরেছে, তখন তিনি তাকে হত্যা না করে বলেছেন, তোমাকে আমি হত্যা করব না। কারণ আমার ব্যাক্তিগত ক্রোধ সৃষ্টি হয়েছে। ব্যক্তিগত কারণে আমরা কাউকে আঘাত করি না। একজন যোদ্ধা নবী আল্লাহর হুকুম প্রতিষ্ঠা করতে অপর রাষ্ট্রশক্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছেন। তাঁর লড়াই ছিল রাষ্ট্রশক্তির বিরুদ্ধে। কারণ রাষ্ট্রশক্তি ছাড়া সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা সম্ভব না। তিনি কখনও ফেতনা সৃষ্টি করার জন্য যুদ্ধ করেন নি। আল্লাহ মোমেনদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন ফেৎনা নির্মূল না হওয়া পর্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে যেতে এবং আল্লাহর হুকুম প্রতিষ্ঠা করতে (সুরা আনফাল ৩৯)। আসমানের নিচে নিকৃষ্ট হবে ফেৎনা সৃষ্টিকারী আলেমসমাজ। তিনি বলেছেন, ফেৎনা হত্যা অপেক্ষা গুরুতর (সুরা বাকারা ২১৭)। রসুলাল্লাহর সাহাবিরা ফিৎনা সৃষ্টিকারী উগ্রবাদী কোন কার্যক্রম কখনো করেননি। তাঁরা নিজেদের জীবন সম্পদকে মানুষের কল্যাণে উৎসর্গ করে দিয়েছেন। ধর্মীয় কোন কাজ করে মানুষের কাছ থেকে কোনো স্বার্থ আদায় করার নজির সাহাবিদের জীবনে নেই। বরং সাহাবিরা আল্লাহর রাস্তায় কোরবানি দিতে দিতে নিঃস্ব হয়েছেন, না খেয়ে থেকেছেন, পেটে পাথর বেঁধেছেন।
অথচ আজকে আমরা দেখতে পাচ্ছি ছোটখাটো বিষয় নিয়ে ধর্মকে আশ্রয় করে উগ্রবাদী তাণ্ডব সৃষ্টি করা হচ্ছে এবং বিদ্যুতের বেগে গুজব রটিয়ে ধর্মান্ধ মানুষকে উত্তেজিত করে রক্তপিপাসু, মারমুখী দানবে পরিণত করা হচ্ছে। এই নিষ্ঠুর কর্মকাণ্ডে ব্যবহার করা হচ্ছে মাদ্রাসার ছাত্রদেরকেও। তাদের হামলায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা পর্যন্ত আহত হচ্ছে, সাধারণ মানুষ নিহত হচ্ছে, বাড়িঘর ভাঙচুর হচ্ছে জ্বালাও পোড়াও করা হচ্ছে, মানুষের ব্যবসা ও শিল্প প্রতিষ্ঠান ও জানমালের ব্যাপক ক্ষতি করা হচ্ছে। এসব ঘটনায় যে মারা যাচ্ছে সে জানে না তাকে কেন মারা হচ্ছে, যে মারছে সেও সুস্পষ্টভাবে জানে না সে কাকে কী কারণে মারছে। কোনো একটি পক্ষ একজনের বিরুদ্ধে এমন কোনো কথা রটিয়ে দিল যা সে বলেনি বা করেনি, আর অমনি পিশাচের দল তার উপর ঝাপিয়ে পড়ল। এই উগ্রবাদী গোষ্ঠীকে যারা লালন পালন করছে তার ইসলামের কেউ নয়, তারা কোর’আন নিয়ে গবেষণা করে না, আল্লাহর রসুলের শিক্ষাও তারা জানে না। কিছু ধর্মীয় বক্তা ও ফতোয়াবাজের মিথ্যাচার, আজগুবি কথার দ্বারা প্রভাবিত হয়ে তাদের গুটি হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
লাখো মানুষের রক্তে অর্জিত হয়েছে বাংলাদেশের স্বাধীনতা। যারা দেশকে ভালোবাসেন, দেশের মাটি আঁকড়ে ধরে বাঁচতে চান, আল্লাহকে ভালবাসেন, পরকালে বিশ্বাস করেন, নাজাতের আশা করেন, দেশ ও মানুষের কল্যাণ চান সে সব দেশপ্রেমিক, মো’মেন, মুসলিমদের প্রতি আমার কথা হচ্ছে, আপনারা ইসলামের প্রকৃত শিক্ষায় আলোকিত হন। রসুলের পবিত্র জীবনী সম্পর্কে ধারণা অর্জন করুন। তাহলে দেখবেন আল কোর’আন কত মহিমান্বিত, কত সাবলীল, আল্লাহর হুকুম কত সুন্দর। আল্লাহর হুকুমে কোন সাম্প্রদায়িকতা নেই, উগ্রবাদ নেই, আল্লাহর হুকুমে অনর্থক, অপ্রয়োজনীয় কিছু নেই, পরনিন্দা ও পরচর্চার কোন জায়গা নেই। আল্লাহর হুকুমের মধ্যে আছে ন্যায়বিচার, সুবিচার, একতা, ভ্রাতৃত্ব, ভালোবাসা, দয়া, মায়া, সহযোগিতা, সহমর্মিতা এবং অন্যায়ের প্রতিবাদ। রসুলাল্লাহ ও সাহাবিদের জীবনীতে লক্ষ্য করলে দেখবেন সেখানে অন্যের সম্পদ লুণ্ঠন করে নিজের স্বার্থ হাসিলের কোন ইতিহাস নেই। তারা রক্ত দিয়ে মানবতার কল্যাণে সংগ্রাম চালিয়ে গিয়েছেন। এই ইসলামের অমীয় বাণী, ইসলামের আদর্শ, সাম্যের বাণী, কোর’আনের আদর্শ দ্বারা আপনারা হন। আজকের বিশ্বময় যে তান্ডব চলছে, একদিকে যুদ্ধবাজ, সাম্রাজ্যবাদী, অস্ত্রব্যবসায়ীদের যুদ্ধের তাণ্ডবে প্রতিটি দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি, ডলারের মূল্য বৃদ্ধি, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, আরেকদিকে ধর্মীয় উগ্রবাদ, সাম্প্রদায়িকতা আমাদের শ্বাসরুদ্ধ করে ফেলছে। সাম্প্রদায়িক এই গোষ্ঠীর কালো থাবা সমাজকে আরো বেশি বিষাক্ত করে তুলছে। আমাদের সমাজের সকল দেশপ্রেমিক ও ঈমানদার মানুষ এসকল অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী, সচেতন ও সোচ্চার থাকবেন বলে আমরা আশা রাখি।