১৫৭৬ সাল ছিল বাংলার ইতিহাসে একটি কালো অধ্যায়। কেননা এই সালটিতেই বাংলার শেষ স্বাধীন শাসক দাউদ খান কররাণী মোগলদের কাছে পরাজিত হবার মধ্য দিয়ে বাঙালির গোলামী জীবনের সূচনা হয়েছিল। ১৫৬৪ সাল থেকে ১৫৭৬ সাল পর্যন্ত বাংলায় কররাণী বংশের শাসন প্রতিষ্ঠিত ছিল। তাজ খান কররাণী ছিলেন বাংলায় কররাণী শাসনের স্থপতি। তাঁর পর সোলাইমান খান কররাণী, বায়াজীদ খান কররাণী এবং দাউদ খান কররাণীও পর্যায়ক্রমে রাজ্যের শাসনভার গ্রহণ করেন। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়- কররাণীদের শাসনামলে বাংলা বৈদেশিক আগ্রাসনের হাত থেকে সম্পূর্ণভাবে মুক্ত ছিলো। বার বার চেষ্টা করেও মোগলরা কররাণীদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেদ করে বাংলা দখল করতে সক্ষম হয় নি। কররাণীরা বাংলা শাসন করেছেন কোর’আন-সুন্নাহর বিধি-বিধান মোতাবেক যার কারণে সাধারণ মানুষেরও তাদের প্রতি ছিল অগাধ আস্থা ও আনুগত্য। তৎকালীন সময়ে সারা উপমহাদেশে মোগল সম্রাটদের নামে খুৎবা দেওয়া হত ও মুদ্রা তৈরি করা হত। এর ব্যত্যয় ছিল শুধুমাত্র বাংলায়। এখানে মুদ্রা তৈরি হত ও খুৎবা দেওয়া হত কররাণী শাসকদের নামে। এক কথায় বাংলা ছিল পুরোপুরি বহিঃশত্র“র হাত থেকে মুক্ত। আর তাই এই দেশের সার্বভৌমত্ব, স্বাধীনতার ইতিহাসে কররাণীরা এখনও উজ্জ্বল তারকা হোয়ে আছেন।
১৫৭৬ সালে রাজমহলের যুদ্ধে মোগলদের কাছে দাউদ খান কররাণীর পরাজয় এবং জীবনোবসানের মধ্য দিয়ে বাংলার স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত হয়। সেখান থেকেই বাঙালির গোলামী জীবন শুরু হয়। তারপর থেকে বাংলা শাসিত হতে থাকে মোগলদের নিযুক্ত নবাব বা সুবাদারদের মাধ্যমে। এই নবাব বা সুবাদাররা কোনদিনই বাংলাকে স্বদেশ হিসেবে মেনে নিতে পারে নি। তারা মূলত নিজেদেরকে মোগলদের নিযুক্ত একজন রাজ কর্মচারী ভিন্ন আর কিছুই ভাবতো না। বাঙালিদের সাথে তাদের কোন আত্মার বন্ধন ছিল না, ছিল না বাঙালিদের স্বার্থ-অস্বার্থ ভেদাভেদ। এই কারণেই ইতিহাসের পাতায় দেখা গেছে- তাদের কেউ অর্থের লোভে, কেউ ক্ষমতার লোভে আবার কেউবা দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়ে বাংলায় ইংরেজদের অনুপ্রবেশের পথ করে দিয়েছেন। ইংরেজরা একযোগে বিশাল বাহিনী নিয়ে এই উপমহাদেশে আক্রমণ করে তাদের রাজত্ব বিস্তার করে নি, ইতিহাস তা বলে না। ইতিহাস এটাই বলে যে- মোগল রাজবংশ কর্তৃক নিযুক্ত এই সুবাদার বা নবাবগণের হাত ধরে, তাদের আশ্রয়-প্রশ্রয়েই ইংরেজদের উত্থান হোয়েছে। অর্থাৎ এক উপনিবেশের করায়ত্ত থেকে মুক্ত হোয়ে বাঙালি আরেক উপনিবেশের করায়ত্ত হোয়েছে।
কতিপয় বাঙালি এই সত্যকে মেনে নিতে দ্বিধা করেন। তাদের মতে- বাংলার স্বাধীনতার সূর্য অস্ত যায় ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন পলাশীর যুদ্ধে নবাব সিরাজউদ্দৌলার পরাজয়ের মধ্য দিয়ে। এই মতবাদ নিতান্তই ভিত্তিহীন। আলীবর্দী খান ছিলেন একজন বৈদেশিক ভাগ্যান্বেষী; তাঁর পিতামহ আরব বংশোদ্ভূত ছিলেন এবং সম্রাট আরঙ্গজেবের আমলে মোগল সুবাদার। নবাব সিরাজউদ্দৌলা ছিলেন আলীবর্দী খানের দৌহিত্র। নবাবী আমলে এই বাংলা সুবাদার বা নবাবগণের পদানত ছিল; সুবাদার বা নবাবগণ ছিলেন মোগল সম্রাট কর্তৃক নিযুক্ত বাংলার শাসনকর্তা; তারা ভিনদেশি রাজ কর্মচারী ছাড়া আর কিছুই নয় যা পূর্বেই বলে এসেছি। কেবল জমিদার ও প্রজাগণই ছিলেন এ দেশের সন্তান। ১৭৫৭ সালে পলাশীর প্রান্তরে নবাব সিরাজউদ্দৌলার পরাজয়ের মাধ্যমে বাংলার শাসনক্ষমতা এক ঔপনিবেশিক ও ভিনদেশী নবাবদের হাত থেকে ক্রমশ আরেক ঔপনিবেশিক ও বণিক ইংরেজদের হাতে স্থানান্তরিত হতে থাকে। কিন্তু বাংলার স্বাধীনতাসূর্য অস্তমিত হোয়েছিল এর অনেক আগে- ১৫৭৬ খ্রিস্টাব্দে সম্রাট আকবরের বাংলা বিজয়ের মাধ্যমে।
পলাশী যুদ্ধোত্তর বাংলা চলে যায় ইংরেজদের হাতে। অন্যান্য ঔপনিবেশিকের তুলনায় ইংরেজদের উপনিবেশ ছিল ভিন্ন। ইংরেজরা বরাবরই শক্তি প্রদর্শনের পাশাপাশি ষড়যন্ত্র ও ছল-চাতুরীর আশ্রয় নিয়ে এসেছে। তাদের লক্ষ্য ছিল খুবই সুদূরপ্রসারী। তারা যেমন লুটপাট, ধন-সম্পদ পাচার ইত্যাদিতে ছিল পারদর্শী, তেমনই এই উপমহাদেশের জাতিগোষ্ঠিগুলোর মাঝে অনৈক্যের বীজ বপন কোরতেও ছিল সদা সচেষ্ট। বাঙালির ইতিহাস হোল হিন্দু-মুসলিম সম্প্রীতি, সহানুভূতি এবং সহযোগিতার ইতিহাস। এদেশে মুসলিমদের রাজনৈতিকভাবে প্রতিষ্ঠা লাভের পর দলে দলে মানুষ ইসলাম ধর্ম গ্রহণ কোরেছে ইসলামের সাম্য, ভ্রাতৃত্ব ও ঐক্যের টানে। দীর্ঘ মুসলিম শাসনের ইতিহাসে এখানে হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গার একটি ঘটনাও ঘটে নি। অথচ ইংরেজদের সৃষ্ট ধর্মীয় বিভেদের ফলে ধর্মীয় ইস্যুতে দাঙ্গা-হাঙ্গামা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। মূলতঃ এখানেই স্বদেশি শাসক আর বিদেশি শাসকের অবস্থান স্পষ্ট হোয়ে যায়। স্বদেশের শাসক সবসময় চেষ্টা করেন তার জাতিকে সবসময় ঐক্যবদ্ধ করে রাখতে। অপরপক্ষে আধিপত্যবাদী, বিদেশি শাসক-শোষকরা সর্বদাই তার অধিনস্থদের নিজের গোলাম বানিয়ে রাখার জন্য নিত্য-নতুন অনৈক্য, হানাহানিতে লিপ্ত রাখে। ইংরেজরা আমাদের গোলাম ছাড়া আর কিছুই ভাবতো না। তাদের কর্মকাণ্ডও এর ব্যত্যয় লক্ষ্য করা যায় না। ‘উরারফব ধহফ জঁষব’ কে কাজে লাগিয়ে তারা দীর্ঘ ২০০ বছর আমাদের শাসন-শোষণ চালিয়েছে অনায়াসেই।
অতঃপর ১৯৪৭ সালে ইংরেজদের হাত থেকে এই উপমহাদেশ স্বাধীন হয়। বলা হোয়ে থাকে ইংরেজরা স্বেচ্ছায় উপমহাদেশ ছেড়ে চলে গিয়েছিল। আসলে তারা স্বেচ্ছায় গিয়েছিল ঠিকই কিন্তু তার কারণ হোল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে তারা দুর্বল হোয়ে পড়ে আর তাই নিজেদের ইজ্জত বজায় রেখেই চতুরতার পরিচয় দিয়ে উপমহাদেশ থেকে নিজেদের গুটিয়ে নেয়। বাঙালি জাতি কিন্তু তখনও স্বাধীন হয় নি। গোলামীর ৩৭১ বছর চলছে। এবারে আমরা পতিত হই পশ্চিম পাকিস্তানিদের হাতে। ইংরেজরা যেমন এই উপমহাদেশের সম্পদ ইংল্যাণ্ডে পাচার করত, তারাও পূর্ব পাকিস্তানের ধন-সম্পদ, অর্থকড়ি পশ্চিম পাকিস্তানের উন্নয়নের কাজে ব্যয় কোরতে শুরু করে। তদানীন্তন পাকিস্তানের অর্থনীতি ছিল বাংলা নির্ভর, অথচ উন্নয়ন ছিল পশ্চিম পাকিস্তানকেন্দ্রীক। সরকারি-বেসরকারি অফিস-আদালত, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, প্রশাসনিক দপ্তর ইত্যাদি সবকিছুতেই ছিল পশ্চিম পাকিস্তানের অগ্রাধিকার। বাঙালিরা পদে পদে বৈষম্যের শিকার হত। এক কথায়- মোগল বা ইংরেজ আমলের গোলামী পাকিস্তান আমলেও অপরিবর্তীত ছিল। ফলে সৃষ্টি হয় পশ্চিম পাকিস্তানের প্রতি বাঙালির অসন্তোষ যা ’৫২ এর ভাষা আন্দোলন, ’৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান, ’৭০ এর নির্বাচন এবং ’৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে প্রকাশ পায়। বাঙালি জাতি বাধ্য হয় নিজেদের অধিকার আদায়ে অস্ত্র ধরতে। ১৫৭৬ সালে রাজমহলের যুদ্ধ থেকে বাঙালির যে পরাধীন জীবনের সূচনা হোয়েছিল ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে তার অবসান ঘটে। আবারও বাঙালি নিজেদের স্বকীয়তা, সংস্কৃতি ও সভ্যতা অনুযায়ী শাসন করার অধিকার লাভ করে।
কিন্তু সেই অধিকারকে আমরা কোন পথে কাজে লাগিয়েছি এবং লাগাচ্ছি সেটাও ভাববার বিষয় আছে। খাতা-কলমের হিসেবে হয়তো আজ আমরা কোন জাতির গোলাম নই, স্বাধীন; কিন্তু কার্যক্ষেত্রে তা কতটুকু বাস্তবসম্মত সেটাই এখন প্রশ্নবিদ্ধ। স্বাধীন জাতির বৈশিষ্ট্য আমাদের মধ্যে আদৌ আছে কি?
আগেই বলেছি- বিদেশি শাসকরা সর্বদাই জাতিকে অনৈক্য-বিভক্তির গ্যাঁড়াকলে আটকে রেখে নিজেদের স্বার্থ হাসিলে সদা তৎপর থাকে। অপরপক্ষে যারা সত্যিই দেশপ্রেমিক এবং স্বাধীন জাতির শাসক তারা ঐ জাতির মধ্যে ঐক্য বজায় রাখতে সদা সর্বদা সচেষ্ট থাকে। আমরা ’৭১ এর দেশ স্বাধীনের পর আজ পর্যন্ত সবচেয়ে বড় যে সমস্যাটির সম্মুখীন হোয়েছি তা হোল বিভিন্ন রাজনৈতিক দল-উপদলের মধ্যে হানাহানি, মারামারি, প্রতিহিংসা, বিদ্বেষ, হত্যা-গুম ইত্যাদি, এক কথায় অনৈক্যের। স্বাধীনতা পরবর্তী ৪২ বছরে জাতিকে কোন বৈদেশিক শক্তির সম্মুখীন হতে হয় নি। কিন্তু দলাদলির রাজনীতির ছাঁচে পড়ে আমরাই এক দল অপর দলের মুখোমুখি হোয়েছি। এটা কি কোন স্বাধীন জাতির চরিত্র? মোগল, ব্রিটিশ বা পাঞ্জাবিদের মত আমাদের বাঙালি শাসক শ্রেণিও কি আমাদেরকে গোলাম বানিয়ে রেখেছে? দীর্ঘ ৪২ বছরের তথাকথিত স্বাধীনতা ভোগের পর এই প্রশ্নটি মোটেও অযৌক্তিক হবে না। কারণ এতদিন যেটা দেখলাম এটা স্বাধীনতা নয়। এটা পশ্চিমা সভ্যতার তৈরি গোলামীর নব্য একটি ধারামাত্র।
বাঙালি গোলামীর নতুন এই ধারায় প্রবেশ কোরেছে সাবেক প্রভু ব্রিটিশদেরই দেখানো পথে চলতে গিয়ে। গোলামী যুগের পূর্বে বাঙালি জাতি পরিচালিত হত স্রষ্টার প্রদত্ত শাসনব্যবস্থা দ্বারা যা স্বভাবতই জাতির ঐক্য, সমৃদ্ধি এবং জান-মালের নিশ্চয়তা বিধানে অদ্বিতীয় ছিল। কিন্তু পরবর্তীতে দীর্ঘ ৪০০ বছরের গোলামীর পর স্বভাবতই আমরা নিজেদের সম্বন্ধে হোয়ে পড়েছিলাম হীনমন্য, আর প্রভুদের শিক্ষা ব্যবস্থায় শিখেছিলাম যে- প্রভুরা যা বলে সেটাই ঠিক। প্রভুদের রাজনীতি, প্রভুদের অর্থনীতি-শিক্ষাব্যবস্থা, আইন-কানুন ইত্যাদি কেবল গ্রহণীয়ই নয়, বরং বাঞ্চনীয়। আর তাই নিজেদের ঘাড়ে চাপিয়ে নিয়েছিলাম বহুরূপী গণতান্ত্রিক মতবাদ। এর অসারতা দীর্ঘ ২৪ বছর ধরে দেখে এসে যখন আমরা বুঝলাম যে, গণতন্ত্র কোনভাবেই আমাদের অধিকার আদায় কোরতে পারবে না, তখন গণতন্ত্রকে প্রত্যাখ্যান করে ’৭১ এ যুদ্ধ করে স্বাধীন হোলাম। কিন্তু তবুও যেন আমাদের হুঁশ আসলো না। আবারো জাতির ঘাড়ে চাপালাম গণতন্ত্র। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই ঐক্যবদ্ধ হোয়ে লড়াই করা জাতি বিভিন্ন রাজনৈতিক দল গঠন করে দলাদলী-হানাহানিতে লিপ্ত হোয়ে পড়ল। নিজেরাই নিজেদের প্রতিপক্ষ সেজে যুদ্ধ-যুদ্ধ আমেজে গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে লিপ্ত হোল। বলি হোল সাধারণ মানুষের আশা-আকাক্সক্ষা, স্বপ্ন।
এখন আসা যাক প্রভুদের শেখানো সাধারণ মানুষের রাজনৈতিক অধিকার আদায়ের মাধ্যম অর্থাৎ ‘গণতন্ত্র’ আসলে কি এ সম্বন্ধে। গণতন্ত্র এমন একটি জীবনব্যবস্থা যার গোড়াতেই অনৈক্যের বীজ রোপণ করা আছে। বহুদল, বহুমত হোচ্ছে এর অন্যতম প্রধান উপাদান। যে যা খুশি বলবে, যে যা খুশি করবে, দাবি আদায়ের নামে মানুষের পথ চলাচলে বিঘœ সৃষ্টি করবে, গাড়ি পোড়াবে, রাষ্ট্রীয় সম্পদের ক্ষতিসাধন করবে, জীবন্ত মানুষ পুড়িয়ে মারবে, পিটিয়ে মারবে, এই জাতীয় সকল কার্যক্রম গণতন্ত্র দ্বারা সিদ্ধ। এইসব কার্যক্রম যারা চালিয়ে যাবে তাদেরকে বলা হয় নিয়মতান্ত্রিক দল। এসব যারা করে না তারা অগণতান্ত্রিক, সুতরাং স্বাভাবিকভাবেই পরিত্যাজ্য। গণতন্ত্রে যত দল সৃষ্টি হবে তত নাকি গণতন্ত্র বিকশিত হয়। মূলত গণতন্ত্রের মৌলিক ভিত্তিতেই অনৈক্য প্রোথিত হোয়ে আছে। আর এটা একটা প্রাকৃতিক নিয়ম যে ঐক্যই সমৃদ্ধি আর অনৈক্য ডেকে আনে ধ্বংস। বাস্তবতা হোচ্ছে গণতন্ত্র এমন একটি ব্যবস্থা যা একমাত্র গোলামদের জন্যই প্রযোজ্য, অনুগত দাসদের বিদ্রোহ করার পরিবর্তে গোলামীতে ব্যস্ত রাখতে এটি ব্যাপক ভূমিকা পালন করে। এ জন্যই এটি সাম্রাজ্যবাদীরা বার বার তাদের কাক্সিক্ষত ভূ-খণ্ডে চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা কোরছে। এই জন্যই গণতন্ত্রের জন্য তাদের দরদ উপচে পড়ে। কিন্তু আমরা সেটা বুঝতে বরাবরই ব্যর্থ হোয়ে থাকি। আমরা এটা বুঝতে পারছি না যে- গণতন্ত্র কোন স্বাধীন জাতির জন্য নয়, গণতন্ত্র প্রযোজ্য কেবল গোলাম জাতির জন্য। এই স্পষ্ট বিষয়টি বুঝতে পারছি না বিধায় স্বেচ্ছায় নিজেদের গলায় নিজেরাই শিকল বেঁধে গোলামীতে লিপ্ত হচ্ছি। যেন গোলামী আমাদের গা-সওয়া হোয়ে গেছে, গোলামীই আমাদের ভাগ্য।
একবার একজন ধূর্ত শিকারি একটি চিলকে শিকার করে। শিকার করার পর ঐ চিলের একটি পা শিকল দিয়ে একটি খুঁটির সাথে বেঁধে রাখে। চিলটি যতই চেষ্টা করে সে আর উড়তে পারে না। সে শুধু ঐ খুঁটিকে কেন্দ্র করে হেঁটে ঘুরে বেড়ায়। এক সময় তার জীবনটিই হোয়ে ওঠে ঐ খুঁটিকেন্দ্রীক। একদিন ধূর্ত শিকারি চিলের পা থেকে শিকলটি খুলে দেয়। কিন্তু মজার ব্যাপার হোল চিলটি না উড়ে শুধু ঐ খুঁটি বরাবরই ঘুরতে থাকে। কারণ চিলটি তখন শারীরিকভাবে মুক্ত হোলেও মনস্তাত্বিকভাবে পরাধীন।
গল্পটি আজ আর গল্প নয়। এটা আজ বাস্তব। ৪০০ বছরের পরাধীনতার শিকল আমাদের শরীরে এখন না থাকলেও আজও আমরা মানসিক ও মনস্তাত্বিকভাবে সেই প্রভুদেরই গোলামী করে যাচ্ছি। আর তাই আমাদের এই অবস্থা। তবে সময় এসেছে এই গোলামীর শিকল ছিঁড়ে বের হওয়ার, অতীতকে স্মরণ করে সম্মুখপানে নব সৃষ্টির পথে এগিয়ে যাওয়ার। আর সে সময় এখনই।