আতাহার হোসাইন
আল্লাহ যে সকল নিয়ম দিয়ে তাঁর সৃষ্টিজগৎ পরিচালনা করেন সেগুলো প্রাকৃতিক এবং চিরন্তন, শাশ্বত (Etarnal) নিয়ম। বাহ্যিক চোখে আমরা অনেকে বস্তুর পরিবর্তন হতে দেখলেও প্রকৃতপক্ষে ঐ নিয়মগুলোর কখনোই কোনো পরিবর্তন হয় না। যেমন আগুনের ধর্ম হচ্ছে সে সব কিছুকে পুড়িয়ে দেবে। এটা হাজার বছর আগে যেমন সত্য ছিল তেমনি হাজার বছর পরেও একইরকম থাকবে। আবার পানিকে মুক্ত করে দিলে সে নিম্ন ভূমিতে ছড়িয়ে পড়বে- এটাও প্রাকৃতিক নিয়ম। আল্লাহ মানবজাতিকে শান্তি, সুখ ও সমৃদ্ধিতে বসবাস করার জন্য দয়াপরবশ হয়ে এমনি কতগুলো নিয়ামক দান করেছেন। এর মধ্যে মতভেদ ও বিভক্তি না করে ঐক্যবদ্ধ থাকার গুরুত্ব অপরিসীম। এ জন্য তিনি প্রত্যেক নবী-রসুলদের মাধ্যমে পাঠানো জীবনব্যবস্থায় মানুষকে ঐক্যবদ্ধ থাকার হুকুম দিয়েছেন। তিনি কোর’আনে বলেছেন, “আল্লাহ তাদেরকে ভালোবাসেন যারা সীসা ঢালা প্রাচীরের মতো ঐক্যবদ্ধ হয়ে সংগ্রাম করে (সুরা সওফ-৪)। ঐক্য নষ্ট হয় এমন কোনো কথা বা কাজকে রসুলাল্লাহ কুফরের পর্যায়ের গোনাহের সাথে তুলনা করেছেন। আমাদেরকে মনে রাখতে হবে কুফরের চেয়ে বড় গোনাহ আর নেই। আল্লাহ মানুষের ছোট-খাট গোনাহ মাফ করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যদি সে কুফর না করে। সাধারণত মতভেদ ও মতভিন্নতা থেকেই অনৈক্যের সূচনা। রসুলাল্লাহ কোর’আনের কোনো আয়াত নিয়ে তর্ক-বিতর্ক করাকে কুফর হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। সুতরাং ঐক্য, শৃঙ্খলা, সমৃদ্ধির ধারণা আল্লাহর পক্ষ থেকে আগত। অপরদিকে অনৈক্য, হিংসা-বিদ্বেষ মানবজাতির এই উন্নতি ও প্রগতির অন্তরায়। একমাত্র ইবলিস শয়তানই চায় মানুষ শান্তি ও সমৃদ্ধির পরিবর্তে অনৈক্য, হানাহানি ও হিংসা-বিদ্বেষে ডুবে থাকুক। আর এটা সম্ভব একমাত্র মানুষের জীবনে অনৈক্য ও বিভেদের বিস্তার ঘটিয়ে। সুতরাং অনৈক্যের আগমন শয়তানের কাছ থেকে। মানুষকে অন্যায়-অশান্তিতে ডুবিয়ে রাখার জন্য শয়তানের প্রধান অস্ত্রই হচ্ছে অনৈক্যের বিস্তার ঘটানো।
অপরদিকে পৃথিবীর বুকে যারা অনৈক্য চায়, অনৈক্যের বিস্তার ঘটায় এরা সরাসরি শয়তানেরই অনুসারী, এরাই প্রকাশ্য শয়তান। তাই যারা ঐক্যের বিরুদ্ধে কথা বলে, যারা চায় মানুষের মধ্যে ঐক্য না আসুক তাদেরকে প্রতিহত করা, তাদেরকে বর্জন করা প্রত্যেক দায়িত্বশীল মানুষের জন্য একান্ত কর্তব্য। কারণ তারা মানবজাতির শত্রু, মানবতার শত্রু। এদেরকে চেনার উপায় হচ্ছে এরা কখনোই ঐক্যের পক্ষে কথা বলে না। কোথাও ঐক্য দেখলে এদের গায়ে আগুন ধরে যায়। এদের একমাত্র কাজই হচ্ছে কিভাবে ঐক্যের বিরুদ্ধে মানুষকে উস্কে দেওয়া যায়, বিভেদকে জাগিয়ে তোলা যায়। সুতরাং পৃথিবীতে আল্লাহর দেওয়া জীবনবিধানের প্রয়োগ করে মানবজাতির মধ্যে সুখ-সমৃদ্ধি এনে অন্যায়-অবিচার যুলুম দূর করে আল্লাহর অভিপ্রায় (মানবজাতির শান্তি) বাস্তবায়নে আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধ হতেই হবে। মনে রাখতে হবে আমরা সুন্দরের পূজারী, আমরা অসুন্দরকে ঘৃণা করি। আমাদেরকে আরো মনে রাখতে হবে আমরা যে যে ধর্মের অনুসারীই হই না কেন, আমাদের আগমন মূলত একই দম্পতি আদম-হাওয়া (আ.) থেকে। সুতরাং সেই সূত্রে আমরা একে অপরের ভাই-বোন। তাই কেন আমরা বিভক্তির রেখা টানবো আমাদের নিজেদের মধ্যে? আল্লাহ আমাদেরকে শয়তানের প্ররোচনা থেকে মুক্তি দিয়ে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার শক্তি দান করুন। আমীন।