আর আল্লাহর রসুল বলেছেন, আমার উম্মাহর আলেমরা হবে আসমানের নিচে নিকৃষ্টতম জীব, তাদের থেকে উৎপন্ন ফেতনা তাদের দিকেই প্রত্যাবর্তিত হবে (আলী রা. থেকে বায়হাকী)। সুতরাং যারা এসকল ধর্মব্যবসায়ীদের অনুসরণ করবে তারাও জাহান্নামেই যাবে। পবিত্র কোর’আনে আল্লাহ রসুলাল্লাহকে (সা.) সত্য প্রচারের বিনিময়ে কোনো মজুরি, সম্পদ, বিনিময় (ঢ়ধুসবহঃ, বিধষঃয, ৎবধিৎফ) গ্রহণ না করার জন্য অন্তত ছয়টি আয়াতে নির্দেশ প্রদান করেছেন। আল্লাহ বলেছেন,
১. তুমি তাদের নিকট কোনো মজুরি দাবি কোরো না। এই বাণী তো বিশ্বজগতের জন্য উপদেশ মাত্র (সুরা ইউসুফ ১০৪)।
২. বল! আমি এর জন্য তোমাদের নিকট কোনো পারিশ্রমিক চাই না। এবং যারা মিথ্যা দাবি করে আমি তাদের দলভুক্ত নই (সুরা সা’দ ৮৬)।
৩. বল! আমি এর (দীনের) বিনিময়ে তোমাদের কাছ থেকে প্রেম-ভালোবাসা ও আত্মীয়তাজনিত সৌহার্দ্যপূর্ণ ব্যবহার ব্যতীত অন্য কোনো মজুরি চাই না (সুরা শুরা – ২৩)।
৪. তবে কি তুমি তাদের কাছে কোনো পারিশ্রমিক চাচ্ছ যা ওরা একটি দুর্বহ বোঝা মনে করে (সুরা তুর: ৪০)?
৫. তাদেরকেই (নবীদেরকেই) আল্লাহ সৎপথে পরিচালিত করেছেন। সুতরাং তুমি তাদের পথ অনুসরণ কর; বল! এর জন্য আমি তোমাদের কাছে কোনো মজুরি চাই না। এটা তো বিশ্ব জগতের জন্য উপদেশ (সুরা আনআম – ৯০)।
৬. (হে মোহাম্মদ!) তুমি কি তাদের নিকট কোনো মজুরি চাও? তোমার প্রতিপালকের প্রতিদানই তো শ্রেষ্ঠ এবং তিনিই শ্রেষ্ঠ রেযেকদাতা (সুরা মুমিনুন: ৭২)।
প্রত্যেক নবী-রসুল তাদের জাতির উদ্দেশ্যে একটি সাধারণ ঘোষণা দিয়েছেন যে, আমি তোমাদের কাছে কোনো বিনিময় চাই না, আমার বিনিময় রয়েছে আল্লাহর কাছে। এ বিষয়ে নবী রসুলদের (আ.) বেশ কয়েকজনের ঘোষণা আল্লাহ দৃষ্টান্তস্বরূপ পবিত্র কোর’আনেও সন্নিবেশিত করেছেন।
৭. নূহ (আ.) এর ঘোষণা: হে আমার সম্প্রদায়! এর পরিবর্তে আমি তোমাদের নিকট ধন সম্পদ চাই না। আমার পারিশ্রমিক আল্লাহর নিকট (সুরা হুদ-২৯)।
৮. হুদ (আ.) এর ঘোষণা: হে আমার সম্প্রদায়! আমি এর পরিবর্তে তোমাদের নিকট কোনো মজুরি চাই না। আমার পারিশ্রমিক তাঁরই নিকট যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন। তোমরা কি তবুও বুদ্ধি (আক্ল) খাটাবে না (সুরা হুদ-৫১)?
৯. নূহ (আ.) এর ঘোষণা: আমি এর বিনিময়ে তোমাদের কাছে কোনো পারিশ্রমিক চাই না। আমার পারিশ্রমিক তো কেবল বিশ্বজাহানের প্রতিপালকের কাছে রয়েছে (সুরা শু’আরা ১০৯)।
১০. সালেহ (আ.) এর ঘোষণা: আমি তোমাদের নিকট এর জন্য কোনো পারিশ্রমিক চাই না। আমার মজুরি জগতসমূহের প্রতিপালকের নিকট রয়েছে (সুরা শু’আরা-১৪৫)।
১১. লুত (আ.) এর ঘোষণা: এর জন্য আমি কোনো মজুরি চাই না। আমার মজুরি জগতসমূহের প্রতিপালকের নিকট রয়েছে (সুরা শু’আরা-১৬৪)।
১২. নূহ (আ.) এর ঘোষণা: যদি তোমরা আমার কথা না শোনো তাহলে জেনে রাখো, আমি তোমাদের কাছে কোনো বিনিময় চাই নি। আমার প্রতিদান কেবল আল্লাহর নিকট এবং আমাকে মুসলিম (সত্যের প্রতি সমর্পিত) হওয়ার জন্য আদেশ করা হয়েছে (সুরা ইউনুস ৭২)।
১৩. হুদ (আ.) এর ঘোষণা: আমি এর বিনিময়ে তোমাদের নিকট কোনো মজুরি চাচ্ছি না। আমার পারিশ্রমিক তাঁরই নিকট যিনি এই বিশ্বজাহানের স্রষ্টা (সুরা শু’আরা ১২৭)।
১৪. শোয়েব (আ.) এর ঘোষণা: আমি এর জন্য তোমাদের নিকট কোনো মূল্য চাই না। আমার মজুরি জগতসমূহের প্রতিপালকের নিকট রয়েছে (সুরা শু’আরা-১৮০)।
এমন আরও বহু আয়াত, রসুলাল্লাহর হাদীস উল্লেখ করা যায় যা থেকে প্রমাণিত হয়, দীনের কোনো কাজ করে অর্থ উপার্জন করা কেবল হারামই নয়, এটি দীনকে ধ্বংস করার জন্য যথেষ্ট। এটা করলে ধর্মই বিকৃত হয়ে যাবে, মানুষ আর সঠিক পথ পাবে না, মুক্তির পথ পাবে না। ভুল পথে চলতে বাধ্য হবে, পরিণামে দুনিয়া আখেরাত দুটোই হারাবে ঠিক যেভাবে অভিধানে ভুল বানান লেখা হলে মানুষ ভুলটাকেই সঠিক বলে মনে করবে। তাই ধর্মের কাজ হবে নিঃস্বার্থভাবে। অথচ আমাদের সমাজে নামাজ পড়ানো, ওয়াজ করা, মুর্দা দাফন করা থেকে শুরু করে একেবারে রাজনীতি পর্যন্ত সকল অঙ্গনেই ধর্মের কাজ করে পার্থিব স্বার্থ হাসিল করা হয়ে থাকে। আমরাও অন্ধের মতো পূর্ব থেকে চলে আসা রীতি মোতাবেক ধর্মব্যবসাকেই ধর্মজীবনের অঙ্গ বানিয়ে নিয়েছি। এই কাজের দ্বারা আমরা যে আল্লাহর বহু প্রত্যক্ষ হুকুমকে অস্বীকার ও অমান্য করেছি সে সম্পর্কে আমরা পুরোপুরি বেখেয়াল। আল্লাহ সেই সব মানুষকে অনুষরণ করতে আদেশ করেছেন যারা ধর্মের কাজের বিনিময়ে কোনো পার্থিব সম্পদ গ্রহণ করে না। তিনি বলেছেন, “তোমরা তাদের অনুসরণ করো যারা কোনো বিনিময় গ্রহণ করে না এবং যারা সঠিক পথে আছে (সুরা ইয়াসীন ১৭)”।
আমরা যদি সত্যিই ইসলামকে ভালোবাসি, আল্লাহর সন্তুষ্টি আশা করি, আমাদের আমলকে কবুলযোগ্য করতে চাই তাহলে এই সুস্পষ্ট অন্যায়ের বিরুদ্ধে আমাদের সকলকে সোচ্চার হতেই হবে।