সুয়াইব আল বান্না:
পাশ্চাত্যের সাম্রাজ্যবাদীদের পৃথিবীব্যাপী চালানো আগ্রাসন ইতিহাস থেকে এখনও মুছে যায় নি। সেই ইতিহাস আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় ২০০ বছরের গোলামির জিঞ্জিরকে। শুধু আমাদের এই উপমহাদেশই নয়, অস্ত্র ও বন্দুকের নলে বিশ্বাসী পাশ্চাত্য শাসকরা তাদের সামরিক শক্তিবলে পৃথিবীর একটি সিংহভাগ ভূখণ্ডকে শাসন-শোষণ করেছে, সর্বস্ব লুট করে নিয়ে গেছে। পরিকল্পিতভাবে তাদের তৈরি শিক্ষাব্যবস্থা অনুযায়ী শিক্ষা দিয়ে পদানত জাতিগোষ্টিগুলোকে পাশ্চাত্য সম্পর্কে হীনমন্য জাতিতে পরিণত করেছে। এক শতাব্দীও হয় নি আমাদের এই ভারতীয় উপমহাদেশ ব্রিটিশদের অপশাসন থেকে মুক্তি লাভ করে। এই মুক্তিও আমাদের অর্জন সেটা ভাবাও ভুল হবে। কারণ, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর দুর্বল হয়ে পড়া ব্রিটিশরা নিজেদের পুনর্গঠন এবং ক্ষয়ক্ষতি পোষানোর জন্যই এই উপমহাদেশকে নামে মাত্র স্বাধীনতা দিয়ে চলে যায়। যে স্বাধীনতা তারা দিয়েছিলেন তা কেবল শাসক নির্বাচনের স্বাধীনতা, শাসনব্যবস্থা হিসেবে শিক্ষা দিয়ে গেলেন এমন এক গণতন্ত্র যার অবশ্যম্ভাবী ফল হলো নিজেরা-নিজেরা দলাদলি-ঐক্যহীনতা। পরিণামে সেই বিদেশী শক্তির গোলামি। তারা আমাদেরকে মানচিত্র দিয়ে গেছে ঠিকই কিন্তু কল কাঠিটা তাদের হাতেই রেখেছে। শুধু পরিবর্তন হয়েছে শাসকের। ফল ঐ একই। আমরা সাধারণ জনগণ তখনো শোষিত হয়েছি, এখনো শোষিতই হচ্ছি। পার্থক্য হলো এখন শোষিত হচ্ছি দেশীয় শাসকদের হাতে।
আমাদের স্বাধীনতার স্বরূপ কী? একটি ভূ-খণ্ড, একটা পতাকা এবং ঐ ভূ-খণ্ডের মধ্যে আবদ্ধ থেকে নিজেদের দাবি আদায়ের আন্দোলন। এটাকেই আমরা স্বাধীনতা বলে মেনে নিয়েছি। একটা পাখিকে যদি খাঁচায় আটকে রাখা যায় সে প্রথমে কিছুদিন মুক্ত হওয়ার জন্য ছটফট করতে থাকে। কিন্তু কিছুদিন অতিবাহিত হওয়ার পর যখন সে বাহিরের দুনিয়ার কথা ভুলে যায়, তার মুক্ত জীবনের কথা ভুলে যায় সে তখন ঐ খাঁচাটাকেই তার পৃথিবী ভাবতে শুরু করে। তার চিন্তাশক্তিও সীমিত হয়ে যায়। তার যাবতীয় চিন্তা-চেতনা হয় ঐ খাঁচাকেন্দ্রিক। ঐ খাঁচায় বসে একটু ভালো খানা-দানা পেলেই সে খুশি থাকে। এমন একটা সময় আসে যখন তাকে মুক্ত করে দিলেও সে আবার ঐ খাঁচাতেই ফিরে আসে। ঐ পরাধীন জীবনটাকেই সেচ্ছায় মেনে নেয়। ঐ পাখিটির মতো আমরাও আমাদের অতীত ইতিহাসকে ভুলে গেছি। আমরা ভুলে গেছি এক সময় আমরা মোসলেমরাই ছিলাম অর্ধ পৃথিবীর শাসক, মহা-মর্যাদার ধারক। কোটি কোটি মানুষের অশান্তি দূর করে শান্তিপূর্ণ সমাজ উপহার দিয়েছিলাম আমরাই। কিন্তু এখন সেই শান্তি আমাদের ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। স্বাধীনতা যেটা পেয়েছি তা কেবল নামে। আমরা আজও ঐ পশ্চিমা প্রভুদেরই অধীন হয়ে আছি।