রসুলাল্লাহর (সা.) ওফাতের পর মুসলিম উম্মাহর নেতৃত্ব নির্ধারণ নিয়ে তিনদিন পর্যন্ত একটা দ্বিধাদ্বন্দ্ব চলছিল। তারপর কিছু সাহাবি উদ্যোগী হয়ে রসুলাল্লাহর সার্বক্ষণিক সঙ্গী আবু বকরকে (রা.) খলিফা হিসাবে গ্রহণ করেন। অন্যরাও তখন দ্বিধাদ্বন্দ্ব ঝেড়ে ফেলে তাঁর হাতে বায়াত নেন। আবু বকর (রা.) প্রথম খলিফা নির্বাচিত হওয়ায় মো’মেনদের অনেকেই খানিকটা চিন্তিত হয়ে পড়েন। তিনি কি পারবেন চারদিকের বিদ্রোহের দাবানলকে র্নিবাপিত করে ইসলামের জয়যাত্রাকে অব্যাহত রাখতে? সকলেই বুঝতে পেরেছিলেন যে, রসুলাল্লাহর ওফাতের পর স্বভাবতই আরবের পুরোনো জাহেলিয়াত বার বার মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে চাইবে, গোত্রপতিরা তাদের পূর্ব সম্মানের দাবি তুলবে যা উম্মাহর সংহতির দেওয়ালকে ক্রমাগত আঘাতে দুর্বল করে ফেলবে। ইসলামের এই দুর্যোগের সময় তারা আশা করেছিলেন একজন দুর্জয় শক্তি ও কঠোর ব্যক্তিত্বসম্পন্ন নেতৃত্বের। আবু বকর (রা.) ছিলেন হালকা – পাতলা গড়নের এবং বয়সের চাপে অনেকটা ন্যুব্জ। তার চেহারায় ফল বয়সের স্পষ্ট ছাপ যদিও দাড়িতে মেহেদি লাগাতেন। তার স্বভাব ছিল এত ভদ্র ও অন্তর ছিল এমন নরম যে, সহজেই চোখে পানি এসে যেত।
দায়িত্ব গ্রহণের পর তাঁর প্রতি আনুগত্য প্রকাশের জন্য সমবেত মুসলমানদের উদ্দেশে তিনি যে বক্তব্য রাখেন তার মধ্যেও তাঁর স্বভাবেরই প্রতিফলন ঘটে। তিনি বলেন, “সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর। আমি তোমাদের নেতা নির্বাচিত হয়েছি, কিন্তু আমি তোমাদের মাঝে সর্বোত্তম ব্যক্তি নই। আমি যদি সঠিক পথে থাকি তোমরা আমাকে সাহায্য করবে আর আমি ভুল পথে চললে সংশোধন করে দিবে। সততাই আনুগত্য আর মিথ্যা বিদ্রোহের শামিল। তোমাদের মধ্যে যে দুর্বল সে আমার নিকট শক্তিশালী বলে প্রতীয়মান হবে। যতক্ষণ পর্যন্ত না আমি আল্লাহর হুকুমে তার অধিকার সুপ্রতিষ্ঠিত করি। আর তোমাদের মধ্যে যে শক্তিশালী আমার দৃষ্টিতে সে দুর্বল যতক্ষণ পর্যন্ত না আল্লাহর। ইচ্ছায় সে তার কর্তব্য পালন করে।
“আল্লাহর রাস্তায় জেহাদ হতে বিরত থেকো না, কেননা যারা জেহাদ থেকে বিরত থাকে আল্লাহ তাদেরকে চরমভাবে অপমানিত করেন। কোনো সমাজে অনাচার সাধারণ রূপ লাভ করলে আল্লাহ তাদেরকে কঠোর শাস্তির মধ্যে ফেলেন।
“আমি যতক্ষণ আল্লাহ ও রসুলের নির্দেশমাফিক চলব তোমরা আমাকে অনুসরণ করবে এবং আমার মধ্যে তার ব্যতিক্রম দেখলে আমাকে অনুসরণ করতে বাধ্য নও।
“নামায ত্যাগ কোরো না! তোমাদের উপর আল্লাহর রহমত বর্ষিত হোক।”
আবু বকরের (রা.) সৎ গুণাবলী ও ইসলামের প্রতি তাঁর অসাধারণ দরদ ও খেদমতের কথা ছিল সর্বজনবিদিত। তাঁর ব্যক্তিগত সাহস, প্রিয় রসুল (সা.) এর প্রতি ভালবাসা ও বিশ্বস্ততা, উন্নত নৈতিকতা এবং ইসলামের প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস ছিল প্রশ্নের অতীত। ইসলাম গ্রহণকারী তৃতীয় পুরুষ হিসেবে আল্লাহর নিকট হতে সুসংবাদ প্রাপ্ত দশজনের মধ্যেও তাঁর আসন ছিল উঁচুতে। কিন্তু এসব গুণ থাকলেই কি দুর্যোগকালে নেতৃত্ব দেয়া যায়? মুসলমানদের আশংকাকে আরও ঘনীভূত করেছিল পূর্ব পরিকল্পিত একটি অভিযানে উসামা বাহিনীর মদীনা ত্যাগ।
৬৩২ খ্রিষ্টাব্দের মে মাসের মাঝামাঝি নাগাদ রসুলাল্লাহ (সা.) জর্দানে একটি বিশাল অভিযানের প্রস্তুতির নির্দেশ দান করেন। তখন তিনি অন্তীম অসুস্থতায় ভুগছিলেন। তিনি প্রত্যেক মুসলিমকে এই অভিযানে যোগদানের নির্দেশ দেন। এই অভিযানের কমান্ডার হিসেবে তিনি তাঁর এক সময়ের ক্রীতদান যায়েদ বিন হারিসার। ২২ বছরের যুবক পুত্র উসামাকে (রা.) নিয়োগ করেন। যায়েদ মূতার যুদ্ধে শাহাদত বরণ করেন। উসামা একটি অতি সাধারণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করলেও রসুলাল্লাহ (সা.) তাঁকে আরবের অভিজাত গোত্রগুলোর বিশিষ্ট যোদ্ধাগণের উপর কমান্ডার নিযুক্ত করেন। মুসলিমগণ ওহুদের পশ্চিম প্রান্তে সমবেত হয়। এই বাহিনী উসামার বাহিনী নামে পরিচিত। এটাই ছিল রসুলাল্লাহ (সা.) এর জীবনের শেষ অভিযানের নির্দেশ। উসামাকে জর্দানের মূতা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করতে বলা হয়। তার প্রতি রসুলাল্লাহ (সা.) এর নির্দেশ ছিল, “তোমার পিতাকে যেখানে হত্যা করা হয়েছিল সেই এলাকায় আকস্মিক আক্রমণ পরিচালনা করো। সংগে পথপ্রদর্শক নিয়ে নাও এবং সামনে স্কাউট ও গুপ্তচর প্রেরণ করো এবং দ্রুত যাত্রা করো।”
ইন্তিকালের কিছু পূর্বে রসুলাল্লাহ (সা.) এই অভিযানের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেছিলেন, “উসামার বাহিনীকে প্রেরণ করতে ভুলো না।” ১০ জুন ৬৩২ খ্রিষ্টাব্দে (১২ রবিউল আউয়াল, ১১ হিজরী) রসুলাল্লাহ (সা.) – এর শেষ বিদায়ের প্রাক্কালে উসামার (রা.) বাহিনী ক্যাম্পেই ছিল। একই দিনে আবু বকর (রা.) খলিফা হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। পরদিন খলিফা আবু বকর (রা.) উসামার বাহিনীকে অভিযান যাত্রার প্রস্তুতি গ্রহণের নির্দেশ দেন। সমস্ত বিশিষ্ট সাহাবাকে এমন কি খলিফার ঘনিষ্ঠ সহযোগী ও বন্ধু উমরকেও যুবক উসামার নেতৃত্বে যুদ্ধ করার জন্য প্রেরণ করা হয়। চারদিক থেকে স্বধর্মত্যাগীদের বিদ্রোহের খবর আসা সত্ত্বেও অভিযানের প্রস্তুতি চলতে থাকে। এই পরিস্থিতিতে কয়েকজন বিশিষ্ট সাহাবি খলিফার সংগে সাক্ষাৎ করে বলেন, “এই মুহূর্তে অধিকাংশ আরব গোত্রে বিদ্রোহী হয়ে পড়েছে এবং চারদিক থেকে বিভেদ ও বিচ্ছিন্নতার খবর আসছে। এরপরও কি আপনি উসামার বাহিনীকে অভিযানে পাঠাতে চান? মুসলিমগণ সংখ্যায় অল্প আর অবিশ্বাসীরা প্রচুর। এ অভিযান স্থগিত ঘোষণা করা উচিত।”
জবাবে হযরত আবু বকর (রা.) অত্যন্ত দৃঢ়ভাবে ঘোষণা করেন, “আমি যদি জানতে পারি যে, চারদিক থেকে বন্যপ্রাণী এসে অরক্ষিত মদীনায় প্রবেশ করে আমার শরীরের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে আমাকে ছিন্নভিন্ন করে ফেলবে তবু রসুলাল্লাহ (সা.) এর নির্দেশিত এ অভিযানে উসামার বাহিনী পাঠানো হবে।”
আরও কয়েকদিন অতিবাহিত হয়। চারদিক থেকে বিদ্রোহের ভয়াবহ খবর আসতে থাকে। উসামাও (রা.) অন্যদের মতোই মদীনা ও ইসলামের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েন এবং উমরের সংগে সাক্ষাৎ করে অনুরোধ করেন, “খলিফার নিকট গিয়ে মুসলিম বাহিনীকে মদীনায় অবস্থানের অনুমতি প্রার্থনা করুন। প্রত্যেকটি গোত্রের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিগণ আমার সংগে। আমরা সকলে অভিযানে গেলে মদিনাকে কে শত্রুর আক্রমণ হতে রক্ষা করবে?”
উমর (রা.) খলিফার সংগে সাক্ষাৎ করতে সম্মত হন। ক্যাম্প ত্যাগের প্রাক্কালে একদল নেতৃস্থানীয় মুসলিম তার সংগে সাক্ষাৎ করে একই পরামর্শ দেন এবং বলেন, “তিনি যদি আমাদের মদীনায় অবস্থানের প্রস্তাব অনুমোদন না করেন, তাহলে অন্তত উসামার চেয়ে একজন বিজ্ঞ কমান্ডার নিয়োগের অনুরোধ করবেন।” উমর (রা.) খলিফাকে এই প্রস্তাব দানেও সম্মত হন।
আবু বকর (রা.) তাঁর ঘরের মেঝেতে বসেছিলেন। তাঁর ঘাড়ে দুর্যোগময় মুহূর্তে খেলাফতের গুরু দায়িত্ব। বিশ্বাসের দৃঢ়তা না থাকলে চারদিকের প্রতিকূলতা হয়তো তাঁকে ঘাবড়িয়ে ফেলতো। উমর (রা.) ধীরে সুস্থে ও দৃঢ় প্রত্যয় সহকারে তাঁর বিনয় নম্র ঘনিষ্ঠ সহকর্মীর নিকট বক্তব্য উপস্থাপন করেন।
আবু বকর (রা.) উমরের বক্তব্য শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করেন। তিনি কমান্ডারের পরিবর্তন সংক্রান্ত উমরের (রা.) মতামতও শ্রবণ করেন। তার পর তিনি পায়ের উপর সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে উমর (রা.) কে উদ্দেশ্য করে উচ্চকণ্ঠে বলেন, “ওহে খাত্তাবের পুত্র উমর, আল্লাহর রসুল (সা.)-ই উসামাকে আমির নিয়োগ করেছিলেন। আর তুমি চাও আমি তাঁকে আমিরের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেই?”
৬৩২ খ্রিষ্টাব্দের ২৪শে জুন (১ রবিউল আখির, ১১ হিজরী) উসামার বাহিনী। ক্যাম্প ত্যাগ করে যাত্রা শুরু করে। আবু বকর (রা.) অশ্বারোহী উসামার সংগে পায়ে হেঁটে কিছুদূর অগ্রসর হন। উসামা (রা.) ঘোড়া থেকে নেমে হাঁটতে চাইলে তাকে বারণ করেন। তিনি বলেন, একজন মুসলিম সৈনিক আল্লাহর পথে প্রতিটি পদক্ষেপের জন্য ৭০০ ভাল কাজের ফলাফল লাভ করে ও ৭০০ পাপ কাজের ক্ষতি হতে মুক্তি পায়।”
আবু বকর (রা.) তাঁর উপদেষ্টা হিসেবে উমরকে রেখে যাওয়ার অনুরোধ করলে উসামা (রা.) সংগে সংগে রাজি হয়ে যান। তারপর তিনি যুদ্ধগামী আমিরের উদ্দেশে নির্দেশ দান করেন, “কুজার বিরুদ্ধে আকস্মিক আক্রমণের মধ্যদিয়ে তোমার অভিযান শুরু করবে। কোনো অবস্থাতেই আল্লাহর রসুলের দেয়া এই মিশন থেকে তুমি বিরত হবে না।” উসামার (রা.) বাহিনী যাত্রা শুরু করে।
রসুলাল্লাহ (সা.)-এর ইন্তিকালের পরবর্তী নাজুক পরিস্থিতিতে উসামার বাহিনীর মদীনা ত্যাগ ও অভিযান পরিচালনার সিদ্ধান্তকে অনেকে ভুল বলে মনে করেন। আবার অনেকে এটাকে আবু বকরের (রা.) একটি বিজ্ঞ সিদ্ধান্ত বলেও মনে করেন। কেননা এই অভিযানের সিদ্ধান্ত বিদ্রোহীদেরকে হয়তো একটা ধারণা দিয়ে থাকবে যে, মুসলিমগণ খুব শক্তিশালী। প্রকৃতপক্ষে বিষয়টি ছিল ভিন্নরূপ। আরবের হাজার হাজার বছরের জাহেলিয়াতি ধ্যান ধারণায় দাসত্বপ্রথা এতটাই শেকড় গেড়ে বসেছিল যে রসুলাল্লাহকে সেই শেকড় উপড়ে ফেলতে অনেক বেগ পেতে হয়েছে। কোরায়েশদের আভিজাত্যের ধারণা এবং দাসত্বপ্রথা ছিল এমনই দুটো জাহেলিয়াত। জায়েদ বিন হারিস (রা.) ছিলেন একজন ক্রীতদাস রসুলাল্লাহ (সা.) যাকে কেবল আযাদই করেন নি, নিজের পুত্র বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন। বাল্যকাল থেকেই যায়েদ রসুলাল্লাহর সাহচর্য পেয়েছিলেন। তাবারি, ইবনে সা’দ প্রমুখ প্রথম যুগের ঐতিহাসিকদের বর্ণনা মোতাবেক পূর্ণবয়স্ক পুরুষদের মধ্যে যায়েদই (রা.) প্রথম ইসলাম গ্রহণকারী ব্যক্তি। মুতার যুদ্ধ সংঘটনের পূর্বে আরো বহু সেনা অভিযানে রসুলাল্লাহ যায়েদকে (রা.) সেনাপতি নিয়োগ করেছিলেন। তখনও কেউ কেউ এই নিয়োগের বিরুদ্ধে আপত্তির সুর তুলেছিল। রসুলাল্লাহ অত্যন্ত কড়া ভাষায় সেই আপত্তির জবাব দিয়েছিলেন এবং মো’মেনদের মধ্যে যে কোনো বর্ণবাদ (জধপরংস) থাকতে পারবে না তা দ্ব্যার্থহীনভাষায় জানিয়ে দিয়েছিলেন। সেই যায়েদের (রা.) পুত্র উসামাকে (রা.) যখন আল্লাহর রসুল সেনানায়ক হিসাবে নির্বাচন করলেন, নিজে তাঁর মাথায় শিরস্ত্রাণ পরিয়ে, নিজহাতে পতাকা তৈরি করে উসামার (রা.) হাতে তুলে দিয়ে বললেন, যাও সেই প্রান্তরে যেখানে তোমার পিতা শহীদ হয়েছেন, তখন অনেকের মধ্যেই আরবদের সেই প্রাচীন জাহেলিয়াত তথা মিথ্যা আভিজাত্যের ধ্যানধারণা মাথাচাড়া দিয়ে উঠল। তারাই অভিজ্ঞতা ও বয়সের স্বল্পতার অজুহাতে উসামার নেতৃত্বকে অস্বীকার করার চেষ্টা করল। কিন্তু রসুলাল্লাহ জানতেন তাদের এই জাত্যাভিমানের ব্যাধির কথা। তাই তিনি রোগাক্রান্ত ও শয্যাশায়ী হয়েও মাথায় পট্টি বাঁধা অবস্থায় উঠে চলে গেলেন মসজিদে। সব সাহাবিদেরকে একত্র করে তিনি তাদেরকে সতর্ক করলেন এই বলে যে,
“হে সমবেত লোকেরা! তোমরা ওসামার যুদ্ধাভিযান কার্যকর কর। আমার জীবনের শপথ! তোমরা যদি তার নেতৃত্ব নিয়ে কথা বলে থাক, তবে এর আগে তোমরা তার পিতার নেতৃত্বের ব্যাপারে তো কথা তুলেছিলে। অথচ সে নেতৃত্বের যোগ্যই বটে, যেমন তার পিতাও এর যোগ্য ছিল। সে আমার নিকট অধিকতর পছন্দনীয়; আর তার পরে এই ওসামাও আমার নিকট অধিকতর প্রিয়।”
রসুলাল্লাহর এই কথা দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, ওসামা (রা.) মুসলিম বাহিনীর সেনাপতি হিসাবে যোগ্য ব্যক্তিই ছিলেন এবং আবু বকরের (রা.) দৃঢ়তা ও ওসামার (রা.) রণশৈলী দ্বারা অর্জিত বিজয় সেই বাক্যকে সত্য বলে প্রতিপন্ন করেছিল।
উসামার (রা.) বাহিনীর বিদায়ের পর চারদিক হতে বিদ্রোহের ও বিদ্রোহী গোত্রগুলো সমাবেশের খবর আসতে থাকে। মুসলমানদের আশংকাও ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পেতে থাকে। অপর পক্ষে স্বধর্মত্যাগীগণ আবু বকরের (রা.) খেলাফতের দায়িত্ব গ্রহণ ও উসামার বাহিনীর মদীনা ত্যাগের সংবাদে উল্লাস প্রকাশ করতে থাকে। আবু বকরের নেতৃত্বে পরিচালিত নবগঠিত মুসলিম রাষ্ট্রকে ধ্বংস করা তাদের জন্য অপেক্ষাকৃত সহজ মনে হতে থাকে। তাদের এটুকু সান্ত্বনা ছিল যে, উমর (রা.) ও আলী (রা.) -এর মতো কঠোর ও অপ্রতিদ্বন্দ্বী ব্যক্তিত্বের তাদেরকে মোকাবিলা করতে হবে না। মোকাবেলা করতে হবে একজন ভদ্র ও বৃদ্ধ ব্যক্তিকে।
কিন্তু এই ভদ্র ও বৃদ্ধ ব্যক্তিটির তৎপরতায় অল্প সময়ের মধ্যেই শংকিত মুসলিমগণ হলো বিস্মিত এবং স্বধর্মত্যাগীগণ পেল চরম আঘাত। একজন গোত্র প্রধান আবু বকরের বাহিনীর হাত হতে পালিয়ে ছুটতে ছুটতে আর্তনাদ করে বলেছিল, “আরবদের উপর অভিশাপ নাজিল হয়েছে আবু কাহাফের পুত্রের পক্ষ থেকে।”