স্বাধীনতার পর থেকে বারবার বাংলাদেশে রাজনৈতিক অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। হাজারো মায়ের বুক খালি হয়েছে, হাজারো সšত্মান এতিম হয়েছে, দেশের লক্ষ লক্ষ কোটি টাকার সম্পদ বিনষ্ট হয়েছে। এই নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি বারবার কেন তৈরি হয় তার ভেতরের কারণ হেযবুত তওহীদ প্রথম থেকেই বলে আসছে এবং সমাধানের রাস্তায় তুলে ধরছে।এরই মধ্যে বিগত বছরগুলোতে শুরু হয় ভয়াবহ রাজনৈতিক দাঙ্গা-হাঙ্গামা। গণতান্ত্রিক অধিকারের নামে রাজনৈতিক দলগুলোর হরতাল, অবরোধ, জ্বালাও-পোড়াও চলতে থাকে দিনের পর দিন। হাজার হাজার মানুষকে আগুনে পুড়িয়ে হতাহত করা হয়। আতঙ্কের রাজ্যে পরিণত হয় সারা দেশ। ২০১৩ সালে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ করার জন্য সংশিস্নষ্ট রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাকর্মীরা ১৫ জন পুলিশ সদস্যকে হত্যা করে। এসময় সংঘটিত রাজনৈতিক সহিংসতার ৪১৯ টি প্রধান ঘটনায় ৪৯২ জন নিহত হয় এবং ২২০০ জন আহত হয়।
আবার ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আবারো নৈরাজ্য সৃষ্টি হয়। শত শত যানবাহন ভাংচুর করে সেগুলোতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। ওই ঘটনায় পেট্রোল বোমা, হাতে বানানো বোমা এবং অন্যান্য সহিংসতায় ২০জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যসহ ২০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়। সহিংসতার সময় রাস্তার পাশে থাকা হাজার হাজার গাছ কেটে ফেলা হয়। এছাড়া, ছোট দোকান, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এবং বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোতেও আগুন দেয়া হয়। মসজিদ, মন্দির, প্যাগোডা ও গীর্জা ভাঙচুর করাসহ পবিত্র কুরআনের শত শত কপি জ্বালিয়ে দেয়ার ঘটনাও ঘটে। নির্বাচনের দিন, একজন প্রিসাইডিং অফিসারসহ মোট ২৬ জন রাজনীতিক সহিংসতার বলি হয়। সারাদেশে ৫৮২টি স্কুলে ভোটকেন্দ্রে আগুন লাগানোর ঘটনা ঘটে।২০১৫ সালের ৪ জানুয়ারি নির্বাচনের এক বছর পূর্তির দিন আবারও জ্বালাও-পোড়াও শুরু হয়। ওই সময় ২৩১ জনকে হত্যা করা হয় যাদের বেশিরভাগই পেট্রোল বোমা এবং আগুনে দগ্ধ হয়ে মারা যায়। ওই ঘটনায় আহত হয় আরো ১ হাজার ১শ ৮০ জন। সেসময় ২,৯০৩টি গাড়ি, ১৮টি রেলগাড়ি এবং ৮টি যাত্রীবাহী জাহাজে আগুন লাগানো হয়। ওই সময় হামলার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয় সরকারি অফিসগুলো। এই রাজনৈতিক সহিংসতায় ভাঙচুর এবং আগুনে পুড়ে ৬টি ভূমি অফিসসহ ৭০টি সরকারি কার্যালয় নষ্ট হয়ে যায়।
ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির মতে, হরতাল-অবরোধের প্রতিটি দিন দেশের ১৬০০ কোটি টাকা (অথবা ১৯২.৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) বা জিডিপি’র ০.২ শতাংশ ব্যয় হয়। এর অর্থ ২০১৩, ২০১৪ এবং ২০১৫ সালে এ সকল হরতাল-অবরোধে দেশের ১.৫৩ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি অর্থ ক্ষয় হয়। তবে এই ড়্গতি কেবল ব্যবসায়িক খাতের ড়্গতি। রাজনৈতিক সহিংসতায় যে সম্পদের ক্ষতি হয়েছে তা এরমধ্যে অন্তর্ভুক্ত নয়।জামায়াত নেতা মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর রায়ের পরবর্তী সহিংস ঘটনায় ২০০ কোটি টাকার রাষ্ট্রীয় ও বেসরকারি সম্পদ নষ্ট হয়েছে বলে জানা গেছে। এসব ঘটনায় সারাদেশের স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রায় সাড়ে ৫ কোটি টাকার সম্পদের ক্ষতি হয়। হরতালের কারণে বাংলাদেশের কৃষিব্যবস্থাও চূড়ান্তভাবে ভেঙে পড়ে। সে সময় একেকটি হরতালের কারণে প্রতিদিন বাংলাদেশের অর্থনীতি থেকে ঝরে গেছে ২৫০ মিলিয়ন ডলার সমপরিমাণ অর্থ।
যেহেতু হেযবুত তওহীদ সব ধরনের অন্যায়ের বিরম্নদ্ধেই সোচ্চার, তাই এক্ষেত্রে বসে থাকেনি। ওই সময়ে যখন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পর্যন্ত দেশের বহু স্থানে প্রবেশ করতে ব্যর্থ হচ্ছিল, ঢাকা থেকে সারা দেশ কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল, তখন হেযবুত তওহীদ দেশের রাজধানী ‘ঢাকা থেকে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল’ সর্বত্র হাজার হাজার আলোচনা সভা, পথসভা, প্রামাণচিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করে দেশবাসীকে যাবতীয় সন্ত্রাসীপনার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ করতে থাকে। আমাদের বক্তব্য শুনে লড়্গ লড়্গ মানুষ দুই হাত তুলে জাতিবিনাশী কর্মকান্ডে বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ থাকার অঙ্গীকার করে। এক পর্যায়ে সাধারণ মানুষের এই ঐক্যবদ্ধ অবস্থানের সামনে সন্ত্রাসীরা কোণঠাসা হয়ে পড়লে ক্রমশই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করে। হেযবুত তওহীদের ওই ভূমিকা দেশকে ভয়াবহ খাদের কিনার থেকে টেনে তুলতে পেরেছিল এটা নিছক আমাদের দাবি নয়, এটা সচেতন মহলের সুচিন্তক অভিমত যা তারা লিখিত ও মৌখিকভাবে আমাদেরকে জানিয়েছেন।