রিয়াদুল হাসান
বর্তমান পৃথিবীতে টাকা-পয়সা, ধন-দৌলত, খাদ্যসামগ্রী, খনিজ সম্পদ যেমন তেল, গ্যাস, স্বর্ণ কোনো কিছুরই অভাব নেই। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ছোঁয়ায় সমস্ত রকম সম্পদে ভরে উঠেছে পৃথিবী। একটা সময় পর্যন্ত মানুষ অনেক কষ্ট করে মাটি খনন করে সামান্য কিছু খনিজ সম্পদ আহরণ করতে সক্ষম হতো এখন সেখানে প্রযুক্তির মাধ্যমে মাটির বহু নিচের খনিজ সম্পদ মানুষ উত্তোলন করছে। যে জমিতে এক মন ফসল হতো প্রযুক্তির কল্যাণে আজ সেই জমিতেই ১০ গুণ, ২০ গুণ ফসল ফলছে। যে গরুটি দুধ দিত ২-৩ কেজি সেই গরুটি এখন দুধ দিচ্ছে প্রায় ২০-৩০ কেজি। ছাগল, ভেড়াগুলোও বড় বড় হচ্ছে, হাঁস-মুরগির ডিমও বড় বড় হচ্ছে। শিল্প বিপ্লবের ফলে নতুন নতুন শিল্প-কলকারখানা তৈরি হয়েছে যেখান থেকে অল্প শ্রমে বহুগুণ বেশি পণ্য উৎপাদন সম্ভব হয়েছে। বিরাট বিরাট অট্টালিকা উঠছে, ব্রিজ-কালভার্ট হচ্ছে, হাতে হাতে মোবাইল ফোন এসে যোগাযোগ ব্যবস্থার অভ‚তপূর্ব উন্নয়ন হয়েছে, মানুষ মহাকাশে যাচ্ছে, নতুন নতুন গ্রহ আবিষ্কার করছে- এভাবে চিন্তা করতে গেলে সমস্ত দিক থেকে মানবসভ্যতা অনেকদূর এগিয়েছে। কিন্তু বিশ্বপরিস্থিতি সম্পর্কে যারা কিছুমাত্রও অবগত আছেন তারা জানেন যে, প্রতিনিয়ত পৃথিবী যেন তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের দিকেই ধাবিত হচ্ছে। প্রযুক্তিগত উন্নয়নের কারণেই এমন সব বোমা তৈরি হয়েছে যার মাধ্যমে সমগ্র পৃথিবী বহুবার ধ্বংস করে ফেলা সম্ভব। প্রতিটা দেশ অস্ত্রশক্তি বৃদ্ধি করছে, যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে। অভ্যন্তরীণভাবে প্রতিটা সমাজে দিনকে দিন অন্যায়-অবিচার বৃদ্ধি পাচ্ছে। এত উন্নয়ন সত্ত্বেও মানুষ যেন মানুষ হিসাবে আরও অধোগমিত হচ্ছে। এর কারণ হলো- সমস্ত দিক দিয়ে মানুষ উন্নত হলেও একটা বিরাট অভাবও তৈরি হয়েছে। আর সেটা হলো- আদর্শের অভাব।
মানবসমাজকে শান্তিপূর্ণ করার জন্য, শোষণমুক্ত, শ্রেণিহীন, মানবতায় পূর্ণ, দুঃখ-দারিদ্রহীন, সুখী-সমৃদ্ধ পৃথিবী গড়ার জন্য একটার পর একটা আদর্শ মানুষ তৈরি করেছে কিন্তু লাভ হয়নি। সমাজতন্ত্র, পুঁজিবাদ, একনায়কতন্ত্র, রাজতন্ত্র, সামন্ততন্ত্র সব ব্যর্থ হয়েছে। অন্যদিকে ব্যর্থ হয়েছে ধর্মগুলোও। মানুষের মুক্তির চিন্তা না করে ধর্মের ধ্বজাধারীরা যখন কেবল কিছু প্রথা, আচার, অনুষ্ঠান, আমলের মধ্যে আবদ্ধ হয়েছে তখনই কর্তৃত্ব নিয়ে নিয়েছে ধর্মহীন শক্তিগুলো।
এখন মহান আল্লাহ মাননীয় এমামুয্যামানের মাধ্যমে আবার হেযবুত তওহীদকে সেই আদর্শটি দান করেছেন যে আদর্শ মানুষ গ্রহণ করলে সমাজে আর কোনো অন্যায়, অশান্তি থাকবে না। প্রতিটা মানুষ ভাই-ভাই হয়ে বসবাস করতে পারবে। মানুষে মানুষে কোনো ভেদাভেদ থাকবে না। সমগ্র মানবজাতি হবে একজাতি যেহেতু তারা এক আল্লাহর সৃষ্টি, এক বাবা-মা আদম-হাওয়ার সন্তান। এই আদর্শের মূল ভিত্তি হলো- “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ মোহাম্মদুর রসুলাল্লাহ (সা.) যার অর্থ- আল্লাহ ছাড়া কোনো হুকুমদাতা নেই, মোহাম্মদ (সা.) আল্লাহর রসুল।” এই আদর্শটাই ১৪০০ বছর আগে মহানবী মোহাম্মদ (সা.) নিয়ে এসেছিলেন, কিন্তু বিগত ১৪০০ বছরের কালপরিক্রমায় সেটা বিকৃত হতে হতে একেবারে বিপরীতমুখী হয়ে গেছে।
এই আদর্শ পাবার পরে হেযবুত তওহীদের একমাত্র কাজই হলো- মানুষের কাছে এই দর্শটি তুলে ধরা, যতভাবে পারা যায় এই আদর্শটি প্রচার করা। আমরা সম্পূর্ণরূপে আইন মান্য করে বিভিন্ন উপায়ে চেষ্টা করে যাচ্ছি এই আদর্শ প্রচারের মাধ্যমে সমাজকে শান্তিপূর্ণ করতে, মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করতে, ঐক্যের শক্তি দিয়ে দেশকে রক্ষা করতে। এই আদর্শ প্রচারের একটি বড় মাধ্যম হলো আমাদের এই পত্রিকা। এ কারণে হেযবুত তওহীদের প্রায় সকল সদস্য (নারী-পুরুষ) স্বতঃস্ফ‚র্তভাবে এই পত্রিকা বিক্রী করে থাকে। তারা এটাকে এবাদত বলে বিশ্বাস করে। এই পত্রিকা বিক্রী করে তারা একটি টাকাও উপার্জন করে না, বরং সম্পূর্ণ টাকা ফান্ডে দিয়ে দেয় যা পরবর্তী দিনের পত্রিকা তৈরির খরচ যোগাবে। এই কাজে অনেক শিশুও কখনো কখনো অংশগ্রহণ করে নিজ ইচ্ছায়। এতে তারাও আনন্দ পায়, কারণ তারা বিশ্বাস করে যে, এই সত্য প্রচারের কাজই ইসলামের প্রধান কাজ। নবী-রসুলগণের উপর আল্লাহর দেওয়া প্রধান একটি দায়িত্বই ছিল বালাগুল মুবিন (সুস্পষ্টভাবে সত্যগুলো মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া)। এতে যে যাই বলুক আমরা তা কানে নেই না।
হেযবুত তওহীদের ফেনী শাখার আমির দিলআফরোজ ও চট্টগ্রামের আঞ্চলিক আমীর সাইফুল ইসলাম এর সন্তানের নাম দেরার (জারার)। সেও বাবা-মায়ের সঙ্গে সত্য প্রচারে ভ‚মিকা রাখছে পত্রিকা বিক্রির মধ্য দিয়ে। জাতির এই মহা সংকটকালে সত্য প্রচারে ভ‚মিকা রাখার ক্ষেত্রে তার সামর্থের মধ্যে যতটুকু সেটা সে করছে।
হেযবুত তওহীদের সব কাজের মধ্যেই দোষ-ত্রুটি খুঁজে বের করার জন্য একদল মানুষ ওঁৎ পেতে থাকে। তারা এই শিশুটির পত্রিকা বিক্রিকেও তাদের অপপ্রচারের হাতিয়ার বানিয়েছে। তারা বলতে চাচ্ছে- এটা শিশুশ্রম আর হেযবুত তওহীদ তাকে এই কাজে বাধ্য করেছে।
আমরা ছবিতে দেখতে পাচ্ছি, একজন পথচারী ভদ্রলোক এ পত্রিকা বিক্রির কাজে শিশুটিকে অংশ নিতে দেখে কীভাবে দোয়া করছেন। এই সত্যনিষ্ঠ, সাধারণ মানুষদের দোয়ার বরকতে ধর্মব্যবসায়ী কায়েমী স্বার্থবাদীদের অপপ্রচার ভেসে যাবে অচিরেই।
একটা প্রবাদ বাক্য আছে, যারে দেখতে নারি তার চলন বাঁকা। যেহেতু হেযবুত তওহীদের বিরুদ্ধে সমালোচনায় তারা নেমেছেন আদাজল খেয়ে কোমর বেঁধে, এখন তাদের চোখে কত কিছুই অসঙ্গতি মনে হবে। মেয়েরা পত্রিকা বিক্রি করে, মিটিং সমাবেশ করে, ছেলেদের পাশাপাশি সব কাজে অংশ নেয় এগুলোই হচ্ছে তাদের অপপ্রচারের বিষয়বস্তু।
আমাদের এই শিশুদের বাবা-মায়েরা মুসলিম জাতির সংকট উপলব্ধি করে তারা নিজেরা যেমন সত্য প্রচারের সংগ্রাম করছেন, তাদের শিশুদেরকেও দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজ করার দীক্ষা দিচ্ছেন। এটা শিশু শ্রম নয়, কারণ এখানে কোনো প্রকার বিনিময়ের বিষয় নেই। বিনিময় দেওয়াও হয় না, নেওয়াও হয় না। এটা সত্যপ্রতিষ্ঠার জেহাদ, সংগ্রাম।
ঈদের নামাজে, জুমার নামাজে বাবারা সন্তানদের হাত ধরে কেন মসজিদে ঈদগাহে নিয়ে যায়? শিশুদেরকেও আল্লাহর অভিমুখী করার জন্য নয় কি? ন্যায় প্রতিষ্ঠায় যদি শিশুদের উদ্বুদ্ধ করা না হয় তাহলে কী করে একটি ন্যায়পূর্ণ সমাজ প্রতিষ্ঠার বিপ্লব সাধিত হবে। রসুলাল্লাহর সময়ও বহু শিশু-কিশোর কেবল দীনের কাজে নয়, জেহাদের ময়দানে গিয়ে যুদ্ধ পর্যন্ত করেছে। মুআজ ও মাআজ (রা.) এর জেহাদে অংশগ্রহণের ঘটনাকে আপনারা কীভাবে ব্যাখ্যা করবেন? অযথা অপপ্রচার করে নিজেদের পাপের বোঝা আর ভারি করবেন না।