এমামুযযামান জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নীর লেখা থেকে
আল্লাহ যেমন তার কোর’আনে দীন নিয়ে বাড়াবাড়ি করা নিষেধ করে দিয়েছেন, তার নবীও (সা.) নিষেধ তো-করেছেনই, তার উপর যখনই কোন বাড়াবাড়ি দেখেছেন তার আসহাবদের মধ্যে তখনই রেগে গেছেন। একদিন আল্লাহর রসুলকে (সা.) জানানো হলো যে কিছু আরব রোযা রাখা অবস্থায় স্ত্রীদের চুম্ ুদেন না এবং রমযান মাসে সফরে বের হলেও রোযা রাখেন। শুনে ক্রোধে বিশ্বনবীর (সা.) মুখ-চোখ লাল হয়ে গেল এবং তিনি মসজিদে যেয়ে মিম্বরে দাঁড়িয়ে আল্লাহর হামদ বলার পর বললেন- সেই সব লোকদের কী দশা হবে যারা আমি নিজে যা করি তা থেকে তাদের বিরত রেখেছে? আল্লাহর কসম তাদের চেয়ে আমি আল্লাহকে বেশি জানি এবং বেশি ভয় করি (হাদীস-আয়েশা (রা:) থেকে বোখারী, মুশলিম, মেশকাত)।
একদিন একজন লোক এসে আল্লাহর রসুলের (সা.) কাছে অভিযোগ করলেন যে অমুক লোক নামায লম্বা করে পড়ান কাজেই তার (পড়ানো) জামাতে আমি যোগ দিতে পারি না। শুনে তিনি এত রাগান্বিত হয়ে গেলেন যে -বর্ণনাকারী আবু মাসউদ (রা.) বলছেন যে- আমরা তাকে এত রাগতে আর কখনও দেখি নি (বোখারী)।
অত্যন্ত প্রয়োজনীয় কোন বিষয়ে মসলাহ জানতে চাইলে বিশ্বনবী (সা.) প্রথমে তা বলে দিতেন। কিন্তু কেউ যদি আরও একটু খুঁটিয়ে জানতে চাইতো তাহলেই তিনি রেগে যেতেন। কারণ তিনি জানতেন ঐ কাজ করেই অর্থাৎ ফতওয়াবাজী করেই তার আগের নবীদের জাতিগুলো ধ্বংস হয়ে গেছে নিজেদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে।
একদিন একজন পথে পড়ে থাকা জিনিসপত্র কি করা হবে এ ব্যাপারে রসুলাল্লাহর (সা.) কাছে মসলাহ জিজ্ঞাসা করায় তিনি তার জবাব দিয়ে দিলেন। ঐ লোকটি যেই জিজ্ঞাসা করলেন যে যদি হারানো উট পাওয়া যায় তবে তার কি মসলাহ? অমনি সেই জিতেন্দ্রিয় মহামানব এমন রেগে গেলেন যে তার পবিত্র মুখ লাল টকটকে হয়ে গেল (হাদীস-যায়েদ এবনে খালেদ জুহানী (রা:) থেকে বোখারী)।
আরেকদিন একজন সাহাবা মহানবীকে (সা.) কোন এক বিষয়ে প্রশ্ন করলেন এবং তিনি যথাযথ জবাব দিলেন। সাহাবা ঐ ব্যাপারে আরও একটু জানতে চাইলেন। এবারও বিশ্বনবী (সা.) বুঝিয়ে দিলেন। এরপর ঐ সাহাবা যখন আরও একটু বিস্তৃতভাবে জানার জন্য প্রশ্ন করলেন অমনি তিনি রাগে ফেটে পড়লেন, তার পবিত্র মুখমণ্ডল ক্রোধে লাল হয়ে গেল। বললেন শোন! আমার পূর্ববর্তী নবীদের তাদের অনুসারীরা ঠিক এমনি করেই প্রশ্ন করত এবং যে সব উত্তর পেতো তা নিয়ে গবেষণা-বিশ্লেষণ করত যার ফলে তাদের মধ্যে মতভেদ হতো এবং পরিণামে তারা ধ্বংস হয়ে যেতো। আমি তোমাদের যা করতে বলেছি ঐটুকুই করতে চেষ্টা করো, ওর বেশি করতে যেওনা, তাহলে তাদের মতই ধ্বংস হয়ে যাবে।
কিন্তু তার অত ক্রোধেও অত নিষেধেও কোন কাজ হয় নি। তার জাতিটিও ঠিক পূর্ববর্তী নবীদের জাতিগুলির মত দীন নিয়ে অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি করে অতি মুসলিম হয়ে মসলা-মাসায়েলের তর্ক তুলে শিয়া-সুন্নী, হানাফি-হাম্বলী, সালাফি-দেওয়বন্দী ইত্যাদি হাজারো বিভেদ সৃষ্টি করে হতবল, শক্তিহীন হয়ে শত্র“র কাছে পরাজিত হয়ে তাদের গোলামে পরিণত হয়েছে।