পুরো মানবজাতিকে আল্লাহর তওহীদের ভিত্তিতে অর্থাৎ সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে, সকল অন্যায়ের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ করাই হেযবুত তওহীদের মূল লক্ষ্য। মানুষের মূল পরিচয় হচ্ছে সে আল্লাহর খলিফা বা প্রতিনিধি। পৃথিবীতে আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রনিতিধিত্ব করাই মানুষের এবাদত। আর এই প্রতিনিধিত্ব করতে হবে সঠিক পন্থায় আল্লাহর দেওয়া জীবনব্যবস্থা, দীনুল হক প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে। মানবজীবনে সঠিক পথ, হেদায়াহ (Right Direction) ও সত্য জীবনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হলে সমস্ত মানবজাতি অন্যায় ও অবিচার থেকে মুক্তি পাবে। পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠিত হবে অনাবিল শান্তি। সেই শান্তিময় পৃথিবী প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যকে সামনে নিয়ে সংগ্রাম করে যাচ্ছে হেযবুত তওহীদের সদস্য-সদস্যারা।
সকলেই এক স্রষ্টার সৃষ্টি, এক পিতা মাতা আদম হাওয়ার সন্তান। সেই সূত্রে আমরা সকলেই ভাই-বোন। আমাদের মধ্যে নানা বিষয়ে মতের অমিল থাকতে পারে, আচার অনুষ্ঠান, খাদ্যাভ্যাস, পোশাক-আশাক, সংস্কৃতিগত ভিন্নতা থাকতে পারে। কিন্তু সামাজিক জীব হিসাবে আমরা সবাই একে অপরের পরিপূরক। সুতরাং মানুষ হিসেবে আমরা এক জাতি। এই দর্শনকে সামনে রেখে জাতি, ধর্ম, বর্ণসহ সকল মানুষকে একসূত্রে গাঁথাই হেযবুত তওহীদের উদ্দেশ্য। সেই সূত্র হচ্ছে আল্লাহর সার্বভৌমত্ব তথা তওহীদের উপর সবাই ঐকমত্য পোষণ করে তার ভিত্তিতে জীবনব্যবস্থা পরিচালনা করা।
সমগ্র মানবজাতি এক স্রষ্টার সৃষ্টি, একই বাবা-মা আদম হাওয়ার সন্তান হয়েও যুদ্ধ-রক্তপাতে নিমজ্জিত। সরলের উপর ধূর্তের প্রতারণা, দরিদ্রের উপর ধনীর বঞ্চনা, দুর্বলের উপর সবলের অত্যাচারে পূর্ণ হয়ে আছে তাদের জীবন। মুসলমান নামক জাতির অবস্থা আরও ভয়াবহ। তারা নির্বিচারে গণহত্যার শিকার হচ্ছে, লক্ষ লক্ষ নারী ধর্ষিতা হচ্ছে, একটার পর একটা ভূখণ্ড বোমার আঘাতে ধ্বংস হচ্ছে, আবার নিজেরাও শিয়া-সুন্নি ইত্যাদি ফেরকা-মাজহাব-তরিকায় বিভক্ত হয়ে হানাহানি করে যাচ্ছে। নানা ধরনের কুসংস্কার, ধর্মান্ধতা বাসা বেঁধেছে। এ পরিস্থিতি থেকে মানুষের মুক্তির পথ দেখাতে ১৬ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৫ খ্রি. সনে হেযবুত তওহীদ আন্দোলনটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন টাঙ্গাইলের ঐতিহ্যবাহী পন্নী পরিবারের সন্তান জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নী। ২০১২ সালের ১৬ জানুয়ারি তাঁর ইন্তেকালের পর জনাব হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম আন্দোলনের এমামের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তাঁর অকুতোভয় নেতৃত্বে হেযবুত তওহীদ দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলেছে। লক্ষ লক্ষ মানুষ তাঁর ডাকে সাড়া দিয়ে মানবতার কল্যাণে কাজ করার জন্য এগিয়ে আসছেন।
আল্লাহ যুগে যুগে লক্ষাধিক নবী-রসুলের মাধ্যমে সঠিক পথনির্দেশ অর্থাৎ তওহীদ পাঠিয়েছেন যেন মানুষ দুনিয়ার জীবনে শান্তিতে থাকতে পারে এবং পরকালে জান্নাতে যেতে পারে। নবী-রসুল আগমনের ধারাবাহিকতায় সমগ্র বিশ্ববাসীর রহমত হয়ে সর্বশেষে আবির্ভূত হলেন মোহাম্মদ (সা.)। তিনি প্রথমে তওহীদ তথা ‘আল্লাহ ছাড়া কোনো হুকুমদাতা নেই’ এই কথার ভিত্তিতে আরবজাতিকে ঐক্যবদ্ধ করলেন। ফলে শত্রু ভাই হয়ে গেল, দাসত্ব, সন্ত্রাস, মাদক, নারী নির্যাতন ইত্যাদি বন্ধ হয়ে গেল। সমগ্র আরব উপদ্বীপে শান্তি প্রতিষ্ঠা করে তিনি যখন চলে গেলেন, বাকি পৃথিবীতে হেদায়াহ ও সত্যদীন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে অন্যায়-অবিচার দূর করে শান্তি প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব বর্তালো তাঁর উম্মাহর উপর। সেই উম্মাহ একদেহ একপ্রাণ হয়ে সর্বস্ব কোরবান করে সংগ্রাম চালিয়ে গেল এবং মাত্র ৬০/৭০ বছরের মধ্যে অর্ধ পৃথিবীতে অতুলনীয় শান্তি, ন্যায়, সুবিচার ও সাম্য প্রতিষ্ঠা করল। এটা ইতিহাস। কিন্তু তারপর ঘটল মহা দুর্ভাগ্যজনক এক ঘটনা।
জাতি ভুলে গেল তাদেরকে কেন গঠন করা হয়েছে। একদিকে তাদের শাসকরা/সুলতানরা ভোগ-বিলাসিতার সঙ্গে রাজত্ব করতে লাগল, আর পণ্ডিতরা দ্বীনের সূক্ষাতিসূক্ষ ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ, অতি বিশ্লেষণ করে সহজ-সরল ইসলামকে দুর্বোধ্য করে ফেলতে লাগল; অন্যদিকে বিকৃত সুফিবাদ (পীর-মুরিদি প্রথা) প্রবেশ করে বহির্মুখী জাতিকে অন্তর্মুখী করে ফেলল। পরিণতিতে ফেরকা-মাজহাব, তরিকায় বিভক্ত হয়ে সেই লৌহকঠিন ঐক্যবদ্ধ জাতি হয়ে পড়ল দুর্বল, খণ্ড-বিখণ্ড। ফলে এক সময় তারা শত্রুর কাছে পরাজিত হলো। আল্লাহর চ‚ড়ান্ত শাস্তি হিসাবে তারা ইউরোপীয় সাম্রাজ্যবাদী শক্তির পদানত দাসে পরিণত হলো। তাদের হুকুমদাতা প্রভু (ইলাহ) আর আল্লাহ রইলেন না, হুকুমদাতার আসনে বসল তৎকালীন ইউরোপীয় খ্রিষ্টান শাসক শ্রেণি। তারা একদিকে মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করে আল্লাহ-রসুলের প্রকৃত ইসলামের বদলে নিজেদের স্বার্থরক্ষাকারী ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র বিষয়ের মাসলা-মাসায়েল নিয়ে তর্ক-বাহাসসর্বস্ব একটি বিকৃত ইসলাম শিক্ষা দিয়ে ধর্মব্যবসায়ী একটি শ্রেণি তৈরি করল; অন্যদিকে সাধারণ শিক্ষার নামে স্বীয় ধর্ম, ইতিহাস-ঐতিহ্য সম্বন্ধে হীনম্মন্যতায় আপ্লুত চরম বস্তুবাদী ভোগবাদী পাশ্চাত্যের অন্ধ অনুকরণকারী আরেকটি শ্রেণি তৈরি করল। সেই থেকে রাজনৈতিক হানাহানি, ধর্মীয় সংঘাত, স্বার্থের প্রতিযোগিতা এমনভাবে শুরু হলো যে, জাতি আজও এক হতে পারেনি। মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারেনি। এমন একটি পরিস্থিতি থেকে জাতির উত্তরণের পথ কী-সেটাই তুলে ধরেছেন এমামুয্যামান। তিনি বলেছেন, সমস্ত বাদ-মতবাদ, ফেরকা-মাজহাব ভুলে আল্লাহর তওহীদের ভিত্তিতে অর্থাৎ “এক আল্লাহ ছাড়া আর কারো হুকুম-বিধান মানি না” এই কথার ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ হলেই মানবজাতি রক্ষা পাবে, পরকালেও জান্নাত পাবে।
মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলো যখন একে একে জঙ্গিবাদ, সাম্প্রদায়িকতা, ধর্মোন্মাদনা, রাজনৈতিক সংকটে পড়ে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে, তখন হেযবুত তওহীদের সদস্যরা নিজেদের কষ্টার্জিত অর্থ ব্যয় করে সম্পূর্ণ নিঃস্বার্থভাবে ঈমানী কর্তব্য ও দেশপ্রেমের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে এ সকল সংকটের বিরুদ্ধে ইসলামের প্রকৃত শিক্ষা তুলে ধরার মাধ্যমে আদর্শিক লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে।
এক আল্লাহ, এক রসুল মোহাম্মদ (সা.), এক কেতাব আল কোর’আনের অনুসারীরা হবে এক এবং অখÐ। এখানে বিভক্তির কোনো সুযোগই নেই। নিজেদের মধ্যে হানাহানির প্রশ্নই আসে না। যারা তা করবে তারা ইসলাম থেকে বহিষ্কৃত হয়ে যাবে। তাই যারা মনে প্রাণে চায় আল্লাহর দেওয়া দীন ইসলাম দিয়ে মানবজীবন পরিচালিত হোক, তাদের অন্তত যে কোনো মূল্যে ঐক্যবদ্ধ হওয়া উচিত। সাম্রাজ্যবাদীদের চক্রান্তে এখন মুসলিম জাতি এক অস্তিত্বের সংকটে পতিত হয়েছে। এ সংকট থেকে উদ্ধার পেতে হলে যে কোনো উপায়ে তাদেরকে ঐক্যবদ্ধ হতেই হবে। কিন্তু সেই ঐক্যের সূত্র কী হবে?
হেযবুত তওহীদ সেই ঐক্যের সূত্রটিই তুলে ধরছে। সেটা হচ্ছে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ – মোহাম্মদুর রসুলাল্লাহ (সা.), এই পবিত্র কলেমা। যারা এ কলেমায় বিশ্বাসী তারা সকল প্রকার মতভেদ ভুলে গিয়ে এক তওহীদের পতাকাতলে ঐক্যবদ্ধ হবে- এই আহ্বানই করছে হেযবুত তওহীদ।