গাইবান্ধায় ‘রাষ্ট্র সংস্কারে ইসলামের ভূমিকা’ শীর্ষক আলোচনা সভা করেছে গাইবান্ধা জেলা হেযবুত তওহীদ। মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর ২০২৪) ১০টায় গাইবান্ধা শিল্পকলা অডিটোরিয়ামে দিনব্যাপী এ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। হেযবুত তওহীদের গাইবান্ধা জেলা শাখার সভাপতি জাহিদ হাসান মুকুলের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন হেযবুত তওহীদের আন্তর্জাতিক প্রচার বিষয়ক সম্পাদক ও মুখপাত্র মো. মশিউর রহমান।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মো. মশিউর রহমান বলেন, “রাষ্ট্র সংস্কারের নামে দেশে যা চলছে সেই সংস্কার দিয়ে রাষ্ট্রের মানুষ শান্তিতে বসবাস করতে পারবে না। গণতান্ত্রিক ধাপ্পাবাজির মধ্য থেকে কোন সংস্কারই বাস্তব সংকটের সমাধান হতে পারে না। তাই তিনি রাষ্ট্র সংস্কারে হেযবুত তাওহীদের ইমাম হোসেইন মোহাম্মদ সেলিমের প্রস্তাবনাকে বিবেচনার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।”
তিনি আরও বলেন, রাষ্ট্র সংস্কারের আগে আমূল পরিবর্তন করতে হবে। চলমান সিস্টেমকে পাল্টাতে হবে। কেননা প্রচলিত রাষ্ট্রব্যবস্থার মধ্য দিয়ে দেশের প্রকৃত শান্তি ও স্থিতিশীলতা অর্জন সম্ভব নয়। হেযবুত তওহীদ সমাজকে মানবসৃষ্ট সীমাবদ্ধ জীবনব্যবস্থার পরিবর্তে আল্লাহর জীবনব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানাচ্ছে।”
মশিউর রহমান আরও বলেন, “স্বাধীনতার পর থেকে আমাদের দেশে সংবিধান সংশোধন, নতুন আইন প্রণয়ন এবং অনেক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলেও সংকটের সমাধান মেলেনি। তাই সময় এসেছে এই ত্রুটিপূর্ণ ব্যবস্থাকে বাদ দিয়ে আল্লাহর বিধান অনুসারে জাতীয় জীবন পরিচালনা করা।” তিনি উল্লেখ করেন, “কেবল আল্লাহর দেওয়া জীবনব্যবস্থাই মানুষকে প্রকৃত মুক্তি দিতে পারে। আল্লাহ মানুষকে খলিফা বা প্রতিনিধি হিসেবে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন এবং আল্লাহর দেওয়া জীবনব্যবস্থার চর্চার মাধ্যমেই মানুষের জীবন সত্যিকার সাফল্যে পৌঁছাবে।”
সাড়ে ১৪শ’ বছর আগের ইসলামী শাসনব্যবস্থার উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, “আল্লাহর দেওয়া জীবনব্যবস্থা মেনে চলার মাধ্যমে এক সময়ের বিপথগামী আরব সমাজ মানবতার কল্যাণকামী, সুশৃঙ্খল এবং ন্যায়বিচারের একটি সুন্দর সমাজে পরিণত হয়েছিল। এমন সমাজে শান্তি ও নিরাপত্তা ছিল এতটাই বিরাজমান যে, একজন নারী একা রাতের বেলায়ও নিরাপদে ভ্রমণ করতে পারতেন এবং মানুষ সম্পূর্ণ নির্ভয়ে ঘুমাতে পারত।” তিনি উল্লেখ করেন, সেই স্বর্ণযুগে ন্যায়বিচার এমনভাবে প্রতিষ্ঠিত ছিল যে, জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলেই সমান মর্যাদার অধিকারী ছিল।
মশিউর রহমান বলেন, “রাসুল (সা.)-এর নেতৃত্বে আল্লাহর দেওয়া জীবনব্যবস্থা অনুসরণ করে সাহাবিদের প্রচেষ্টায় বিশ্বের অর্ধেক অঞ্চল শান্তি, সুবিচার এবং নিরাপত্তার প্রতীক হয়ে ওঠে। কিন্তু পরবর্তীকালে মুসলিমরা ঐক্য হারিয়ে নিজেদের মধ্যেই মতবিরোধে লিপ্ত হয়ে দুর্বল হয়ে পড়ে। এই সুযোগে ঔপনিবেশিক শক্তিরা মুসলিম সমাজকে পরাজিত করে তাদের মানবসৃষ্ট আইন ও রাজনৈতিক ব্যবস্থা চাপিয়ে দেয়। ফলে আমাদের উপর চাপিয়ে দেওয়া হয় সুদভিত্তিক অর্থনীতি, বস্তুবাদী শিক্ষাব্যবস্থা এবং বিভাজনের রাজনীতি।”
বর্তমান সময়ে সমাজে ক্রমবর্ধমান অন্যায়, দুর্নীতি এবং সামাজিক বিশৃঙ্খলা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “এখন সময় এসেছে এই ঔপনিবেশিক বিধান পরিত্যাগ করে আল্লাহর দেওয়া সত্যদীনকে জাতীয় জীবনে প্রতিষ্ঠিত করার। হেযবুত তওহীদ মনে করে, এই পথে চললেই দেশের সামাজিক এবং নৈতিক সংকট থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।”
আলোচনা সভায় একটি উগ্রবাদী গোষ্ঠী কর্তৃক হেযবুত তওহীদের সদস্যদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার ও হামলার হুমকি দিয়ে আসছে এবং একাধিকবার হামলা চালিয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। বলেন, “গত ২৯ বছরে হেযবুত তওহীদের একজন সদস্যও আইনভঙ্গ করেনি। তবুও মিথ্যাচার এবং হামলার মাধ্যমে এই আন্দোলনকে দুর্বল করার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। ইতোমধ্যে পাঁচজন সদস্যকে নির্মমভাবে শহীদ করা হয়েছে, কিন্তু আমাদের লক্ষ্য স্থির এবং মানবতার কল্যাণে আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।” তিনি সকল নাগরিক, সরকার, সুশীল সমাজ, শিক্ষাবিদ, এবং গণমাধ্যমকর্মীদের এই প্রস্তাবনাটি বিবেচনা করার আহ্বান জানান এবং আল্লাহর দেওয়া জীবনব্যবস্থার প্রতি সবার সমর্থন কামনা করেন।
হেযবুত তওহীদের সদস্য মো. তাজুল ইসলামের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আরও উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন রংপুর বিভাগীয় সভাপতি আব্দুল কুদ্দুস শামীম, রাজশাহী বিভাগীয় সভাপতি আশেক মাহমুদ, রংপুর জেলা শাখার সভাপতি আবুল কালাম আজাদ রুবেল, সাধারণ সম্পাদক মো. আমিরুল ইসলাম, গাইবান্ধা জেলা শাখার সভাপতি মো. জাহিদ হাসান মুকুল, সাধারণ সম্পাদক সোহরাব হোসেন শিরল, ফুলছড়ি উপজেলা শাখার সভাপতি মাহবুবুর রহমান, সিনিয়র সদস্য আক্তার হোসেন খান ওপেল প্রমুখ।