“একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের সরকারের সিদ্ধান্ত যখন ধর্মব্যবসায়ীদের একটি হুঙ্কারে পাল্টে যায় তখন ঐ রাষ্ট্র অবশ্যই অস্তিত্বের সংকটে রয়েছে, তখন ঐ সমাজের যাবতীয় ব্যবস্থার ধ্বংস কেবল সময়ের ব্যাপার।” জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এমন মন্তব্য করেন অরাজনৈতিক ধর্মীয় সংস্কারমূলক আন্দোলন হেযবুত তওহীদের নেতৃবৃন্দ। ৫ মার্চ সকালে প্রেসক্লাবের আব্দুস সালাম হলে আন্দোলনের রজতজয়ন্তী উপলক্ষে আয়োজিত কেন্দ্রীয় সম্মেলন পণ্ড করার প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করেছে হেযবুত তওহীদ। ২৫ ফেব্রুয়ারি হেযবুত তওহীদের কেন্দ্রীয় সম্মেলনটি কেন শেষ মুহূর্তে স্থগিত করা হলো সেটা মূল বক্তব্যে তুলে ধরেন হেযবুত তওহীদের নারী বিষয়ক সম্পাদক রুফায়দাহ পন্নী। তিনি বলেন, “বহু সংকট, সংগ্রাম ও অর্জনের ধারাবাহিকতায় ২০২০ সালে হেযবুত তওহীদের ২৫ বছর পূর্ণ হয়েছে। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম যে রজতজয়ন্তী উপলক্ষে আমরা একটি কেন্দ্রীয় সম্মেলন করব। সম্মেলনস্থল হিসাবে নির্ধারণ করি উত্তরা ১৪ নম্বর সেক্টর কল্যাণ সমিতির মাঠ। অনুষ্ঠানের একমাস আগে ২৪ জানুয়ারি আমরা মাঠ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন পাই। অতঃপর সরকারের সংশ্লিষ্ট সকল সংস্থার লিখিত অনুমোদন লাভ করি। সম্মেলনকে সফল করার লক্ষ্যে দেশের সকল শাখায় ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়।
তিনি বলেন, “অনুষ্ঠানের আগের দিন ২৪ তারিখে উত্তরায় দিয়াবাড়ি এলাকায় ৩০ হাজার লোকের রান্না হচ্ছিল। মধ্যরাতে আমরা জানতে পারলাম যে স্থানীয় আলেম ওলামারা আমাদের অনুষ্ঠানটি পণ্ড করার জন্য হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে। প্রশাসনিক কর্মকর্তারাও আমাদেরকে ফোনে বিষয়টি অবগত করলেন। তারা বললেন, ফজরের নামাজের পর থেকে কওমী মাদ্রাসা, তাবলিগ জামায়াতের জোবায়েরপন্থী গ্রুপের কিছু কথিত আলেম নাকি আমাদের মিটিং বন্ধ করার জন্য মাঠে নামবে।”
রুফায়দাহ পন্নী বলেন, “ভোর থেকেই গাড়িতে করে, পায়ে হেঁটে আশপাশের মাদ্রাসাগুলো থেকে শত শত ছাত্র শিক্ষক সমাবেশস্থলে এসে, রাস্তা অবরোধ করে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করে ফেলে। বিভিন্ন জায়গায় গাড়িতে হামলা করে ভাঙচুরও চালায়। এ পরিস্থিতিতে প্রশাসন আমাদের সিদ্ধান্ত জানতে চাইলেন। জননিরাপত্তার স্বার্থে, রক্তপাত, সংঘর্ষ এড়ানোর লক্ষ্যে মাননীয় এমাম এই বিরাট আয়োজন স্থগিত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। কারণ আক্রান্ত হেযবুত তওহীদের সদস্যরা নিশ্চয়ই ধর্মব্যবসায়ীদের হামলার প্রতিরোধ করবেন এবং সেক্ষেত্রে পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করবে। আমাদের সদস্যদের পাশাপাশি মাদ্রাসার নিরীহ নাবালক ছাত্ররাও হয়তো হতাহত হবে। তাদের রক্তমাখা ছবি এই বলে প্রচার করা হবে যে, হেযবুত তওহীদ আলেমদের উপর হামলা করেছে। তারা কাফের। এই ঘটনা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বিনষ্ট হবে। এসব বিষয় চিন্তা করে মাননীয় এমাম আন্দোলনের কোটি কোটি টাকার অর্থনৈতিক ক্ষতি স্বীকার করে নিয়ে অনুষ্ঠান স্থগিত করলেন।”
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে আরও বক্তব্য রাখেন হেযবুত তওহীদের সাধারণ সম্পাদক মো. মশিউর রহমান, প্রচার সম্পাদক এস এম সামসুল হুদা, সাহিত্য সম্পাদক মো. রিয়াদুল হাসান প্রমুখ। মো. মশিউর রহমান সাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে সরকারের প্রতি পাঁচটি লিখিত দাবি পেশ করা হয়। যেমন: (১) যারা মিথ্যা, বানোয়াট, ভিত্তিহীন কথা ছড়িয়ে দিয়ে মাদ্রাসার ছাত্রদেরকে সমবেত করেছে এবং এখন পর্যন্ত মসজিদ-মাদ্রাসায় উস্কানি দিচ্ছে তাদেরকে দ্রুত আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে; (২) অনুষ্ঠান বন্ধ হওয়ায় হেযবুত তওহীদের যে অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছে, যে মানহানি হয়েছে জড়িতদেরকে তার ক্ষতিপুরণ প্রদান করতে হবে; (৩) ওয়াজ মাহফিল ও মসজিদের মিম্বরের মতো ধর্মীয় গুরুত্বপূর্ণ ও সংবেদনশীল জায়গাগুলোকে ব্যবহার করে যারা হেযবুত তওহীদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে তাদের মধ্যে অনেকের নামে জিডি ও মামলা দায়ের করা হয়েছে। সেই ব্যক্তিদেরকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনতে হবে; (৪) হেযবুত তওহীদের নারীদের বিরুদ্ধে কদর্য ভাষায় ওয়াজ করার দরুন তারা পথেঘাটে আক্রান্ত হচ্ছেন। স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশে হেযবুত তওহীদের নারীরা যেন স্বীয় বিশ্বাস প্রচার থেকে শুরু করে জাতীয়, সামাজিক, সাংস্কৃতিকসহ সকল কাজে নির্বিঘ্নে অংশগ্রহণ করতে পারেন – এটি নিশ্চিত করতে হবে; (৫) হেযবুত তওহীদ নিঃস্বার্থভাবে, মানবতার কল্যাণে সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ, সাম্প্রদায়িকতা, ধর্মোন্মাদনা, মাদক, গুজব ইত্যাদিসহ যাবতীয় অন্যায়ের বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ উপায়ে সভা-সমাবেশ করছে যা তাদের সাংবিধানিক অধিকার। কোনো কুচক্রী মহল যেন তাদের সভা-সমাবেশ পণ্ড করতে না পারে সে লক্ষ্যে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।