মোহাম্মদ আসাদ আলী
একজন বিখ্যাত বক্তার একটি ওয়াজের ভিডিও ক্লিপ ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। ভিডিওটি প্রথমে আমার একজন কলিগের নজরে আসে। তিনি ভিডিওটি দেখার জন্য আমাকে অনুরোধ করেন। তার অনুরোধের মধ্যেই ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছিল- ভিডিওটি অন্য আর দশটা ওয়াজের মতো নয়। এতে বিশেষ কিছু আছে। ‘বিশেষ কিছু’ বলতে আমি অনুমান করে নিলাম- ওয়াজের মধ্যে নিশ্চয়ই বক্তা এমন কোনো তথ্য দিয়েছেন যা নিতান্তই অযৌক্তিক, অথবা বক্তা এমন হাস্যরসে ভরপুর ওয়াজ করেছেন যা দেখলে হয়ত রাগীমত মানুষটিও অট্টহাসিতে ফেটে পড়বেন। কারণ ইদানীং ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া ওয়াজগুলোর মধ্যে খেয়াল করে দেখেছি- অধিকাংশই স্থূল রসিকতায় ভরপুর। যে বক্তা যত লোক হাসাতে পারেন, সেই বক্তা ও বক্তব্যের চাহিদা ততই বাড়তে থাকে। সেই ভিডিওগুলোই সবাই আগ্রহ নিয়ে শেয়ার করেন এবং ভাইরাল করে দেন।
দেখা গেল ঘটনা যা ভেবেছিলাম অনেকটা তেমনই। প্রায় দুই মিনিটের ভিডিও ক্লিপটি দেখার পরে আমার মনে হলো- যেই জাতির ধর্মীয় নেতাদের চিন্তাভাবনা ও কথাবার্তা এত হাস্যকর আর অর্বাচীনসুলভ হতে পারে, সেই জাতির ভাগ্যললাট থেকে গোলামীর কলঙ্ক মুছে ফেলা সহজ কাজ নয়। সঙ্গত কারণেই আমি বক্তার নাম প্রকাশ করতে চাচ্ছি না, শুধু তার বক্তব্যটা সংক্ষেপে তুলে ধরছি।
ওয়ায়েজ সাহেব হাসি হাসি মুখে সাবলীল ভঙ্গিতে যে কথাগুলো বলেছেন তার মূলভাব এই যে, মুসলিমদের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক। এই জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার দেখে ইউরোপ, আমেরিকা, রাশিয়া, জাপান, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর সবাই কান্নাকাটি শুরু করেছে। সবাই হায়-হুতাশ করছে যে, মুসলমানরা তো সবই নিয়ে গেল, সারা দুনিয়া নিয়ে নিলো। কারণ সভ্যতা ধরে রাখার জন্য যে পরিমাণ জনসংখ্যা বৃদ্ধি প্রয়োজন সেটা ইউরোপ আমেরিকায় বাড়ছে না। কিন্তু মুসলিম দেশগুলোতে বাড়ছে। কাজেই বর্তমানে সমগ্র ইউরোপ আমেরিকার স্লোগান হলো- ‘যত সন্তান তত লাভ।’ তার তথ্য মতে, ফ্রান্স ঘোষণা করেছে কোনো মা যদি দ্বিতীয় সন্তান গ্রহণ করে তাহলে তাকে মাসে ৫৫০০০ টাকা ভাতা দেওয়া হবে। রাশিয়া দিবে ৫০০০০ টাকা ভাতা।’
এই পর্যন্ত বলেই তিনি মুসলিম ¯্রােতাদের উদ্দেশ্য করে বললেন, ‘আপনাদেরই এখন সুযোগ। যে যত পারেন সন্তান নিবেন। আমি তো এগারোটা নিসি আলহামদুলিল্লাহ, আরও নিয়ত আছে। ইউরোপ দখল করে ফেলব। ওদের পারমাণবিক বোমের মোকাবেলা করব পারমাণবিক জনসংখ্যা দিয়া। মানে হ্যারা বিস্ফোরণ ঘটাইব পারমাণবিক বোমের, আমরা বিস্ফোরণ ঘটাব জনসংখ্যার।’
একজন আত্মমর্যাদাসম্পন্ন মুসলিম ব্যক্তি আজকের বাস্তবতায় দাঁড়িয়ে কীভাবে এই ধরনের কথা বলতে পারেন তা আমার বুঝে আসে না। যখন সারা পৃথিবীব্যাপী মুসলিম নিধনের মহোৎসব চলছে, কোটি কোটি মুসলমানের থাকার জায়গা নেই, খাওয়ার ব্যবস্থা নেই, মর্যাদা নেই, লক্ষ লক্ষ মুসলিম নারী যখন সম্ভ্রমহারা, এক দেশ থেকে বিতাড়িত হয়ে আরেকদেশে আশ্রয়ের খোঁজে নৌকাযোগে সমুদ্র পাড়ি দিতে গিয়ে হাজারে হাজারে পানিতে ডুবে মরছে নিষ্পাপ শিশুগুলো, অথচ এই অন্যায়ের মৃদু প্রতিবাদ করার সাহস ও সামর্থ্যও জাতির নেই, তখন যদি কোনো মুসলিম বলে, তিনি সন্তান সন্তুতি জন্ম দিয়ে ইউরোপ দখল করে ফেলতে চান, জনসংখ্যার বিস্ফোরণ দিয়ে পরমাণুর বিস্ফোরণের মোকাবেলা করতে চান- সেজন্য পৃথিবী সম্পর্কে তার কতখানি অজ্ঞতা আর মূর্খতার প্রয়োজন পড়ে তা ভাবতেও অবাক লাগে। অথচ তারাই আমাদের ধর্মীয় নেতা সেজে ধর্মের উপদেশ ফেরি করে বেড়াচ্ছেন।
ভবিষ্যতে মুসলিম উম্মাহর কি অবস্থা হবে বলতে যেয়ে একদিন আল্লাহর রসুল (সা.) বললেন- এমন সময় আসবে যে, ‘এই জাতি পৃথিবীর সব জাতিদের দ্বারা অপমানিত, লাঞ্ছিত, পরাজিত হবে।’ উপস্থিত সাহাবাদের মধ্য থেকে কেউ কেউ প্রশ্ন করলেন- হে আল্লাহর রসুল! তখন কি পৃথিবীতে তারা এত অল্প সংখ্যক হবে যে, অন্য জাতিগুলি তাদের পরাজিত ও লাঞ্ছিত করবে? মহানবী (সা.) তার জবাব দিলেন- না, সংখ্যায় তারা অসংখ্য হবে।
জবাব শুনে আসহাবরা নিশ্চয়ই অত্যন্ত বিস্মিত হয়েছিলেন। বিস্মিত হবার কথাই। কারণ তখন ঐ ছোট্ট উম্মাহটার ঈমান ই¯পাতের মতো, আকিদা (কনসেপ্ট) স¤পূর্ণ ও সঠিক, উদ্দেশ্য পরিষ্কার, উদ্দেশ্য অর্জন করার প্রক্রিয়া দৃঢ়, ঐক্য লোহার মতো, দুর্বলতা শুধু এই জায়গায়- সংখ্যাল্পতায়। তাই এর জবাবে তারা যখন শুনলেন যে, সেই একমাত্র দুর্বলতাই থাকবে না, সংখ্যায় ঐ উম্মাহ হবে অগণিত, তখন পরাজয় কি করে সম্ভব? বিশেষ করে যখন ঐ ছোট্ট উম্মাহ তাদের চেয়ে সংখ্যায় বহু বেশী, সুসজ্জিত, সুশিক্ষিত শত্রুদের বারবার পরাজিত করেছেন?
তারা আবার মহানবীকে (সা.) প্রশ্ন করলেন- আমরা সংখ্যায় অসংখ্য হলে পরাজয় কী করে সম্ভব? রসুল (সা.) জবাব দিলেন একটা উপমা দিয়ে, বললেন- মনে করো লক্ষ লক্ষ উট, কিন্তু উটগুলো এমন যে যেটার উপরই চড়ে বসতে যাও ওটাই বসে পড়ে বা পড়ে যায়। ঐ অসংখ্যের মধ্যে এখানে ওখানে কিছু উট পাওয়া যাবে যেগুলোর পিঠে চড়া যাবে। (আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) থেকে, বোখারী ও মুসলিম)
বিশ্বনবীর (সা.) উপমাটা লক্ষ করুন- উট। উটের উদ্দেশ্য কি? উট দিয়ে কি কাজ হয়? উট হচ্ছে বাহন, মানুষকে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে নিয়ে যাওয়ার জন্য। সেইটাই যদি উট দিয়ে না হয় তবে ঐ উট অর্থহীন- দেখতে অতি সুন্দর উট হলেও এবং সংখ্যায় অসংখ্য হলেও। শেষনবীর (সা.) সেই ভবিষ্যদ্বাণী বহু আগেই পূর্ণ হয়েছে, সংখ্যায় অসংখ্য হওয়া সত্ত্বেও শত্রুর পদানত দাস হয়েছে, অপমাণিত ও লাঞ্ছিত হয়েছে এবং হচ্ছে। মহানবীর (সা.) বর্ণনা অনুযায়ী এরা দেখতে অতি সুন্দর উট, লম্বা কোর্ত্তা, পাগড়ী, লম্বা দাড়ি, ছেটে ফেলা মোচ, টাখনুর ওপরে ওঠা পাজামা, কাঁধে চেক রুমাল, দিনে পাঁচবার মসজিদে দৌড়াচ্ছেন, গোল হোয়ে বসে চারিদিক প্রক¤িপত করে আল্লাহর যিকর করছেন, খানকায় বসে মোরাকাবা, কাশফ করছেন- দেখতে একেবারে নিখুঁত উট। কিন্তু আসলে উট নয়, ওদের পিঠে চড়া যায় না, চড়লেই বসে পড়ে।
আরেক হাদিসে রসুলাল্লাহ (সা.) বললেন-“শীঘ্রই এমন দিন আসছে যে অন্যান্য জাতিসমূহ এই উম্মাহর বিরুদ্ধে একে অপরকে ডাকবে যেমন করে (খানা পরিবেশন করার পর) একে অন্য সবাইকে খেতে ডাকে।” তাকে প্রশ্ন করা হলো “আমরা কি তখন সংখ্যায় এত নগণ্য থাকব?” তিনি বললেন, “না, তখন তোমরা সংখ্যায় অগণ্য হবে, কিন্তু হবে স্রোতে ভেসে যাওয়া আবর্জনার মতো। আল্লাহ তোমাদের শত্রুর মন থেকে তোমাদের সম্পর্কে ভয়-ভীতি উঠিয়ে নেবেন এবং তোমাদের হৃদয়ের মধ্যে দুর্বলতা নিক্ষেপ করবেন।” কেউ প্রশ্ন করলেন, “ইয়া রসুলাল্লাহ! এই দুর্বলতার কারণ কি হবে?” তিনি জবাব দিলেন, “দুনিয়ার প্রতি ভালবাসা ও মৃত্যুর প্রতি অনীহা।” (হাদীস- সাওবান (রা:) থেকে আবু দাউদ মেশকাত)
পাঠক, এই হাদিসে আল্লাহর রসুল যেই ‘অগণিত মুসলিমদেরকে’ বোঝাচ্ছেন তারা কি প্রকৃত মুসলিম? যারা সত্যিকারের মুসলিম, তাদেরকে কি আল্লাহর রসুল ¯্রােতে ভেসে যাওয়া আবর্জনার সাথে তুলনা করতে পারেন? মোটেও নয়। নিঃসন্দেহে এরা হবে নামধারী মুসলিম। সুতরাং তাদের সংখ্যা হবে নিরর্থক, নিষ্ফল। ওই সংখ্যা দিয়ে না জাতির কোনো উপকার হবে, না দ্বীনের উপকার হবে। সেই সংখ্যা নিয়ে গর্ব করা এক হাস্যকর বোকামী ছাড়া কিছুই নয়।
এটা ইতিহাস যে, আজ থেকে কয়েকশ’ বছর আগে যখন ইউরোপীয় সা¤্রাজ্যবাদীরা উপনিবেশ বিস্তারের জন্য সামরিক আগ্রাসন চালালো- তখন আটলান্টিকের তীর থেকে ইন্দোনেশিয়া পর্যন্ত ভূখ-ের ক্ষুদ্র কিছু এলাকা বাদে প্রায় সমগ্র মুসলিম বিশ্ব সরাসরি ব্রিটিশসহ বিভিন্ন ইউরোপীয় জাতিগোষ্ঠীর কাছে পরাজিত হয়ে তাদের গোলামে পরিণত হলো এবং সেই থেকে আজ অবধি এই জাতি রাজনৈতিকভাবে, অর্থনৈতিকভাবে, সাংস্কৃতিকভাবে পশ্চিমা সভ্যতার গোলামী করে যাচ্ছে।
কে না জানে- এই জাতির রাজনীতি, অর্থনীতি, আইন-কানুন, দ-বিধি, শিক্ষাব্যবস্থা সমস্তই পশ্চিমাদের তৈরি? এরা ওই সময়েই আল্লাহর হুকুমকে প্রত্যাখ্যান করে পাশ্চাত্যের বস্তুবাদী সভ্যতাকে ‘ইলাহ’ হিসেবে গ্রহণ করে নিয়েছে। যেই সংগ্রামের মাধ্যমে এই জাতির উত্থান ঘটেছিল, সেই অন্যায় ও অসত্যের বিরুদ্ধে সংগ্রাম এখন আর দ্বীনের অতি প্রয়োজনীয় কোনো বিষয় নয়। এরা সংগ্রামহীন, জেহাদহীন লেবাসসর্বস্ব ও মসজিদ-মাদ্রাসার চার দেওয়ালে আবদ্ধ এক ‘ব্যক্তিগত ইসলাম’ তৈরি করে সেটাই চোখ-কান বন্ধ করে অতি যতেœর সাথে নিখুঁতভাবে পালন করে চলেছে। অন্যদিকে তাদের হাত থেকে বিশ্বের কর্তৃত্ব কেড়ে নিয়ে সা¤্রাজ্যবাদী অপশক্তিগুলো সমস্ত পৃথিবীকে দুর্বিসহ জাহান্নাম বানিয়ে ফেলছে। বিশ্বকে তারা দাঁড় করিয়েছে পরমাণু যুদ্ধের মুখোমুখী।
‘আজ পৃথিবীতে ১৬০ কোটি মুসলিম’ – এই সংখ্যা নিয়ে গর্ব করার আগে এই মুসলিমদের ভাবা উচিত যে, ১৪০০ বছর আগে যখন এই জাতির হাতে আল্লাহ তাঁর প্রতিশ্রুতি মোতাবেক অর্ধপৃথিবীর শাসনকর্তৃত্ব (পাওয়ার) তুলে দিয়েছিলেন, তখন এই জাতির সদস্যসংখ্যা এক কোটিও ছিল না। মাত্র পাঁচ লাখের মতো উম্মতে মোহাম্মদী। সেই পাঁচ লাখের জাতিটির কাছে শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়েছিল তৎকালীন সুপার পাওয়ার রোমান ও পারস্য সা¤্রাজ্য। ওই বিজয় জনসংখ্যার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে অর্জিত হয়নি। বিজয় অর্জিত হয়েছিল জাতির ঐক্য, শৃঙ্খলা, আনুগত্য ও সংগ্রামী চেতনার কারণে। আবার কয়েক শতাব্দী আগে যখন এই জাতি ব্রিটিশের গোলামে পরিণত হলো তখন তাদের সংখ্যার কোনো অভাব ছিল না, কিন্তু কোনো প্রতিরোধই গড়ে তুলতে পারেনি।
আজকে সারা পৃথিবীতে কর্তৃত্ব করে বেড়াচ্ছে মাত্র দেড় কোটির ইহুদি জাতি। কিসের বলে? অবশ্যই সংখ্যার বলে নয়। সংখ্যাই যদি শ্রেষ্ঠত্বের চাবিকাঠি হতো তাহলে পঁয়তাল্লিশ কোটি আরব মাত্র দেড় কোটির ইহুদি জাতির কাছে পরাজিত ও লাঞ্ছিত হতো না। উম্মতে মোহাম্মদী জয় এনেছিল পাঁচ দফা কর্মসূচি দিয়ে। তাদের একজন নেতা ছিলেন। সেই নেতা যা-ই বলতেন তারা ‘আসমাউ ওয়া আত্তাবিয়্যু’ বলে সেটা পালন করত। ঐক্য নষ্ট হয় এমন কোনো কাজ তারা করত না। তাদের দ্বীন আর দুনিয়া আলাদা ছিল না। তারা সংগ্রাম করে সমস্ত পৃথিবীকে সত্যদীনের অধীনে এনে ন্যায়, শান্তি ও সুবিচার প্রতিষ্ঠার জন্য নিজেদেরকে উৎসর্গ করেছিলেন। আর আজ নেই কোনো ইমাম, নেই কোনো একক সিদ্ধান্ত, নেই কোনো সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য-উদ্দেশ্য, রয়েছে কেবল অনৈক্য-সংঘাত-ফেরকাবাজী-তর্ক-বাহাস-মারামারি-ধর্মব্যবসা-সন্ত্রাস-সাম্প্রদায়িকতা এবং এই জাতিবিনাশী ভাইরাসগুলো শরীরে পুষে রেখে যেহেতু বিশ্বজয়ের বাস্তব কোনো স্বপ্নই দেখা যায় না, তাই এই জাতির ধর্মীয় নেতারা জনসংখ্যার বিস্ফোরণের মাধ্যমে বিশ্বজয়ের অলীক স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন।
এই ধর্মীয় নেতারা আর কতকাল জাতিকে আজগুবি কেসসা কাহিনী শুনিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখবেন? তাদের সবচাইতে বড় ভুলটা এখানেই যে, তারা জাতিকে জাগতে দিচ্ছেন না। জাতি কালঘুমে বিভোর হয়ে আছে, এদিকে তাদেরকে ধ্বংসের সমস্ত আয়োজন সম্পন্ন! ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে কিন্তু সেই ধ্বংসের বাস্তব চিত্রটা তাদের সামনে তুলে না ধরে, ধ্বংসের বাস্তব কারণ ও প্রতিকার নিয়ে আলোচনা না করে, সেই দিকটিকে আড়াল করার জন্য তাদের ধর্মীয় নেতারা নানান রূপকথার গল্প সাজিয়ে বসছেন। হায় মুসলমান! এর পরিণতি বোঝার মতো দৃষ্টিশক্তি যদি তাদের থাকত! তবু হাল ছাড়তে চাই না। বিশ্বাস হারাতে চাই না। হৃদয়ের কোণে আশা জ্বেলে রাখতে চাই- বাহারী ওয়াজব্যবসায়ীদের ভিড়ে সচরাচর দেখা না গেলেও এমন সত্যনিষ্ঠ আলেম নিশ্চয়ই আছেন, যারা এগিয়ে আসবেন, যারা সত্যকে স্বীকার করতে কুণ্ঠিত হবেন না। যারা মানুষের সামনে জাতির প্রকৃত চিত্রটা তুলে ধরবেন। মিথ্যা শান্তনার বুলি শুনিয়ে জাতিকে আলো ঝলমলে জতুগৃহে ধ্বংস হতে না পাঠিয়ে, সত্যের পক্ষে লড়াই করে বাঁচার সরল পথ দেখাবেন।