হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম:
আল্লাহ রসুলের জাতি উম্মতে মোহাম্মদী, এক জাতি। তখন কি আমরা শিয়া-সুন্নী ছিলাম? শাফেয়ী-হাম্বলী ছিলাম? হানাফি-আহলে হাদিস ছিলাম? এই দল ওই দল, এই জঙ্গি গ্রুপ, ওই জঙ্গি গ্রুপ, ওই পার্টি, এই পার্টি ছিলাম? আমাদের নেতা ছিলেন একজন- রসুলাল্লাহ্। হুকুম ছিল একটা। তরিকা ছিল একটা। লক্ষ্য ছিল একদিকে। সমস্ত জাতি ছিলাম আমরা এক জাতি। আজ আমরা হাজার হাজার ভাগে বিভক্ত। এটা হচ্ছে প্রথম কথা। দ্বিতীয় কথা হচ্ছে, আমরা কি তখন অন্য কোন জাতির হাতে মার খেয়েছি? আমরা ছিলাম সেরা জাতি। জ্ঞানে-বিজ্ঞানে, সামরিক শক্তিতে, নতুন নতুন বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারে পৃথিবীর কোন শক্তি ছিল না আমাদের দিকে চোখ তুলে তাকায়। আর আজ আমাদের লক্ষ লক্ষ নারী বেইজ্জত হয়, আমরা কথা বলতে পারি না। এই যখন অবস্থা তখনো কি বলবেন, সেই জাতি, এই জাতি এক জাতি? তাহলে হয় আল্লাহর রসুলের উম্মাহ, উম্মতে মোহাম্মদী ঠিক ছিলেন- আমরা বেঠিক। আর না হলে আমরা ঠিক, তাঁরা বেঠিক। তাঁদের সঙ্গে তো আমাদের মিলে না। চরিত্র মিলে না। আত্মায় মিলে না। বাহিরে মিলে না, ভিতরে মিলে না। সত্য হলো তাঁরাই ঠিক ছিলেন। অতএব আমরাই বেঠিক। এখন তাঁরা যদি উম্মতে মোহাম্মদী হন, আমরা কার উম্মত? এ রায় আপনারা দিবেন। আমার দেয়ার দরকার নাই।
এখন জনগণের সামনে এই তথ্যটা তুলে ধরতে হবে যে, হে ইসলাম প্রিয় জনতা, হে ধর্মপ্রাণ মানুষ, আপনারা যাঁরা আল্লাহকে ভালোবাসেন, রসুলকে ভালোবাসেন, কেতাবকে ভালোবাসেন, পরকালে জান্নাতে যেতে চান, মাটিকে ভালোবাসেন, মানুষকে ভালোবাসেন, ভবিষ্যৎ বংশধরের জীবনকে হেফাজত করতে চান, আপনারা আসুন, আমাদের কথা শুনুন। আজকে আল্লাহর রসুলের প্রকৃত ইসলাম নিয়েই আমাদেরকে বাঁচতে হবে। কীভাবে আমরা আল্লাহর রসুলের প্রকৃত ইসলাম নিয়ে বাঁচব? কার ইসলাম নিব? আমাদের ইসলামের যে চেহারা হয়েছে, একেক দলের কাছে একেক রূপ, একেক ফতোয়া। সূক্ষাতিসূক্ষ্ম ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ, মাসলা-মাসায়েল নিয়ে গবেষণা করতে করতে আমরা ইসলামের মৌলিক বিষয়গুলো এমন কি তওহীদ থেকেই, ঈমান থেকেই সরে গিয়েছি। আমাদের সরকারকে যখন আমরা এ কথাটি বলেছি তখন সরকারের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি আমাদেরকে একটি প্রশ্নটি করেছেন। আমি সাংবাদিকদের নিয়ে সম্মেলন করেছি, ঐ সাংবাদিকদেরও অনেকে আমাকে প্রশ্ন করেছেন, এই যে আপনি বলেন, ইসলাম নিয়ে মুসলমানদেরকে বাঁচতে হবে, কোন ইসলাম নিব? তালেবান ইসলাম? হেফাজতের ইসলাম? জামাতের ইসলাম? চরমোনাইয়ের ইসলাম? তবলীগের ইসলাম? অমুক পীরের ইসলাম? অমুক দলের ইসলাম? কোন ইসলাম নিব আপনি বলুন তো। একেক জনের একেক মত, একেক ফতোয়া। কার ইসলাম নিব? কঠিন প্রশ্ন না একটা? এর উত্তর যদি জানা না থাকলে তাহলে কি আমরা হতাশ হয়ে ইসলামকেই বাদ দেব?
না। বাদ দিতে পারবেন না, শুধু আত্মপ্রবঞ্চক হবেন। পাশ্চাত্য বস্তুবাদী সভ্যতা শত শত বছর চেষ্টা করেও ধর্মকে মানবজীবন থেকে বাদ দিতে পারে নাই। বাদ দেওয়ার দরকারও নাই। আমার ইসলাম সাম্যের ইসলাম, মুক্তির ইসলাম, মানবতার ইসলাম, ঐক্যের ইসলাম। আমার ইসলাম এসেছে এক হক্ব আল্লাহ থেকে। তাই এর নাম দীনুল হক্ব। আমার ইসলাম দীনুল হক্ব, সত্য। সুতরাং আমার ইসলাম বাদ দেওয়ার কোনো প্রয়োজন নাই। ইসলাম যখন বাদ দিতে পারবেন না তখন সেই সঠিক ইসলামকে ধারণ করুন। খুঁজে দেখুন, কোন ইসলাম একাধারে আমার আত্মাকে বিশুদ্ধ করবে, আমার সমাজকে শান্তিপূর্ণ করবে, আমার পরিবারকে প্রাণবন্ত রাখবে, আমার রাষ্ট্রকে নিরাপদ রাখবে, আমার মাটিকে হেফাজত করবে, নারীর ইজ্জত রক্ষা করবে। হিন্দু, বৌদ্ধ, ইহুদী, খ্রিষ্টান সবাই মিলে এক জাতি হিসেবে বসবাস করার মতো পরিবেশ সৃষ্টি করবে কোন ইসলাম? সেটাই হচ্ছে প্রকৃত ইসলাম। সেটাই হচ্ছে আল্লাহ-রসুলের সেই ইসলাম। অতীব দুঃখের সঙ্গে বলতে হচ্ছে যে ঐ ইসলাম হারিয়ে গিয়েছে। এখন আপনারা বলতে পারেন, হেযবুত তওহীদ, আপনারা কোথায় পেলেন সেই ইসলাম? আল্লাহর শোকর, আলহাম্দুলিল্লাহ, আল্লাহ! তোমার পবিত্র সত্তার সামনে, তোমার শ্রেষ্ঠত্বের সামনে সারাজীবন সেজদায় পড়ে থাকলেও, আল্লাহ এক শোকর আদায় হবে না। আমার অস্তিত্বের সমস্ত অণু, পরমাণু তোমার রাস্তায় বিলিয়ে দিলেও এই শোকর আদায় হবে না। আল্লাহ রব্বুল আ’লামীন, এই জঞ্জালের মধ্য থেকে হাজার হাজার ফেরকা, মাযহাব, দল, তরিকা, উপদলের ভিতর থেকে আল্লাহ তুমি সহজ-সরল সিরাতুল মোস্তাক্বীম আমাদেরকে দয়া করে দিয়েছ আল্লাহ। আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহর শোকর-আল-হামদুলিল্লাহ আল্লাহ, তুমি আমাদেরকে দিয়েছ।
আমাদের এমামুয্যামান জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নী, বাড়ী টাঙ্গাইল, করটিয়া। তিনি এমন এক পরিবারের সন্তান যারা সুলতানি যুগে বাংলা, বিহার, উড়িষ্যাসহ ভারতের বিরাট একটি অংশ নিয়ে গঠিত রাজ্যের সুলতান ছিলেন। সুলতানি আমলের পর জমিদারি আমল যখন আসল তখন তারা ভারতবর্ষের মধ্যে হাতে গোনা মুসলিম জমিদার পরিবাগুলোর মধ্যে সর্বজনশ্রদ্ধেয় ছিলেন। করটিয়ার জমিদার হায়দার আলী খান পন্নী, বহু স্কুল কলেজের প্রতিষ্ঠাতা জমিদার ওয়াজেদ আল খান পন্নী, চাঁন মিয়া সাহেব – এঁরা এমামুয্যামানের দাদা ছিলেন। এখন জমিদারি প্রথা নাই, সব শেষ। কিন্তু এমামুয্যামান তাঁর পারিবারিক পরম্পরার বাহিরে এমন একজন মানুষ হলেন, যিনি একাধারে একজন পদ্ধতি মানুষ ছিলেন, ডাক্তার ছিলেন, একজন সংসদ সদস্যও ছিলেন পাকিস্তান আমলে। সর্বদিক দিয়ে তাঁর কোনো তুলনা হয় না। আমার জীবনে আমি দেখি নি তিনি কোনদিন মিথ্যা কথা বলেছেন। তিনি সারাজীবন ভেবেছেন, ‘কী করে মুসলমান জাতির নিস্তার লাভ হবে? কী করে সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসন থেকে মুসলমান বাঁচবে? মাটি বাঁচবে, মানুষ বাঁচবে, ধর্ম বাঁচবে। তখন আল্লাহ তাঁকে এই বুঝ দিলেন, এই জ্ঞান দিলেন। সত্যের জ্ঞান তো আল্লাহর পক্ষ থেকেই আসে। আপনার বলুন তো, সন্তান দিবেন কে? সম্পদ দেন কে? মৃত্যু দেন কে? জ্ঞান দিবেন কে? আল্লাহর বান্দারা যখন পথহারা হয়ে যায়, তখন বান্দাকে জ্ঞান দিবেন কে? এই কথা বলার কারণে কি নবী-রসুল দাবি করা বুঝায়? যখনই আমরা এ কথাটা বলি, বিরোধীরা বলে বায়াজীদ খান পন্নী নবী নাকি? নাউযুবিল্লাহি মিন যালেক। আল্লাহ তোমার নিকট পানাহ্ চাই এই মিথ্যাবাদীদের মিথ্যাচার থেকে। এই কথা দিয়ে নবী-রসুল হওয়া বুঝায় না। নবী আর আসবেন না, রসুল আর আসবেন না। তাহলে এই জাতিকে ঐক্যবদ্ধ কে করবে? কাউকে না কাউকে আল্লাহর বুঝাতে হবে না? মনোনীত করতে হবে না? সঠিক জ্ঞান কাউকে না কাউকে দিতে হবে না? আমাদের মতো কেউ না কেউ নামতে হবে না? কে নামবে? হেযবুত তওহীদ নেমেছে। এখন আমি বলার কারণে যদি আমাকে বলে, তুমি বলার কে, তুমি মাদ্রাসায় পড়েছ, তুমি কি নবী-রসুল হয়েছ, আমি তাদেরকে বলব, কেন ভাই, নবীর উম্মত হিসেবে কি আমাদের কোনো দায়িত্ব নেই? কাজেই সেই সত্য আমরা লাভ করেছি এবং সেটা আপনাদের সবার কাছে সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরাটা উম্মতে মোহাম্মদী হিসাবে আমাদের দায়িত্ব।
[উত্তর বাড্ডায় অনুষ্ঠিত একটি কর্মিসভায় হেযবুত তওহীদের মাননীয় এমাম জনাব হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম প্রদত্ত ভাষণ থেকে সম্পাদিত। সম্পাদনায় মো. রিয়াদুল হাসান, সাংবাদিক ও কলামিস্ট, ফেসবুক: riad.hassan.ht; ফোন: ০১৬৭০-১৭৪৬৪৩, ০১৬৭০-১৭৪৬৫১]