রিয়াদুল হাসান
Laws are for survivors- আইন জীবিতদের জন্য। মৃত ব্যক্তির জন্য আইনের দরকার নেই। বর্তমান বলে আসলে কিছু নেই, কারণ যে মুহূর্ত এখনও আসে নি, তা ভবিষ্যৎ আর যেটা এসে গেল সেটা চোখের নিমেষ ফেলার আগেই অতীত হয়ে গেল। তাই আইন যা কিছুই করা হয় সবই ভবিষ্যতের জন্য। মানুষের ব্যক্তিগত, জাতীয় ও সামষ্টিক জীবন পরিচালনার জন্য একটি জীবনব্যবস্থা থাকতে হয়, একে বলা হয় System of life। মানুষ বুদ্ধিমান প্রাণী হলেও তার একটি বড় সীমাবদ্ধতা হচ্ছে সে ভবিষৎ জানে না। আল্লাহ তাকে কিছু অনুমানশক্তি দিয়েছেন, কার্যকারণের জ্ঞান দিয়েছেন, সেই জ্ঞান অনুসারে সে কেবল একটি তত্ত্ব (Theory) দাঁড় করাতে পারে যদিও আল্লাহ বলে দিয়েছেন, “তাদের অধিকাংশ ব্যক্তিই নিজেদের আন্দাজ অনুমানের অনুসরণ করে, আর সত্যের বিপরীতে অনুমান তো কোনো কাজে আসে না; আল্লাহ তায়ালা অবশ্যই ওদের কর্মকা- স¤পর্কে পূর্ণাঙ্গ ওয়াকেবহাল রয়েছেন।” [সুরা ইউনুস -৩৬]। ব্যক্তি মানুষ জানে না, এখন থেকে এক মিনিট পরে তার জীবনের কী পরিবর্তন হবে, কাজেই সমাজের সকল মানুষের ভবিষ্যৎ কী হবে সেটা তার জানার প্রশ্নই আসে না। যে কোন আকষ্মিক ঘটনায় কোন সমাজের, জাতির, দেশের বিরাট পরিবর্তন হয়ে যায় যা মাথায় রেখে বিধান রচনা করা মানুষের পক্ষে অসম্ভব। আশ্চর্য ও হাস্যকর বিষয় হল, যে তার ভবিষৎই জানে না অথচ সে তার ভবিষ্যৎ চলার পথ, বিধান রচনা করে। মেলা হুলুস্থুল করে সে একটি আইন তৈরি করে, কিন্তু কিছুদিন না যেতেই সেই আইনের অসংগতি, অপ্রযোজ্যতা তার চোখে ধরা পড়ে, তখন আবার তাড়াহুড়া করে সেটা সংশোধনের জন্য বসে। তাছাড়া এমন এক জীবনব্যবস্থা তৈরি করা কি কোনো মানুষের পক্ষে সম্ভব যে জীবন ব্যবস্থা একসঙ্গে পৃথিবীর সকল মানুষের সকল সমস্যার সমধান করবে?
পৃথিবীর ভৌগোলিক অবস্থা এমন যে মরু এলাকার মানুষদের চিন্তা ভাবনা, মন মেজাজ, রুচি, সংস্কৃতি, আর কৃষিনির্ভর সমভূমির এলাকার মানুষের মন মেজাজ রুচি অভিরুচি এক নয়, পাহাড়ী এলাকার আর বরফাচ্ছন্ন এলাকার মানুষের চরিত্রও এক নয়, বৈচিত্র্য আছে, বিভিন্নতা আছে। এক কথায় পৃথিবীর সকল মানুষের মন মেজাজ রুচি অভিরুচি একত্রে বিবেচনা করে এমন একটা জীবন ব্যবস্থা যা সর্বত্র কার্যকর হবে, প্রযোজ্য হবে সেটা কি মানুষের পক্ষে তৈরি করা সম্ভব? সম্ভব নয়। কারণ একটাই যুক্তি, যে তার ভবিষ্যৎ জানে না, সে কোনো প্রকারেই ভবিষ্যতের জন্য আইন প্রণয়ন করতে পারে না। এটা করতে পারেন একমাত্র আল্লাহ যিনি এই মহাবিশ্ব সৃষ্টি করেছেন, মানবজাতি সৃষ্টি করেছেন, মানবজাতির পৃথক মন মানসিকতাও তিনি সৃষ্টি করেছেন। কাজেই কী ভাবে পৃথিবীতে জীবন যাপন করলে মানুষ অন্যায়, অত্যাচার, অবিচার, নিরাপত্তাহীনতা ইত্যাদি সবকিছু থেকে বেঁচে পরম নিরাপত্তা ও সুখে থাকতে পারবে তা আল্লাহর পক্ষেই জানা সম্ভব। তিনিই বলছেন, যিনি সৃষ্টি করেছেন তিনি কি জানেন না? তিনি সূক্ষ্মতম বিষয়ও জানেন (সুরা মুল্ক ১৪)। এই কথার কোন জবাব আছে কি? তদুপরি আল্লাহ বলেছেন, আমি তোমাদের সামান্য জ্ঞানই দিয়েছি (সুরা বনী ইসরাঈল ৮৫)। ক্ষুদ্র জ্ঞানের অধিকারী মানুষের পক্ষে কি অসীম জ্ঞানের অধিকারী আল্লাহর মত নিখুঁত কোন কাজ করা সম্ভব? এই ধারণাতীত বিশাল বিশ্বজগৎ যিনি সৃষ্টি করেছেন, যার একটি পরমাণুতেও কোন খুঁত নেই, মানুষ জাতির জন্য তাঁর তৈরি জীবনব্যবস্থার চেয়ে অন্য কোনো জীবনব্যবস্থা নিখুঁত হওয়া কি সম্ভব? তবুও যিনি আমাদের স্রষ্টা, যিনি সমস্ত ভুল-ত্রুটির ঊর্দ্ধে, তাঁর দেওয়া জীবনবিধান প্রত্যাখ্যান করে আমরা নিজেরাই নিজেদের জন্য জীবনব্যবস্থা তৈরি করে নিয়ে জীবনযাপন করছি। ফলে আজ সমস্ত মানবজাতি অশান্ত, অস্থির। অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, বিচারিক ইত্যাদি অন্যায়ের পরিণাম ভোগ করছে; মানুষে মানুষে সংঘাতে, রক্তপাতে মানবজাতি ভারাক্রান্ত।
এই নির্বুদ্ধিতা থেকে আমাদেরকে বেরিয়ে আসতে হবে। অনেক পরীক্ষা নিরীক্ষা হয়েছে গত কয়েক শতাব্দী। মানুষ ব্যর্থ হয়েছে তার সামগ্রিক, ব্যক্তিগত ও আত্মিক ভারসাম্য রক্ষাকারী শান্তি প্রদানকারী একটি জীবনব্যবস্থা তৈরি করতে। একে একে সবগুলো মানবরচিত জীবনব্যবস্থার ব্যর্থতার পর এখন মানবজাতি চূড়ান্ত আদর্শিক শূন্যতায় আক্রান্ত হয়েছে। তারা তো ধর্মকে বাদ দিয়েছে বহু আগেই, কারণ প্রচলিত ধর্মগুলো মানুষকে শান্তি দেওয়ার যোগ্যতা হারিয়েছে। কোথাও কোথাও জোর করে জঙ্গিবাদী দলগুলো তাদের শাসন প্রতিষ্ঠা করেছিল নিকট অতীতে কিন্তু সেখানে ইসলামের নামে যে শরা-শরিয়ত চালু করা হয়েছিল সেগুলো মানুষকে বিন্দুমাত্রও শান্তি দিতে পারে নি। উল্টো মানুষ ইসলামের নামে হিংস্র, উগ্রতার চর্চা দেখে ভীত হয়েছে, ইসলামের বিরুদ্ধে বিশ্বজনমত চলে গেছে। এমতাবস্থায় যদি মানবজাতিকে শান্তি দিতে হয় তাহলে এই প্রচলিত বিকৃত ধর্মগুলো দিয়ে হবে না, প্রয়োজন পড়বে সেই প্রকৃত ইসলামের যা আল্লাহ তাঁর আখেরী নবী (সা.) এর উপর নাজেল করেছিলেন। সেই প্রকৃত ইসলামের রূপরেখা আল্লাহর অশেষ রহমতে হেযবুত তওহীদের প্রতিষ্ঠাতা মাননীয় এমামুয্যামান জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নী মানবজাতির সামনে তুলে ধরেছেন। হেযবুত তওহীদ ইসলামের সেই সঠিক রূপটি সর্বান্তকরণে চেষ্টা করে যাচ্ছে মানুষকে বোঝানোর জন্য।
[কলামিস্ট: লেখক ও সাংবাদিক; ফেসবুক:riyad.hassan.ht]